হানড্রেড রোমান্টিক নাইটস্ – গিয়ােভানি বােকাসিও (তৃতীয় দিন ৭ম-১০ম গল্প)

March 13, 2021 | By Admin | Filed in: বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যে যৌনতা.

সপ্তম গল্প

টেডালডাে তার প্রেয়সীর ব্যবহা’রে উত্যক্ত হয়ে ফ্লোরেন্স ছেড়ে চলে গেল। অ’নেক দিন পরে ছাত্রীর বেশে সে ফিরে এসে তার প্রেয়সীকে বােঝালাে ঐ মহিলা ভুল করেছিল। মহিলা তা স্বীকার করলাে। এদিকে তার স্বামী টেডালডােকে হত্যার অ’পরাধে মৃ’ত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হল। টেডালডাে তার স্বামীকে মুক্ত করে আনল তারপর ঐ স্বামী ও তার নিজের ভাইদের সঙ্গে সমঝােতা করলাে। অ’বশেষে টেডালডাে তার প্রেয়সীকেও ফিরে পেল।

চমৎকার একটি গল্প বলার জন্যে সকলেই কিয়ামমেত্তাকে অ’ভিনন্দিত করলাে। আর সময় নষ্ট না করে কুইন এমিলি’য়াকে গল্প বলতে আহ্বান করলাে। এমিলি’য়া বলল : আমি আমা’র শহরেই ফিরে যাব। আমা’র আগে আমা’র দুই বন্ধু তাদের কাহিনীর পটভূমি অ’ন্য শহর থেকে নিয়েছিল। আমি আমা’র শহরের একজন নাগরিকের গল্প বলবাে সে কিভাবে তার প্রেয়সীকে আবার ফিরে পেয়েছিল তারই কৌতুহলপূর্ণ কাহিনী। এ আমা’দের এই ফ্লোরেন্স শহরে টেডালডাে ডেগলি’ এলি’সাই নামে এক অ’ভিজাত ও সদাশয় লোক বাস করতাে। শহরের জনৈক অ’্যালডােব্রানডিনাে প্যালারমিনি নামে এক ব্যক্তির পত্নী মা’েনা আরমেরিনার প্রেমে প্রবলভাবে পড়েছিল টেডালডাে। টেডালডাে বা মা’েনার ঐ প্রেম ছাড়া আর কোনাে ছিল না, বলতে কি তারা সচ্চরিত্রই ছিল। মা’েনাও টেডালডডাকে গভীরভাবে ভালবাসত।

কিন্তু কোথায় কি ঘটে গেল, মদনদেব ওদের প্রতি বি’রূপ হলেন, মা’েনা ক্ষেপে গেল , টেডালডাের সঙ্গে কথা বলা তাে বন্ধ করলেই এমনকি তার মুখদর্শন পর্যন্ত বন্ধ করে দিল। দু’জন ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। টেডালডাে তাকে অ’নেক বােঝাবার চেষ্টা’ করেছিল, কারণ জানতে চেয়েছিল, মা’েনা কোনাে উত্তর দেয় নি। মা’েনা স্পষ্টই তার মুখের ওপর বলে দিল, আমা’র কাছে টেডালডাে নামে কোনাে মা’নুষের অ’স্তিত্ব নেই। টেডালডাে গভীর শােকে নিমজ্জমা’ন হল কিন্তু তার এই প্রেম ও বি’চ্ছেদের বি’ষয় তৃতীয় ব্যক্তি জানত না তাই তারা টেডালডাের বি’ষন্ন মুখের বা দুঃখের কারণ কি জানতে পারল না।

তার দোষ কি তা জানবার জন্যে বার বার চেষ্টা’ করে এবং তাকে দেখবার ইচ্ছা প্রকাশ করেও টেডালডাে যখন বি’ফল হল তখন সে ভগ্নমনােরথ হয়ে স্থির করলাে সে এই শহর ছেড়ে চলে যাবে।

সে যা পারল টা’কাপয়সা যােগাড় করে আত্মীয়-স্বজন বা কাউকে কিছু না বলে গােপনে একটি গৃহত্যাগ করলাে। তৃতীয় একজন ব্যক্তি টেডালডাের ঘটনা জানত, শুধু তাকেই সে যাবার আগে বলে গেল কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা বলে গেল না। সে যে মেয়েটির জন্যেই মা’নসিক কষ্ট ভােগ করছে এবং মেয়েটি এই খবর পেয়ে আনন্দিত হচ্ছে এই সংবাদ উপভােগ করবার সুযােগ না পায় এবং মেয়েটিও তার অ’স্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না এই জন্যেই টেডালডাে দেশত্যাগ করতে কৃতসংকল্প হয়েছিল।

প্রথমে সে গেল অ’্যানকোনা। সেখানে সে তার নাম গােপন করে নতুন নাম নিল ফিলি’পপােতি স্যানলােডেচ্চিও। অ’্যানকোনায় তার সঙ্গে এক ধনী ব্যবসায়ীর পরিচয় হল। ব্যবসায়ী তাকে চাকরি দিল। তারপর একদিন সে ঐ ব্যবসায়ীর জাহা’জে সাইপ্রাস গেল। ব্যবসায়ী তার সচ্চরিত্রতা ও কর্মদক্ষতায় এতদূর প্রভাবি’ত হলেন যে তিনি তাকে উত্তম বেতন তাে দিতে লাগলেন. উপরন্তু তাকে ব্যবসায়ের অ’ংশীদার করে নিলেন এবং বেশ কিছু কাজের ভার তার ওপর দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন।

নিজ দক্ষতা, কর্মকুশলতা ও পরিশ্রম দ্বারা সে ব্যবসায়ের এতদূর উন্নতি সাধন করলাে যে সে একজন সমৃ’দ্ধিশালী ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি অ’র্জন করলাে।
মা’ঝে মা’ঝে তার নিষ্ঠুর প্রেমিকাকে মনে পড়ত। প্রেমের দংশন মা’ঝে মা’ঝে তাকে ব্যথা দিত, প্রেমিকাকে একবার দেখতেও ইচ্ছা করতাে, তথাপি সে নিজেকে সংবরণ করতাে। এইভাবে সাত বছর কেটে গেল। তার মনােবল অ’সীম।

সাইপ্রাসে সে একদিন এমন একটা’ গান শুনল যে গানখানি সে তার প্রেমিকার উদ্দেশে মর্মস্পর্শী ভাষায় রচনা করেছিল। গান শুনে তার মনে হল যে তার প্রেমিকা তাকে ভুলতে পারে নি, ভােলা অ’সম্ভব, তাই সে এতদুর ব্যথিত হল এবং প্রেমিকাকে দেখবার আগ্রহ এতদূর প্রবল হল যে সে আর থাকতে পারল না। ফ্লোরেন্স ফিরে যাওয়া সাব্যস্ত করলাে।

কাজকর্মের বি’লি’ব্যবস্থা করে সঙ্গে একজন ভৃত্য নিয়ে সে অ’্যানকোনা পর্যন্ত এলাে। তার মা’লপত্তর নিয়ে সাইপ্রাস থেকে জাহা’জ আসবার জন্যে সে অ’পেক্ষা করলাে। মা’লগুলাে আসবার পর সেগুলাে সে তার অ’ংশীদারের এক বন্ধুর নামে ফ্লোরেন্সে চালান দিয়ে দিল। এসব কাজ মেটবার পর যেন যীশুর পবি’র সমা’ধি দেখে ফিরছে এইরকম একজন তীর্থযাত্রীর বেশ ধরে সে একদিন ফ্লোরেন্স পেীছল। সেখানে সে তার প্রেমিকার বাড়ি থেকে অ’দূরে এক ছােট সরাইখানায় উঠল। এই সরাইখানা চালাত দুই ভাই।

ফ্লোরেন্স তার প্রথম কাজ হল তার প্রেমিকার খোঁজ নেওয়া কিন্তু প্রেমিকার বাড়ির সামনে এসে দেখল বাড়ির সমস্ত জানালা বন্ধ এবং দরজায় তালা ঝুলছে। তখন সে মনে করলাে তার প্রেমিকা মা’রা গেছে কিংবা অ’ন্য পাড়ায় উঠে গেছে। উদ্বি’গ্ন ও বি’চলি’ত হয়ে সে চলতে আরম্ভ করলাে। চলতে চলতে সে তার নিজের পাড়ায় এলাে। এই পাড়ায় তার আত্মীয়রাও বাস করতাে। একটা’ বাড়ির সামনে সে তার চার ভাইকে দেখতে পেল। তাদের সকলের পরনে কালাে পােশাক। সে আশ্চর্য হল, কালাে পােশাক কেন? কে মা’রা গেল? খোঁজ নেওয়া দরকার।

সে জানে এই সাত-আট বছরে তার চেহা’রার পরিবর্তন হয়েছে এবং তার পরনে তখনও তীর্থযাত্রীর বেশ, তাকে কেউ চিনতে পারবে না। সামনে ছিল পাড়ার মুচির দোকান। সেখানে গিয়ে সে জিজ্ঞাসা করলাে ঐ চারজন কালাে পােশাক পরেছে কেন?

মুচি উত্তর দিল, ওদের কালাে পােশাক পরার কারণ হল যে টেডালডাে নামে ওদের এক ভাই যে বেশ কয়েক বছর আগে নিরুদিষ্ট হয়েছিল সে খুন হয়েছে। আমি যতদূর জানি যে টেডালডাের খুনী হল মা’লভােব্যানভিননা প্যালারমিনি নামে এক ব্যক্তি। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বি’চারও হয়ে গেছে, খুনী বলে প্রমা’ণিতও হয়েছে। আরও শুনেছি যে টেডালডা ছিল ঐ খুনীর স্ত্রীর প্রণয়ী। প্রণয়িনীকে দেবার জন্যে টেডালডডা নাকি ছদ্মবেশে এখানে এসেছিল।

প্যালারমিনির দুর্দশার জন্যে সে অ’বাক হল। এইসঙ্গে সে ভাবল এমন লােক কে আছে যার সঙ্গে সদৃশ্য আছে? সে আশ্চর্য হল যখন সে খোঁজ নিয়ে আরও জানল যে তার প্রেমিকা বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে। রাত্রি হয়ে যাওয়ায় সে নানারকম চিন্তা করতে করতে সরাইখানায় ফিরে এলাে। ভৃত্যের সঙ্গে নৈশাহা’র শেষ হবার পর তাদের ঘর দেখিয়ে দেওয়া হল। ঘরখানা প্রায় বাড়ির সর্বোচ্চতলে।

টেভালভাের মা’থায় নানারকম চিন্তা ঘুরছে। খেয়ে পেট ভরে নি, বি’ছানাও ভালাে নয়, তার ঘুমও আসছে না। তখন মা’ঝরাত। টেডালডাে তখনও জেগে আছে। তার মনে হল ছাদ ডিঙিয়ে কিছু লােক সরাইখানায় ঢুকছে। তার ঘরের দরজা বন্ধ থাকলেও একটু ফাক দিয়ে বাইরে আলাে দেখা গেল।

বাইরে কি ঘটছে দেখবার জন্যে সে সেই ফাক দিয়ে বাইরে দেখবার চেষ্টা’ করলাে। সে দেখতে পেল দুইজন লােক একটি সুন্দরী যুবতীর সঙ্গে কথা বলছে। মেয়েটির হা’তে একটা’ আলাে রয়েছে। একজন লোক যুবতীকে বলল, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমা’দের ভয় পাবার কিছু নেই কারণ টেডালডাের ভাইরা তাে প্রমা’ণ করেছেই যে অ’্যালডােব্রানডিনাে টেডালডােকে খুন করেছে। আসামী স্বীকারও করেছে। বি’চারক তাকে দণ্ডও দিয়েছেন। তবুও আমা’দের সতর্ক থাকতে হবে। সকলকে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে হবে, যদি ফাস হয়ে যায় যে আমরাই কাজটা’ করেছি তাহলে আমা’দেরও অ’্যালডােব্রানডিনাের অ’বস্থায় পড়তে হবে—যার মা’নে মৃ’ত্যুদণ্ড। এই খবর শুনে যুবতী নিশ্চিন্ত হল। ওরা এরপর নিচে নেমে গেল। সম্ভবতঃ সরাইখানার একতলার চেনাে ঘরে ওরা ঘুমা’েবে।

টেডালডাে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, লােকে এমন কোনাে ঘটনা কানে শুনেই বি’শ্বাস করে নেয়, ঘটনা মিথ্যা হলেও কিছু যায় আসে না। মিথ্যা বা যে ঘটনা ঘটেনি তাই নিয়েই লােকে আলােচনায় মুখর হয়ে ওঠে। তার ভাইরাও বি’শ্বাস করেছে যে সে অ’র্থাৎ টেডালডাে খুন হয়েছে তাই তারা কালাে পােশাক পরেছে। একজন নির্দোষ লোেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার বি’রুদ্ধে কেউ কেউ সাক্ষ্যও দিয়েছে। লােকটা’ এখন মৃ’ত্যুর জন্যে অ’পেক্ষা করছে। কি বি’চিত্র এই জগৎ। টেডালডাে স্থির করলাে এই অ’্যালভােব্রানডিনােকে বাঁচাতে হবে। এইটেই হবে তার প্রথম কাজ। টেডালডাে কি করে তাকে খালাস করে আনবে সে বি’ষয়ে সে মনে মনে একটা’ ছক তৈরি করলাে।

পরদিন সকালে উপযুক্ত সময় বি’বেচনা করে ভৃত্যকে সরাইখানায় রেখে টেডালডডা একাই তার প্রাক্তন প্রেমিকার বাড়ির দিকে যাত্রা করলাে। আজ জানালা দরজা সবই খোলা। খােলা দরজা দিয়ে ঢুকে সামনে একটা’ ছােট ঘরে গিয়ে সে দেখল তার প্রেমিকা মেঝেতে বসে আকুল হয়ে কাঁদছে। সে-ও  মেঝেতে বসে পড়ল এবং তার প্রেমিকাকে কাঁদতে দেখে সে-ও চোখের জল রােধ করতে পারল না।

প্রেমিকাকে টেডালডাে বলল, মা’দাম তুমি চোখের জল মা’েছো বুকে সাহস আন, তােমা’র কষ্টের দিন শেষ হয়ে আসছে।

মহিলা এতক্ষণ পর্যন্ত আগন্তককে দেখে নি। তার কথা শুনে তার দিকে কাঁদতে কাঁদতে বলল, মহা’শয়, আপনাকে একজন তীর্থযাত্রী মনে হচ্ছে কিন্তু আপনি আমা’র অ’চেনা, আপনি আমা’র বি’পদ ও দুর্দশার বি’ষয় কি জানেন?

তীর্থযাত্রীর উত্তর দিল, ম্যাডাম আমি কনস্ট্যান্টিনােপল থেকে এইমা’ত্র এই শহরে আসছি। বলতে কি আপনার শােকাশ্রুকে আনন্দ করতে এবং আপনার স্বামীর মুক্তির ব্যবস্থা করতে ঈশ্বরই বুঝি আমা’কে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।

মহিলা বলল, আপনি যদি এইমা’ত্র এই শহরে কনস্টা’ন্টিনােপল থেকে এসে থাকেন তাহলে আপনি সব বি’ষয় কি করে জানতে পারলেন? আমা’র স্বামী কি বি’পদে পড়েছে তাই-বা আপনার পক্ষে জানা সম্ভব হল কি করে?

তীর্থযাত্রী তখন মহিলার স্বামী কোনাে অ’পরাধে বি’পদে পড়েছে তা তাে বলল এমনকি মহিলা কে, তার নাম কি, কবে তার বি’বাহ হয়েছে এবং অ’ন্যান্য অ’নেক এমন ঘটনা বলল যা কারও জানার কথা নয়। সব শুনে মহিলা অ’বাক। সে ধরে নিল আগন্তুক কোনাে দিব্যদর্শী মহা’ত্মা’। মহিলা তখন তীর্থযাত্রীর পায়ে পড়ে আবেদন করলাে, ঈশ্বরের নামে আপনার পায়ে পড়ে আমি আপনাকে অ’নুরােধ করছি  আপনি যদি সর্বজ্ঞ কোনাে মহা’ত্মা’ হন তাহলে দেরি হয়ে যাবার আগে আমা’র স্বামীকে মুক্ত করে আনুন।

তীর্থযাত্রী এবার সাধুসন্তর মতাে ভঙ্গি করে বলল, ওঠ ওঠ পায়ে পড়তে হবে না, আর কেঁদো না, এটা’ কদবার সময় নয়, আমি যা বলবাে ভালাে করে মন দিয়ে শােনাে এবং যা বলবাে তা অ’ন্য কাউকে কিছুতেই বলবে না। ঈশ্বরই আমা’কে বলেছেন অ’তীতে তুমি কোনাে পাপ কাজ করেছ, তােমা’র প্রায়শ্চিত্তের প্রয়ােজন তাই তিনি তােমা’কে বর্তমা’নে মা’নসিক শাস্তি দিচ্ছেন। দয়াময় ইশ্বর চান তুমি সেই পাপের প্রতিবি’ধান করাে, নচেৎ তােমা’কে আরও অ’নেক বেশি কষ্ট ও যন্ত্রণা ভােগ করতে হবে।

চোখ মুছতে মুছতে মহিলা বলল, আমি তাে অ’নেক পাপ করেছি, কোনাে পাপটির প্রায়শ্চিত্ত ঈশ্বর চান? আপনার যদি জানা থাকে তাহলে আমা’কে বলুন আমি তা করতে যথাসাধ্য করবাে।

ম্যাডাম, আমি সেই বি’শেষ পাপটির বি’ষয় উত্তমরূপেই জানি কিন্তু তােমা’র মঙ্গলের জন্যে আমি তােমা’কে কয়েকটি প্রশ্ন করব, প্রশ্নগুলি’র উত্তর তুমি স্বেচ্ছায় ও দ্বি’ধাহীন ভাবে দেবে এবং অ’নুতাপ সুরে। আচ্ছা এবার বলাে তােমা’র কি কোনাে প্রেমিক ছিল?

প্রশ্ন শুনে মহিলা সত্যিই বি’স্মিত, কারণ তার যে একজন প্রেমিক সত্যিই ছিল তা তাে কারও জানার কথা নয়। তবে টেডালডাে খুন হবার পর কিছু গুজব শােনা গিয়েছিল। গুজব রটিয়েছিল সেই লােকটি যাকে দেশত্যাগ করাবার আগে টেডালডডা জানিয়ে গিয়েছিল যে সে এ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। টেডালডাে প্রেমিকার নাম তারা জানা ছিল।

মহিলা বলল, আপনি তাে সর্বজ্ঞ, আপনার সবই জানা আছে তথাপি আপনি যখন আমা’র মুখ থেকে শুনতে চান তখন স্বীকার করছি আমা’র একজন প্রেমিক ছিল। আমা’র তখন বয়স কম ছিল, আমি সেই যুবককে গভীরভাবে ভালবাসতুম এবং সেই যুবককে হত্যার অ’পরাধে আমা’র স্বামী আজ দণ্ডিত। তার মৃ’ত্যুসংবাদ শুনে আমি মর্মা’হত, সে অ’ত্যন্ত ব্যথিত হয়ে আমা’কে ছেড়ে চলে যায়, তার কোনাে দােষ ছিল না। আমিই তাকে আঘাত করেছিলুম। আমি তার জন্যে অ’নেক কেঁদেছি, সে চলে যাবার পরও তাকে ভুলতে পারি নি আর তার শােচনীয় মৃ’ত্যু আমা’র হৃদয়ে যে কি আঘাত হেনেছে তা আমি বলে বােঝাতে পারবাে না।

যে যুবকের শােচনীয় মৃ’ত্যু হয়েছে তুমি বলছ সে তােমা’র প্রেমিক ছিল না, তাকে তুমি ভালবাস নি, তােমা’র প্রেমিক ছিল টেডালডডা ডি এলি’সাই। কি জন্যে তুমি তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে? সে কি কখনও তােমা’র মনে আঘাত করেছিল? কোনাে অ’ন্যায়?

না সে আমা’কে কোনভাবে আঘাত করে নি। আমিই তাড়িয়ে দিয়েছিলুম-সেজন্যে দায়ী একজন যাজক। আমি তার কাছে স্বীকারােক্তি করতে যাই এবং প্রসঙ্গক্রমে আমি ওর সঙ্গে আমা’র ঘনিষ্ঠতার উল্লেখ করি। তাতে তিনি আমা’কে এমন তীব্রভাবে ভৎসনা করেন যে আমা’র তখনি বি’শ্বাস হয় যে আমি ওকে ভালবেসে ভীষণ অ’ন্যায় করেছি এবং মৃ’ত্যুর পরে নরকে আমা’র স্থান। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই এবং এরপরে ও আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ওকে তাড়িয়ে দিই, কোনাে কারণ উল্লেখ করি নি। ও খুব আঘাত পায় এবং কাউকে কিছু না বলে দেশ ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু ও যদি ধৈর্য ধরে আর কিছু দিন থাকত তাহলে আমি ওর সঙ্গে আবার মিলি’ত হতুম কারণ ও চলে যাবার পর আমি অ’নুতাপে পুড়ে মরছিলুম এবং ও ফিরে আসার জন্যে অ’ধীর আগ্রহে পথ চেয়ে অ’পেক্ষা করছিলুম। ও এলাে না, সাত-আট বছর কেটে গেল।

মহিলার কথা শুনে তীর্থযাত্রী বলল, ম্যাডাম তুমি ভুল করেছ, দারুণ ভুল করেছ, তুমি ওকে ভালবেসে পাপ কর নি, পাপ করেছ ওকে তাড়িয়ে দিয়ে এবং দীর্ঘদিন অ’নুতাপ করেও তুমি পাপ থেকে মুক্ত হও নি। তুমি তার প্রেমে পড়েছিলে কারণ তাকে তােমা’র ভালাে লেগেছিল। তােমা’র পূর্ণ সমর্থন পেয়েই সে তােমা’র ঘনিষ্ঠ হয়েছিল যে জন্যে তােমা’র স্বামী স্ত্রীর মতাে একই বি’ছানায় শয়ন করেছে। তােমা’র প্রশ্রয় পেয়েই ও তােমা’র ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়েছিল। তাহলে তুমি হঠাৎ তার প্রতি নির্দয় হলে কেন? তাকে প্রত্যাখ্যান করবার আগে এসব তােমা’র চিন্তা করা উচিত ছিল। পরে অ’নুতাপ করে লাভ কি? যাজকের কথা শুনেই হঠাৎ তােমা’র বি’ভ্রান্ত হওয়া উচিত হয়নি।

তাহলে শােনাে, এবার তােমা’য় যাজকের বি’ষয়ে কিছু বলি’। আমি নিজেই একজন যাজক অ’তএব যাজক  সম্বন্ধে আমা’র বলার অ’ধিকার আছে। একটা’ সময় ছিল যখন যাজকরা সৎ ছিল এবং তারা তাদের নৈতিক জীবন উন্নত করার জন্য গভীরভাবে চেষ্টা’ করতাে। কিন্তু বর্তমা’নে তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। তাদের অ’নেক অ’বনতি হয়েছে। তারা এখন স্বার্থপর ও লােভী হয়েছে। পাপী কি করে মুক্তি পাবে  এদিকে তাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু আজ কি দেখছি? তারা অ’র্থ লোভী আর নারীললুপ হয়ে উঠেছে। তাদের শিরায় শিরায় পাপ ঢুকেছে, তাদের অ’ধঃপতন ঘটেছে। এবার একবার চিন্তা করে দেখ যে তােমা’র হঠকারিতার জন্যে টেডালডাের কি শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল? অ’থচ আমি জানি সে তােমা’কে তার প্রাণ অ’পেক্ষা ভালবাসত এবং সে অ’ত্যন্ত সৎ ও হৃদয়বান ছিল। এখন যদি তুমি তােমা’র পাপ থেকে মুক্তি পেতে চাও, নিজের শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাও তাহলে টেডালডাে ফিরে এলে তুমি দু’হা’ত বাড়িয়ে তাকে বুকে টেনে নেবে এবং তাকে এখন আগের মতােই ভালবাসবে, আদরযত্ন করবে।

তীর্থযাত্রী এবার থামল। মহিলা তার প্রতিটি বাক্য মন দিয়ে শুনেছে এবং উপলব্ধি করেছে যে সে ঘাের অ’ন্যায় করেছে। সে তীর্থযাত্রীকে বলল, আপনি যা বললেন তা শুনে আমি বুঝলুম যে আমি সত্যিই অ’ন্যায় করেছি। যাজকদেরও আমি চিনতে পারলুম, তারা বর্তমা’নে মা’নুষকে বি’পথে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে অ’গ্রপশ্চাৎ বি’বেচনা না করেই ঘােরতর অ’ন্যায় করেছি। যাই হা’েক আমি অ’নুতপ্ত এবং যথাযোগ্য প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। ভুল সংশােধন করতে চাই। কিন্তু কি করে করবাে? টেডালডডা তাে আর ফিরে আসবে না, সে তাে মৃ’ত। তাহলে আমি কি করবাে?

ম্যাডাম, ঈশ্বর আমা’কে বলেছেন টেডালডডা মা’রা যায় নি। সে বেঁচে আছে এবং সুস্থ আছে, পূর্বের মতাে তােমা’র ভালবাসা পেলে তার চেয়ে আনন্দিত আর কেউ হবে না।

কিন্তু আপনি ভুল করছেন, আমি নিজের চোখে আমা’র বাড়ির সামনে তার মৃ’তদেহ দেখেছি। দেহে অ’নেকগুলি’ ছােরার আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমি তার মৃ’তদেহ জড়িয়ে ধরে কত না কেঁদেছি আর এই জন্যেই আমা’র চরিত্রের ওপর কেউ কেউ কটা’ক্ষপাত করেছে।

ম্যাডাম তুমি যা দেখে থাক বা মনে করে থাক তা সবই ভুল। আমি তােমা’কে বলছি টেডালডাে বেঁচে আছে। তুমি যদি আমা’র কথামতাে প্রতিজ্ঞা করাে তাহলে তুমি তাকে অ’চিরে দেখতে পাবে।

—নিশ্চই আমি প্রতিজ্ঞা রাখব এবং তাকে ফিরে পাওয়ার জন্যে আপনি যা বলবেন আমি তাই করবাে।

সেই তীর্থযাত্রী অ’র্থাৎ টেডালডডা বুঝলাে এবার আত্মপ্রকাশ করবার এবং মহিলার স্বামী সম্বন্ধে আশ্বাস দেওয়ার সময় এসেছে। সে বলল, ম্যাডাম তােমা’র স্বামী সম্পর্কে তােমা’কে আশ্বস্ত করবার জন্যে তােমা’কে গুরুত্বপূর্ণ একটি গােপন খবর বলবাে যা যতদিন তুমি বাঁচবে ততদিন কাউকে বলবে না।

তারা একা ছিল, কাছে কেউ ছিল না। এবং বাইরে থেকেও তাদের দেখা যাচ্ছিল না। টেডালডাে একটি আংটি বার করে মহিলাকে দেখাল। আংটিটা’ টেডালডডা সযত্নে রক্ষা করে আসছিল। তাদের শেষ রজনীতে আংটিটা’ মহিলা টেডালডােকে উপহা’র দিয়েছিল। টেডালডাে জিজ্ঞাসা করলাে, ম্যাডাম এই আংটি তুমি চিনতে পার? মহিলা দেখেই বলল, নিশ্চই। অ’নেকদিন আগে আমি এটি টেডালডডাকে দিয়েছিলাম।

এই কথা শুনেই তীর্থযাত্রী অ’র্থাৎ টেডালডাে উঠে দাঁড়াল এবং তার আলখাল্লা খুলে ফেলল। মা’থার টুপিও খুলে ফ্লোরেন্সীয় উচ্চারণে বলল, আমা’কে কি চিনতে পারছ!

মহিলা যখন দেখল এ টেডালডাে ছাড়া আর কেউ নয় তখন সে অ’ত্যন্ত আশ্চর্য হল। শুধু তাই নয়। সে ভয়ে কাপতে লাগল যেন সে ভূত দেখছে। সাইপ্রাস থেকে যে টেডালডাে ফিরে এসেছে তাকে সাদরে বুকে টেনে নেওয়া দূরে থাক, মহিলা ভাবল কবর থেকে বুঝি ভূত উঠে এসেছে। এই মনে করে সে ভয়ে জড়সড় হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

—প্রিয়তমা’ ভয় পেয়াে না, আমি সত্যিই তােমা’র টেডালডাে, আমি বেঁচে তাে রয়েইছি এবং সুস্থও আছি। তুমি বা আমা’র ভাইরা যাই ভাব না কেন আমি কোনােদিন খুন হইনি, মা’রাও যাইনি।

টেডালডাের কথা শুনে তার প্রেয়সীর সাহস ফিরে এলাে। বি’শ্বাসও হল। তখন সে কাছে এসে ভালাে করে তাকে দেখল। যখন সে নিশ্চিত হল যে এই তার টেডালডাে তখন সে কেঁদে ফেলল। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করতে করতে বলল, টেডালডাে, আমা’র প্রিয়তম, তাহলে তুমি আমা’র বুকে ফিরে এলে।

টেডালডােও তাকে আলি’ঙ্গন ও চুম্বন করে বলল, প্রিয়তমা’, এখন আমা’দের প্রেম বি’নিময় করবার সময় নয়, জরুরী কাজ বাকি আছে। প্রথমেই তােমা’র স্বামী অ’্যালডােব্র্যানডিনাের মুক্তি আদায় করে তাকে তােমা’র কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। আশা করছি সন্ধ্যার আগেই তােমা’কে আমি সুসংবাদ দিতে পারব। আমি আজই তার সঙ্গে জেলখানায় দেখা করবাে। ফিরে এসে তােমা’কে তার খবর জানিয়ে যাব।

টেডালডাে আবার তার আলখাল্লা ও টুপি পরে তার প্রিয়তমা’কে চুম্বন করে চলে গেল। বলে গেল, ভেবাে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। এখান থেকে বেরিয়ে টেডালডডা জেলখানায় গেলাে যেখানে অ’্যালডােব্র্যানডিনাে কপালে করাঘাত করতে করতে ফাঁসির দিন গুনছিল। টেডালডডাকে দেখে সে ভাবল বুঝি মৃ’ত্যুর পূর্বে যাজক তাকে সান্ত্বনাবাক্য শুনিয়ে তার জন্যে প্রার্থনা করতে এসেছেন।

অ’্যালডােব্র্যানডিনাের পাশে বসে টেডালডাে তাকে বলল, আমি তােমা’র বন্ধু, তুমি নির্দোষ। তােমা’কে বাঁচাবার জন্যে পরম দয়ালু ঈশ্বর আমা’কে তােমা’র কাছে পাঠিয়েছেন। আমি তােমা’কে কিছু জিজ্ঞাসা করবাে, ভক্তিভরে ঈশ্বরকে স্মরণ করে তুমি আমা’কে সত্য উত্তর দেবে। তারই কৃপায় কাল সন্ধ্যার আগে তুমি মুক্তি পাবে। ফাঁসির দিন গুনতে গুনতে তােমা’কে এই জেলখানায় পড়ে থাকতে হবে ।

উত্তরে অ’্যালডােব্র্যানডিনাে বলল, সহৃদয় মহা’শয় আপনাকে আমি চিনি না, কোথাও দেখেছি বলেও মনে করতে পারছি না। কিন্তু যেহেতু আপনি আমা’র মুক্তির চেষ্টা’ করছেন সেহেতু আপনি নিশ্চই আমা’র বন্ধু। সত্যিই আমি এই অ’পরাধ করিনি, আমা’কে জালে জড়িয়ে মিথ্যাই অ’ভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে আমি কিছু পাপ কাজ করেছি যে জন্যে আমা’কে আজ অ’যথা এই শাস্তি ভোেগ করতে হচ্ছে। মঙ্গলময় ঈশ্বর যদি আমা’কে দয়া প্রদর্শন করেন তাহলে আমি সৎ জীবন যাপন করবাে এবং তার ইচ্ছানুরূপ কাজ করবে। আপনারা যা ইচ্ছা প্রশ্ন করুন এবং আমি যদি মুক্তি পাই তাহলে নিশ্চই আপনার কথা রাখব।

তাহলে শােনাে, আমি চাই যে মুক্তি পাবার পর তুমি টেডালডাের চার ভাইকে ক্ষমা’ করবে। কারণ তারা ভুলক্রমে বি’শ্বাস করেছিল যে তুমি তাদের ভাইকে খুন করেছ। অ’বশ্য ওরা যদি তােমা’র কাছে ক্ষমা’ ভিক্ষা করে এবং তােমা’কে বন্ধু ও আত্মীয় বলে স্বীকার করে।

ঈশ্বরের অ’সীম দয়ায় আমি যদি মুক্তি পাই তাহলে নিশ্চই তাদের ক্ষমা’ করবাে এবং যা বলবেন আমি সেইমতাে আপনার আদেশ পালন করবাে।

—তুমি নিশ্চিন্ত থাক, তােমা’র বি’পদ কেটে যাবে এবং কাল বি’কেল হবার আগেই তুমি তােমা’র মুক্তির খবর পাবে। এই আশ্বাস দিয়ে তীর্থযাত্রী আপাততঃ বি’দায় নিল।

অ’্যালডােব্রানডিনাের কাছে বি’দায় নিয়ে টেডালডাে আদালতে গিয়ে ন্যায়াধীশের সঙ্গে দেখা করে বলল, মহা’শয় আপনার কাজ হল অ’পরাধীর অ’পরাধ খুঁজে বার করা এবং তা প্রমা’ণ হলে তাকে সাজা দেওয়া। কিন্তু নিরপরাধ ব্যক্তিকে আপনি কখনই সাজা দেবেন না। এই ন্যায় বি’চারের দ্বারা নির্দোষ ব্যক্তি অ’ভিযুক্ত হলেও মুক্তি পেয়ে যেমন আনন্দ পাবে তেমনি আপনিও নিরপরাধ ব্যক্তিকে দণ্ড না দেওয়ার জন্য আনন্দ পাবেন। হা’লে আপনি অ’্যালডােব্র্যানডিনাের বি’চার করেছেন এবং তার বি’রুদ্ধে প্রমা’ণ পেয়েছেন যে সে টেডালডােকে খুন করেছে এবং সেজন্যে তাকে আপনি মৃ’ত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আপনার আদেশেই শীঘ্র দণ্ড কার্যকরী করা হবে। কিন্তু আমি বলছি যে তার বি’রুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। তা আমি নিঃসন্দেহে প্রমা’ণ করতে পারব এবং তার আসল হত্যাকারীদের আমি আজই মধ্যরাতের মধ্যে আপনার সামনে হা’জির করবাে।

অ’্যালভােব্রানডিনােকে মৃ’ত্যুদণ্ড দিয়ে পর্যন্ত ন্যায়াধীশ অ’নুতাপ ভােগ করছিলেন। এখন তীর্থযাত্রীর কথা শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেন এবং তার সব কথা শুনলেন। তীর্থযাত্রী যেভাবে সওয়াল করলাে তা তিনি বি’শ্বাস করলেন এবং তারই কথা অ’নুসারে সেইদিন রাত্রে সরাইখানার দুই ভাই ও তাদের ভৃত্যকে তারা শয্যা গ্রহণের পূর্বেই গ্রেফতার করিয়ে আনলেন। তারা তাদের অ’পরাধ স্বীকার করে বলল, তারাই টেডালডডাকে খুন করেছে এবং তাকে তারা চিনতও না। কেন তাকে খুন করা হল এবং উত্তরে ওরা বলল যে ওদের এক ভাইয়ের স্ত্রীকে টেডালডাে বি’রক্ত করেছিল, কুপ্রস্তাব করেছিল।

খুনীদের স্বীকারােক্তি শুনে তীর্থযাত্রী আর অ’পেক্ষা করলাে না। সে তার প্রেয়সী মা’েনা আরমেলি’নার কাছে গােপনে ফিরে গিয়ে সুসংবাদ দিল। বাড়ির ভৃত্যরা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। বাড়িতে ঢােকার সময় তাকে কেউ দেখতে পায় নি। মা’েন তার জন্যে রাত জেগে বসেছিল। সে জানত তার প্রেমিক নিশ্চই তার স্বামীর সুসংবাদ আনবে।

টেডালডা মা’েনাকে বলল, প্রিয়তমা’, মেঘ কেটে গেছে। কালই অ’্যালডােব্রানডিনাে তােমা’র কাছে ফিরে আসবে। এরপর যা ঘটেছে তার সম্পূর্ণ বি’বরণী টেডালডাে মা’েনাকে জানাল।

এই মুহূর্তে মা’েনা আরমেলি’না অ’পেক্ষা সুখী মেয়ে আর কেউ নেই কারণ যে প্রেমিককে সে মৃ’ত মনে করেছিল এবং যে মৃ’ত্যুদণ্ডে দণ্ডিত স্বামীকে ফিরে পাবে না ভেবেছিল তাদের দু’জনকেই সে ফিরে পেল। এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কি হতে পারে?

টেডালডডাকে মা’েনাকে জড়িয়ে চুম্বন করে নিজের শয়নঘরে নিয়ে গেল এবং উভয়ে সংলগ্ন হয়ে মহা’নন্দে নিশিযাপন করল।

ভাের হবার আগেই টেডালডাে শয্যাত্যাগ করে বাইরে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে মা’েনাকে বলল, এখনও তুমি সবকিছু গােপন রাখবে। কাউকে কিছুই বলবে না। তারপর সে তীর্থযাত্রীর পােশাক পরে বেরিয়ে গেল। তখনও কিছু কাজ বাকি ছিল।

সকাল হতে ন্যায়াধীশ পুনরায় সব দিক খতিয়ে দেখে অ’্যালডােনডিনােকে মুক্তি দিলেন এবং কয়েক দিন পরে টেডালডাে খুনের ঘটনাস্থলে আসল আসামীদের মৃ’ত্যুদণ্ড দিলেন। তাদের মস্তক ছেদন করে মৃ’ত্যুদণ্ড কার্যকরী করা হল।

মুক্তি পাবার পর অ’্যালডােনডিনাে এবং তার পত্নী ও আত্মীয় বন্ধু সকলেই অ’ত্যন্ত আনন্দিত হন। অ’্যালডােনডিনাে এবং তার পত্নী মা’েনা তথা টেডালডাের প্রেয়সী বি’শ্বাস করলাে যে টেডালডাের চেষ্টা’তেই অ’্যালভােব্র্যানডিনাে মুক্তি পেয়েছে। তখন তারা তাকে সাদর অ’ভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, তুমি যতদিন এই শহরে থাকবে ততদিন এই বাড়িতেই থাক। টেডালডডা তাদের বাড়িতে আসাবার পর তার যত্নের সীমা’ রইল না। তার আহা’র ও আরামের উত্তম ব্যবস্থা করা হল। করা তে হবেই। বাড়ির গৃহিণী তাে জানত লােকটি কে? সে হা’রানাে মা’নিক ফিরে পেয়েছে। একদিন এক বি’বৃটি ভােজও দেওয়া হল।

এদিকে টেডালডাের চার ভাইকে বি’দ্রুপ ও বাক্যবাণ সহ্য করতে হচ্ছে দেখে টেডালডাে অ’্যালডােনডিনােকে বলল, এবার তুমি তােমা’র কথা রাখ। তদনুসারে অ’্যালডােব্র্যানডিনাে আর একটি ভােজসভার আয়ােজন করে নিজের আত্মীয় ও বন্ধু ব্যতীত ঐ চার ভাই ও তাদের পত্নীদেরও নিমন্ত্রন করলাে। তীর্থযাত্রীটি কে তখনও তার পরিচয় প্রকাশ পায়নি। অ’্যালডােব্রানডিনাের পক্ষে চার ভাই ও পত্নীদের সে নিজে ভােজসভায় ডেকে আনবে এইরকম স্থির হল।

টেডালডাে চার ভাইয়ের কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় গােপন রেখে যতদূর বলবার সবই বলল এবং তাদের বলল অ’্যালডােব্র্যানডিনাের কাছে ক্ষমা’ চাইতে এবং মিটমা’ট করে সম্পর্ক সহজ ও স্বাভাবি’ক। করতে। তারপর সে চার ভাইয়ের পত্নীকে অ’্যালডােব্রানডিনাের ভােজসভায় যাবার আমন্ত্রণ জানান। চার ভাই তীর্থযাত্রীর পরামর্শ মেনে নিয়ে সেইমতাে কাজ করতে রাজি হল।

পরদিন ব্রেকফাস্টের সময়ে টেডালডাের চার ভাই তখনও কালাে পােশাক পরিহিত হয়ে অ’্যালডােব্লানডিনাের বাড়ি গেল। তাদের সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও ছিল। অ’্যালডােব্র্যানডিনােও তাদের আগমন প্রতীক্ষা করছিল। অ’ন্যান্য আরও ব্যক্তির উপস্থিতিতে চার ভাই তাদের অ’স্ত্র অ’্যাডডােব্লানডিনাের সামনে ভূমিতে নামিয়ে রেখে ভিক্ষা করলাে। অ’্যালডােব্র্যানডিনাে তাদের ক্ষমা’ করে বুকে জড়িয়ে ধরল। তারপর ঐ চার ভাই তাদের পত্নী ও ভগিনীদের নিয়ে এলাে। তাদের পরনে তখনও শােকের পােশাক। মা’েনা তাদের সাদর অ’ভ্যর্থনা জানিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল। সমবেত মহিলারা তাদের সঙ্গে আলাপ করতে লাগল।

সেদিন ভােজসভাও বেশ জমে উঠেছিল। কিন্তু কিছু লােক অ’ন্য মত প্রকাশ করে অ’্যালজেব্রানডিনােকে বলল যে, চার ভাইয়ের পরিবারের অ’শৌচকাল এখনও কাটে নি, এই অ’বস্থায় একজন তীর্থযাত্রীর পরামর্শে এই ভােজসভার আয়ােজন করা ঠিক হয়নি।

এই কথা তীর্থযাত্রীরও কানে গেল। এরা তাে জানে না যে নিহত ব্যক্তিকে ওরা টেডালডাে মনে করছে সে অ’ন্য ব্যক্তি। আসল টেডালডডাকে তখনও তারা চিনতে পারে নি। সে ঠিক করলাে যথেষ্ট হয়েছে এবার আত্মপ্রকাশ করা উচিত।

ভােজসভায় ভােজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। শেষ পদ মিষ্টা’ন্ন পরিবেশিত হচ্ছে। এমন সময় টেডালডডা উঠে দাঁড়িয়ে সকলকে সম্বােধন করে বলল, সকলে শুনুন, এই ভােজসভায় আসল টেডালডাে এলি’সাই উপস্থিত থাকলে অ’তি উত্তম হতাে, কিন্তু আপনারা বি’শ্বাস করুন সে এই সভায় উপস্থিত আছে কিন্তু আপনারা তাকে চিনতে পারেন নি। আমি তাকে চিনিয়ে দিচ্ছি।

এরপর সে তীর্থযাত্রীর পােশাক ও টুপি খুলে ফেলল। তার পরনে এখন শুধু সবুজ তাফেতার একটি টিউনিক যাতে সকলে তাকে খুঁটিয়ে দেখতে পারে। কিছুক্ষণ পরে সকলে তাকে চিনতে পারল কিন্তু বি’স্মিত হল। এ কি করে হয়? টেডালডাে তাে খুন হয়েছে। তাদের সন্দেহ দূর হচ্ছে না বুঝতে পেরে সে প্রথমে তার পরিবারের পরিচয় দিল, সে ফিরে আসার পর কি কি ঘটনা ঘটেছে তাও বলল অ’বশ্য তার প্রেয়সীর কথা বাদ রেখে এবং এর পরে সাত বৎসর পূর্বে দেশত্যাগ করে সে কোথায় গিয়েছিল, কি করেছিল সেসবেরও বি’স্তারিত বি’বরণ দিল। এবার তার চার ভাই তার কাছে ছুটে গিয়ে তাকে আলি’ঙ্গন করলাে। মা’েনা ব্যতীত মেয়েরাও টেডালডােকে আলি’ঙ্গন করলাে। সকলের চোখে আনন্দাশ্রু।

অ’্যালডােব্র্যানডিনাে বলল, আরমেলি’নাে তােমা’র ব্যাপার কি? সব মহিলাই আমা’দের উপকারী বন্ধুকে আলি’ঙ্গন করলাে, তুমি করছ না কেন?

মা’েনা আরমেলি’না বলল, আমি তাে টেডালডডাকে অ’ভিনন্দন জানিয়ে আলি’ঙ্গন করতে চাইছি, কারণ ওরই জন্যে তাে আমি তােমা’কে ফিরে পেলুম আর এই জন্যেই টেডালডােকে আর সকল মহিলা অ’পেক্ষা আরও সরবে ধন্যবাদ জানিয়ে আরও বেশি জোরে আলি’ঙ্গন করা উচিত। কিন্তু ব্যাপার কি জান? আমরা যখন টেডালডাে মৃ’ত মনে করে ভুল করে অ’শৌচ অ’বস্থায়, আমা’র সম্বন্ধে কিছু লােক বদনাম রটনা করেছিল সেইজন্যে আমি দ্বি’ধাগ্রস্ত হয়ে আছি। কথাগুলি’ মা’েনা বেশ জোরেই বলল, আর সকলেই তার কথা শুনতে পেয়েছিল।

তার সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত স্বামী বলল, আরে রেখে দাও তােমা’র বদনাম, ওসব বাজে গুজব আমি বি’শ্বাস করি না, কারণ গুজব সত্যি হলে টেডালডা কি আমা’র মুক্তির জন্যে চেষ্টা’ করতাে ? যাও তুমি টেলডােকে অ’ভিবাদন জানিয়ে আলি’ঙ্গন করাে।

মা’েনা তাে এই চায় এবং সকলের সামনে তার প্রিয়তমকে আলি’ঙ্গন করতে তার স্বামীরই যখন আপত্তি নেই তখন সে এগিয়ে গিয়ে অ’ন্যান্য মহিলাদের মতাে টেডালডাের গলা জড়িয়ে ধরে আলি’ঙ্গন রলাে। তবে যাতে বুকে বুক ঠেকে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখল।

টেডালডাের ভাইয়েরা এবং সমবেত সকল নর-নারী অ’্যালডােব্র্যানডিনাের মহা’নুভবতা ও উদারতায় মুগ্ধ এবং ইতিমধ্যেই নানারকম গুজব রটে কারও কারও মনে যেসব সন্দেহ জেগেছিল সেসব দূরীভূত হল। | টেডালডডা এবার ভাইদের, তাদের পত্নীদের এবং ভগিনীদের বলল, শশাকের কালাে পােশাক ত্যাগ করে উৎসব-উপযােগী রঙিন পােশাক পরতে। সেই অ’নুসারে ওরা রঙিন পােশাক পরল এবং নৃত্যগীতে মেতে উঠল। এক সময়ে কলকোলাহলের মধ্যে এই উৎসব শেষ হল। তারপর সকলে দল বেঁধে টেডালডাের বাড়ি গেল। সেখানে কয়েকদিন ধরে আনন্দানুষ্ঠান ও পানাহা’র চলল।

আনন্দের জোয়ার কেটে যাবার পর কিছু লােকের মনে সন্দেহ দেখা দিল, যে লােকটা’কে নিয়ে আমরা এত নাচানাচি করলুম সে বােধহয় আসল টেডালডাে নয়। যে খুন হয়েছে সে কবর থেকে কি করে উঠে এলাে? কিন্তু কয়েকদিন পরে নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা গেল।

একদিন লুনিজিয়ানা থেকে একদল সৈনিক টেডালডাের বাড়ির সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছিল তখন টেডালডাে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিল। তারা টেডালডােকে দেখতে পেয়ে সােল্লাসে চিৎসার করে উঠল, আরে আরে ফ্যাজিউওলাে!

সৌভাগ্যক্রমে টেডালডাের ভায়েরা এবং আরও কয়েকজন লােকও সেখানে তখন দাঁড়িয়েছিল। টেডালডাে তাদের বলল যে তারা ভুল করছে। টেডালডাের কণ্ঠস্বর ও তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে । বুঝল যে তারা সত্যি ভুল করেছে। তখন তারা ক্ষমা’ চেয়ে বলল, আমা’দের এক বন্ধু ফ্যাজিউওলাে ন পনক্রেমলি’র সঙ্গে আপনার আশ্চর্য সাদৃশ্য। আমা’দের সেই বন্ধু দিন পনেরাে আগে এই অ’ঞ্চলে এসেছিল কিন্তু তারপর আর সে ফিরে যায় নি। সেও আমা’দের মতে সৈনিক কিন্তু তার পরনে জঙ্গিবাহিনীর পােশাক না দেখে আমরা অ’বাক হয়েছিলুম।

ওদের কথা শুনে টেডালডাদের বড় ভাই সৈনিকদের জিজ্ঞাসা করলাে তাদের বন্ধু তাহলে কি রকম পােশাক পরেছিল? তারা পােশাকের যে বর্ণনা দিল তার সঙ্গে মৃ’ত ব্যক্তির পােশাক এবং কয়েকটি লক্ষণ মিলে গেল। তখন সকলে স্থিরভাবে নিশ্চিত হল যে খুন হয়েছে সে টেডালডডা নয়, এই সৈনিকদের বন্ধু ফ্যাজিউলাে। টেডালডাে সম্বন্ধে যেটুকু সন্দেহ ছিল তা এবার সম্পূর্ণভাবে দূরীভূত হল।

টেন্ডালভাে এখন বি’রাট ধনী। সে ফ্লোরেন্সেই স্থায়ীভাবে বাস করতে লাগল। তার প্রেমিকা তাকে আর কোনাে আঘাত দেয় নি, ওদের মধ্যে আর কখনও মনােমা’লি’ন্য দেখা দেয় নি। তারা আর তাদের প্রেমের পথ থেকে বি’চ্যুত হয় নি।

গল্প শেষ করে এমিলি’য়া মন্তব্য করলাে, আমা’দেরও প্রেম যেন এমনই শাশ্বত হয়।

অ’ষ্টম গল্প

একটি বি’শেষ চুর্ণ খাওয়ার পর ফেরােণ্ডোকে মৃ’ত বলে কবর দেওয়া হল। যে যাজক তার স্ত্রীর সঙ্গে অ’বৈধ প্রেমে লি’প্ত ছিল সেই যাজক তাকে কবর থেকে তুলে তাকে বন্দী করে রাখল এবং তাকে বি’শ্বাস করালাে যে তার পাপমা’েচনের জন্যে পারগেটা’রি ঘরে রাখা হয়েছে। পরে তাকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবি’ক অ’বস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। সে তার বাড়ি ফিরে যায় এবং সে সন্তানটিকে নিজের মনে করে পালন করতে থাকে, সে আসলে ঐ যাজকের সন্তান।

এমিলি’য়া তার গল্প শেষ করলাে। গল্পটি দীর্ঘ হলেও সকলে উপভােগ করলাে বরঞ্চ তারা মন্তব্য করলো যে এমিলি’য়া গল্পটি সংক্ষেপ করার জন্যে অ’নেক বি’বরণী বাদ দিয়েছে। কুইন এবার লরেতার দিকে চেয়ে তাকে একটি গল্প বলতে বলল।

লরেতা বলল বেশ বলছি; একটা’ সত্যি ঘটনা মা’থায় এসেছে কিন্তু শুনে তােমরা বলবে এটা’ বনানো গল্প। যে লােকটা’র গল্প বলবাে তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল কিন্তু শােকপ্রকাশ করা হল অ’ন্য একজনের জন্যে। আমা’র গল্প একজন জীবন্ত মা’নুষকে নিয়ে কিন্তু সে মরে গেছে বলে কবর দেওয়া হল। কবর থেকে যখন তাকে তােলা হল তখন সে মনে করলাে সে সত্যিই মা’রা গিয়েছিল কিন্তু তাকে পুনরুজ্জীবন দেওয়া হয়েছে। অ’নেকে এই কথা বি’শ্বাস করেছিল এবং তাকে সাধুর মর্যাদা দিয়েছিল অ’থচ তাকে মূর্খ মনে করলেই ভালাে হতাে।

একদা টা’সকানিতে একটি অ’্যাবি’ বা মঠ ছিল, এবং এখনও আছে, তবে আরও অ’ন্যান্য অ’নেক মঠের মতাে এটি চলতি পথ থেকে কিছু দূরে ছিল। এই মঠের নবনিযুক্ত মঠাধ্যক্ষ অ’ন্যত্র নিম্নপদে নিযুক্ত ছিল। সে যা হা’েক এই নতুন মঠাধ্যক্ষ সব দিক থেকে উপযুক্ত ছিল, কেবল তার একটিমা’ত্র দোষ ছিল, নারীর প্রতি রীতিমতাে দুর্বলতা। এই কাজটি সে এমন চাতুর্য ও গােপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন করতাে যে কেউ জানতে পারত না। যেহেতু সাধারণ মা’নুষ তার দোষটি প্রত্যক্ষ করতে পারত না এজন্যে সকলে তাকে সাধু ও সৎ মনে করতাে। গির্জায় সে-অ’ত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠ ছিল, ধর্মীয় কাজগুলি’ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতাে। শুধু ঐ এক দোষ। নারীর প্রতি তার দুর্বলতা।

এই মঠাধ্যক্ষের সঙ্গে ফেরােণ্ডো নামে এক ধনী জমিদারের আলাপ হল এবং ক্রমশ ঘনিষ্ঠতা হল। ফেরােশো ছিল সাধাসিধে সরল মা’নুষ, বুদ্ধি কম, মজার মজার কথা বলত ও কাজ করতাে। তাকে নিয়ে বেশ সময় কাটত। মঠাধ্যক্ষ একদিন ওর স্ত্রীকে দেখতে পেল। মহিলা রীতিমতাে রূপবতী, রূপ যেন ঝরে পড়ছে। মঠাধ্যক্ষমশাই তার সঙ্গে আলাপ করলাে এবং মহিলার প্রেমে এমনভাবে পরল যে মহিলাই হয়ে উঠল তার ধ্যান-জ্ঞান, এমনকি রাত্রে দু’চোখের পাতা এক করতে পারে না।

ফেরােণ্ডো সরল মা’নুষ হতে পারে, তার বুদ্ধিও কম হতে পারে কিন্তু স্ত্রী ছিল তার নয়নের মণি। স্ত্রীর দিকে কেউ নজর দিলে সে সহ্য করতে পারত না, তাই সে স্ত্রীকে কড়া নজরে রাখত। স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হবার জন্যে কয়েকবার চেষ্টা’ করে মঠাধ্যক্ষ বি’ফল হয়ে হতাশ হল। ফেরােণ্ডো এমনভাবে বৌকে আগলে রাখে যে মঠাধ্যক্ষ তার ছায়া মা’ড়াতে পারে না।

মঠাধ্যক্ষ ছাড়বার পাত্র নয়। ভীষণ ধূর্ত ও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন। তাড়াতাড়ি করলে হবে না। ধীরে সুস্থে এগােতে হবে, জাল ফেলতে হবে এবং সময় বুঝে জাল গুটোতে হবে। সে ফেরােণ্ডো ও তার স্ত্রীকে গির্জায় আসতে বলল। মঠাধ্যক্ষ আমন্ত্রণ জানালে গির্জায় যেতে কে আর আপত্তি করবে আর গির্জায় যাওয়া দোষেরও নয়। ওরা দুজন গির্জায় যেত। মঠাধ্যক্ষ ওদের নিয়ে বাগানে বেড়াতে বেড়াতে ধর্ম সম্বন্ধে নানা উপদেশ দিত, কোনাে সমস্যার সমা’ধান করে দিত। অ’তীতের সাধুসন্তদের জীবনী বলতাে। সাধনভজন ছাড়া মা’নবজীবন উপভােগ করা উচিত নয় এ বি’ষয়েও মঠাধ্যক্ষ আলােচনা করতাে।

এইসব কথা শুনতে শুনতে ফেরােশোর  স্ত্রীর মনে হল মঠাধ্যক্ষের কাছে তার স্বীকারােক্তি করা উচিত। সে স্বামীর কাছে অ’নুমতি চাইতে স্বামী অ’নুমতি দিল কিন্তু তখন কি জানত এই সবে আরম্ভ।

মঠাধ্যক্ষ দেখল বাগানে বেড়ানাে বৃথা যায়নি, ওষুধ ধরেছে। তার কাছে পাপপুণ্য স্বীকার করবার অ’নন্য সুন্দরী একদিন এলাে এবং মঠাধ্যক্ষর পদতলে বসে সে বলল : প্রভু আপনি আমা’দের অ’নন্ত জীবন সম্বন্ধে অ’নেক কথা বলছেন। আমি জানতে চাই সেই অ’নন্ত জীবন কিভাবে ভােগ করা যায়। আমা’র একজন স্বামী আছে বটে আবার নেইও। সেই স্বামী অ’ত্যন্ত সরল মা’নুষ এবং বুদ্ধি কম। সে আমা’র চরিত্র সম্বন্ধে সন্দেহ করে না কিন্তু যদি আমা’র চরিত্র খারাপ হয়ে যায় অ’থবা অ’ন্য কোনাে পুরুষ আমা’র দিকে নজর দেয় এজন্য আমা’কে এমনভাবে পাহা’রা দেয় ? আমা’র জীবন বি’ষময় করে তুলেছে। আমা’র একেবারেই স্বাধীনতা নেই। একা ছাদে যেতে পারি না দরজা বা জানালার সামনে দাঁড়াতে পারি না, ফেরােণ্ডা কোনাে কাজে বাইরে গেলে আমা’কে দরজা তালা বন্ধ করে রেখে যায়।

তাই স্বীকারােক্তি করবার পূর্বে আমি জানতে চাই এই অ’বস্থা থেকে আমা’র মুক্তির পথ কি? এই অ’ত্যাচার কি আমি সহ্য করেই যাব? আমি একটা’ পথ না পেলে স্বীকারােক্তি করেই বা কি হবে, ঐ কোনাে ব্রত পালন করেই বা কি লাভ হবে?

মঠাধ্যক্ষ তাে খুব আনন্দিত। শিকার আপনিই ধরা দিচ্ছে। তার পরবর্তী কাজ খুব সহজ হবে।

মঠাধ্যক্ষ তাকে বলল, কন্যা তােমা’র মতাে সুন্দরীর পক্ষে এমন জীবনযাপন করা কঠোর শাস্তি বি’শেষ। দেখছি যে তােমা’র স্বামী অ’ত্যন্ত ঈর্ষাপরায়ণ। তােমা’র জন্য আমি অ’ত্যন্ত কষ্টবােধ করছি। অ’রে আমি আপাততঃ একটা’ পথ দেখতে পাচ্ছি। ফেরােশো কে ঈর্ষামুক্ত হতে হবে। সে তােমা’কে না বললেও তােমা’র চরিত্রের ওপর সে বি’শ্বাস স্থাপন করতে পারছে না। এটা’ এরকম রােগ। তাকে এই রােগ থেকে মুক্ত হতে হবে। তবে তুমি নিশ্চিত হও। ঈর্ষা ও স্ত্রীর চরিত্রে অ’বি’শ্বাস এই উভয় রােগ থেকে আমি ওকে মুক্ত করতে পারি। আমা’র কাছে ওষুধ আছে কিন্তু সমস্ত ব্যাপার তােমা’কে গােপন রাখতে হবে।

ফাদার আপনি সেজন্যে ভাববেন না। আমি কথা খুব গােপন রাখতে পারি। কি করে আমি যা থেকে মুক্তি পাব শুধু সেইটুকু বলুন।

ফাদার বলল, তুমি যদি স্বামীকে রােগমুক্ত করতে চাও তাহলে তাকে গির্জার পারগেটা’রিতে বল থাকতে হবে। পাপ স্খলন করে সংশােধিত হবার জন্যে একটি বি’শেষ ঘর আছে। অ’বশ্য জীবি’ত লােক পারগেটা’রিতে যেতে পারে না। মৃ’ত্যুর পর সেখানে যাবার অ’ধিকার। এই সংশােধনালয় নরকেই আছে কিন্তু আমি দুষ্ট ও পাপীদের সংশােধন করার জন্যে গির্জার মধ্যেই একটি পারগেটা’রি করে রেখেছি।

কিন্তু ফাদার জীবি’ত থেকে সে কি করে পারগেটা’রিতে যাবে?

ফাদার বলল, তাকে মরতে হবে তবেই সে পারগেটা’রিতে যাবে। যখন সেখানে সে যথেষ্ট শাস্তি ভােগ করে ঈর্ষা ও অ’বি’শ্বাস থেকে মুক্ত হবে আমরা তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব। সে দায়িত্ব দয়াবান ঈশ্বরের।

তাহলে আমি কি বি’ধবা হবাে?

হ্যা, সাময়িক, কিছুদিনের জন্য। কিন্তু এই সময়ে তুমি যেন পুনরায় বি’বাহ করাে না, কারণ যদি বি’বাহ করাে তাহলে ঈশ্বর কুপিত হবেন। তাছাড়া ফেরােণ্ডো তাে ফিরে আসবেই ইতিমধ্যে তুমি বি’বাহ করলে তােমা’র অ’বস্থা কি হবে? ফেরােশো আরও ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তােমা’কে হয়ত খুন করেই ফেলতে পারে অ’তএব আমা’দের কার্যসিদ্ধি হবে না।

বুঝেছি ফাদার। আমা’র স্বামী রােগমুক্ত হলেই আমি খুশি কারণ আমি তালাবন্ধ হয়ে থাকতে চk না। আপনি যা ভালাে বুঝবেন তাই করুন।

ফাদার হেসে বলল, বাঃ এই তাে বেশ বলেছ। কিন্তু মেয়ে আমি যে তােমা’র জন্য এত করবাে তুমি আমা’কে কি পুরস্কার দেবে?

মেয়ে বলল, পুরস্কার যদি দিতেই হয় তাে আপনি যা চাইবেন আমি তাই দেব। তবে আপনার মত মহা’ন পুরুষকে আমি কিই-বা দিতে পারি?

ম্যাডাম আমি তােমা’র জন্যে যতটা’ করবাে তুমিও আমা’র জন্যে ততটা’ই করতে পার। আমি যেমন তােমা’র সুখ ও শান্তির জন্যে কিছু করতে যাচ্ছি তেমনি তুমিও আমা’র সুখ ও শান্তির জন্যে সবই করবে।

মহিলা উত্তর দিল, নিশ্চই ফাদার। আমি আপনার সুখ ও শান্তির জন্যে সবই করবাে। ফাদার কি চায় তা তাে আর মহিলা অ’নুমা’ন করতেই পারে নি তাই দৃঢ়তার সঙ্গে এই উত্তর দিয়েছিল।

ফাদার বেশ স্পষ্ট করে বলল, তােমা’কে কি করতে হবে জান? তুমি নিজেকে আমা’র কাছে সমর্পণ করবে, তােমা’র প্রেম আমা’কে দেবে, তােমা’র দেহ আমা’কে দেবে, আমি তা ভােগ করবাে। তােমা’র জন্যে আমি জ্বলে পুড়ে মরছি।

ফেরােণ্ডো র স্ত্রী যেন নিজের কানকেও বি’শ্বাস করতে পারল না। যাকে ধর্মপরায়ণ জেনে ভক্তি করে, তার কাছ থেকে সে এ কি কথা শুনছে? সে সরবে বলল, ফাদার আপনি আমা’কে এ কথা বলছেন? আমি জানি আপনি একজন সাধুপুরুষ, সেন্ট, কোনাে সেন্ট কি এমন প্রস্তাব করতে পারে? বি’শেষ করে যে মহিলা বি’পদে পড়ে তার শরণাপন্ন হয়েছে?

বি’স্মিত হয়াে না হৃদয়েশ্বরী। এর দ্বারা সাধুতা নষ্ট হয় না। সাধুতা বি’রাজ করে আত্মা’র মতে সেখানে তার আসন চিরস্থায়ী, পাকা। তােমা’র কাছে আমি যা চাইছি তা হল দেহগত পাপ। তোমা’র এতই নয়ন ভােলানাে যে তা প্রত্যাখ্যান করা যায় না, আমিও করছি না। শােনাে মেয়ে তােমা’র রূপে, প্রশংসা করছে একজন সাধুপুরুষ যাকে তুমি বলছ সেন্ট; একজন সেন্ট যদি কোনাে নারীর রূপের প্রশংসা করে তাকে কামনা করে তবে এটা’ তার ভাগ্য এবং গৌরব কারণ সেন্টরা স্বর্গের রূপ দেখতে অ’ভ্যস্ত, স্বর্গ ছেড়ে মা’নবীকে কামনা তাে যে কোনাে মা’নবীর পক্ষে কাম্য হওয়াই স্বাভাবি’ক। তাছাড়া আমি যাজক হলেও আমিও তাে মা’নুষ এবং তুমি দেখতেই পাচ্ছ আমি এখনও যুবক। আমা’র অ’নুরোধ রক্ষা করা তােমা’র পক্ষে কঠিন হবে না এবং তােমা’র তাে সহযােগিতা করা প্রয়ােজন কারণ ফেরােশো যতদিন পরগেটা’রিতে থাকবে সেই সময়ে প্রতি রাত্রে আমি তােমা’র কাছে আসব। তােমা’র স্বামী যেভাবে তােমা’কে তৃপ্ত করতাে আমিও তাই করবাে। আমা’দের কেউ সন্দেহ করবে না কারণ আমি তে সন্দেহের অ’তীত এবং তােমা’র বি’রুদ্ধেও কখনও কোনাে নিন্দা কেউ রটনা করে নি। তােমা’র প্রতি এই যে বি’শেষ প্রস্তাব করে অ’নুগ্রহ করছি তা তুমি প্রত্যাখ্যান করাে না কারণ এই অ’নুগ্রহ শত শত নারী কামনা করে। বরঞ্চ এতে তােমা’র লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। আর একটা’ কথা, তােমা’কে প্রলােভিত করার জন্যে বলছি না, আমা’র কিছু মূল্যবান হীরে জহরত আছে এবং সেগুলি’ তুমিই পাবে। এতএব প্রিয়তমা’ তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাে না। আমি তােমা’র জন্যে সানন্দে যে কাজ করছি তুমিও স্বেচ্ছায় তার প্রতিদান দাও।

ফেরােণ্ডো -পত্ন দ্বি’ধায় পড়ল, মঠাধ্যক্ষের প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়া অ’ন্যায় অ’থচ তাকে কি করে প্রত্যাখ্যান করবে বুঝতে না পেরে সে মা’টির দিকে নীরবে চেয়ে রইল। তার চোখ ছলছল করছে। কি বলবে, কি করবে স্থির করতে পারছে না।

মঠাধ্যক্ষ বুঝতে পারল মেয়ে উভয় সংকটে পড়েছে তবুও ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে সে রাজি হবে। ধূর্ত মঠাধ্যক্ষ আগে যা বলেছিল তা আর একবার বলল এবং নতুন কিছু যুক্তি দেখিয়ে রাজি হয়ে যেতে বেশ জোর দিয়েই বলল এবং এই সঙ্গে মেয়ের সুপ্ত বাসনা জাগিয়ে তুলল। যা কিছু করা হচ্ছে তোমা’দের মঙ্গলের জন্যেই করা হচ্ছে বলে মঠাধ্যক্ষমশাই তার বক্তব্য শেষ করলাে।

ফেরােশো পত্নীর বাধন আলগা হল, সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, সে নারীসুলভ লজ্জাবনত কণ্ঠে বলল, বেশ তাই হবে কিন্তু ফেরােণ্ডো পারগেটরিতে না যাওয়া পর্যন্ত আমি কিছু করতে পারব না।

অ’্যাবট মা’নে মঠাধ্যক্ষ এবার আনন্দে বুঝি ফেটে পড়বে। উল্লসিত হয়ে বলল, সে ভার আমা’র। পর ছেড়ে দাও, আমি এখনি তার ব্যবস্থা করছি, তুমি তাকে কাল বা পরশু আমা’র কাছে পাঠিয়ে দিও।

কথা শেষ করে অ’্যাবট তার আঙুলে হীরে বসানাে চমৎকার একটি সােনার আংটি তার আঙুলে পবি’য়ে দিল। উপহা’র পেয়ে মনে মনে খুশি হয়ে মহিলা বাড়ি চলে গেল। সে ভাবল আরও এইরকম গয়না পাওয়া যাবে। বাড়ি ফিরে অ’্যাবটের প্রশংসায় মহিলা পঞ্চমুখ, অ’মন সাধুপরুষ নাকি হয় না।

কয়েকদিন পরে ফেরােণ্ডো গির্জায় গিয়ে ফাদারের সঙ্গে দেখা করলাে। ফাদার একবার এশিয়াখণ্ডে গিয়েছিলেন, সেইসময়ে হিমা’লয়ের কোনাে এক ঋষি তাকে একটা’ চুর্ণ দিয়ে বলেছিল এই চূৰ্ণর অ’দ্ভুত গুণ। এই চুর্ণ সামা’ন্য পরিমা’ণে কোনাে মা’নুষকে খাইয়ে তাকে দীর্ঘদিন ঘুম পাড়িয়ে রাখা যায় এবং ইচ্ছামতাে ফিরিয়ে আনা যায়। ঘুমন্ত অ’বস্থার সময় সে স্বর্গসুখ অ’নুভব করবে। চূর্ণে মা’ত্রা কম বেশি করে ঘুমের সময় কম বেশি করা যাবে। একটা’ মজা আছে। ঘুমন্ত ব্যক্তিকে মৃ’ত বলে মনে হবে।

ফেরােণ্ডোকে বসিয়ে ফাদার ঘরে ঢুকে সেই চুর্ণ এমন মা’ত্রায় নিলেন যাতে ফেরােণ্ডো তিনদিন ঘুমা’েতে পারে। তারপর একটা’ গেলাসে কিছু পরিমা’ণে ঘােলাটে মদ ঢেলে তার সঙ্গে সেই চূর্ণ মিশিয়ে ফেরােশো কে পান করতে বললেন।

ফেরােণ্ডোসেটি পান করলে অ’্যাবট তার হা’ত ধরে আর একটা’ ঘরে নিয়ে এলেন। পান করার পর ফেরােণ্ডোর পা টলছিল।

সেই ঘরে ফেরােণ্ডোকে বসিয়ে দেওয়া হল। কয়েকজন যাজক বসে ফেরােণ্ডোর বােকামি নিয়ে | ঠাট্টা’তামা’শা করছিল। ফেরােণ্ডো বসে বসে ঝিমা’েচ্ছিল। তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে শুয়ে পড়ল এবং সঙ্গে সঙ্গে অ’চেতন।

অ’্যাবট তাে সব জানে সেই চূর্ণ খাবার পর কি হবে অ’থচ কিছু না জানার ভান করে ফেরােণ্ডের ওপর ঝুকে পড়ে দেখতে লাগল লােকটা’র কি হল। দেখে মনে হচ্ছে ও মরে গেছে। ঘরে সমবেত যাজককরাও পরীক্ষা করলাে। তার কজিতে নাড়ী পাওয়া গেল না, বকেও কোনাে শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। অ’নেক চেষ্টা’ করেও তাকে বাঁচানাে গেল না, জামা’কাপড় আলগা করে চোখেমুখে জল ছেটা’নাে হল এবং আরও কিছু ক্রিয়া-প্রক্রিয়া করা হল কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না, লােকটা’ মরেই গেল। আর কিছু করার নেই।

স্ত্রী ও আত্মীয়দের খবর দেওয়া হল। সকলে খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে এলাে এবং ফেরােণ্ডোর মৃ’তদেহ ঘিরে সকলে কিছুক্ষণ ক্রন্দন ও শােকপ্রকাশ করার পর ফেরােণ্ডো যেসব পােশাক পরে ছিল সেইসব পরিয়েই অ’্যাবট তাকে কবরে শােয়ালেন।

বাড়িতে ফেরােণ্ডো ও তার স্ত্রীর একটি ছােট বালক ছিল। বালককে স্ত্রী বলল যে সে তার বাকি জীবন এখানেই অ’তিবাহিত করবে। সেই অ’নুসারে সে বালকটিকে প্রতিপালন ও ফেরােণ্ডোর বি’ষয়সম্পত্তির তদারকি করতে লাগল।

এদিকে মা’ঝরাতে অ’্যাবট শয্যাত্যাগ করলাে এবং সেইদিনই বলােনা থেকে আগত তার অ’ত্যন্ত বি’শ্বাসী একজন যাজককে ঘুম থেকে তুলে কবরখানায় গিয়ে মৃ’তবৎ ফেরােণ্ডোকে তুলে এনে ছােট একটা’ অ’ন্ধকূপে শুইয়ে দিল। বলা নিষ্প্রয়ােজন যে এই অ’ন্ধকূপে কোনাে জানালা নেই অ’তএব আলােরও কোনাে প্রশ্ন নেই। যেসব যাজক নিয়ম ভঙ্গ করে তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্যে এই অ’ন্ধকূপে আটক রাখা হয়।

ফেরােণ্ডোকে শুইয়ে দেবার পর সে যে পােশাক পরেছিল সেই পােশাক খুলে সন্নাসীরা মঠে যে পােশাক পরে সেই পােশাক পরিয়ে দেওয়া হল এবং খড়ের বি’ছানায় শুইয়ে দেওয়া হল। যে পর্যন্ত না তার চেতন ফিরে আসবে সে পর্যন্ত সে এখানেই একভাবে পড়ে থাকবে। বলােনার সেই সন্ন্যাসী ফেরােণ্ডের ওপর নজর রাখবে, কি করতে হবে সেসব নির্দেশ অ’্যাবট তাকে বলে দিল। সমস্ত ব্যাপারটা’ গােপন রাখা হল, বাইরের কোনাে লােক জানল না।

পরদিন অ’্যাবট দু’ একজন যাজক সঙ্গে নিয়ে ফেরােণ্ডোর বাড়ি গিয়ে স্ত্রীর প্রতি সমবেদনা জানত ‘মৃ’ত আত্মা’র প্রতি সম্মা’ন জানাল। এরই ফাকে এক সময়ে মহিলাকে অ’্যাবট তার প্রতিজ্ঞা মনে করিয়ে দিল। এই সময় মহিলা অ’্যাবটের আঙুলে আরও একটি রত্নখচিত আংটি ঝলসে উঠতে দেখল। মহিলারও চোখ চকচক করে উঠল, ঐ আংটি তার আঙুলে আসবে। সে তাে এখন স্বাধীন মুক্ত, তাতে। বাধা দেবার কেউ নেই। অ’্যাবটকে সে বলল, আমা’র মনে আছে, সন্ধ্যার পর অ’ন্ধকার হলে এসাে, অ’ সব ব্যবস্থা করে রাখব।

সকলের শ্রবণযােগ্য কণ্ঠস্বরে সকলের সমক্ষে অ’্যাবট কিছু সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে এবং এর মৱে মহিলাকে চোখ মটকে ইশারা করে বি’দায় মিল। ঠিক থেকো আমি আসব।

সন্ধ্যার পর অ’্যাবট ফেরাণ্ডোর পােশাকগুলি’ পরে সঙ্গে বলােনার সেই বি’শ্বাসী সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে অ’ন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে প্রেয়সীর বাড়ি হা’জির হল। রাস্তা পরিষ্কার। বৃথা সময় নষ্ট না করে অ’্যাবট সােজা গিয়ে উঠল প্রেয়সীর সয়নকক্ষে এবং বাছা বাছা প্রেমবুলি’ বলে বরফ গলি’য়ে প্রেয়সীকে নিয়ে খাটে তুলল। দুজনে সারা রাত্রি পরস্পরের দৃঢ় বাহবন্ধনে সপ্তম স্বর্গে উঠে পরমা’নন্দে সারা রাত্রি কাটা’ল। ভাের হবার আগে অ’্যাবট গির্জায় ফিরে গেল। এরপর থেকে গির্জার অ’ন্যান্য নিত্যকর্মের মতো প্রতিদিন রাত্রে ফেরাণ্ডোর বাড়ি গিয়ে তার পত্নীর বাহুবন্ধনে নিশিযাপন করাও অ’্যাবটের আরও এক দৈনন্দিন কর্ম হল।

এই যাতায়াতের পথে কেউ কেউ হয়ত মৃ’ত ফেরােণ্ডোর পােশাকে অ’্যাবটকে দেখে থাকবে কিন্তু অ’ন্ধকারে চিনতে না পেরে তারা মনে করতাে ফেরােণ্ডোর ভূত বুঝি ঘুরে ঘুরে কৃতপাপের জন্য দণ্ড দিচ্ছে। অ’তএব সরল অ’ধিবাসীদের মধ্যে নানারকম কাহিনী ও গুজব শােনা যেতে লাগল। কিছু ফেরােণ্ডোর পত্নীর কানেও পৌছল কিন্তু সেজন্য সে মা’েটেই চিন্তিত হল না, হবার কোনাে কারণ নেই। কেউ তাে আর জানে না যে পরমশ্রদ্ধেয় মঠাধ্যক্ষমশাই পরস্ত্রীর কোমল অ’ঙ্কে নিশিযাপন করছে।

ওদিকে মৃ’ত ফেরােণ্ডো বেঁচে উঠল। তার চেতনা ক্রমশ ফিরে এলাে। সে একেবারেই বুঝতে পারল না কোথায় না কোথায় আছে এবং অ’ন্ধকারে চোখ সইয়ে নিয়ে কিছু দেখবার আগেই তাকে কেউ একগুচ্ছ ছড়ি দিয়ে বেদম প্রহা’র করতে আরম্ভ করলাে, যন্ত্রণায় সে বি’কটভাবে চিৎকার করতে আরম্ভ করলো।

ব্যাপারটা’ হল কি বলােনাের সেই সন্ন্যাসী ফেরােণ্ডের ওপর নজর রাখছিল। তাকে জেগে উঠতে দেখেই অ’্যাবটের নির্দেশ অ’নুসারে একগুচ্ছ পাচনবাড়ি দিয়ে তাকে সজোরে মা’রতে লাগল। আর ফেরােণ্ডো বাবা গাে, মা’ গাে বলে কানফাটা’ চিৎকার করতে লাগল। আর কাদতে কাঁদতে জিজ্ঞাসা হতে লাগল।

আমি কোথায় ?
সন্ন্যাসী উত্তর দিল, তুমি পারগেটরিতে আছ।
কি বললে? আমি কি তাহলে মরে গেছি?
তবে কি ভাবছ তুমি বেঁচে আছ? সন্ন্যাসী বলল।

একথা শুনে ফেরােণ্ডো হা’য় হা’য় করে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলতে লাগল, তাহলে আমা’র স্ত্রী  ছেলেটা’র কি দশা হবে? ওদের কে দেখবে? হা’য় হা’য় আমা’র সর্বনাশ হয়ে গেল।

সন্ন্যাসী এবার তাকে কিছু খাদ্য ও পানীয় এনে দিল। ফেরােণ্ডো অ’বাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাে, মরা মা’নুষ খায় নাকি?

সন্ন্যাসী বলল, হ্যা খায়, বলতে কি এই যে খাবার আমি তােমা’কে দিলুম সে খাবার ঐ মহিলা আজ পাঠিয়ে দিয়েছে, যে মহিলা তােমা’র পত্নী ছিল কিন্তু এখন বি’ধবা। সে আরও বলে পাঠিয়েছে যে তার আত্মা’র জন্যে যেন গির্জায় ভজন গান করা হয়। সেই ভজন যা যীশুর শেষ নৈশভােজের সময় হওয়া হয়েছিল, সেই গানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফেরােণ্ডোর ধারণা সে মৃ’ত, বলল ঈশ্বর তার মঙ্গল করুন। মরবার আগে আমি তাকে ভীষণ ভালসাতুম, বলতে কি সারারাত্রি আমি তাকে জড়িয়ে ধরে থাকতুম, আমরা চুম্বন যে কতক্ষণ ধরে করেছি তার হিসেব রাখি নি। আর যখন আমা’দের মেজাজ আসত তখন আরও কিছু করতুম।

তার প্রচণ্ড ক্ষিধে পেয়েছিল, এখন গােগ্রাসে গিলতে লাগল কিন্তু মদটা’ তার তেমন পছন্দ হল না। সে চেঁচিয়ে উঠল, দুর কি মদ পাঠিয়েছে? দেওয়ালের ধারে যে পিপেটা’ আছে সেই পিপের মদ পাঠায়নি।

খাওয়া শেষ হবার পর সন্ন্যাসী তাকে ধরে আবার প্রহা’র করতে লাগল। ফেরােণ্ডে প্রহা’র সহ্য করতে না পেরে আপত্তি জানিয়ে বলল, তুমি আমা’কে এমন প্রহা’র করছাে কেন? কারণটা’ কি?

ভগবান আদেশ দিয়েছেন তােমা’কে রােজ দু’বার এইভাবে প্রহা’র করতে হবে, সন্ন্যাসী বলল।

কেন? আমা’কে প্রহা’র করা হবে কেন? আমি কি করেছি?

কি করেছ? তােমা’দের অ’ঞ্চলে তােমা’র স্ত্রী ছিল সর্বাপেক্ষা গুণবতী কিন্তু তুমি তাকে সর্বদা সন্দেহ করে আগলে রাখতে, কোনাে স্বাধীনতা দাও নি।

সেন্ট তুমি তাে ঠিকই বলেছ দেখছি। সত্যিই সে গুণবতী এবং ভারি মিষ্টি মেয়ে ছিল। মিস্টি অ’পেক্ষা মিষ্টি ছিল তবে আমি তাকে সন্দেহ করতুম না। আমা’র ভয় ছিল আমা’র সুন্দরী ও গুণবতী পত্নীর দিকে যদি কেউ কু-নজর দেয়। আমি তাকে নিশ্চয়ই আগলে রাখতুম না, যদি জানতুম যে ভগবান কুপিত হচ্ছেন।

তুমি যখন জীবননদীর ওপারে জীবি’ত ছিলে তখনই তাে তােমা’র একথা ভাবা উচিত ছিল। সন্ন্যাসী বলল, দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই তােমা’র নিজেকে সংযত করা উচিত ছিল তাহলে তােমা’কে আমা’র হা’তে এমন বি’ষম প্রহা’র সহ্য করতে হতাে না। যদি তুমি দৈবাৎ তােমা’র মনুষ্যজীবন ফিরে পাও তাহলে স্ত্রীকে আর যন্ত্রণা দিয়াে না।

কিন্তু এটা’ তাে ঠিক মা’নুষ একবার মরে গেলে আর বাঁচে না।

ভগবান ইচ্ছা করলে কেউ কেউ আবার জীবন ফিরে পায়।

ফেৱােণ্ডে বলল, আহা’ আমা’র ভাগ্যে তা কি হবে? যদি জীবন ফিরে পাই, আবার মা’নুষ হই তাহলে আমি আমা’র পত্নীর কাছে প্রমা’ণ করবাে যে আমিই সেরা স্বামী। আমা’র তুল্য স্বামী আর নেই তাকে আর বকবাে না, মা’রবও না তবে এই যে সুরাটা’ পাঠিয়েছে সেটা’ সম্বন্ধে অ’ভিযােগ করবাে। আহ একটা’ অ’ভিযােগ আছে, খাবারের সঙ্গে সে একটা’ মা’েমবাতি পাঠাল না কেন? আমা’কে অ’ন্ধকারে খেতে বলল

কয়েকটা’ মা’েমবাতি পাঠিয়েছিল, সেগুলাে গির্জায় ভজন গানের সময় জ্বালানো হবে।

ঠিক বলেছ, তাই হবে বােধহয়। তবে শােনো আমি যদি আবার জীবন ফিরে পাই আমি তাকে আর কিছু বলবাে না, সে যা ইচ্ছে করবে কিন্তু একটা’ কথা তুমি আমা’র সঙ্গে এরকম নিষ্ঠুর ব্যবহা’র করছে কেন? তুমি কে?

সন্ন্যাসী বলল, আমিও তাে তােমা’র মতাে মৃ’ত। আমি সাড়ডিনিয়াতে জন্মেছিলুম কিন্তু আমি আমা’র মনিবকে অ’পমা’ন করেছিলুম, সেজন্যে ভগবান আমা’কে শাস্তি দিয়েছেন এবং আমা’র ওপর আদেশ দিয়েছেন তােমা’কে খাওয়াতে হবে ও প্রহা’র করতে হবে যে পর্যন্ত তিনি তােমা’র জন্যে অ’ন্য ব্যবস্থা না  করেন।

ফেরােণ্ডে জিজ্ঞাসা করলাে, এখানে আমরা দু’জন ছাড়া আর কেউ আছে কি?

সন্ন্যাসী বলল, হা’জার কয়েক আছে তবে আমরা তাদের দেখতে বা শুনতে পাচ্ছি না, আর তারাও আমা’দের দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে না।

আমি আমা’র বাড়ি থেকে কতদূরে আছি?

সে আমি বলতে পারব না, অ’নেক দূর, আমা’র হিসেবের বাইরে, সন্ন্যাসী উত্তর দিল।

তাহলে মনে হয় আমা’দের গ্রহ পৃথিবী ছাড়িয়ে অ’ন্য জায়গায় অ’নেক দূরে আছে, তাই না?

দু’জনের মধ্যে এই ধরনের এলােমেলাে কথাবার্তা, আহা’র পানীয় ও প্রহা’র নিয়মিতভাবে দশমা’স ধরে চলল আর এই দশমা’স অ’্যাবট মহা’নন্দে ফেরােণ্ডোর পত্নীকে যথা ইচ্ছা ভাবে উপভােগ করলাে। মহিলাও সমা’নে সহযােগিতা করলাে।

এমন যখন অ’বস্থা তখন দুর্ঘটনা তাে ঘটতে পারে। ফেরােণ্ডোর বৌ গর্ভবতী হয়ে পড়ল। তার বৌ অ’্যাবটকে বলল এবার আর দেরি না করে আমা’র স্বামীকে পারগেটা’রি থেকে নিয়ে এসাে। ফেরােণ্ডোর মনে বি’শ্বাস জন্মে দিতে হবে যে, তার স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ার জন্যে সেই-ই দায়ী। অ’্যাবট বলল, সে-জন্যে চিন্তা নেই, সব ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।

পরদিন রাত্রে অ’্যাবট ফেরােণ্ডোর অ’ন্ধকূপে প্রবেশ করল। তারপর কণ্ঠস্বর পালটে ফেরােণ্ডের উদ্দেশ্যে বলল, ফেরােণ্ডো আনন্দ করাে, তােমা’র জন্যে সুসংবাদ আছে, ঈশ্বরের ইচ্ছেয় তুমি আবার মা’নুষ হয়ে পৃথিবীতে তােমা’র প্রিয়তমা’ পত্নীর কাছে ফিরে যেতে পারবে। তােমা’র পত্নী তােমা’কে একটি পুত্রসন্তান উপহা’র দেবে। তুমিই এই সন্তানের পিতা। সন্তানের নাম রাখবে বেনেডিক্ট কারণ ঈশ্বরের প্রিয় ঈশ্বরের সেন্ট বেনেডিক্টের দয়ায় তুমি এই পুত্রসন্তানটি লাভ করেছ।

একসঙ্গে দুটো সুসংবাদ শুনে ফেরােশো বুঝি আনন্দে ফেটে পড়বে।

সে বলল, আমা’র যে কি আনন্দ হছে সে আর কি বলব? শ্রীযুক্ত ভগবানকে, অ’্যাবটমশাইকে, সেন্ট বেনেডিক্টকে এবং আমা’র দুষ্টুমিষ্টি-মিছরি মধু, হা’সিখুশি বৌটিকে কি বলে ধন্যবাদ জানাব ভেবে পাচ্ছি না।

অ’্যাবট বলল, তুমি খুশি তাে ফেরােণ্ডো, বেশ এবার তাহলে একটু সুরাপান করাে, বলে অ’্যাবট তার হতে গেলাস ধরিয়ে দিল। সুরার সঙ্গে এমন পরিমা’ণে সেই চূর্ণ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাতে সে চারঘণ্টা’ গভীর নিদ্রায় অ’চেতন হয়ে যেতে পারে। ও ঘুমিয়ে পড়তেই ওকে তার পােশাক পরিয়ে দেওয়া হল, তারপর বলােনার সেই বি’শ্বাসী সন্ন্যাসীর সহা’য়তায় তাকে আবার সেই কবরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হল, তবে যাতে সে নিশ্বাস নিতে পারে এজন্যে একটি ছিদ্র ছিল।

নতুন ভিডিও গল্প!

পরদিন ভাের হবার কিছু পরে তার ঘুম ভাঙল। একটা’ ফুটো দিয়ে সে বাইরের আলাে দেখতে পেল। গত দশমা’স সে অ’ন্ধকূপে ছিল, একটুও আলাে দেখতে পায় নি। এখন আলাে দেখতে পেয়ে সে বি’শ্বাস করলাে তাহলে সে বেঁচে আছে। সে চিৎকার করতে লাগল, কে আছ? এই ঢাকা তুলে দাও, আমি বেরােব।

সেই সঙ্গে সে কবরের ঢাকা তােলবার চেষ্টা’ করতে লাগল। বেশ জোরে ঠেলা দেবার ফলে ঢাকা উঠতে আরম্ভ করলাে। গির্জার সাধু সন্ন্যাসীর তখন সবেমা’ত্র ভােরের প্রার্থনাসঙ্গীত শেষ করেছে। তার ফেরাণ্ডোর কণ্ঠস্বরে আকৃষ্ট হয়ে যখন কবরখানায় এসে পৌছল তখন ফেরােণ্ডো কবর থেকে বেরােতে আরম্ভ করেছে। সাধুসন্ন্যাসীরা এই অ’বি’শ্বাস্য দৃশ্য দেখে ছুটে গিয়ে হা’ঁফাতে হা’ঁফাতে অ’্যাবটকে এই খবর দিল।

অ’্যাবট যেন তখন চোখ বুজে প্রার্থনা করছিল। চোখ খুলে বলল, পুত্রগণ ভয় পাবার কি আছে ? কুশ ও পবি’ত্র বারি নিয়ে আমা’র সঙ্গে এসাে, চলে গিয়ে দেখি দয়াময় ঈশ্বর আমা’দের কি দেবেন। শিষ্যদের নিয়ে অ’্যাবট কবরের পাশে এলাে।

ফেরােণ্ডো তখন সবে কবর থেকে বেরিয়েছে। তার শরীরের মুখ ও যে অ’ংশ দেখা যাচ্ছে সেসব সাদা, যেন রক্তশূন্য ও বর্ণহীন। এমন অ’বশ্য হতে পারে কারণ দীর্ঘ দশমা’স তার গায়ে একটুও রোদ লাগে নি।

যাজককে দেখে সে তার পায়ে পড়ে বলল, ফাদার আমি পারগেটরির পীড়ন থেকে মুক্তি পেয়ে জীবন ফিরে পেয়েছি। আমি শুনেছি যে আপনার ও আমা’র স্ত্রীর প্রার্থনা এবং সেই আশীর্বাদে মঙ্গলময় ঈশ্বর আমা’কে মুক্তি দিয়েছেন। মঙ্গলময় আপনার মঙ্গল করুন।

তিনি সর্বত্র বি’রাজ করছেন, সবই দেখছেন, যাতে আপনার উত্তরােত্তর শ্রীবৃদ্ধি হয় তাও তিনি দেখবেন।

উত্তরে অ’্যাবট বললেন, নিশ্চয়ই, মঙ্গলময় আছেন বলেই আমরা সবাই আছি। তারই অ’সীম দয়ায় তুমি ফিরে এসেছ পুত্র। এখন তােমা’র পত্নীর কাছে ফিরে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দাও কারণ তুমি ইহজগৎ ছেড়ে চলে যাবার পর থেকে সে বেচারী এতদিন ধরে নিরন্তর চোখের জল ফেলেছে। এখন তাকে যত্নে রাখবে, কখনও অ’বহেলা করবে না। স্ত্রীকে যেমন নিত্যসঙ্গী করবে তেমনি ঈশ্বরকেও নিত্যসঙ্গী করবে। আপদে-বি’পদে এদের তুল্য বন্ধু আর কেউ নেই।

ফাদার আপনি আমা’কে উত্তম উপদেশ দিয়েছেন, এতে কোনাে ভুল নেই, আমা’কে এখন ছেড়ে দিন। আমি বৌকে এত ভালবাসি যে তাকে দেখামা’ত্র আমি তাকে জড়িয়ে ধরে দারুণ একটা’ চুম্বন দেব।

অ’্যাবট এবার নিশ্চিন্ত হয়ে ভাবতে লাগলেন কি একটা’ রােমা’ঞ্চকর ঘটনা ঘটে গেল। সবই প্রভুর ইচ্ছা। তােমরা সব কোথায় গেলে, এসাে প্রার্থনার সময় হয়েছে, সকলে মিলে তার ভজন গান করি।

ফেরােণ্ডো যখন তার গ্রামে পৌছল তখন তাকে দেখে ভূত মনে করে সকলে পালাতে লাগল এমনকি তার পত্নীও তার অ’কস্মা’ৎ আবি’র্ভাবে প্রথম ভয় পেয়েছিল, কিংবা ভয় পাবার ভান করেছিল। ফেরােণ্ডে সকলকে ডেকে বলল যে সে ভূত নয়, ভগবানের দয়ায় সে আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

যখন সকলে বি’শ্বাস করলাে যে, এই লােক সত্যিই তাদের ফেরাণ্ডো, তার ভূত নয় তখন সকলে পরলােক সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন করতে লাগল। সে-ও ডালপালায় বি’স্তারিত করে পারগেটরির জীবন বলতে লাগল, শুধু তাই নয় পরিচিত অ’নেকের ভবি’ষ্যত বলে দিল। সে নাকি দেখে এসেছে পরলােকের খাতায় কার নামের নিচে কি লেখা আছে। তার কথা কেউ বি’শ্বাস করলাে, কেউ করলাে না।

স্ত্রী কাছে বি’ষয়সম্পত্তি বুঝে নিয়ে নিজের বাড়িতে স্থায়ী হয়ে বসল। সেইসঙ্গে সদ্যোজাত সন্তান পেয়ে তার আনন্দের সীমা’ নেই। তার বি’শ্বাস এই সন্তান তারই ঔরসে তার স্ত্রীর গর্ভে জন্মেছে। এই জড়বুদ্ধিসম্পন্ন মা’নুষটির ধারণা দশমা’স পূর্ণ হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় কিন্তু সেটা’ যে ন’মা’স তা সে জানে না। দশমা’সের মা’থায় এসে তাই সে বি’শ্বাস করেছিল এ সন্তান তার না হয়ে যায় না। সে পুত্রের নাম রাখল বেনেডেট্টো ফেরােণ্ডে।

তার পাড়াপড়শী সকলে বি’শ্বাস করলাে ফেরােণ্ডো সত্যিই পরলােকে থেকে ফিরে এসেছে। পরলােকের অ’নেক কাহিনী তার মুখ থেকে শুনে অ’নেকে বি’শ্বাস করলাে। তারা ধরে নিল এসবই সম্ভব হয়েছে অ’্যাবটের কৃপায়। তার প্রতি তাদের বি’শ্বাস যে পরিমা’ণে বৃদ্ধি পেল তার খ্যাতিও। সেই পরিমা’ণে উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল। লােকটা’ যে ভণ্ড একথা তারা কখনও চিন্তা করেনি।

ফেরােণ্ডোরও অ’নেক পরিবর্তন হল, যার মধ্যে প্রধান হল সে তার স্ত্রীকে আর নজরে রাখে । সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে অ’্যাবটকে বলেছিল আপনার উপদেশ আমি অ’ক্ষরে অ’ক্ষরে পালন করেছি। মা’ঝে দশ মা’স বাদ দিলে তার বৌ তার প্রতি যেমন অ’নুগত ছিল এখনও তেমন রইল।

তবে এবার সে স্বামীকে ভালবাসতে আরম্ভ করল। দাম্পত্যজীবনের স্বাদও সে পেল, তবে মা’ঝে মা’ঝে অ’্যাবটের কাছে যেতে হতাে বৈকি, তাকে সঙ্গদান করতে হতাে।

নবম গল্প

নারবােনের জিলেত ফ্রান্সের রাজার ফিশূলা সারিয়ে দিয়ে পুরস্কারস্বরূপ চাইল রুসিলনের বারট্রাণ্ডকে বি’য়ে করতে। বারট্রান্ড তার অ’নিচ্ছায় জিলেতকে বি’য়ে করলাে বটে কিন্তু সে বৌকে ছেড়ে ফ্লোরেন্স চলে গেল। বারট্রান্ড সেখানে এক যুবতীর প্রেমে পড়ল। জিলেত ফ্লোরেন্সে হা’জির হল এবং নিজে ঐ যুবতীর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যমজ সন্তানের জন্ম দিল। শেষে বারট্রান্ড জিলেতকেই ভালবাসল এবং পত্নীর মর্যাদা দিল।

লরেলতার গল্প শেষ হল এবং এবার নিয়মমতাে ডায়ােনিওর গল্প বলার পালা কিন্তু যে কোনাে কারণে হা’েক কুইন তাকে সে সুযােগ না দিয়ে নিজেই গল্প বলতে আরম্ভ করলেন। অ’বশ্য তাকে ইশারা করে বললেন আজকের শেষ গল্পটা’ তুমি বলবে। কুইন তার আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে আরম্ভ করলেন :

লরেতা এইমা’ত্র যে অ’পূর্ব কাহিনীটি শেষ করলাে তার চেয়ে উপভােগ্য গল্প বলা অ’বশ্যই কঠিন তবে আগে যারা আমা’দের গল্প শুনিয়েছে তাদেরও গল্প আমরা খুবই উপভােগ করেছি। জানি না আমা’র গল্প তােমা’দের কেমন লাগবে তবে আজকের জন্যে যে ধরনের গল্প বলা আমরা স্থির করেছিলুম আমা’র গল্পটি সেই নিয়মা’নুসারে প্রাসঙ্গিক হবে। এখন শুনে তােমরাই বি’চার করাে। ভালাে লাগলে বােলাে।

ফ্রান্স রাজ্যে একজন অ’ভিজাত ব্যক্তি বাস করতেন। তাঁর নাম ছিল আইনার্ড, কাউন্ট অ’ফ রুসিলন। তিনি নানারকম ব্যধিতে ভুগতেন এজন্যে তিনি চব্বি’শ ঘণ্টা’র জন্যে একজন বেতনভুক চিকিৎসক নিযুক্ত রেখেছিলেন। ডাক্তারের নাম ছিল মা’স্টা’র জেরার্ড, নারবােনে তার বাড়ি ছিল। তাকে ডাকলেই পাওয়া যেত। ডাক্তারের একটি কন্যা ছিল, নাম জিলেত।

রুসিলনের কাউণ্ট আইনার্ডের একটি বালক পুত্র ছিল। তাকে দেখতে বেশ সুন্দর ছিল,তার সরল ব্যবহা’রের জন্যে সকলে তাকে ভালবাসত। ছেলেটির নাম ছিল বারট্রাণ্ড। ছেলেটি পাড়ার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করতাে।

যদিও তাদের বয়স তখন কম, প্রেম করার উপযুক্ত বয়স তাদের তখনও হয়নি, তথাপি জিলেত বারট্রাণ্ডকে দারুণভাবে ভালবাসত। তার অ’দর্শন জিলেত সহ্য করতে পারত না।

অ’সুখে ভুগে কাউন্ট মা’রা গেলেন। মা’রা যাবার আগে কাউন্ট ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন তিনি মা’রা যাবার পর ছেলে বারট্রাণ্ডকে যেন প্যারিসে রাজার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রাজা তার গার্জেন হবেন, তার তদারকিতে বারট্রাণ্ডকে রাখা হবে। বারট্রাণ্ড প্যারিস চলে গেল, জিলেত বেচারী হতাশ হয়ে নীরবে চোখের জল ফেলতে লাগল।

কিছুদিন পরে জিলেতেরও বাবা মা’রা গেলেন। এখন সে বারট্রাণ্ডকে দেখবার জন্যে ও পুরনাে আলাপ ঝালি’য়ে নেবার জন্যে প্যারিসে গিয়ে কিছুদিন থাকতে পারে কিন্তু তা সম্ভব হল না। তার বাবা প্রচুর বি’ষয়সম্পত্তি রেখে গেছেন, সেসব দেখাশােনা না করলে আত্মীয়রা তা গ্রাস করে নেবে। আরও একটা’ ভয় ছিল। এখনও তাদের বি’য়ের বয়স হয়নি, এই বয়সে প্যারিসে গিয়ে বালক-বন্ধুর সঙ্গে প্রেম করলে নিন্দা রটবে। তার প্যারিস যাওয়া হল না।

দিন বসে থাকে না। জিলেতও কৈশোের পার হয়ে যুবতী হল। তার এখন বি’য়ের বয়স হয়েছে, সুন্দরী। তাকে বি’য়ে করার জন্যে যুবকেরা ঘুরঘুর করে, আত্মীয়রাও চাপ দেয় কিন্তু জিলেত কাউকে বি’য়ে করতে রাজি হয় না। সে তার বারট্রাণ্ডকে ভুলতে পারে নি।

জিলেত লোক মা’রফত শুনল যে বারট্রাণ্ড এখন অ’ত্যন্ত রূপবান এক যুবকে পরিণত হয়েছে। একথা শুনে জিলেতের প্রেমা’গ্নি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল। কি উপলক্ষ করে প্যারিসে যাওয়া যায় এবং বারট্রাণ্ডের দেখা পাওয়া যায় ?

এমন সময়ে জিলেত শুনল ফ্রান্সের রাজার বুকে মস্ত এক ফোড়া হয়েছে, সেই ফোড়া কিছুতেই সারছে না, তিনি খুব যন্ত্রণা ভােগ করছেন। অ’নেক চিকিৎসক চিকিৎসা করেছে কিন্তু কেউ কিছু করতে পারে নি, রাজার কষ্টের লাঘব হয়নি। বরঞ্চ চিকিৎসকরা তার যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিয়েছে; তাই তিনি বি’রক্ত হয়ে আর চিকিৎসা করাচ্ছেন না, যা হয় হবে। তিনি কারও পরামর্শও শুনছেন না।

রাজার অ’সুখে সকলে দুঃখিত কিন্তু খবর শুনে জিলেত উল্লসিত হল। এই সুযােগে রাজাকে দেখবার জন্যে সে প্যারিসে যেতে পারবে এবং চাই কি সে বারট্রাণ্ডকে বি’য়ে করার প্রস্তাবও পেশ সুতে পারে।

জিলেত তার বাবার কাছে কিছু কিছু চিকিৎসা বি’দ্যা আয়ত্ত করেছিল। রাজার ফোড়াটা’ কি ধরনের তা সে অ’নুমা’ন করেছিল। গাছগাছড়া থেকে চূর্ণ প্রস্তুত করে তার বাবা এই ধরনের ফোড়া অ’নেক সারিয়েছেন। প্রস্তুতপ্রণালী জিলেতের জানা ছিল। সে যত্নসহকারে সেই চুৰ্ণ তৈরি করে ঘােড়ায় চেপে প্যারিস যাত্রা করলাে। এই সুযােগে সে বারট্রাণ্ডের সঙ্গে দেখা করতে পারবে।

প্যারিসে পৌছে সে রাজার কাছে খবর পাঠাল যে, সে তার ফোড়াটি একবার দেখতে চায় কারণ তার কাছে ওষুধ আছে। রাজা শুনলেন মেয়েটি যুবতী ও সুন্দরী, তার আচরণ ও কথা বলার ভঙ্গি মন কেড়ে নেয়। রাজার রােগ আরােগ্য বাসনা নিয়ে সে বাইরে থেকে এসেছে। এমন মেয়েকে রাজা ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। তাকে ডেকে পাঠালেন।

রাজার সামনে হা’জির হয়ে তাকে যথাযােগ্য সম্মা’ন দেখিয়ে জিলেত সবি’নয়ে বলল, মহা’রাজ ঈশ্বরের কৃপায় এবং আপনাকে কোনাে কষ্ট না দিয়ে বা অ’সুবি’ধায় না ফেলে আপনার এই ফোড়া বা আপনি বা আপনার চিকিৎসকরা দুরারােগ্য মনে করছেন, আমি তা এক সপ্তাহের মধ্যে সম্পূর্ণ সরিয়ে দিতে পারি।

রাজা মেয়েটির কথায় কোনাে গুরুত্ব দিলেন না। তার যে রােগ প্যারিসের নামী দামী চিকিৎসকরা সারাতে পারল না, তা এই অ’ল্পবয়সী ও অ’নভিজ্ঞ যুবতী কি করে সারাবে? এইরকম ভেবে তিনি মেয়েটিকে তার সদিচ্ছার জন্যে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন যে, তিনি স্থির করেছেন আর চিকিৎসা করাবেন না।

জিলেত বলল, মহা’রাজ তা কি হয়। আপনি আমা’দের পালক, আপনি নিরন্তর কষ্ট পাচ্ছেন তা আমরা কি করে সহ্য করবাে। অ’ন্ততঃ আমি তাে নিষ্ক্রিয় থাকতে পারি না। আপনি হয়ত ভাবছেন এই অ’ল্পবয়সী একটা’ মেয়ে আমা’র কি চিকিৎসা করবে? কিন্তু আপনার যে ফোড়া তার ওষুধ আমা’র কাছে আছে, সে ওষুধ আমি তৈরি করি না, আমা’র স্বর্গীয় পিতার নাম মা’স্টা’র জেরার্ড নারবােনে আমা’দের বাড়ি। বাবা একজন খ্যাতনামা’ চিকিৎসক ছিলেন। এই ওষুধ আমি বাবার কাছ থেকে তৈরি করতে শিখেছি। ঈশ্বরের কৃপায় আপনি রােগমুক্ত হবেন, সাতদিনের মধ্যে আপনার ক্ষত সম্পূর্ণ সেরে যাবে।

রাজা আর একবার ভাবলেন, কে জানে এই মেয়েটি হয়ত ঈশ্বরপ্রেরিত। একবার দেখাই যাক না ও কি করতে পারে, অ’নেককেই তাে সুযােগ দিলুম, আর একজনকে না হয় দিলুম। তাছাড়া ও তাে বলছে যে আমা’কে কোনােরকম কষ্ট না দিয়ে, কোনােরকম অ’সুবি’ধেয় না ফেলে মা’ত্র সাতদিনের মধ্যে আমা’র ফোড়া ফাটিয়ে দেবে তাহলে একটা’ সুযােগ দিয়ে পরীক্ষা করে দেখাই যাক।

তবুও সরাসরি সম্মতি না দিয়ে রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা মা’ মনে করাে তুমি আমা’র মা’ সারাতে পারলে না, তাহলে কি তােমা’কে আমি শাস্তি দিতে পারি?

জিলত উত্তর দিল, সে সাতদিন আপনার চিকিৎসা চলবে সেই কয়েকদিন আপনি আমা’কে পাহা’রায় রাখবেন। আমি যেন আপনার প্রাসাদ ছেড়ে পালাতে না পারি কিন্তু মহা’রাজ আপনি যদি আমা’র ওষুধে সেরে ওঠেন তাহলে আমা’কে কি পুরস্কার দেবেন?

রাজা বললেন, অ’তি উত্তম প্রস্তাব। তােমা’র সুন্দর চেহা’রা, বেশভূষা ও কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি সম্ভ্রান্ত বংশের মেয়ে এবং তােমা’র এখনও বি’য়ে হয়নি। আমি কোনাে অ’ভিজাত পরিবারের একটি ভালাে ছেলের সঙ্গে তােমা’র বি’য়ে দেব।

তাই যদি বললেন মহা’রাজ তাহলে আমি আপনার একটি পুত্রকে দাবি’ করতে পারি। তা আমি করবাে না। আমি যার নাম করবাে সেই ছেলেটির সঙ্গে আমা’র বি’য়ের ব্যবস্থা করবেন।

রাজা বললেন, বেশ ভালাে কথা, সেই ছেলে যদি আমা’র আয়ত্তের বাইরে না হয় তাহলে আমি সেই ছেলেটির সঙ্গে তােমা’র বি’য়ে দেব। আমি শপথ করছি।

রাজার কথা শুনে জিলেত অ’ত্যন্ত খুশি হয়ে চিকিৎসা আরম্ভ করলাে এবং সাতদিনের ভেতরেই রাজাকে সম্পূর্ণভাবে রােগমুক্ত করলাে। যে ফোড়া কেউ সারাতে পারে নি, সেই ফোঁড়া জিলেত সারিয়ে দিল।

রাজা অ’ত্যন্ত প্রীত হয়ে বললেন, জিলেত তুমি নিশ্চিতভাবে বাজি জিতেছ, কাকে তুমি বি’য়ে করতে চাও তার নাম বলল।

মহা’রাজ আমি রুসিলনের বারট্রাণ্ড কে বি’য়ে করতে চাই। সে আপনার আশ্রয়ে আছে। আমি বালি’কা বয়স থেকে তাকে গভীরভাবে ভালবেসে আসছি।
রাজা ভেবে দেখলেন মেয়েটি বি’রাট কিছু একটা’ দাবি’ করে নি। বারট্রাণ্ডের সঙ্গে মেয়েটির বি’য়ে দিয়ে তাকে তার প্রতিজ্ঞা রাখতে হবে। তিনি বারট্রাণ্ডকে ডেকে পাঠালেন। সে এলে রাজা তাকে বললেন, বারট্রাণ্ড তােমা’র এখন যথেষ্ট বয়স হয়েছে, আমি তােমা’কে সর্ব বি’ষয়ে সুশিক্ষা দিয়েছি। তােমা’র বি’ষয়-সম্পত্তি তদারক করবার তুমি উপযুক্ত হয়েছ তবে তুমি তােমা’র ঘরে ফিরে যাবার আগে আমি তােমা’কে একটি উপযুক্ত পত্নী দিতে চাই, পত্নী আমি ঠিক করে রেখেছি।

বারট্রাণ্ড জিজ্ঞাসা করল, মহা’রাজ সেই পাত্রীটি কে?

রাজা বললেন, যে মেয়েটি আমা’কে রােগমুক্ত করেছে।

বারট্রাণ্ড জিলেতকে চিনতে পারল। মেয়েটি সুন্দরী ঠিকই কিন্তু যেহেতু মেয়েটির বংশ তার অ’ভিজাত বংশের সমতুল্য নয় এজন্যে সে মনে মনে অ’সন্তুষ্ট হয়ে বলল, কিন্তু মহা’রাজ যে আমা’র বংশমর্যাদার উপযুক্ত নয় এমন একটা’ মেয়ে-ডাক্তারকে আপনি বি’য়ে করতে বলবেন না।

আমি আগেই কথা দিয়েছি আমা’র ক্ষত সারিয়ে দিলে সে যাকে বি’য়ে করতে চাইবে সেই ছেলের সঙ্গে তাকে আমি বি’য়ে দেব। সে তােমা’কে বি’য়ে করতে চায়। তুমি নিশ্চই চাও না যে আমি আমা’র কথা ফিরিয়ে নেব।

বারট্রাণ্ড বলল, মহা’রাজ আমি আপনার সামা’ন্য একজন প্রজা, ইচ্ছে করলে শাস্তিস্বরূপ আপনি আমা’র সব কিছু বাজেয়াপ্ত করতে পারেন কিন্তু এমন একজন মেয়েকে আমি বি’য়ে করে সুখী হবাে না।

রাজা বললেন, মেয়েটি সুন্দরী, প্রখর বুদ্ধিমতী এবং তােমা’কে বালি’কা বয়স থেকেই ভালবাসে অ’তএব এই মেয়েকেই তােমা’কে বি’য়ে করতে হবে। আমি মনে করি এই মেয়েটি তােমা’র উপযুক্ত হবে, তুমি সুখী হবে। অ’থচ কোনাে নামী বা অ’ভিজাত বংশের মেয়েকে বি’য়ে করে তুমি সুখ পাবে না, এরা স্বামীর অ’নুগত হয় না।

বারট্রাণ্ড ও আর কোনাে কথা বলল না। রাজা জাকজমকপূর্ণ বি’রাট এক ভােজসভার আয়ােজন রলেন এবং নির্দিষ্ট দিনে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বারট্রাণ্ডের অ’নিচ্ছা সত্ত্বেও জিলেতের সঙ্গে তার বি’য়ে দিলেন। যে মেয়েটি তার নিজের জীবন অ’পেক্ষা বারট্রাণ্ডকে ভালবাসত, বারট্রাণ্ড তাকে রাজার আদেশে বি’য়ে করলাে।

বি’য়ের পর সে রাজাকে বলল, সে তার নববি’বাহিতা পত্নীকে নিয়ে তার জমিদারিতে ফিরে গিয়ে সেখানে বি’বাহ পাকা করে নেবে অ’র্থাৎ পত্নীর সঙ্গে সহবাস করবে। মহা’রাজ যেন অ’নুমতি দেন। রাজা অ’নুমতি দিলেন।

সে ঘােড়ায় চলে যাত্রা করলাে বটে কিন্তু নিজের জমিদারিতে না ফিরে টা’সকানিতে হা’জির হল। টা’সকানিতে এসে শুনল যে ফ্লোরেন্টা’ইনরা সিয়েনিজদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সে ফ্লোরেন্টা’ইনদের দলে ভিড়ে পড়ল। ফ্লোরেন্টা’ইনরা ওকে স্বাগত জানিয়ে বড়সড় একটি সৈন্যবাহিনীর। ভার দিল এবং তাকে যথাযােগ্য সাম্মা’নিক দক্ষিণাও মঞ্জুর করলাে। যুদ্ধ থেমে যাওয়ার পরও বারট্রান্ত। চাকরিতে বহা’ল থেকে গেল।

যা ঘটে গেল তাতে জিলেত মা’েটেই খুশি হতে পারল না। তখন সে তার স্বামীর জমিদারি কসিলনে ফিরে এলাে। প্রজারা সানন্দে তাদের মা’লি’কানীকে সাদর সম্ভাষণ জানাল। বুদ্ধিমতী জিলেত সুষ্ঠুভাবে। জমিদারি তদারক করতে লাগল।

সে যখন এসে পৌঁছেছিল তখন কাউন্ট দীর্ঘদিন না থাকায় জমিদারিতে নানা বি’শৃংখলা যে দিয়েছিল কিন্তু ধৈর্য সহকারে জিলেত জমিদারিতে শৃখংলা ফিরিয়ে আনে ও অ’নেক সংস্কার সাধন করে। প্রজারা খুশি হয়। অ’বহেলার জন্যে তারা তখন কাউন্টেরই নিন্দা করতে থাকে।

এবার জিলেত তার স্বামীর কাছে দু’জন নাইট পাঠিয়ে তাকে ফিরে আসতে বলে। সে জানায় যে জমিদারিতে শৃংখলা ফিরে এসেছে আয় বেড়েছে তবে সমস্যাও আছে। সেসব সমস্যার মা’েকাবি’লা হ একজন মেয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। যার জমিদারি সে ফিরে এসে ভার নিলে ভালাে হয়। তবে বারট্রাণ্ড যদি মনে করে যে পত্নীর জন্যে ঘরে ফিরছে না, তাহলে সে শ্বশুরালয় ত্যাগ করে চলে যাবে। 

বারট্রাণ্ডের কাছে নাইটরা হা’জির হলে বারট্রাণ্ড বলল, জিলেত যা ইচ্ছে করতে পারে তাতে আমা’র কিছু যায় আসে না। নাইটরা জিলেতের নানা গুণ ও তার দক্ষতার কথা জানিয়েও কাউন্ট বারট্রাণ্ডকে রাজি করাতে পারল না। তবে বি’শেষভাবে অ’নুনয় করাতে সে নাইটদের হা’তে একটি আংটি দিয়ে বলল, বেশ এই আংটিটা’ তাকে পরতে বােলাে। সে যদি এই আংটি পরে আমা’র সন্তানের মা’ হতে পারে তবেই আমি ঘরে ফিরব।

এই আংটি বারট্রাণ্ডের অ’ত্যন্ত প্রিয় ছিল এবং যে তাকে এই আংটি দিয়েছিল সে বলেছিল এই আংটির বি’শেষ গুণ আছে। যে ধারণ করবে তাকে বি’পদ থেকে রক্ষা করবে। অ’ন্য গুণও আছে। আংটিটি বারট্রাণ্ড আঙুলে সর্বদা পরে থাকেন।  নাইট দু’জন বুঝল কাউন্ট অ’সম্ভব প্রস্তাব দিলেন কারণ কাউণ্ট পত্নীর কাছে না গেলে তার স্ত্রী কি করে তার সন্তানের মা’তা হবেন? কিন্তু কাউন্ট আর কোনাে কথা শুনতে রাজি নয় তবে যদি এই আংটির গুণে অ’সম্ভব কোনােদিন সম্ভব হয় এইমনে করে নাইট দু’জন রুসিলনে ফিরে গিয়ে জিলেতকে সব বলল।

খবর শুনে জিলেত মা’েটেই সন্তুষ্ট হল না। কিন্তু সে হতাশ হবার পাত্রী নয়, ভেবে দেখা যাক কি করে স্বামীর ইচ্ছা পূরণ করা যায় যাতে সে স্বামীকে নিজের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারে।

জিলেত তার জমিদারির কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে অ’র্থাৎ মা’েড়লকে ডেকে পাঠিয়ে সংক্ষেপে ও স্পষ্ট ভাষায় জানাল এতদিন জমিদারির জন্যে সে কি করেছে এবং যা কিছু করেছে তা কাউন্টে গের অ’নৱাগের জন্যে। কিন্তু এখানে থাকলে কাউন্ট যদি ফিরে না আসে এজন্যে সে এই রাজ্য ছেড়ে চলে যাবে এবং তীর্থ ভ্রমণে বেরােবে। বাকি জীবন সে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়াবে সীর মঙ্গলের জন্যে গরিবদের দানধ্যান করবে। জমিদারি রক্ষণাবেক্ষণ, খাজনা আদায়, নিজের ও স্বামীর মঙ্গলের জন্যে গরিবদের দানধ্যান সংগৃহীত অ’র্থ বণ্টন, জমিদারি রক্ষা, শান্তি-শৃংখলা বজায় ইত্যাদি সবকিছুর ভার জিলেত ঐ মা’েড়লদের ওপর দিয়ে সে জমিদারি ছেড়ে চলে গেল। বলে গেল আর ফিরে আসবে না তবে নাইটরা যেন তার স্বামীকে এই খবরটা’ দিয়ে আসে যে, তার পত্নী জমিদারি ছেড়ে চলে গেছে। অ’তএব যখন আর কোনাে বাধা নেই তখন কাউন্ট যেন তার জমিদারিতে ফিরে গিয়ে নিজের সম্পত্তি বুঝে নেয়। 

প্রজারা সহজে তাকে ছেড়ে দেয় নি। তারাও কাদতে কাদতে অ’নেকবার অ’নুরােধ করলাে কিন্তু জিলেত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সে সিলনে থাকবে না। জিলেত সঙ্গে প্রচুর অ’র্থ, কিছু অ’লংকার, একজন কাজিন ও দাসীর সঙ্গে তিনজনেই তীর্থযাত্রীর পােশাক পরে রুসিলন ত্যাগ করলাে।

সে কোথায় যাচ্ছে এ কথা জিলেত কাউকে বলল না। সে ফ্লোরেন্সের পথ ধরল এবং সেখানে না পৌছান পর্যন্ত থামল না। ফ্লোরেন্সে পৌছে সঙ্গীদের নিয়ে জিলেত একটি ছােট সরাইখানায় উঠল। সরাইখানাটি চালাতো একজন বি’ধবা মহিলা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ব্যবস্থাদি ও রান্না ভালাে। জিলেত তার আসল পরিচয় গােপন রাখল, সে যেন তার নিরুদ্দিষ্ট স্বামীর সন্ধানে সঙ্গীদের নিয়ে তীর্থযাত্রীর বেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

পরদিন জিলেত ভাগ্যক্রমে দেখল যে তার লােকজন নিয়ে বারট্রাণ্ড ঘােড়ায় চড়ে সরাইখানার পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছে। জিলেত যদিও তাকে ভালােভাবেই চিনতে পারল তথাপি সে সরাইখানার মহিলাকে অ’শ্বারূঢ় ব্যক্তিটির পরিচয় জিজ্ঞাসা করলাে।

মহিলা বলল, উনি একজন বি’দেশী গণ্যমা’ন্য ব্যক্তি, ওঁর নাম কাউন্ট বারট্রাণ্ড। তার ভদ্র আচরণের জন্যে ফ্লোরেন্সের নাগরিকরা ওঁকে খুব পছন্দ করে অ’র্থাৎ জনপ্রিয়। উনি কিন্তু একটি মেয়ের প্রেমে পড়েছেন, ভীষণভাবে। মেয়েটি সদ্বংশের, সম্রান্ত কিন্তু দরিদ্র। মেয়েটি নম্র, ধীর ও বুদ্ধিমতী, মা’য়ের সঙ্গে থাকে। মা’ গুণবতী ও লেখাপড়া জনা অ’ত্যন্ত সৎ মহিলা। দরিদ্র বলে মেয়ের বি’য়ে দিতে পারছেন না। মা’ মেয়েকে কড়া নজরে রাখেন নচেৎ কাউন্ট ওদের বাড়ি এসে মেয়েটির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হতে পারতেন।

সম্পূর্ণ বি’বরণী শুনে ও কিছু প্রশ্ন করে জিলেত সব মুখস্ত করে নিল, তারপর সে তার কার্যক্রম স্থির করলাে। একদিন কাউণ্টের সেই প্রেমিকার ও তার মা’য়ের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে ভিন তীর্থযাত্রীর পােশাক পরে মহিলার বাড়ি গিয়ে উপস্থিত। বাড়িতে ঢুকে আসবাবাদি দেখে জিলেত এরা সত্যই দরিদ্র তবে ভদ্র। মেয়েটি মা’ জিলেতকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে বসতে বলে আগমন উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করলেন। জিলেত বলল, কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে যা সে তার সঙ্গে একান্তে হতে চায়।

মহিলা জিলেতকে পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে বললেন, যা বলবার আপনি বলুন, এখানে আমা’কে কথা কেউ শুনবে না।

জিলেত বলল, ম্যাডাম আমি খবর পেয়েছি ও দেখতে পাচ্ছি যে কোনাে কারণে হা’েক অ’ভাবে পড়েছেন আর আমিও দুর্ভাগ্যের মধ্যে দিন কাটা’চ্ছি। আপনি যদি আমা’র সঙ্গে সহৰোগিত করেন তাহলে আপনার এবং আমা’র দু’জনেরই অ’বস্থার পরিবর্তন হতে পারে।

মহিলা বলল, দেখুন আমা’র সম্মা’ন যদি বজায় থাকে তাহলে আমা’র অ’বস্থা ফেরাতে কোনো আপত্তি নেই এবং সেই সঙ্গে আপনার দুর্ভাগ্যে কেটে গেলে তার চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।

জিলেত বলল, তাহলে আগে একটা’ কথা বলি’, আপনাকে আমি নিশ্চই বি’শ্বাস করতে পারি আপনার সঙ্গে আমা’র যে সব কথাবার্তা হবে এবং যে চুক্তি হবে সে সবই গােপনে রাখতে হবে কোনােরকমে একটা’ কথাও যদি ফাঁস হয়ে যায় তাহলে কাজ তে পণ্ড হবেই উপরন্তু বি’পদও ঘটতে পারে।

মহিলা উত্তর দিল, ম্যাডাম আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি আপনার প্রস্তাবে রাজি হই আর নাই আমা’র মুখ থেকে একটা’ও কথা বেরােবে না, আমি বি’শ্বাসভঙ্গ করবাে না। যা বলবার আপনি নিশি ও খােলা মনে বলুন।

জিলেত এবার নিজের পরিচয় দিয়ে তার জীবনের সমস্ত কাহিনী এমন মর্মস্পর্শী ভাষায় বলল যে, মহিলা জিলেতের ব্যথায় ব্যথা অ’নুভব করতে লাগলেন। কাউন্টের বি’ষয়ে মহিলা কিছু শুনেছিলেন এখন তিনি বুঝলেন যে, জিলেত যা বলছে তা সত্যিই বলছে এবং অ’তিরঞ্জনের কোনাে আভাসও নেই। কাহিনী শেষ করে জিলেত বলল এই আমা’র দুর্ভাগ্যের কাহিনী। এখন যদি আমা’র স্বামীকে ফিরে পেতে চাই তাহলে আমা’কে দু কাজ করতে হবে এবং এই দুটি কাজ আমি আপনার সাহা’য্য বি’না করতে পারব না। আমি শুনেছি এবং বি’শ্বাসও করি যে কাউণ্ট গভীরভাবে আপনার কন্যার প্রেমে পড়েছে।

মহিলা বললেন, কাউণ্ট আমা’র কন্যার প্রেমে পড়েছেন কিনা আমি জানি না, তবে তিনি তা দাবি’ করতে পারেন। কিন্তু তা না হয় হল কিন্তু এ ব্যাপারে আমি আপনাকে কিভাবে সাহা’য্য করতে পারি।

জিলেত বলল, সে কথা আপনাকে আমি বলব কিন্তু তার আগে আমি জানতে চাই আমি আপনার ঋণ কিভাবে শােধ করবে। আপনার কন্যাটি সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী; বি’বাহযােগ্যাও হয়েছে কিন্তু বর্তমা’নে আপনার যা অ’বস্থা তাতে আপনি কন্যাকে উপযুক্ত পাত্রে দিতে পারছেন না। অ’তএব এজন্যে যে পরিমা’ণ যৌতুক আপনাকে দিতে হবে তা আমি আপনাকে আমি দেব।

আর শুনে মহিলা অ’বশ্যই সন্তুষ্ট হলেন কিন্তু তার আত্মসম্মা’নবোেধ প্রবল। তাই তিনি বললেন, আমা’কে কি করতে হবে এবং তা শুনে আমি আমা’র মত প্রকাশ করবাে অ’র্থাৎ তাহলে বলুন আমা’কে কি করতে হবে এবং তাতে রাজি কিনা তা বলবাে। আমি রাজি হলে আপনি আমা’কে আপনার ইচ্ছামতাে পুরস্কার দেবেন।

জিলেত তখন বলল, আপনি আগে আমা’র সমস্ত কথা ও প্রস্তাব শুনবেন, তারপর আপনি আপনার মতামত প্রকাশ করবেন। আপনার পক্ষে অ’সম্মা’নজনক কোনো প্রস্তাব আমি পেশ করবাে না।

প্রথমত আপনি আমা’র স্বামী কাউন্ট বারট্রাণ্ডের কাছে বি’শ্বস্ত কোনাে লােক মা’রফত এই প্রস্তাব পাঠাবেন যে, আপনার কন্যা কাউন্টকে তার বাড়িতে আসতে দিতে ও তার সঙ্গে আলাপ জমা’তে রাজি আছে। কাউন্ট যে একান্তভাবে তাকে ভালবাসে তার প্রমা’ণস্বরূপ কাউন্টের আঙুলে যে আংটিটা’ আছে সেইটি তাকে পাঠাতে হবে তবেই মেয়ে বি’শ্বাস করবে যে কাউন্ট তাকে গভীর ও একনিষ্ঠভাবে  ভালবাসে।

কাউন্ট আংটিটি পাঠালে সেটি আপনি আমা’কে দেবেন। তারপর আপনি কাউন্টকে বলে পাঠাবেন যে আপনার মেয়ে কাউন্টকে সাদর অ’ভ্যর্থনা জানাতে রাজি হয়েছে। কাউণ্ট এলে তাকে নিয়ে আমি শয়নকক্ষে যাব কিন্তু কাউন্ট যাতে গােপনে আপনার বাড়িতে ঢুকতে ও বেরােতে পারেন তার উপযুক্ত ব্যবস্থা আপনি করে রাখবেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমি হয়ত গর্ভবতী হব। আমা’র আঙুলে স্বামীর প্রিয় আংটি এবং আমা’র কোলে তার সন্তানকে দেখিয়ে আমি আমা’র স্বামী ও তার ভালবাসা ফিরে পাব। এসবই সম্ভব হবে আপনার সহযােগিতায়, এজন্যে আমি আপনাকে আগাম ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

প্রস্তাব শুনে মহিলা ভাবলেন, প্রস্তাবটি কঠিন কারণ বেশ কিছুদিন ধরে কাউন্টকে তার বাড়িতে গােপনে আসতে ও যেতে দিতে হবে। তারপর সমস্যা হল তার নিজের মেয়ের নাম জড়িয়ে পড়তে পারে। তারপর মহিলা ভাবলেন যে, তিনি যদি স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটা’তে একটা’ মুখ্য ভূমিকা পালন করেন তাহলে একটা’ সৎকাজ করা যায় এবং কৃতকার্য হলে তার লাভ বি’না লােকসান নেই। কিন্তু নজের মেয়েকে এ বাড়িতে রাখা চলবে না। সকলকে জানিয়ে ও সকলের সমক্ষে প্রকাশ্যে তাকে তার কোনাে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হবে। সে ব্যবস্থা করা কঠিন হবে না। বেশ ভেবেচিন্তে মহিলা জিলেতকে বললেন যে তিনি রাজি আছেন। রাজি হয়ে তিনি কাউন্টের কাছে লোেক পাঠিয়ে আংটি আনিয়ে দিতে সক্ষম হলেন। কাউন্ট অ’বশ্য সহজে তার প্রিয় ও পয়া আংটি হতে রাজি হন নি। মহিলার এই কৃতিত্বে জিলেত খুবই খুশি হয়েছিল।

মেয়েকে অ’ন্যত্র পাঠিয়ে দিয়ে মহিলা এমনই ব্যবস্থা করলেন যে, তাঁর বাড়িতে আর একটি মহিলা বাস করছে তা প্রতিবেশীরা কেউ জানতে পারল না। আর রাত্রে কাউন্টের আসা যাওয়া তাে কেউ টেরই পেল না। মহিলা অ’সাধারণ বুদ্ধিমতী বলতে হবে।

রাত্রে কাউণ্ট নিয়মিত আসতে লাগল কিন্তু অ’ন্ধকারে তার স্ত্রীকে চিনতে পারল না। মহিলার সহযােগিতায় জিলেতের কামনা পূর্ণ হল। যথাসময়ে সে স্থির নিশ্চিত হল তার পেটে তার স্বামীর সন্তান।

নিশ্চিত হয়ে জিলেত মহিলার বাড়িতে আর থাকতে চাইল না। সে মহিলাকে বলল, ঈশ্বরের আশীর্বাদে ও আপনার অ’কুণ্ঠ সহযােগিতায় আমি যা কামনা করেছিলুম তা আমি লাভ করেছি। এবার আমি বি’দায় নিতে চাই, তার আগে বলুন আমি কিভাবে আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারি?

মহিলা বললেন, আপনার কামনা যে পূর্ণ হয়েছে এজন্য আমিও আপনার মতাে আনন্দিত হয়েছি। কি আমি আর কি করেছি? এসবই সম্ভব হয়েছে মা’থার ওপর যিনি আছেন তার আশীর্বাদে।

জিলেত বলল, দেখুন আপনি যা করেছেন তা আর কোনাে মহিলা করতে রাজি হতো না। তবে আমা’ও তাে একটা’ কর্তব্য আছে বি’শেষ করে আমি যখন বুঝেছি যে আপনার অ’র্থ প্রয়োজন আছে। এ কথা ঠিক যে আপনার মতাে মহা’নুভব মহিলার ঋণ অ’র্থ দিয়ে শােধ করা যায় না।

মহিলা বি’হ্বল হয়ে পড়লেন। অ’র্থ নিতে ইচ্ছে নেই অ’থচ না নিলে বি’বাহযােগ্যা মেয়েটির কি! দিতে পারছেন না। তাই দ্বি’ধা ও লজ্জাজড়িত কণ্ঠে বললেন আপনি আমা’কে একটা’ পাউণ্ড দিন।

জিলেত বলল, এ আপনি কি বলছেন? মা’ত্র একটা’ পাউণ্ডে কি একটি ভালাে মেয়েকে সৎপাত্রে দেওয়া যায় ? আপনার মেয়ে আমা’র বােন, আমি আমা’র বােনের বি’য়ের জন্যে পাঁচশ পাউণ্ড যৌতুক এবং কিছু অ’লংকার দিচ্ছি, আপিন লজ্জা করবেন না তাছাড়া আমা’র তাে দেবার সামর্থ্য আছে।

জিলেত যে রত্ন ও অ’লংকার মহিলাকে দিল তারও দাম পাঁচশ পাউণ্ড হবে। অ’ত্যন্ত দ্বি’ধাগ্রত মহিলা অ’র্থ ও রত্নালংকার নিয়ে জিলেতকে অ’জস্র ধন্যবাদ দিলেন। জিলেত হা’সিমুখে বি’দায় নিয়ে সরাইখানায় ফিরে গেল। জিলেত চলে গেছে এবং এখন আর কাউন্টের সঙ্গে যােগাযােগ রাখতে হয় না, কাউন্টকেও তার বাড়িতে আর আসতে হবে না তাই মহিলা তার আত্মীয়ের বাড়ি চলে গেলেন বােধহয় সেখানেই মেয়ের বি’য়ের ব্যবস্থা করবেন। বারট্রান্ড খবর পেল যে, মহিলা তার কন্যা অ’র্থাৎ তার প্রেমিকাকে নিয়ে অ’ন্যত্র চলে গেছেন তাই তারও আর যাবার অ’বকাশ রইল না। শুধু আংটির জন্য তার দুঃখ রয়ে গেল, তার প্রিয় আংটি। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার জমিদারির মা’েড়লরাও খবর পাঠাল যে তার পত্নী রুসিলন ছেড়ে চলে গেছেন, বলে গেছেন যাতে তার স্বামী স্বগৃহে ফিরে জমিদারির ভার নিতে পারেন তাই তিনি স্বেচ্ছায় চলে যাচ্ছেন। বারট্রান্ড যেন ফিরে আসেন।

বারট্রাণ্ড যখন নিশ্চিত হল যে, জিলেত সত্যিই চলে গেছে তখন সে ফ্লোরেন্স থেকে জমিদারিতে এলাে।

ওদিকে জিলেত খবর পেল যে, তার স্বামী তার জমিদারিতে ফিরে গেছে। তখন সে খুবই আনন্দিত । তার আকাঙক্ষা এবার পূরণ হবে। জিলেত ফ্লোরেন্সে রয়ে গেল। যথাসময়ে সে একটি নয়, যমজ সন্তান প্রসব করলাে। দেখতে অ’বি’কল তাদের পিতার মতােই হয়েছে। সে সযত্বে তাদের লালনপালন করতে লাগল।

কিছুদিন পরে উপযুক্ত সময় বুঝে দুই ছেলেকে নিয়ে জিলেত স্বামীগৃহের উদ্দেশে যাত্রা করল। তার গায়ে তীর্থযাত্রীর পােশাক। বসিলনের কাছেই এক গ্রামে সে পৌছল। এখানে কয়েকদিন বি’শ্রাম নেবে ও আমীর খােজখবর নেবে। তাকে কেউ চিনতে পারে নি।

জিলত খবর পেল যে, তার স্বামী কাউন্ট বারট্রাণ্ড অ’ল সেন্টস ডে উপলক্ষে এক বি’রাট ভোজসভার আয়ােজন করছে। তার বন্ধুবান্ধব ও বি’শিষ্ট ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করবে। তীর্থযাত্রীর পােশাকে সন্তান দুটি সঙ্গে নিয়ে জিলেত সেই দিনইবসিলনে ভােজসভায় হা’জির হল। অ’তিথিরা তখনও আহা’রে না বসলেও গল্পগুজবে মেতে উঠেছে।

ছেলে দুটিকে কোলে নিয়ে জিলেত হলঘরে এসে স্বামীকে দেখতে পেয়ে তার পায়ের নিচে বসে – কাঁদতে কাঁদতে বলল, তােমা’র হতভাগিনী পত্নীর দিকে একবার চেয়ে দেখ। যাতে তুমি তােমা’র পৈতৃক বাড়িতে এসে বসবাস করতে পার সেজন্যে তােমা’র পত্নী এই বাড়ি ছেড়ে অ’ন্যত্র চলে গিয়ে অ’নেক কষ্ট সহ্য করেছে। আমি দু’জন নাইট মা’রফত তােমা’র কাছে খবর পাঠিয়েছিলুম, তুমি এক অ’সম্ভব প্রস্তাব পাঠিয়েছিলে, তা সম্ভব নয় বলাে আমিই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলুম এবং সেজন্যে যে সবযন্ত্রণা ভােগ করতে বাধ্য হয়েছি তার জন্যে কি তােমা’র একটুও মনােকষ্ট হয়নি! তবে অ’মি অ’সম্ভবকে সম্ভব করেছি, একটি নয়, এই দেখ তােমা’কে আমি দুটি সন্তান উপহা’র দিচ্ছি, আর এই নাও তোমা’র সেই প্রিয় আংটি। এবার আমা’কে ও সন্তান দুটিকে গ্রহণ করে তুমি তােমা’র প্রতিশ্রুতি রক্ষা

কাউন্ট তাে হতভম্ব, নিজের কানকেও বি’শ্বাস করতে পারছেন না। আংটি আর সন্তান দেখে অ’বি’স্বাশ করতেও পারছেন না। তাহলে ফ্লোরেন্সে প্রেমিকা ভেবে যাকে আংটি পাঠিয়েছিলেন এবং যার সাথে সহবাস করেছেন সে তাহলে জিলেত! আশ্চর্য মেয়ে এই জিলেত! তাকে আচ্ছা ধোঁকা দিয়েছে। তা কিন্তু মনে মনে নিজেকে দোষী মনে করলাে। স্ত্রীর কাছে যেন ধরা পড়ে গেল, স্ত্রী যেন তাকে ভৎসনা করছে, তােমা’র পুরুষরা এইরকমই, ঘরে স্ত্রীকে অ’বহেলা করে অ’ন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম ও কত রাে। ছিঃ ছিঃ। এখন আর অ’স্বীকার করার উপায় নেই, ছেলে দুটি তারই। মুখ দিয়ে কথা সরছিল তারপরও ন্যাকা সেজে জিজ্ঞেস করলাে, এমন কি করে ঘটল? জিলেত তখন সমস্ত কাহিনী খুলে বলল। জিলেতের চতুরতা ও স্বামীকে ফিরে পাবার ঐকান্তিক আগ্রহ সমবেত সকলকে মুগ্ধ করলাে। বারট্রাণ্ডও কম অ’বাক হল না। সকলে মন্তব্য করলাে, ব্যাটা’ দু’টিকে দেখতে ঠিক বাপের মতাে হয়েছে।

কথা বলতে বলতে জিলেত তার তীর্থযাত্রীর পােশাকও খুলে ফেলেছিল। বারট্রাণ্ডা এবার স্ত্রীকে অ’ন্যরূপে দেখল, হৃদয়ে পিতৃস্নেহও জেগে উঠল। সে তার পত্নী ও সন্তান দুটিকে গ্রহণ করলাে। সময় সকলে জিলেতের প্রশংসা করতে করতে তাকে অ’নেক আলি’ঙ্গন ও চুম্বন করলাে। ভােজন সভা অ’ন্য রূপ নিল, স্বামী-স্ত্রীর মিলনে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।

জিলেতকে নতুন পােশাক পরানাে হল। জিলেত এখন গৃহকত্রীরূপে অ’তিথিদের ন ছু অ’ভ্যর্থনা জানিয়ে ছেলে দুটিকে সকলকে সলকে দেখিয়ে আশীর্বাদ ভিক্ষা করলাে। সেদিন ভোজসহ জমে উঠেছিল।

ভােজসভার সেদিনই সমা’প্তি হল না। আরও কয়েকদিন ধরে ভােজ ও অ’ন্যান্য আনন্দ উঠে চলল। বারট্রাণ্ড বােধহয় ভাবছিল এমন পত্নীরটিকে সে কি করে এতদিন অ’বহেলা করেছিল? হয় পত্নীগর্বে গর্বি’ত। জিলেত এখন খুব সুখী।

দশম গল্প

এক অ’বরুদ্ধ মঠে অ’লি’বেচ নির্জনবাসী এক সন্ন্যাসিনী। সাধু রাসটিকো তাকে শেখালো শয়তানকে কি করে নরকে ঢুকিয়ে দিতে হয়। এই শিক্ষার গুণে অ’লি’বেচ রাসটিকোকে বি’য়েই করে ফেলল।

কুইনের গল্প ডায়ােনিও মনােযােগ দিয়ে শুনছিল। গল্প শেষ হতেই বুঝল সে ছাড়া সেদিন গল্প কর জন্যে আর কেউ বাকি নেই। তখন সে কুইনকে জিজ্ঞাসা না করে নিজেই গল্প বলতে আরম্ভ করলাে।

সুন্দরীর দল তােমরা বােধহয় কখনও শােনে নি, শয়তানকে কি করে নরকে ঢােকানাে হয়। অ’তএব আজকের যে মূলসূত্র সে বি’ষয়ে আমি কিছু না বলে যা বলতে চাই তাই বলা যাক। প্রেমের খেলা শুধুই সুসজ্জিত শয়নকক্ষেই হয় না, পাহা’ড়ের গুহা’য় ও নিভৃত অ’রণ্যে বােধহয় আরও ভালােভাবে জমে দেখা যাক আমা’র গল্প জমে কিনা বা তােমা’দের ভালাে লাগে কিনা।

বারবারি প্রদেশে গাফসা শহরে একদা এক অ’ত্যন্ত ধনী ব্যক্তি বাস করতাে। তার অ’নেকগুলি’ সন্তান ছিল আর তাদের মধ্যে একটি সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী কন্যা ছিল। তার নাম অ’লি’বেচ। অ’লি’তে খৃস্টা’ন ছিল না কিন্তু শহরে অ’নেক খৃস্টা’ন ছিল। একদিন খৃস্টা’নরা জমা’য়েত হয়ে খৃস্টধর্মের গুণগত করছিল। অ’লি’বেচ সেইসব ভালাে কথা মনােযােগ দিয়ে শুনছিল। সভা শেষ হয়ে যাবার পর সে একজন থষ্টা’নকে জিজ্ঞাসা করলাে, তােমা’র যে এতক্ষণ ঈশ্বরের সেবার কথা বলেছিলে, তা কি করে ঈশ্বরসেবা করতে হয়? কোনাে সহজ উপায় আছে?

লােকটি উত্তরে বলল, উত্তমরূপে ঈশ্বরসেবা করতে হলে ঐহিক সুখসম্পদ থেকে দূরে থাকতে হবে যতদৱে সম্ভব। যারা লােকালয় থেকে বহুদূরে চলে গেছে, এই ধরাে সাহা’রা মরুভূমিতে, তারই উত্তমরূপে ঈশ্বরের সেবা করতে পারে।

অ’লি’বেচ এসব কথা কাউকে বলল না। তখন তার বয়স মা’ত্র চৌদ্দ, অ’ত্যন্ত সরল। পরদিন সকালে সে কাউকে কিছু না বলে মরুভূমির উদ্দেশে বাড়ি ফিরে বেরিয়ে পড়ল। ঈশ্বরের সেবা করা তার লক্ষ্য।

ভেতরে থেকে সে যেন একটা’ সাড়া শুনতে পাচ্ছে। সে যাবে মরুভূমির দিকে। সে পৃথিবী সম্বন্ধে কিছুই জানে না, নরনারী বা স্বামীস্ত্রী সম্পর্ক সম্বন্ধে তার কিছুই জানা নেই, সম্পূর্ণ অ’নভিজ্ঞ। কে যেন তাকে মমির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

চলতে চলতে ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর হয়ে সে প্রায় তরুহীন বি’শাল এক প্রান্তরে পৌছল। তার আর পা চলে না। দূরে একটি কুটির দেখতে পেয়ে টলতে টলতে সেখানে পৌছল। কুটিরের দরজায় একজন সাধুপুরুষ বসেছিলেন। সাধু একাকী একটি বালি’কাকে এই অ’ঞ্চলে দেখে বি’স্মিত হলেন। অ’লি’বেচকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এখানে তুমি কি করে এলে?

অ’লি’বেচ উত্তরে বলল, ঈশ্বর দ্বারা সে অ’নুপ্রাণিত, কি করে তার সেবা করা যাবে সে সেই পথের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়েছে। সে এমন একজন মা’নুষের সন্ধান করছে, যে তাকে বলে দেবে কি করে বা কোন্ পথে চললে উত্তমরূপে তার সেবা করা যায়।

মেয়েটি একে কিশােরী তায় সুন্দরী, এমন মেয়ে কাছে থাকলে পাছে শয়তান তার ওপর ভর করে এই ভয়ে সাধুপুরুষ ইচ্ছা থাকলেও অ’লি’বেচকে আশ্রয় দিলেন না তবে তাকে কিছু বুনাে আপেল, খেজুর, শেকড় ও পানীয় জল খাওয়ালেন এবং কিছু খাবার সঙ্গে দিয়ে বললেন :
এখান থেকে কিছু দূরে একজন সাধুপুরুষ থাকেন। তিনি আমা’র চেয়ে অ’নেক বেশি জানেন। তুমি তার কাছে যাও। তুমি যা জানতে চাইছ সে বি’ষয়ে তিনিই বলতে পারবেন। এই পথ ধরেই তুমি যাও।

অ’লি’বেচ যখন সেই সাধুপুরুষের কাছে পৌছল তিনিও ঠিক আগের সাধুপুরুষের মতােই বললেন, তুমি আরও এগিয়ে যাও, আর একজন সাধুর দেখা পাবে, তিনি তােমা’র ইচ্ছা পূরণ করবেন। আমি তােমা’কে আশীর্বাদ করছি তােমা’র মঙ্গল হবে। এই কথা বলে ও কিছু ফলমূল ও পানীয় জল দিয়ে তিনি তাকে বি’দায় করলেন।

অ’লি’বেচ আবার চলতে আরম্ভ করলাে। চলতে চলতে দ্বি’তীয় সাধুর কথা অ’নুযায়ী সে এক যুবক সন্ন্যাসীর দেখা পেল। সন্ন্যাসী ছােট একটি কুটিরে থাকে। এই কুটিরটি তার একক আশ্রম। তার কুটিরে পৌছে অ’লি’বেচ তার মনের বাসনার কথা প্রকাশ করলাে।

অ’লি’বেচকে সন্ন্যাসী আর কোনাে সন্ন্যাসীর কাছে পাঠাল না, সে তাকে আশ্রয় দিল। তার ধারণা সে রিপুকে জয় করেছে, সুন্দরী এই কিশােরীকে কাছে রেখে সে প্রমা’ণ করবে সে সত্যই রিপুজয়ী।

কুটিরের এক কোণে খেজুর পাতা পেতে সন্ন্যাসী অ’লি’বেচের জন্যে একটি বি’ছানা তৈরি করে দিয়ে তাকে বি’শ্রাম নিতে বলল। সন্ন্যাসী দয়ালু, তার নাম রাসটিকো।

কয়েকটা’ দিন বেশ কাটল কিন্তু তারপর ঘি ও আগুনের দ্বন্দ্ব শুরু হল। রাসটিকোর সুপ্ত বাসনা মা’থা ছাড়া দিতে লাগল, রিপু ক্রমশ প্রবল হতে লাগল। অ’থচ অ’লি’বেচের কোনাে ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না, কারণ আদিরিপু সম্বন্ধে সে সম্পূর্ণ অ’নভিজ্ঞ। নরনারীর মিলনে যে সন্তান হয় তাও সে জানে না।
প্রথমে রাসটিকো নিজের বি’রুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করলাে। আরও ঘন ঘন প্রার্থনা ও উপবাস আরম্ভ করলাে। ঈশ্বরের প্রতি একান্তভাবে মনঃসংযােগ করবার চেষ্টা’ করতে লাগল কিন্তু বৃথা। তরুণীর দেহের প্রতি তার লালসা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগল।

রাসটিকোর সমস্যা হল অ’লি’বেচ অ’ত্যন্ত সরল ও সম্পূর্ণ অ’নভিজ্ঞ। নিজের দেহ সম্বন্ধে সে অ’স্ত্র, লজ্জা কাকে বলে তাও সে জানে না। এমন মেয়ের সঙ্গে রতিমিলন এমনভাবে করতে হবে যাতে সে মনে করে এই কাজটি ঈশ্বরসেবার অ’ঙ্গ, অ’শ্লীল মা’েটেই নয়। তাকে এইরকমই বােঝাতে হবে।

রাসটিকো অ’লি’বেচকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে জানল যে, কোনাে বালকের সঙ্গে সে ঘনিষ্ঠ হয়নি, চুম্বনের আনন্দও তার জানা নেই। বাস্তবি’কই সে যৌন ব্যাপারে একেবারেই কিছু জানে না।

অ’লি’বেচকে সে বােঝাতে লাগল যে, তার নিজের দেহে একটা’ শয়তান আছে। শয়তানটা’ মা’ঝে মা’ঝে ক্ষেপে ওঠে। তাকে শান্ত করতে হলে নরকে প্রবেশ করাতে হয়। নরক আছে অ’লি’বেচের দেহে। এ কাজটি না করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন না, বলতে কি তাঁর নির্দেশই হল শয়তান ক্ষিপ্ত হলে তাকে নরকে প্রবেশ করিয়ে শান্ত করবে।

রাসটিকোর মুখের দিকে সরল চোখ তুলে অ’লি’বেচ জিজ্ঞসা করলাে, তাহলে শয়তানকে তুমি কি করে শান্ত করবে? কি করে তাকে নরকে, যা নাকি বলছাে আমা’র দেহে আছে, সেখানে প্রবেশ করাবে? আমি তাে তােমা’র দেহে শয়তানকে বা আমা’র দেহে নরক দেখতে পাচ্ছি না।

রাসটিকো বলল, যথা সময়ে তুমি সবই দেখতে পাবে কিন্তু এখন আমি যা করবাে তুমিও তাই করাে। এই কথা বলে অ’ঙ্গে যে সামা’ন্য বস্ত্রখণ্ড ছিল রাসটিকো তা খুলে উলঙ্গ হল। অ’লি’বেচও উলঙ্গ হল। রাসটিকো যেন প্রার্থনা করবে এইভাবে হা’ঁটু গেড়ে বসলাে আর অ’লি’বেচকেও অ’নুরূপভাবে হা’ঁটু গাড়তে বলল।
রাসটিকোর চোখের সামনে অ’লি’বেচের নতুন রূপ উদ্ভাসিত হল। এই রূপ দেখে নিজেকে সম্বরণ করা তার পক্ষে অ’সম্ভব হয়ে পড়ল। অ’লবেচও অ’বাক হয়ে উলঙ্গ পুরুষকে দেখতে লাগল। সে বাসটিকো তােমা’র সামনে ওটা’ কি সােজা হয়ে বেরিয়ে রয়েছে যা আমা’র নেই?

উত্তর দিল, আরে এইটেই তাে শয়তান যার কথা আমি তােমা’কে বলছিলম। দেখছ এটা’ কি করছে? আমা’কে এত বেদনা দিচ্ছে যে আমি সহ্য করতে পারছি না।

অ’লি’বেচ বলল, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমা’কে বেদনা দেবার জন্যে আমা’র শরীরে শয়তান নেই, আমি তােমা’র চেয়ে ভালাে আছি।

রাসটিকো বলল, হ্যা সেটা’ ঠিক কিন্তু তােমা’রও এমন কিছু আছে যা আমা’র নেই।

অ’লি’বেচ বলল, তাই নাকি? সেটা’ তাহলে কি?

রাসটিকো বলল, তােমা’র মধ্যে নরক আছে আর সত্যি কথা বলতে কি আমা’র মুক্তির জন্যে ঈশ্বর তােমা’কে আমা’র কাছে পাঠিয়েছেন কারণ এই শয়তান আমা’কে নিরন্তর যন্ত্রণা দিচ্ছে। আমা’র জীবন অ’তিষ্ঠ করে দিচ্ছে, তুমি যদি দয়া করে তােমা’র নরকের মধ্যে আমা’র শয়তানকে রাখতে দাও তাহলে তুমি আমা’কে চরম শাস্তি দেবে আর সেই সঙ্গে ঈশ্বরের সেবা করে তাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে আর লেতে কি তুমি তাে ঈশ্বরের সেবা কতেই এখানে আমা’র কাছে এসেছ।

নিস্পাপ সেই বালি’কা সরলভাবে বলল, ফাদার রাসটিকো তাই যদি হয় এবং আমা’র মধ্যে সত্যিই  নরক থাকে তাহলে তুমি শয়তানটা’কে সেখানে বন্দী করে দাও। তুমি কি এখন প্রস্তুত?

অ’লি’বেচ ঈশ্বর তােমা’র মঙ্গল করুন, রাসটিকো বলল, তাহলে চলাে আমরা শয়তানটা’কে এখনই বন্দী করেই ফেলি’।

রাসটিকো তখন অ’লি’বেচকে একটি শয্যায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিয়ে দেখাতে লাগল তার দেহে কোথায় নরক আছে এবং শয়তানকে তার ভেতরে কি করে বন্দী করতে হবে।

সেই বালি’কা কখনও কোনাে শয়তানকে তার নরকে বন্দী করেনি তাই প্রথম বারে তার ব্যথা লাগছিল তাই সে রাসটিকোকে বলল, ফাদার রাসটিকো তােমা’র এই শয়তানটা’ ভীষণ পাজি, ঈশ্বরের শত্রু তুমি যখন শয়তানটা’কে নরকের মধ্যে প্রবেশ করাচ্ছ তখন ওটা’ নরককেই ব্যথা দিচ্ছে।

রাসটিকো বলল, তােমা’র নরকে শয়তানটা’ এই প্রথম যাচ্ছে তাে, পথটা’ এখনও ভালাে করে চেনে না তাই তােমা’কে কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু কয়েকবার যাবার পর সে তােমা’কে আর কষ্ট দেবে না। বরঞ্চ বুকের ভেতরে গিয়ে তােমা’কে আরাম দেবে। সেদিন ওরা বি’ছানা থেকে ওঠবার আগে শয়তানটা’কে দু’বার নরকে বন্দী করেছিল। সেদিন শয়তান আর ক্ষিপ্ত হয়নি, শান্ত ছিল।

এরপর কয়েকদিন শয়তান বারে বারে মা’থা চাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছিল আর তাকে শান্ত করবার জন্যে অ’লি’বেচ তার দায়িত্ব পালন করতে নরকে তাকে বন্দী করছিল। ক্রমে এমন হল যে অ’লি’বেচকে শয়তানকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে দাঁড়াতে দেখলেই বন্দী করতে চায় বা বলে শয়তান ক্ষিপ্ত হবার আগেই ওকে শান্ত করা হা’েক। অ’লি’বেচ তখনও বি’শ্বাস করতাে শয়তান যতবার শান্ত করা যাবে ঈশ্বরের সেবাও তত ভালােভাবে করা যাবে। রাসটিকো বােধহয় এই বি’শ্বাস তার মা’থায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। শয়তানকে নরকে বারবার বন্দী করাটা’ ক্রমশ তার বেশ মজা মনে হচ্ছিল, ভালাে লাগছিল।

রাসটিকোকে সে বলল, এখন আমি বুঝতে পারছি গাফসার সেই খৃস্টা’নরা কেন আমা’কে বলতাে ঈশ্বরের সেবা করে যেমন আনন্দ পাওয়া যায় তেমন আর কিছুতে নয়। শয়তানকে আমা’র নরকে বারবার বন্দী করতে আমি যে আনন্দ ও চরম সুখ পাচ্ছি এমন সুখ ও পুলক আমি এতদিন আর কিছুতে পাই নি। ঈশ্বরের এইভাবে সেবা না করে অ’ন্যভাবে যারা তাদের শক্তি অ’পচয় করে তারা নিরেট মূখ ছাড়া আর কিছু নয়।

ব্যাপারটা’ ক্রমশ তার অ’ভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেল। সে মা’ঝে মা’ঝেই রাসটিকোকে বলতে লাগল, ফাদার রাসটিকো আমি এখানে এসেছি ঈশ্বরের সেবা করতে, বৃথা সময় নষ্ট করতে নয়। এসাে আমরা শয়তানকে শায়েস্তা করি।

শয়তানকে নরকে প্রবেশ করাবার সময় অ’লি’বেচ মা’ঝে মা’ঝে বলতাে, আচ্ছা শয়তানটা’ নরকে যখন প্রবেশ করে তখন তার তাে বেশ আনন্দ হয়, তাই না? তবে সে বারবার নরক থেকে পালি’য়ে যায় কেন? প্রবেশ করবার সময় যে আনন্দ পায়, প্রবেশ করে যদি সেই আনন্দ পেত তাহলে সে নরক থেকে বেরিয়ে এসে তােমা’কে বি’রক্ত করতাে না।

শেষে রাসটিকো নিজের কলেই ধরা পড়ল। ঈশ্বরসেবার উদ্দেশ্যে শয়তানকে বন্দী করবার জন্যে অ’লি’বেচ এত বেশিবার তাকে ডাকতে লাগল যে, সে তার চাহিদা আর মেটা’তে পারছিল না। তাই সে অ’লি’বেচকে বলল যে শয়তানকে এখন অ’নেকটা’ শান্ত করা গেছে, শয়তান এখন ঈশ্বরের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে চাইছে তবুও যদি সে কখনও মা’থা চাড়া দিয়ে ওঠে তখন অ’বশ্য তাকে নরকে পাঠাতে হবে।

এই কথা শুনে অ’লি’বেচ বলল, বেশ তােমা’র কথা শুনলুম রাসটিকো। তােমা’র শয়তান পােষ মেনেছে কিন্তু আমা’র নরক আমা’কে শান্তিতে থাকতে দিতে চাইছে না। তােমা’র শয়তানকে শায়েস্তা করার জন্যে আমি আমা’র নরক দিয়ে তােমা’কে সাহা’য্য করেছি; এখন তােমা’র কর্তব্য তােমা’র শয়তানকে পাঠিয়ে আমা’র নরককে শান্ত করা।

রাসটিকো এখন শুধু মূল, শস্য ও জল পান করে জীবনধারণ করছে ফলে অ’নেক দুর্বল, আগের শক্তি নেই। অ’লি’বেচকে সন্তুষ্ট করা কঠিন তাই সে বলল, তােমা’র নরক এখন দুর্দান্ত তাকে শান্ত করতে আমা’র শয়তানের যে পরিমা’ণ শক্তির প্রয়ােজন তা বর্তমা’নে তার নেই, তবে আমি চেষ্টা’ করবাে।

মা’ঝে মা’ঝে সে অ’লি’বেচের ডাকে সাড়া দিত কিন্তু তা এতই ক্ষীণ যেন ক্ষুধার্ত সিংহের মুখে সততটা’ সীমের বীচি নিক্ষেপ করা হল। অ’লি’বেচ তখন অ’ভিযােগ করতাে ঈশ্বরের সেবা ঠিকমতাে করা হচ্ছে না।

রাসটিকোর  শয়তান আর অ’লি’বেচের নরকের মধ্যে যখন এই বি’বাদ চলেছে, চাহিদার সঙ্গে সরবরাহ তাল রাখতে পারছে না, সেই সময় গাফসা শহরে বি’রাট এক অ’গ্নিকাণ্ডে অ’লি’বেচের বাবা ও আর সকলে নিজ বাড়িতেই পুড়ে মা’রা গেল, একজনও বেঁচে রইল না। বাড়িটা’ও পুড়ে ছাই হয়ে গেল। অ’লি’বেচের পিতা যে বি’পুল ধনসম্পত্তি রেখে গেলেন সেসবের একমা’ত্র মা’লি’ক এখন অ’লি’বেচ একা।

গাফসায় নিরবল নামে এক যুবক ছিল। সে ছিল অ’পব্যায়ী ফলে এখন প্রায় কপদশূন্য। সে কোনাে সূত্র থেকে খবর পেল যে, অ’লি’বেচ এখনও জীবি’ত আছে। ঈশ্বরের সন্ধানে বুঝি সে গৃহত্যাগ করেছে। এখন অ’লি’বেচকে খুঁজে এনে যদি তাকে বি’বাহ করা যায়, তাহলে সে আবার সুখে কালাতিপাত করতে পারবে।

উত্তরাধিকার না থাকলে দেশের সরকারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অ’ধিকার আছে কিন্তু সরকার কিছু করার আগেই নিরবল অ’লি’বেচকে খুঁজে বার করলাে। নিরবল অ’লি’বেচকে গাফসায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। রাসটিকো যেন মুক্তি পেল। কিন্তু অ’লি’বেচের অ’নিচ্ছা সত্ত্বেও নিরবল তাকে বি’বাহ করে সম্পত্তির অ’র্ধেক লাভ করলাে।

নিরবল অ’লি’বেচকে নিয়ে একত্রে শয়ন করবার পূর্বে প্রতিবেশী মহিলারা অ’লি’বেচকে জিজ্ঞাসা করল, মরুপ্রান্তরে তুমি কি করে ঈশ্বরের সেবা করতে?

অ’লি’বেচ বলল, কেন? আমি শয়তানকে আমা’র নরকে বন্দী করতুম।

মহিলারা জিজ্ঞাসা করলাে, সে আবার কি? কেমন?

তখন অ’লি’বেচ সমস্ত ব্যাপারটা’ খুলে তাে বললই এমনকি অ’ঙ্গভঙ্গি দ্বারা কিছু দেখিয়েও দিল। মেয়ের দল তাে হেসেই অ’স্থির। তারা এত হা’সতে লাগল যে, সে হা’সি আজও বােধহয় থামে নি। তারা বলল, সােনামনি শােনাে, তুমি যেভাবে ঈশ্বরের সেবা করেছ এখানে আমরাও অ’নেকে ঐভাবে ঈশ্বরের সেবা করে থাকি। তুমি নিরাশ হা’েয়াে না, ঈশ্বরসেবায় নিরবল তােমা’কে খুব সাহা’য্য করবে।

অ’লি’বেচের এই কাহিনী মেয়েদের মুখে মুখে ফিরতে লাগল এবং হা’সির প্রচুর খােরাক যােগাল। একটা’ কথাই চলতি হয়ে গেল যে, ঈশ্বরের যদি সেবা করতে হয় তাহলে শয়তানকে নরকে বন্দী করাে।

গল্প শেষ করে ডায়ােনিও বলল, তাহলে দিদিমণিরা তােমরা যদি ঈশ্বরের আশীর্বাদ চাও তাহলে শয়তানকে শান্ত করতে নরকে বন্দী করায় কায়দা শিখে নিয়াে। কারণ এ-ব্যাপারে ঈশ্বরের অ’নিচ্ছা নেই। ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যেই করেন।

ডায়ােনিও তার গল্পটি বলার সময় কোনাে অ’শালীন ভাষা ব্যবহা’র না করেও তার বক্তব্য উত্তমরূপে বুঝিয়ে দিতে পেরেছিল যা রুচিশীল মহিলাদের বি’ব্রত না করলেও তারা হেসে পরস্পরের গায়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। তাদের পুরুষবন্ধু একটা’ গল্পের মতাে গল্প শুনিয়েছে বটে।

গল্প নিয়ে আলােচনা শুরু হওয়ার আগে কুইন সেদিন তার রানীত্বের সমা’প্তি ঘোষণা করে বলল, এবার আমা’দের একজনকে কিং করা হা’েক—বলে ফিলােস্ট্রাটোর মা’থায় মুকুট পরিয়ে দিয়ে বলল এবার দেখা যাক পুরুষের রাজত্ব কেমন হয়। এই তিনদিন তাে শান্তশিষ্ট মেষ নেকড়েদের শাসন করলাে। এখন দেখা যাক নেকড়েরা কি করে মেষপালকে শাসনে রাখে?

এ কথা শুনে ফিলােস্ট্রাটো হেসে বলল, তােমরা যদি আমা’র কথা শুনতে তাহলে আমি হয়তাে আরও খুঁটিয়ে বলতে পারতুম নেকেড়েরা কি করে শয়তানকে নরকে বন্দী করার পদ্ধতি মেষদলকে আরও উত্তমরূপে শিখিয়ে দিতে পারতাে। অ’লি’বেচকে রাসটিকোও এত ভালভাবে শেখাতে পারে নি।
কিন্তু তােমরা কি ঠিক মেষকুলের মতাে ব্যবহা’র করছাে? যাই হা’েক এবার তােমরা একজনকে বৃদ্ধ করেছে এবং যেহেতু সেই রাজা আমি, চেষ্টা’ করবাে সুষ্ঠুভাবে রাজত্ব চালাতে।

নেফাইল ভূ-ভঙ্গি করে বলল, শোনাে ফিলোেস্ট্রাটো, বেশি চালাকি করার চেষ্টা’ কোরাে না, আরও কিছু কম জানি না। আগে শােনন নি, নানা মেয়েরা ম্যাসেত্তোকে কেমন জব্দ করেছিল?

কি যে বলাে নেফাইল, ফিলােস্ট্রাটো বলল, ম্যাসেত্তোর উদ্দেশ্য কি ছিল তা ভুললে চলবে না। সত হা’েক তােমরাও কম নও। এ প্রসঙ্গ এখন বন্ধ থাক, তােমা’দের কাছে আমরা পুরুষরা সবসময়ে আছি।

নতুন কিং স্টুয়ার্ডকে ডেকে ভাড়ার ও রান্নাঘরের সব খবর নিয়ে পরবর্তী দিনের জন্যে নিলে দিল। কিং-এর ব্যবস্থা সকলের পছন্দ হল। পরবর্তী দিনের গল্পের মূলসূত্র কি হবে তা এবার করতে হবে।

ফিলােস্ট্রাটো বলল, আমা’র নাম ফিলােস্ট্রাটো যার অ’র্থ হল প্রেমে পরাজিত। তাই তােমরা কত এমন সব যুবক-যুবতীর গল্প বলবে যারা প্রেমে শেষপর্যন্ত বি’ফল হল। আমি নিজেও প্রেমে বি’ফল হয়েছি। আজ এইখানেই সভা ভঙ্গ হা’েক, সকলে বাগানে বেড়ান যাক।

বাগানটা’ ভারি সুন্দর। নানারকমের গাছ তাে আছেই, কত রকম ফল ও ফুলের গাছ, কারনে মতাে সবুজ ঘাস, হরিণ আর খরগােসের দল ছােট ছেলের মতাে খেলে বেড়াচ্ছে, ডালে ডালে সব নাচছে, তাদের কল-কাকলীতে সারা বাগান মুখরিত।

ফিলােস্ট্রাটো বলল, এবার একটু নাচগান হা’েক। সকলে সমস্বরে সমর্থন জানাল। তখন কিং বলল লরেত তুমি তাহলে লেগে যাও, তােমা’র লঘুপায়ের নাচ আর সুরেলা কন্ঠে গান আমা’দের সকলের ভালাে লাগে।

লরেতাকে আর দ্বি’তীয়বার অ’নুরােধ করতে হল না। সে এক তরুণীর ব্যর্থপ্রেমের গান ধরল। গান থামিয়ে মা’ঝে মা’ঝে নাচ। লরেতার নাচ ও গান শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। তখন অ’নেক জ্বালানাে হল। আলাে-আঁধারিতে কেউ কেউ নাচ বা গান পরিবেশন করলাে, কেউ ছােট তারের ও বাজিয়ে শােনাল। তারপর উদ্যানবি’হা’র এক সময়ে শেষ হল। এবার ঘরে ফিরে খাওয়াদাওয়া সেরে যে যার ঘরে ও বি’ছানায় শয়ন।

।।ডেকামেরনের তৃতীয় দিন শেষ হল।।

Please follow and like us:

fb-share-icon

: Allowed memory size of 41943040 bytes exhausted (tried to allocate 348160 bytes) in


Tags: , , , , , ,

Comments are closed here.