সিনিয়র আপু যখন বউ (পর্ব-২৪)

January 4, 2021 | By Admin | Filed in: সিনিয়র আপু যখন বউ.

সিনিয়র আপু যখন বউ (পর্ব-২৩)

ঈশিতার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ শুনে সবাই দরজার দিকে তাকাই,,, ঈশিতাকে দেখার সাথে সাথে সবাই রুম থেকে বের হয়ে যায়,,, ঈশিতা নিজেকে আর সামলাতে পারে না,,, দৌড়ে গিয়ে ফারাবীর কপালে নাকে ঠোঁটে গালে চুমু দিতে থাকে,,,, আর ফারাবীকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগে আর বলতে লাগে।
তুই আমাকে ছেড়ে কেন চলে যাচ্ছিলি,,,, তুই জানিস না তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,,, এ কথা বলে আর কিছু বলতে পারে না হিচকি উঠে গেছে,,, তারপরেও বলার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না,,, বুকের ভিতর জমানো সব কথা যেন অ্যাক্রে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে,,,

ফারাবী ঈশিতার মাথাটা উপরে তুলে তার চেহারাটা ভালোভাবে দেখতে লাগলো,,, চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছে,,, চেহারার মিশ্রনতা হারিয়ে গিয়েছে,,,, তার চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে ফারাবী বুঝতে পেরেছে কত রজনী না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে তার জন্য,,,,, চেহারা দেখে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছে কত বেলা না খেয়ে ছিল।।।

ফারাবী তার ভালোবাসায় দুটো হাত দিয়ে ঈশিতার চোখের পানি মুছে দিল,,, ঈশিতার কান্না বন্ধ করার জন্য বলল,,, আমি কোথাও যাইনি তোমাকে ছেড়ে,,, দেখো তোমার ফারাবী তোমার কাছেই ফিরে এসেছে,,,,, ঈশিতা ফারাবীর কথা শুনে আবারো ফারাবীকে জড়িয়ে ধরল।।

ফারাবী ঈশিতাকে নানাভাবে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো,, আধাঘন্টা পর ঈশিতা একটু স্বাভাবিক হলে,,, ফারাবী জিজ্ঞাসা করে তোমার এ অবস্থা কেন,,, চোখের নিচে কালো দাগ ফেলে দিয়েছো,,,, চেহারা একবারে রোগা বানিয়ে ফেলেছো।।।

ঈশিতা কি করব তোকে ছাড়া আমি ভাবতেও যে পারি না,,, তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি তাহলে আমি কিভাবে বাঁচবো,,, তোকে যে আমি বড্ড ভালোবাসি,,,,, আমার চোখের সামনে আমার সেই ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে যাবে,,, তাহলে আমি নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করি। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে না,,, তোকে আমি শুধু শুধু ভুল বুঝেছি,,,, আজকে তোর এ অবস্থার জন্য আমি দায়ীই???
(ফারাবী) কি বলছো তুমি,,, তুমি দায়ী হতে যাবে কেন সব দোষ তো আমার।।।

(ইশিতা) তোর কোন দোষ নাই,,, তোকে আমি শুধু শুধু অযথা ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিয়েছি।।।

ফারাবী ঈশিতার হাত নিয়ে আঙ্গুল গুলো দেখতে লাগলো এংগেজমেন্ট লিংক আছে কিনা,,, ঈশিতা বলতে লাগলো কি দেখিস।।

(ফারাবি) তোমার এনগেজমেন্ট রিং কোথায়??

(ইশিতা) কিসের এংগেজমেন্ট রিং?
(ফারাবী) কেন খালুর পছন্দের ছেলের সাথে তোমার এনগেজমেন্ট হয় নাই।।।

(ইশিতা) তার আগে তুই বল,,, আমার বার্থডের দিন সর্বপ্রথম সবার আগে উইশ করলি না কেন,,, তোকে ভুল বুঝে খারাপ ব্যবহার করার পর আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভালো থাকতে পারিনি,,, সারাক্ষণ দরজা আটকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করেছি,,, আর নিজের মনকে বুঝিয়েছি,,, আমার হইত কোন জায়গায় ভুল হয়েছে,,, আমার ফারাবী এরকম করতে পারে না,,, যখন দেখলাম আমার বার্থডের দিন উইশ করিসনি।। তখন আমার সত্যিই সন্দেহ হতে লাগলো।

(ফারাবী) কে বলল তোমার বার্থডের দিন উইশ করিনি? রাত 12 টায় ১কে যার বার্থডে উইশ মেসেজ পেয়েছো সেটাই আমি???

(ইশিতা) সত্যি?
(ফারাবি)হুম?

আচ্ছা একটা কথা তুমি যেহেতু আমাকে এতটা ভালবাসো,,, তাহলে খালুর কথা মত বিয়েতে রাজি হলা কেন।

(ইশিতা) তুই যখন আমাকে বার্থডে উইশ করিস নি এক মিনিটের জন্য ফোন দেছনি। তখন আমার শরীরে রাগ চেপে বসে,,,, তুই তো জানিস আমার রাগ একটু বেশি,,,, রাগের মাথায় কি করবো না করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।।। আব্বু যখন বলল এই ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে,,, তখন রাগের বশে আমি রাজি হয়ে যাই,,,, যখন আমাকে আংটি পড়াবে,, তখন আমার রাগ একটু কমে আসে,,, তখন আমি বুঝতে পেরেছি,,,, তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না,,,, তাই তোর জন্য ওয়েট করতে লাগলাম,,, আমার বিশ্বাস তুই আসবি,,,,, তুই আসছিস না দেখে আমি কান্না করতে লাগলাম,,,,, আর আল্লাহর কাছে বলতে লাগলাম আল্লাহ ফারাবীকে এনে দাও না,,,,,, সে মুহূর্তে মিশাল এবং ফারিয়া আমার কাছে আসে, এবং সব কিছু খুলে বলে,,,,,, তখন আমি কান্না করতে করতে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,, আব্বু আমি ফারাবীকে ভালোবাসি,,,, বিয়ে তো দূরে থাক,,, ওকে ছাড়া আমি কাউকে ভাবতে পারি না,,, আব্বু বলল ঠিক আছে ওকে ফোন দিয়ে বল আসতে,,,, আমি সাথে সাথে মোবাইল বের করে তোকে ফোন দিতে লাগলাম,,,, তখন তোর মোবাইল বন্ধ,,,, আমি আরো জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম।। কিছুক্ষণ পরে যখন দারোয়ান চাচা আমার হাতে গিফট গুলো দিল,,, তখন আমি বুঝতে পেরেছি এগুলা তুই ছাড়া আর কেউ দেয়নি,,,, আমি সাথে সাথে দারোয়ান চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম ও কোথায়,,,, দারোয়ান চাচা বলল তুই বাহিরে,,, আমি দৌড়ে বাহিরে বের হয়ে আসলাম সাথে খালা-খালু আসলো,,,, আমি মনে করেছি তুই আমার ব্যবহারে অভিমান করে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস,,,

যখন দেখলাম তোর শরীর পুড়া রক্তাক্ত তখন আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেলাম,,, এখন তুই বল কিভাবে তোর এ অবস্থা হয়েছিল।।

(ফারাবি) সন্ধ্যা 7 টা বাজে তোমার বার্থডের গিফট কিনার জন্য বাসা থেকে বের হলাম,,, গিফট কিনা শেষ হলেও আমি তোমার কাছে আসতে ছিলাম,,,, তখন শামীম আমাকে ফোন দিল,,,,, তোমাকে নাকি আরেকটা ছেলের এঙ্গেজমেন্ট রিং পড়াতে যাচ্ছে,,, আর তাও আবার তোমার ইচ্ছেতেই,,, এ কথা শোনার পর আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরল,,, যে আমাকে ভালোবাসে সে আমাকে ছাড়া অন্য জনকে এংগেজমেন্ট রিং পড়াচ্ছে,,, ভাবতেই পারছিলাম না,,, নিজেকে নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছিলাম না,,,, দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসতেছিল,,,, তারপরও অনেক কষ্টে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালাতে শুরু করলাম,,,,

গাড়ি চালানো অবস্থায় আবারো শামীম ফোন দিয়ে বলে কিছুক্ষনের ভিতর তোমাকে আংটি পড়ানো হবে,,, আমি যেন তাড়াতাড়ি ওই জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়,,, একথা শুনে আমার সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে আসতে লাগলো,,, দুনিয়ার সমস্ত চিন্তা যেনো আমার মাথা থেকে হারিয়ে গিয়ে শুধু তোমার চিন্তায় জেগে বসেছে,,, এক মিনিটের জন্য মনে হচ্ছে তোমাকে আমি হারিয়ে ফেললাম,,,, কারণ তোমাকে হারিয়ে ফেললে আমার বাকিটা জীবন অন্ধকার আঁধারে হারিয়ে যাবে,,,, তাই গাড়ির হাই স্পিড তুললাম তোমার কাছে দ্রুত পৌঁছানোর জন্য,,,, হঠাৎ করে একটা মাইক্রো বাসের সাথে ধাক্কা খেয়ে,,,,, আমার শরীর গুরুতর অবস্থায় আহত হয়,,,, সারা শরীর রক্তে ভেসে যায়,,, অনেক লোক আমাকে হসপিটালে নেওয়ার চেষ্টা করলো,,, কিন্তু হসপিটাল এর চেয়ে তোমার কাছে আগে পৌঁছানোটা
আমার কাছে জরুরি মনে হয়েছে,,, কারণ তুমি যে আমার অন্তর আত্মার সাথে মিশে গিয়েছিলে,,,, তোমাকে হারানোর ট্রিবো ভয় আমাকে চতুর পাশ থেকে ঘিরে ধরে ছিল,,, কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো,,, শরীরের এ কষ্ট সহ্য করতে পারবো,,, কিন্তু তোমাকে হারানোর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না,,, তাই রক্ত মাখা শরীর নিয়ে তোমাদের বাসার সামনে পৌঁছি?? কিন্তু ভিতরে যাওয়ার ক্ষমতা আমার হয় নাই,,,, কারণ তুমি বলেছ তোমার সামনে গেলে আমি তোমার মরা মুখ দেখবো??? আমি বেঁচে থাকতে আমি তোমার মরা মুখ দেখতে পারবো না?

(ইশিতা) আমি ভুল করে ফেলেছিলাম,,, আমাকে মাফ করে দে না???

(আমি) তোমাকে তো আমি ওই সময়ই মাফ করে দিয়েছি,,, যে সময় আমি তোমাকে ছেড়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাচ্ছিলাম।।

(ইশিতা) আর কখনো আমাকে ছেড়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিবে না??
(আমি) কক্ষনো না??

আব্বু আম্মু ডাক্তারের সাথে কথা বলে আমাকে জানালো যে আরো এক মাসের মত আমাকে হসপিটালে থাকতে হবে,,,

এক মাসের ভিতরে আমি পুরোপুরি আগের মত সুস্থ হয়ে উঠলাম?? আজকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিবো,,,আর এ এক মাস ঈশিতা সারাক্ষণ আমার পাশে ছিল?? এখন বিমানে বসে আছি,,, বিমানে একটা সমস্যা আমার সিট নং ৩৪ আর ঈশিতা সিট নং ৩০ যেকোনো কারণে একসাথে সিট পাওয়া যায়নি।।।

আমার পাশের সিটে ফিলিপাইনি এক সুন্দরী মেয়ে বসে ছিল,,,, আমি মেয়েটার দিকে বারবার তাকাচ্ছি,,,,মেয়েটাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম,,,যে সিট টা চেঞ্জ করে আপুর সিটে যাওয়ার জন্য,,,, কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি???

ঈশিতা আপু আমার সামনের সিট থেকে কিছুক্ষণ পরে পরে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে আবার বসে পড়ে,,,

ঈশিতা আপুর দাঁড়ানো এবং বসা দেখে বিমানবালার এক কর্মী আপুকে জিজ্ঞাসা করে ম্যাডাম এনি প্রবলেম,,, আপু বলে নো??

বিমান মধ্য আকাশে চলতে শুরু করলো,,, সব যাত্রীরা ঘুমিয়ে গিয়েছে,,, হঠাৎ করে খেয়াল করলাম ফিলিপাইনি মেয়ে আমার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি বার বার মাথাটা সরাচ্ছি,,, কিন্তু মাথা আবার আমার কাঁধে চলে আসে,,,,

হঠাৎ করে আপু এসে মেয়েটা কে ডাকতে থাকে,,,, মেয়েটা জাগনা না পাই,,, তারপর মেয়েটাকে বলে আপুর সিটে যাওয়ার জন্য,,, মেয়েটা আপুকে বলে ওয়াই,,,,

আপু বলল দিস ইস মাই হাজবেন্ড,,, আমি আপুর কথা শুনে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি,,, মেয়েটা বললো নো নো আই এম নট গোয়িং দ্যা ইউর সিট,,,

তারপর আপু আমাকে বললো এভাবে হবে না,,, তুই পেটে হাত দিয়ে বল তোর পেটে ব্যথা,,, আমি বুঝে হক না বঝে হোক পেটে হাত দিয়ে এমন ভাব ধরলাম,, যেন আমার পেট প্রচন্ড ব্যথা??

তারপর মেয়েটাকে অনেক বুঝিয়ে আপুর সিটে পাঠালো,,,, তারপর আমাকে বলতে লাগল।

(আপু) তুই মেয়েটার দিকে কেন বারবার তাকাচ্ছিলি,,,, মেয়েটা দেখতে খুব সুন্দর??

(আমি)ছি: কি বলো এগুলা??
(আপু) তোকে আমার ভালো করে চেনা আছে সুন্দরী মেয়ে দেখলে ওই তাকিয়ে থাকিস???

(আমি) আমি কখনো কোন মেয়ের দিকে খারাপ নজরে তাকায়নি বুঝছো??

(আপু) কোন নজরে ওই তাকাবি না বলে দিলাম?

(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে তাকাবো না,,, আমার এখন প্রচুর ঘুম পাচ্ছে??
(ইশিতা) তাহলে ঘুমা?
(আমি) তোমার কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমাই,,, আপু কোন কথা বললনা,,,,, আমি আপুর কাঁধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,,,

বিমান বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট পৌঁছালে আমার ঘুম ভাঙ্গে,,,, এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে দেখি,,,মামা মামি নানু নানা ভাই সবাই দাঁড়িয়ে আছে,,, আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগে।।।

সবাইকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম,,, বাড়িতে পৌঁছানোর পর আমার বন্ধুবান্ধব সবাই আসলো।।।

আমি একসপ্তা বাসায় রেস্ট করে কলেজে গেলাম,,,, ঐদিন আর ক্লাস করিনি,, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে সারাটা বেলা আড্ডা দিলাম,,, বিকাল বেলা বাসায় পৌঁছালে,,, আম্মু আমাকে ডেকে নেই,,, এবং বলে তোর আর ঈশিতার বিয়ে ঠিক করেছি ২০ তারিখে,,,, আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছিনা?
(আম্মু) কি খুশি হস নাই?
(আমি)হুম,, কিন্তু এত দেরিতে কেন?

আম্মু মুচকি হেসে বলল তোর আব্বু তো বলছিল তোর লেখাপড়া শেষ হলে তোর আর ঈশিতার বিয়ে দিবে””” আমি তোর আব্বু কে বুঝিয়ে সামনের মাসের 20 তারিখে রাজি করিয়েছি,,,

(আমি) কি বলো আব্বু একথা বলেছে,,তাহলে ২০ তারিখেই ঠিক আছে??

দিন চলতে লাগলো আর বিয়ের দিন ও ঘনিয়ে আসতে লাগলো,,, ঈশিতা আপু মানে আমার শাকচুন্নি এখন আর আমাকে বকাঝকা করে না,,,, কথাই কথাই থাপ্পর দেই না,,, অবিশ্বাস করে না ,,, এখন আমাকে অনেক কিয়ার করে,,,,

বিয়ের আর মাএ ৭ দিন বাকি,,,সকালে যথারীতি ভাবে কারো ফোনে ঘুম থেকে উঠতাম,,, দেখি বন্ধু শামীম।
(আমি)হ্যা বল?
(বন্ধু) শালা কোথায় তুই?
( আমি)এইতো ঘুম থেকে উঠলাম,,,কেন কি হয়ছে?
(বন্ধু) শালা তোর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর থেকে আমাদেরকে তো সময় ঐ দেছনা””” এখন তাড়াতাড়ি মালেক চাচার দোকানে আয়।।
(আমি)সালা আমি মালেক চাচার দোকানে গেলে কলেজে যাবে কে,,, আমার শাকচুন্নির কড়া নির্দেশ কলেজ মিস করা যাবে না?
(বন্ধু)সালা হারামি তোর শাকচুন্নির কথা বাদ দে আজ শুক্রবার?
(আমি) ও তাই নাকি আমার তো মনে ঐছিল না?
(বন্ধু) বিয়ের পর আরো অনেক কিছু মনে থাকবে না,,, এখন তাড়াতাড়ি আয়।
(আমি) নারে এখন আসতে পারব না আর একটু ঘুমাব?
(বন্ধু) তুই আসবি নাকি ইশিতা আপুকে উল্টাপাল্টা বলবো।।
(আমি) আরে কী বলিস আমার সর্বনাশ করিস না ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি?
(বন্ধু) আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আয়।।

ফোনটা কেটে ওয়াশ রুমে গেলাম নাস্তা করে রুম থেকে বাহির হবো,,,, এমন সময় মনে হল হারামি বন্ধু মনে হয় এক না ওর সাথে মনে হয় আরো অনেকে আছে,,, দোকানে গেলেই আমাকে বলবে খাওয়ানোর জন্য,,, বুদ্ধি করে সবগুলো টাকা আম্মুর কাছে দিয়ে 100 টাকা মানিব্যাগে করে দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

10 মিনিটের মধ্যে দোকানে পৌঁছে দেখি অনেকগুলো হারামি বসে আছে,,,, যা মনে মনে ভাবছি তা ঐ,,, আস্তে আস্তে ওদের কাছে গিয়ে বসলাম,,, বসার সাথে সাথে বলতে শুরু করল,,,,, তোর তো বিয়ের আর একসপ্তাহ আছে তো আমাদের ট্রিট দেস না কেন।।

(আমি) কিসের ট্রিট।।
(বন্ধু) কিসের ট্রিট মানে,,, তুই না বললি সিনিয়র আপুর সাথে প্রেম বা বিয়ে হলে আমাদেরকে ট্রিট দিবি?
(আমি) এ কথা বলছিলাম নাকি আমার তো মনে নাই??
(বন্ধু) আমাদের সাথে গাদ্দারী করিস,,, এ কথা বলে আমার হাত থেকে মোবাইলটা টান দিয়ে নিয়ে নিল।।

আরে কি করছিস মোবাইল নিলি কেন,,,
(বন্ধু) এখন যদি আমাদেরকে না খাওয়াস,,, তাহলে ইশিতা আপুকে ফোন দিব।।
(আমি) ফোন দিয়ে কি করবি,,, তোদের কোন কথা এখন আর বিশ্বাস করবে না।।
(বন্ধু) দাঁড়া আগে দেখ না কি করি,,,
(আমি) কি করবি।।
(বন্ধু) তোর মোবাইল দিয়ে রাসেলের মোবাইলে ফোন দিয়ে কথা বলব,,, আর আমার মোবাইল দিয়ে আপুকে ফোন দিব,,, বলব যে তুই কোন মেয়ের সাথে কথা বলছিস তোর ফোন ওয়েটিং এ,,, তারপরও যদি বিশ্বাস না করে,,, কিছুক্ষণ কথা বলার পর তোর মোবাইলটা বন্ধ করে রাখবো,,, তারপর আপুকে ফোন দিয়ে বলবো যে তোমার ভয় ফোন অফ করে ফেলেছে?
(আমি) দেখ তোরা বন্ধু হয়ে আমার সাথে এরকম নিমুখ হারামি কাজ করতে পারিস না।
তাহলে এখন আমাদেরকে খাওয়া??
আরে আমার কাছে এখন তো এতো টাকা নাই ,,, তোদের সবাইকে খায়াবো মাত্র 100 টাকা আছে?

তোর 100 টাকার গুল্লি মারি তাড়াতাড়ি চাচাকে বল আমরা যা যা খেতে চাইবো তা দেওয়ার জন্য?

কি আর করা সব হারামি গুলা ৩০০ টাকা বিল তুলল চাচাকে 100 টাকা দিয়ে বললাম বাকি 200 টাকা পরে দেব??

দোকানের টেবিলের ওপর আমরা পাঁচজন বসে আছি,, হঠাৎ করে শামীম বলল পিছনে তাকিয়ে দেখ মামা,,, শামীম এর কথা শুনে সবাই পেছনে তাকালাম,,,, দেখি তিনটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে,,, শামীম বলল কিরে মামা কোনটা সুন্দর,,, আমি বললাম একটাও না,,,, শামীম বলল তুই দিন কানা হয়ে গেছিস,,, ভালোভাবে দেখে বল কোনটা সুন্দর,,, আমার এক বন্ধু এক 1 টা কে দেখাচ্ছে,,, আমি বললাম একটা সুন্দর না তবে ওই যে লম্বা মেয়েটা আছে না ওইটা মোটামুটি চলে,,, শামীম বলল কোন টার কথা বলছিস,,,, আরে ওই যে পিছনের মালটা,,, এ কথা বলার সাথে সাথে সবাই এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়েছে আমি রীতিমত ভয় পেয়ে গেছি।।

কি হলো তোরা সবাই এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন,,, একটা আস্তে আস্তে বললো আপু,,,, কিসের আপু আর তোরা এরকম ভয় পাচ্ছিস কেন।।

আবারো মুখে না বলে ঠোঁট দিয়ে বোঝাচ্ছে আপু আপু।।

শালারা আপু আপু কিসের আপু রে,,, বুঝছি ঈশিতা আপুর কথা বলছিস,,, একটা হালকা মাথা নাড়ালো,,,

শালারা ঈশিতা আপুকে ভয় পাওয়ার কি আছে দুদিন পরে তোদের ভাবি হবে,,, এত ভয় পাবি না,,, শাকচুন্নি কিন্তু মানুষ হিসাবে অনেক ভালো,,, একটু রাগ বেশি আর কি।।

হঠাৎ করে সবগুলো হারামি উঠে একসাথে দৌড় দিল আর আমাকে বলতে লাগল,, বেঁচে থাকলে দেখা হবে,,,
আমার তো মাথায় কোন ঢুকছে না😇? সবাই এ ভাবে দৌড়ে পালাল কেন★
হঠাৎ করে পিছন থেকে কারো হাত আমার কাঁধে রাখল,,,,, আমি বসা থেকে মাথা টা পিছনে ঘোরালাম সাথে সাথে একটা আওয়াজ হলো ঠাসসসস? আছমকা থাপ্পড় খেয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম।। মাথাটা তুলে তাকিয়ে দেখি আমার শাকচুন্নি,,, সাথে সাথে আমার শার্টের কলার ধরে রাস্তায় নিয়ে গেল,,, আমি বলতে লাগলাম কি করছো,, বিয়ের আগে কেউ এভাবে হবু বরের কলার ধরে।।

(আপু) তুই কি বলছিলি,,, আমি শাকচুন্নি আমাকে ভয় পাওয়ার কি আছে,,,
(আমি) না মানে ইয়ে আসলে।
(আপু) ওই মেয়েগুলো কে কি বলছিস।।
(আমি) কই কি বললাম??
(আপু) ছিঃ আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে তুই ওই মেয়েগুলো কে কিভাবে মাল বললি??
(আমি) সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।।
(আপু) এটা কে ভুল বলে না,, তুই ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েগুলোকে মাল বলছিস,,, এখন আমি যদি রাস্তা দিয়ে যাই,,, কেউ যদি আমাকে মাল বলে,,, তাহলে তোর কেমন লাগবে??
(আমি) সত্যি আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো এরকম বলবো না?
(আপু) তোর এ ভুলের কোন ক্ষমা নাই??
(আমি) প্লিজ আমি প্রমিস করে বলছি আর কখনো এরকম বাক্য উচ্চারণ করব না??
না আমি তোর কোন কথা ঐ শুনবো না একথা বলে হেটে চলে যাচ্ছে,,, আমি দৌড়ে তার সামনে গেলাম,,, তারপরে কানে ধরে বললাম,,, এবার শেষবারের মতো মাফ করে দাও,,, এই যে কানে ধরে বলছি আর কখনো এরকম খারাপ কথা ভুলে ও মুখে আনবো না।।
(আপু) না তোর মাফ নাই?
(আমি) কি করলে মাফ পাবো?
(আপু) কান ধরে 100 বার উঠবস কর,,, আর মুখে বল,, ভুল করে ফেলেছি,, জীবনে ও কোন মেয়েকে এ ধরনের কথা বলবো না?
(আমি) 100 বার ঐ আর একটু কমালে হই না??
(আপু)না আমি যা বলছি তাই কর?
কি আর করা কান ধরে উঠবস শুরু করলাম,, পাঁচবার উঠবস করার পরে,,, আমার কপাল দিয়ে ঘাম আসতে লাগলো,,, না এভাবে 20 বার যদি উঠবস করি তাহলে আমার অবস্থা সিরিয়াস হয়ে যাবে,,, ১০০ বার তো দুরে থাক,,, তার আগে কিছু একটা করতে হবে,,, আমি পাঁচ বার উঠবস করার পরে পিঠে হাত দিয়ে এমন ভাব করলাম,,, যেন আমার পিঠে প্রচন্ড ব্যথা করছে,,, আমার এমন ভাব মনে হয় কাজ হয়েছে,,, দৌড়ে আমার কাছে এসে বলতে লাগলো,,, কি হয়েছে,,, আমি বললাম পিঠে প্রচন্ড ব্যাথা করছে,,,
(আপু) তাহলে আর উঠবস করার দরকার নাই?
আমি তো এটাই চাচ্ছি,,, তারপরেও ভালোবাসা একটু প্রকাশ করার জন্য আমি বললাম,,, নাহ তুমি বলেছ 100 বার করার জন্য??
(ইশিতা) আমি বলেছি তো কি হয়েছে,,,, এখন আমি বলছি উঠবস না করার জন্য,,,
(আমি)তাহলে ঠিক আছে? তুমি হঠাৎ করে এখানে কোথা থেকে আসলে।।
(আপু) আমার বন্ধু রিমির বাসায় গিয়েছিলাম,,, আমাদের বিয়ের কার্ড দিতে,, আসার সময় দেখি তুই এখানে বসে আছিস??
( আমি) আচ্ছা ঠিক আছে চলো বাসায় যাই?
(আপু) না বাসায় যাব না?
(আমি) তো কি করবা?
(আপু) ঘুরবো
(আমি) এখন
(আপু) হ্যাঁ এখনই?
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে চলো??
দুজনে হাত ধরে হাঁটতে লাগলাম,,, কিছুক্ষণ হাঁটার পরে আমাকে বলতে লাগল,,,
(আপু) এই?
(আমি) কি?
(আপু) আইসক্রিম খাবো?
আমি তার কথা শুনে তার দিকে তাকালাম,, কি পিচ্চি বাচ্চার মত বলে আইসক্রিম খাবো?
আমি একটু মজা নেওয়ার জন্য বললাম কোন কোম্পানির আইসক্রিম খাবে?
(আপু) কোন কোম্পানির মানে?
(আমি) পপুলার কোম্পানির আইসক্রিম খাবে নাকি ঈগল কোম্পানির আইসক্রিম খাবে?
(আপু) একটা হলেই চলে??
আমি) কোন আইসক্রিম খাবে,, মালাই,,, টুইন-ওয়ান,,, রক্স,, কাঞ্চি,,, চকবার,,, কর্নিভাল,, নাকি বল,,, আরো আছে বড় বাটি গুলা,, অনেক জাতের ফ্লাবার কোনটা খাবে?
আপু আমার কথা শুনে রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,, কি বলছিস এগুলা। তোকে আইসক্রিমের কথা বলছি তুই দি লেকচার শুরু করে দিয়েছিস,,,, তাড়াতাড়ি কোণ আইসক্রিম নিয়ে আয়,,,

(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি,,, আমি আপুর কাছ থেকে দোকানের দিকে রওয়ানা দিলাম,,, পিছন থেকে ডেকে বলল আইসক্রিম কিন্তু একটা আনবি?

আরে একটা কেন আমার কাছে টাকা আছে তো?
(আপু) তোকে একটা বলছি একটা আনবি???

আমি আর কিছু না বলে দোকানে গেলাম, মানুষ দুজন একটা নিবো কেন,,, শাকচুন্নি মনে করেছে আমার কাছে টাকা নাই,,,

আমি দোকান থেকে দুইটা কোণ আইসক্রিম নিলাম,,, দোকানদার কে টাকা দিতে যাব,,,, মানিব্যাগে দেখি টাকা নাই,, হঠাৎ করে মনে হল আরে আমিতো আসার সময় 100 টাকা নিয়ে এসেছি,,, আর সে 100 টাকা মালেক চাচার দোকানে দিয়ে দিয়েছি,,,, এখন আইসক্রিমের টাকা দিব কিভাবে।। মান ইজ্জত সব প্লাস্টিক হয়ে যাবে আজ,,, এখন কিভাবে শাক চুন্নির কাছে গিয়ে বলি আমার কাছে টাকা নাই।

দোকানদার চাচাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বললাম টাকাটা পরে দিব,,,, তারপর দুটা আইসক্রিম নিয়ে আমার শাকচুন্নির কাছে গিয়ে দাড়ালাম,,, শাকচুন্নি সাথে সাথে বলতে লাগলো,,, দুটা আইস্ক্রিম আনলি কেন,,,
(আমি) আরে কি বল তুমি মানুষ দুজন দুটা আনবো না তো কয়টা আনবো,,,
(আপু) তোকে আমি বলেছি না একটা আনার জন্য?
(আমি) তুমি খাবে আমি খাব না?
(আপু) তোকে আমি বলেছি না খাওয়ার জন্য?
(আমি) তাহলে একটা আনার কথা বলছো কেন)
(আপু) গুন্ডা বদমাইশ লাল বাঁদর বুঝেও না বুঝার ভান করিস কেন?
(আমি) আচ্ছা ঠিক আছে সরি এরপর কিনলে একটা কিনবো,,,

দুজনে আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটতে লাগলাম,,, কিছু দূর যাওয়ার পর দেখি,, কয়েকটা মেয়ে এদিকে আসছে,,, সাথে সাথে আপু আমাকে টান দিয়ে তার সামনে এনে দাঁড় করালো””” তারপর বলল তোর আইসক্রিম টা দে,,,,,
(আমি) কেন আইসক্রিম দিব কেন?
(আপু) তোকে দিতে বলছি তুই দে?
আমি তার কথামতো আইসক্রিমটা তারা হাতে দিলাম,,, সে আইসক্রিমটা নিয়ে ডিল মেরে ফেলে দিল,,,,, তারপর বলতে লাগলো,,,, সোজা আমার দিকে তাকিয়ে উল্টা হয়ে হাঁটতে থাক।
(আমি) মানে কি,,, উল্টা হয়ে হাঁটলে তো আমি পরে যাবো??

(আপু) পড়বি না,,, আমি তোকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো,,, তুই শুধু আমার দিকে তাকিয়ে উল্টা হয়ে হাঁটতে থাক??

আমি তার কথামতো উল্টা হয়ে আস্তে আস্তে হাটতে লাগলাম,,, সে এক হাতে আমার এক হাত ধরে আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে,,, এবং তার আইসক্রিম থেকে অল্প অল্প আইসক্রিম আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে,,,, আমি পিছনে কিছু ঐ দেখতে পাচ্ছি না,,, ভয়ে ভয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছি,,, এই বুঝি কোন কিছুর সাথে উষ্ঠা খেয়ে পড়ে যাব।। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এরকম পাগলামো করার মানে কি,,,
(আপু) আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।।।

মেয়েগুলো যখন আপুকে পেরিয়ে চলে গেছে,,,, তখন আপু আমাকে আবার টান দিলে তার পাশাপাশি দাঁড় করালো,,, এবং বললাম সোজা হয়ে হাটতে থাক।

আমি আপুর ব্যাপারখানা বুঝতে পেরেছি,, না জানি আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি,, সেজন্য আমাকে উল্টা হাটালো।

ঘন্টা ২ এক ঘোরাঘুরি করে রিকশায় উঠলাম বাসায় যাওয়ার জন্য,,,

রিসকায় উঠে আমি বললাম,,, রিসকা দিয়ে চলাফেরা করতে আমার ভালো লাগেনা,,,

( আপু) তো?
( আমি) আমার হবু শশুর আব্বাকে বলোনা একটা বাইক কিনে দিতে?
(আপু) একথা দ্বিতীয় বার মুখে ও আনবি না?
(আমি) কেন?
(আপু) এক মোটরসাইকেলই তো আমাদের সবার জীবন জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছেলি?
(আমি) আরে ওই সময় তো তোমাকে হারানোর ভয়ে স্পিডে চালাচ্ছিলাম,,, এখন তো তোমাকে আজীবনের জন্য পেয়ে যাচ্ছি??
(আপু) তারপরেও আর কখনো বাইক চালাতে পারবি না?
(আমি) ধুর বাল এটা কোন একটা কথা হল?
(আপু) কি বললি??
(আমি) না কিছু না?
(আপু) চুপচাপ মুখে লাগাম লাগিয়ে বসে থাক?
আমি আর কোন কথা বললাম না,,, তাকে বাসায় নামিয়ে,,, আমি আমার বাসায় চলে আসলাম,,,

আমাদের বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে,, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন সবাইকে দাওয়াত করা হয়ে গিয়েছে,,,,

আজ আমাদের গায়ে হলুদ,, সমস্ত বাড়ি ঝিনুক বাতিতে আলোকিত,,, বাড়ি ঘর খুব সুন্দর করে সাজিয়েছে,,, সাজাবেই না কেন,,, আমি যে তাদের একমাত্র ছেলে,,, ওইদিকে ঈশিতা আপু তার বাপ মার একমাত্র মেয়ে,,, বিয়ে জমকালো করার জন্য কোন কিছু অপূর্ণতা রাখেনি,,,

আমার বন্ধু বান্ধব সবাই আমার গায় হলুদ মেখে দিচ্ছে,,, আমার দুজন বন্ধু গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ভিডিও করছে।

ওইদিকে ঈশিতা আপুর বাড়িতেও আমার অনেক বন্ধু বান্ধব গিয়েছে,,, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ভিডিও করার জন্য?? আমি মনে মনে অনুভব করতে লাগলাম,, আমার সিনিয়র পয়শিকে গায়ে হলুদ,, আর পরনে হলুদ শাড়িতে কেমন লাগতে পারে,,, নিশ্চয়ই মনে হয় অসম্ভব সুন্দর লাগছে,,, ইশ একবার যদি গিয়ে দেখে আসতে পারতাম,,, কিন্তু তা তো আর সম্ভব না?

গায়ে হলুদ মেখে আত্মীয়-স্বজন সবার সাথে ছবি ফ্রেমে বন্দী হলাম।

রাত 12 টার দিকে আমাকে গোসল করানো হলো,,, তারপর আমার কয়েকজন বান্ধবী আমার হাতে মেহেদি দিয়ে অনেক সুন্দর করে ডিজাইন এঁকে দিলো।।

অনেক ইচ্ছে ছিল বিয়ের আগের রাতে হবু বউয়ের হাতে মেহেদি পড়বো,,, কিন্তু না তা আর হলো না। বিয়ের পর না হয় আমার সিনিয়র পয়শীর হাতে মেহেদি পড়বো।।।

এর পরের দিন যথারীতি ভাবে কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ের কাজ চলতে লাগলো,,, কাজী যখন বলল কবুল বলার জন্য,,, তখন নিজের ভিতর কেমন জানি একটা লজ্জার ভাব চলে আসলো,,, পিছন থেকে আমার অনেক বন্ধুরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলছে,, কবুল বলিস না কেন,,, আমি পটার পট তিনবার কবুল বলে ফেললাম।

বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে,, আমার সিনিয়র পয়শিকে নিয়ে গাড়িতে বসলাম।।

আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম,, আমার স্বপ্ন তাহলে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হল,,, সিনিয়র আপুকেই বিয়ে করলাম,,, আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার এই স্বপ্ন পূরণ হবে।।

অদ্ভুত ব্যাপার কবুল বলার পর থেকে কেমন জানি একটা নার্ভাস ফিল করতে লাগলাম,,, আমার সিনিয়র পয়শির দিকে তাকিয়ে দেখি,,, লম্বা ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচের দিকে দিয়ে বসে আছে,,, হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি বাহ খুব সুন্দর করে হাতে মেহেদি দিয়েছে।। ইচ্ছে করছে হাতটা জড়িয়ে ধরে বসে থাকতে,,,, আমার হাতটা কয়েকবার তার হাতের কাছে নিলাম,, কিন্তু ভয় ধরতে পারছি না,,, আমার এরকম লাগছে কেন??

বিয়ের আগে তো এই রকম লাগে নাই,,, আমার শাকচুন্নি চুপ করে বসে আছে,,, এমন ভাব করছে যেন আমাকে চেনে না জানে না,,, মনে হয় গ্রামের সরল সোজা কোন মেয়ে??? হাতটা বারবার দিচ্ছি তারপরেও হাতটা ধরে না,,, না ধরলে নাই আমিও চুপ করে বসে রইলাম,,,,

কিছুক্ষণ পরে বাড়িতে পৌঁছালে আম্মু আমাদের দুজনকে বরণ করে নেই,,,,বাসার ভিতরে যাওয়ার সাথে সাথে আমার শাকচুন্নি কে নিয়ে সবাই টানাটানি শুরু করে,, নানা নানু শাকচুন্নি কে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করতে থাকে,,, সবাই শাকচুন্নি কে ঘিরে আড্ডা উল্লাসে মেতে ওঠে,,,, আমি আমার রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম,,, তারপর সবগুলো বন্ধুকে নিয়ে ছাদে আড্ডায় বসে পড়লাম,,,, বন্ধু হারামিগুলো যে কথা বলছে,,,, তা শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো,,,,

কিছুক্ষণ পরে আমার মামাতো বোনের ডাক,,, সবাই খানা টেবিলে গিয়ে বসলাম,,, শাকচুন্নি কে দেখি আম্মু নানা নানু সবার সাথে বসে কথা বলছে,,,,

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার ছাদে গিয়ে বসলাম,,, কিছুক্ষণ পরে নানা ভাই আমার কাছে আসলো,,, নানা ভাই যে কথা বলল,,, সে কথা শুনে আমি টাস্কি খেয়ে গেলাম,,, আপনাদেরকে না বলি,,, নানা ভাই কি কথা বলতে পারে আপনারা ধারণা করে বুঝেনিন”””

ঘড়িতে ১১ কাঁটা ছঁই ছঁই,,,,,, নানা ভাই আর আমার বন্ধু বান্ধব সবাই আমাকে ধরে ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে,,,

আমি বললাম আরে ধরে নেওয়ার কি আছে,,,, আমি একা একা ওই চলে যাব,,, নানা ভাই বলতে লাগলো,,, আমার ভাইয়ের সাহস আছে।।

আমাকে আমার রুমের কাছে এনে ছেড়ে দিল,,, যাহ ভিতরে যা,,,

আমি আর কিছু না বলে দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম,, সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো,,, ফুলের ঘ্রানে পুরো ঘর মূহরিত হয়ে যাচ্ছে,,, এমন কোন ফুল মনে হয় বাদ নাই,,, যা দিয়ে ঘরটাকে সাজানো হয় নাই।।

আমি খাটের দিকে তাকালাম?? খাটের দিকে তাকিয়ে তো আমি অবাক হয়ে গেলাম,,, খাটে আমার শাকচুন্নি কে দেখতে পাচ্ছি না ?????

((((চলবে)))))


Tags: , , , , , , , , ,

Comments are closed here.