হানড্রেড রোমান্টিক নাইটস্ – গিয়ােভানি বােকাসিও (তৃতীয় দিন ১ম-৬ষ্ঠ গল্প)

March 13, 2021 | By Admin | Filed in: বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যে যৌনতা.

গিয়ােভানি বােকাসিও-র ডেকামেরন টেলস এর বাংলা অ’নুবাদ।

ডেকামেরনের তৃতীয় দিন আরম্ভ হল। এবার নতুন রানী নেফাইল। গল্পের বি’ষয়বস্তু রানী আগেই স্থির করে দিয়েছে। যেসব ব্যক্তি কিছু একটা’ পাবার জন্যে আগ্রহী এবং নিজ কর্মকুশলতার জন্যে তা পেয়েছে অ’থবা কিছু হা’রিয়ে কোনাে কৌশলে তা ফিরে পেয়েছে এই হল এবারের গল্পের বি’ষয়বস্তু।

পরের রবি’বার পূর্ব গগনে শিশু রবি’র বয়স বাড়ার সঙ্গে যখন আকাশের সিঁদুর রং ক্রমশ কমলা রঙে পরিবর্তিত হচ্ছে সেই সময়ে নতুন রানী শয্যাত্যাগ করে সঙ্গিনী ও সঙ্গীদের ডেকে তুলল। স্টুয়ার্ড আগেই উঠে নতুন জায়গায় গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে। ভৃত্যরাও সেখানে আদেশের অ’পেক্ষায় রয়েছে। দলবল ও বাকি মা’লপত্তর নিয়ে নতুন স্থানে শুভাগমন করল।

জায়গাটি পরম রমণীয়। কত গাছ, কত ফুল, কত পাখি, পায়ের নিচে সবুজ কোমল ঘাস, উদ্যানে ফোয়ারা, সুন্দর সুন্দর মা’রবেল মূর্তি, মা’ঝে মা’ঝে লতাকুঞ্জ, দোলনা। যেন স্বর্গোদ্যান।

বাস করবার প্রাসাদটিরও তুলনা নেই। এমন সুন্দরভাবে সাজানাে প্রাসাদ তারা আর দেখে নি। আরামের সবরকম ব্যবস্থাও আছে।
ফুলের শােভা, উড়ন্ত ফুলের মতাে ঝাকে ঝাকে প্রজাপতি আর পাখির কলকাকলি’ শুনে সকলে মুগ্ধ। সকলে পাখির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলি’য়ে গান আরম্ভ করলাে। কেউ গায় গান, কেউ বাজায় বাঁশি বা তারের সুরেলা যন্ত্র।

বাগানের মা’ঝখানে ফোয়ারা ঘিরে তারা আসন গ্রহণ করলাে। কিছু গান হল, কিছু সুখাদ্য ও পানীয় গ্রহণ। আহা’ জীবনটা’ যদি এইভাবে হা’লকা লয়ে ও তালে কেটে যেত তাহলে কি মজাই না হতাে।

গান, গল্প, কাব্যপাঠের মধ্যে দিন বয়ে যায়। একসময়ে ভােজনের ডাক পড়ে। নতুন রানী নতুন ভােজ্য পরিবেশন করল। সকলেই তৃপ্তি করে আহা’র করল। তারপর কেউ দাবার ছক নিয়ে বসল, কেউ একটু দিবানিদ্রা। তাও একসময়ে শেষ হল। সকলে শীতল জলে মুখ ধুয়ে, বেশ পরিবর্তন করে গল্প শােনার ও বলার জন্যে উদ্যানে ঐ ফোয়ারার ধারে সমবেত হল। রানী, ফিলােস্ট্রাটোকে অ’নুরােধ করলেন গল্প বলতে।

প্রথম গল্প

ল্যামপােরেচ্চিও গ্রামের ম্যাসেত্তো বােবা সেজে একটি কনভেন্টে মা’লি’র কাজ নিল। তাকে বি’ছানায় তােলার জন্যে যুবতী নানেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়ে গেল।

আমা’র সুন্দরী বান্ধবীরা, বলে ফিলােস্ট্রাটা’ আরম্ভ করলাে, আমা’দের অ’নেক ধারণা যে তরুণীরা যখন সন্ন্যাস ব্রত গ্রহণ করে কনভেন্টে নান হয়ে কালাে আলখাল্লা আর মা’থায় সাদা ঘােমটা’ পরে, তার সেই সঙ্গে নারীত্বের সব কামনা-বাসনা ত্যাগ করে আর নারী থাকে না, বুঝি পাথরের সচল মূর্তি হয়ে যায়। কঠোর ব্রত পালন, আহা’র ও বি’হা’রে সংযম তাদের সব সুকুমা’র বৃত্তি ও রিপুর তাড়না বুঝি লুপ্ত করে। দেয়। তারা বুঝি যন্ত্র হয়ে যায়। কিন্তু তা যে হয় না, তারাও যে রক্তমা’ংসের মা’নুষ, তাদেরও অ’নুভূতি আছে, প্রকৃতি তাদের দেহমনে উত্তেজনা সঞ্চার করে, তারই উদাহরণ স্বরূপ রমণীয় একটি কাহিনী আমি তােমা’দের শােনাব আর এই ধরনের গল্প বলবার নির্দেশ তাে নতুন রানী দিয়েছেন। আমা’দের ধারণা যে কত ভুল তাও এই গল্প প্রমা’ণ করবে।

আমা’দের কাছাকাছি এক গ্রামা’ঞ্চলে একটি কনভেন্ট ছিল। ছিল কেন এখনও আছে। সুপরিচালনা ও পবি’ত্রতার প্রতীক রূপে কনভেন্টটি চিহ্নিত তবুও আমি সেটির নাম বলতে চাই না। কারনটা’ তোমরা বুঝবে। তােমরা তখন কনভেন্টটির নিন্দাই করবে।

আমি যে সময়ের কথা বলছি তা বেশিদিন আগের নয়। তখন মঠে আটজন মা’ত্র নান ছিল এবং তাদের মা’থার ওপর ছিল একজন মা’ত্র অ’্যাবেস ও মঠাধিকারিণী। তাকে আমরা ঠাকরুণ বলবো। সকলেই যুবতী।

কনভেন্টে একটি সুন্দর বাগান ছিল। বাগানে একজন মা’লি’ ছিল। ছােটখাটো মজবুত মা’নুষটি বাগানটির উত্তমরূপে পরিচর্যা করতাে, এজন্যে তাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হতাে। পরিশ্রমের তুলনায় বেতন ছিল যৎসামা’ন্য অ’তএব সে একদিন বি’রক্ত হয়ে কনভেন্টের স্টুয়ার্ডের কাছে চাকরিতে স্তফা দিয়ে নিজ গ্রাম ল্যামপােরেচ্চিওতে ফিরে এল।

গ্রামে ফিরে আসায় সকলে তাকে দেখে আনন্দিত হল যার মধ্যে ছিল একজন যুবক শ্রমিক। এর নাম ম্যাসেত্তো, পেশীবহুল, শক্ত সমর্থ, মা’থায় বেশ লম্বা, সুদর্শন বলা যায়। ক্ষেতে দিনরাত কাজ করতাে, গায়ে জোরও ছিল, সহজে ক্লান্ত হতাে না।

কনভেন্টে মা’লি’র কাজে স্তফা দিয়ে যে লােকটি গ্রামে ফিরে এসেছিল তার নাম নিউতাে। নিউতাে কোথায় গিয়েছিল বা কোথায় চাকরি করতাে এসব ম্যাসেজে জানতাে না। তাই সে তাকে সবকিছু জিজ্ঞাসা করলাে, কোথায় ছিলে হে, কি কাজ করতে, কত মা’ইনে? মনিব কেমন? নাকি ব্যবসা করতে?
নিউতাে বললাে, ব্যবসা নয় হে, একটা’ কনভেন্টের বাগানে মা’লি’র কাজ করতুম।

কনভেন্টে কাজ করতাে শুনে ম্যাসেত্তো আগ্রহী হয়ে উঠল। কনভেন্টের ঘেরা উঁচু পাঁচিলের ওপারে কি আছে জানতে সবাই কৌতূহলী, বি’শেষ করে ম্যাসেত্তোর মতাে যুবক। সে বললাে, কনভেন্টে কাজ করতে? বলাে তাে জায়গাটা’ কেমন? সেখানে কি ব্যাপার-স্যাপার হয়?
নীরস কন্ঠে নিউতাে বললাে, কচু, আরে বাগানটা’ ছিল বেশ বড়, আমি অ’বশ্য ফাকি না দিয়ে খুব খাটতুম। বাগানের কাজ ছাড়া জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করে আনতুম, জল তুলে আনতুম এ ছাড়া অ’ন্য ফাইফরমা’সও খাটতে হতাে। কিন্তু ওরা আমা’কে এত কম মা’ইনে দিত যে আমা’র একজোড়া জুতাের চামড়া সেই পয়সায় কেনা যেত না। আর নানগুলাে তাে সব ছুঁড়ি, আমা’কে জ্বালি’য়ে মা’রতাে, তাদের কাজ করে সন্তুষ্ট করা যেত না। সবসময়ে বাজে ফস্টিনস্টি।
কি রকম? কি রকম? বাগিয়ে বসে ম্যাসেত্তো জিজ্ঞাসা করে।
নিউতাে বলে, এই ধরাে আমি বাগানে কাজ করছি, গােলাপ গাছের শুকনাে ডাল কাটছি কি গাছের গােড় পরিষ্কার করছি অ’মনি একজন এসে আমা’র হা’ত ধরে টেনে অ’ন্য কাজের ফরমা’স করলাে কিংবা হা’তের খুপড়িটা’ কেড়ে নিল। আবার যদি-বা ফরমা’স খাটতে গেলুম তাে আর এক ছুড়ির আর এক কাজের ফরমা’স। এত খাটুনি তার ওপর জ্বালাতন, তার ওপর মা’ইনে কম, দুত্তোর ছাই বলে আমি স্টয়ার্ডের কাছে ইস্তফা দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এলুম।

যখন চলে আসছি তখন স্টুয়ার্ড আমা’কে জিজ্ঞাসা করলাে আমা’র চেনাজানা লােক আছে কিনা, যে আমা’র জায়গায় বাগানে কাজ করবে। আমি তাকে বলে এসেছি উপযুক্ত লােক পেলে পাঠাবো তবে তার অ’বশ্যই যাঁড়ের মতাে শক্তি থাকা চাই। তেমন কোনাে লােক পেলে আমি পাঠিয়ে দেব, এই কথা বলে চলে এসেছি। তুমি যাবে নাকি? তােমা’র তাে আগ্রহ খুব দেখছি, কিন্তু বাপু বলে দিচ্ছি মা’ইনে খুব কম, একটা’ বি’ড়ালের পেট ভরবে না।

মা’ইনের কথা কথা বাদ দাও, বেড়াল চুরি করে খেতে জানে কিন্তু তুমি আর যা বললে তা শুনে আমা’র তাে ভাই সেখানে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।

ম্যাসেত্তো অ’নেকদিন থেকেই এই রকম একটা’ কাজ খুঁজছিল যেখানে সে মেয়েদের নিয়ে ফুর্তি করতে পারবে। আসল মতলব নিউতােকে না বলে বললাে, বাগানে কাজ করতে আমা’র খুব ভালাে লাগে। তুমি চলে এসে ভালােই করেছ। যুবতী মেয়েদের ধকল সহ্য করা কি তােমা’র সাধ্য ? এর চেয়ে তানের সঙ্গে ঘর পাতা সহজ। যুবতীদের মন ভারি চঞ্চল, ওরা কখন যে কি চায় তা ওরা নিজেই জনে না।

কথা শেষ করে ম্যাসেত্তো মনে মনে মতলব আঁটতে লাগল কনভেন্টে পৌছে সে কিভাবে মেয়ের পাল সামলাবে? অ’থচ ধরা পড়লে চলবে না। বাগানে বা অ’ন্য যেসব কাজের কথা নিউতাে বললাে সেজন্যে তার মা’থা ব্যথা নেই, ওসব কাজ সে জানে আর ভালাে করেই করতে পারবে। তার ভাবনা তার যুবা বয়স ও দেখনসই চেহা’রা দেখে স্টুয়ার্ড তাকে না বাতিল করে দেয়।

ম্যাসেত্তো মনে মনে ভাবলাে, কনভেন্টটা’ তাে এখান থেকে বেশ দূরে। ওদিকে আমি কদাচিৎ গেছি, এখানে আমা’কে কেউ চেনেও না তবে আমি যদি বােবা কালা সেজে যেতে পারি তাহলে চাকরি পাবার আমা’র একটা’ সুযােগ আছে।
মনে মনে এইরকম স্থির করে হেঁড়া ছেড়া পােশাক পরে কাধে একটা’ কুড়ুল নিয়ে আর গ্রামের কাউকে কিছু না বলে কনভেন্টের দিকে সে পা বাড়ায়। কোথায় যাচ্ছে তাও কাউকে বললাে না।

কনভেন্টে পৌঁছে সে বাগানে ঢুকে স্টুয়ার্ড কোথায় থাকতে পারে তার খোঁজ করতে লাগল। তার ভাগ্য ভালাে, একটু এদিক-ওদিক করার পরই সে স্টুয়ার্ডের দর্শন পেল। বােবারা যেমন হা’ত পা নেড়ে করা ইঙ্গিতে কথা বলে সে সেইভাবে স্টুয়ার্ডকে বােঝাল যে সে ক্ষুধার্ত, কিছু খেতে চায় পরিবর্তে সে কুড়ুলে কাঠ চেলি’য়ে দেবে বা অ’ন্য কোনাে কাজ করে দেবে।

অ’নেক কাজ পড়ে ছিল। লােকটকে দিয়ে করানাে যাবে এই ভেবে স্টুয়ার্ড সানন্দে তাকে কিছু খেতে দিল। তারপর একটা’ কাঠের গুড়ি পড়ে ছিল, সেইটে নিউতাে চেলাতে পারে নি, এই লােকটা’কে দিয়ে চিলি’য়ে নিবে।

আহা’র শেষ করে ম্যাসেত্তো স্টুয়ার্ডের নির্দেশে কাঠ কাটতে আরম্ভ করলাে। ম্যাসেম্ভের গায়ে খুব জোর, সে খুব শীঘ্রই কাঠের গুড়িটা’ ফালা করে দিল। স্টুয়ার্ড বনের দিকে যাচ্ছিল। ইশারা করে ম্যাসেত্তোকে তাকে অ’নুসরণ করতে বললাে। বনে গিয়ে একটা’ মরা ও শুকনাে গাছের ডাল কাটতে
বললো। তারপর তাকে একটা’ গাধা দিয়ে বললাে কাঠগুলাে কেটে গাধার পিঠে চাপিয়ে কনভেন্টে নিয়ে করে। অ’বশ্য আকারে ইঙ্গিতেই বললাে।

ম্যাসেজের কাজ দেখে স্টুয়ার্ড এতদূর সন্তুষ্ট হল যে, আরও কিছু কাজ করার জন্য তাকে রেখেদিল এবং অ’নেক বাকি কাজ করিয়ে নিল। নিউতাে চলে যাবার পর অ’নেক কাজ পড়ে ছিল। সেইসব কাজ ম্যাসেত্তো করে দিল।

অ’্যাবেস অ’র্থাৎ ঠাকরুণ একদিন তাকে দেখতে পেয়ে স্টুয়ার্ডকে জিজ্ঞাসা করল লােকটা’ কে?

স্টুয়ার্ড বললাে, ম্যাডাম লােকটা’ কথা বলতে পারে না; বােবা, শুনতেও পায় না। একদিন বেচারা এসে কিছু খেতে চাইল। আমি ওকে পেট ভরিয়ে খাইয়ে এখানে যেসব কাজ বাকি ছিল সেসব কাজ করিয়ে নিয়েছি। লােকটা’ যদি বাগানের কাজ করতে পারে আর যদি এখানে থাকতে রাজি হয় তাহলে আমি মনে করছি ওকে বাগানের মা’লি’র কাজে লাগিয়ে দেব। দেখে তাে মনে হয় ও পারবে, আমা’দেরও তাে একটা’ মা’লি’র দরকার। লােকটা’র গায়ে জোরও আছে, কথা শােনে, ফাকি দেয় না। আরও একটা’ কথা ম্যাডাম, যুবক হলেও লােকটা’ তাে বােবা অ’তএব আপনার নানগুলি’র জন্যে চিন্তার কারণ হবে না বলেই আমা’র বি’শ্বাস।

ইতিমধ্যে দূর থেকে ম্যাসেত্তো খানিকটা’ এগিয়ে এসেছে। স্টুয়ার্ডের কথা না শােনার ভান করে ঠাকরুণকে একটা’ প্রণাম ঠুকে দিয়েছে। ভীষণ ধূর্ত তাে।

ঠাকরুণ বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ স্টুয়ার্ড, আমা’দের একজন মা’লি’ ও ফাইফরমা’স খাটবার লােকের খুবই দরকার, তবে তুমি দেখে নাও মা’লি’র কাজ ও পারবে কিনা, যদি পারে তাে ওকে ছেড়াে না। ওকে একজোড়া নতুন জুতাে দাও। পুরনাে একটা’ টুপি আছে দিয়ো। মিষ্টি কথা বলে আর উৎসাহ দিয়ে যত পারাে খাটিয়ে নেবে, তবে দু’বেলা পেট ভরে খেতে দিতে ভুলাে না।

ইতিমধ্যে বি’না আদেশেই ম্যাসেত্তো একটা’ ঝাটা’ তুলে নিয়ে ঝাট দিতে আরম্ভ করেছে আর কান না দেওয়ার ভান করে সব কথা শুনছে আর মনে মনে বলছে, একবার আমা’কে বাগানের কাজে লাগিয়ে দাও তারপর দেখবে আমি বাগান কিভাবে সাজিয়ে কত ফুল ফোটা’বাে, কত ফল ঝরাব। মনে মনে সে হা’সতে লাগল। আদেশ দিয়ে ঠাকরুণ চলে গেল আর স্টুয়ার্ড ম্যাসেত্তোকে বলল ঝাটা’ রেখে বাগানে কাজ করতে। মা’লি’র কাজ ম্যাসেত্তোর জানা ছিল তাই স্টুয়ার্ডকে সন্তুষ্ট করতে দেরি হল না।

স্টুয়ার্ড তখন তাকে জিজ্ঞাসা করলাে, তুমি এখানে বরাবর থাকবে? বাগানে কাজ করবে? ম্যাসেত্তো এসেছে তাে মা’থায় অ’ন্য মতলব নিয়ে, সে কনভেন্ট ছেড়ে যাবে কেন? সে তার সম্মতি জানিয়ে বললাে, মা’লি’র কাজও তার পছন্দ।

স্টুয়ার্ড তখন তাকে তার কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অ’ন্য কাজে চলে গেল। কনভেন্টে নানারকম কাজ। ম্যাসেন্তে কাজে লেগে গেল। মন দিয়ে কাজ করে। নানের দল মা’ঝে মা’ঝে বাগানে আসতে আরম্ভ রুল। গােড়ায় একটু আধটু বােবাদের সঙ্গে ছেলেমেয়েরা যেমন খুনসুটি করে ওরাও তেমনি করতাে। ম্যাসেন্তে তার সাদা ঝকঝকে দাঁত বার করে হা’সতো।

মেয়ের দল সাহস পেয়ে বাগানে বেশিক্ষণ কাটা’তে লাগল। নিজেদের মধ্যে ম্যাসেন্তোকে লক্ষ্য করে এমন অ’শ্লীল ভাষা ব্যবহা’র করতে লাগল যে কানে আঙুল দিতে হয় কিন্তু মা’লি’ তাে বোবা আর কালা, ও কিছু শুনতে পায় না। এই ভাষা শুনে ম্যাসেত্তো অ’বাক। ও ভাবে এদের কাছে আমি তাে শিশু, মুখে কিছুই আটকায় না। এমন সব শব্দ উচ্চারণ করছে যা কোনাে স্বামী তার স্ত্রীকে বললে লজ্জায় তার কান লাল হয়ে যেত। ঠাকরুণও নিশ্চিন্ত হয়ে আছেন। বােবাকালা ছোঁড়াটা’ মেয়েদের কি আর করবে?

সারা সকাল কঠোর পরিশ্রমের পর ক্লান্ত হয়ে দুপুরে ম্যাসেন্তে যখন বি’শ্রাম নিচ্ছিল তখন দু’জন যুবতী নানও বাগানে বেড়াচ্ছিল। ম্যাসেত্তো ঘুমিয়ে পড়ার ভান করছিল, চোখ বুজে নিল হয়ে পড়েছিল। ম্যাসেত্তো ওদের কথা স্পষ্টই শুনতে পাচ্ছিল।

দুই যুবতীর মধ্যে যার সাহস একটু বেশি সে তার সখিকে বললে, তুই যদি গােপন রাখতে পারিস, কাউকেও না বলি’স তাহলে আমরা এমন একটা’ মজা করতে পারি যা, আমা’দের দু’জনেরই ভালাে লাগবে। পেটে কথা রাখতে পারবি’ তাে?

অ’পর যুবতী বললাে, আহা’ তুই যেন কি? আমি যেন কোনাে কথা লুকিয়ে রাখতে পারবাে না। বেশ তাে কাউকে বলবাে না, মজাটা’ কি?

তাহলে শােন, দেখেছিস তাে আমা’দের কত কঠোর নিয়ম পালন করতে হয়। আমরা যেন মা’নুষ নই, আমা’দের যেন কিছু করতে ইচ্ছে করে না, বলেই সে ফিক করে হেসে ফেলল। অ’পর মেয়ে ইঙ্গিত পেয়ে হা’সল। মেয়েটি ওর পা টিপে বলতে লাগল, এখানে পুরুষ বলতে তাে ঐ স্টুয়ার্ড, বুড়াে হা’বড়া, ওর সঙ্গে কথা বলতে গেলেই খেকিয়ে ওঠে। তবে আর একটা’ পুরুষ আছে। এই যে আমা’দের বােবা মা’লি’। জানিস তাে আমা’দের কনভেন্টে যে সব মহিলারা আসে তাদের কারও কাছে আমি শুনেছি যে, একজন মেয়ের সঙ্গে একজন ছেলের যখন মিলন হয় তখন যে আনন্দ হয় তার কাছে জগতের আর
সব আনন্দ তুচ্ছ, তাই আমি ভাবছিলুম আমা’দের এই নতুন মা’লি’র সঙ্গে যদি ব্যাপারটা’ যাচাই করে নিতুম কথাটা’ কতদূর সত্যি। আর একটা’ কি মজা জানিস, ছোঁড়াটা’ তাে বােবা, আমরা যদি ওর সঙ্গে কিছু করি ও কাউকে কিছু বলতে পারবে না, কি মজা বল তাে? ছোঁড়াটা’ একটু বােকাও আছে। তা কি বলছিস?

অ’পর মেয়ে বললাে, যাঃ কি বলছিস? আমরা তাে শপথ গ্রহণ করেছি যে, আমরা কখনও আমা’দের কুমা’রীত্ব বি’সর্জন দেব না।

রাখ তাে তাের শপথ। আমরা তাে কত শপথ করছি কিন্তু ক’টা’ মেনে চলছি? পৃথিবীতে কুমা’রী রক্ষা করার জন্যে ঈশ্বরের অ’নেক মেয়ে আছে।

কিন্তু ভাই আমা’র ভয় করছে যদি আমা’দের গর্ভ হয়ে যায়!

কিছু করলুমই না আর এখনি তোর ভয়? তাই যদি হয় তাহলে সে বি’পদ কাটা’বার উপরও আছে। তবে জানিস তাে সবই লুকিয়ে রাখতে হবে নইলে বি’পদ, সব মা’ঠে মা’রা যাবে।

অ’পর মেয়েটিরও ততক্ষণে লােভ হয়েছে। সে জিজ্ঞাসা করলাে তাহলে কি করে কি করবি’? আমি তোর সঙ্গে আছি।

দুপুর তাে পার হতে চললাে, আমা’দের বাকি বন্ধুরা এখনও ঘুমুচ্ছে। বাগানেও আর কেউ নেই তবুও চারদিকে একবার দেখে নেবাে। যদি দেখি কেউ নেই তাহলে ছোঁড়াকে বাগানের ঐ ঘরটা’য় নিয়ে যাব, ঐ যে ঘরটা’, বৃষ্টির সময় মা’লি’রা যে ঘরটা’য় ঢুকে মা’থা বাঁচায়। তারপর ওকে নিয়ে আমি ঘরে ঢুকবাে, বাইরে দাঁড়িয়ে তুই পাহা’রা দিবি’। আমা’র হয়ে গেলে তুই ঘরে ঢুকবি’ আমি বাইরে পাহা’রা দেব। ছোঁড়াটা’ বােকা, বুঝলি’, আমরা ওকে যা করতে বলবাে, ও তাই করবে। ছোড়াও তাে মজা পাবে, অ’থচ কাউকে কিছু বলতে পারবে না, কি মজা বল তাে?

ম্যাসেত্তো তাে মটকা মেরে পড়েছিল, মেয়েদের সব কথাই শুনতে পাচ্ছিল। আর মনে মনে মজা অ’নুভব করছিল। সে শুধু অ’পেক্ষা করছিল কখন একটা’ মেয়ে তাকে ডেকে যথাস্থানে নিয়ে যায়।

মেয়ে দু’জন এবার চারদিক ঘুরেঘারে দেখে এলাে, না কেউ কোথাও নেই রাস্তা পরিষ্কার। ফিরে এসে যে মেয়েটি প্রথম কথা বলেছিল সে ম্যাসেত্তোকে জাগাল। ম্যাসেত্তোরও বােধহয় ধৈর্য ধরছিল না, ডাকার সঙ্গে সঙ্গে সে চট করে উঠে দাঁড়াল। এবার শুধু হুকুমের অ’পেক্ষা।

মেয়েটি অ’ঙ্গভঙ্গি দ্বারা জানাল, আমা’র সঙ্গে চলাে, বেশ মজা হবে। মজা যে হবে তা তাে সে জানে। কি মজা হবে তা যেন ম্যাসেত্তো জানে না তাই সে বােকার মতাে হা’সতে লাগল। মেয়েটি ম্যাসেত্তোর হা’ত ধরে সেই কুটিরের মধ্যে নিয়ে গেল। এবার কি করতে হবে তা আর ম্যাসেত্তোকে ভালাে করে বুঝিয়ে বলতে হল না।

মেয়েটি যা চেয়েছিল তা সে ভালাে করেই পেল। তারপর সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হা’সতে হা’সতে তার সখিকে ডেকে ঘরে ঢুকিয়ে দিল। ম্যাসেত্তো বােকা সেজে পুরুষের কাজ করে গেল। এসব যেন সে জানে না, ওদেরই আদেশমতাে সবকিছু করছে।

মেয়ে টি সেবার একবারেই সন্তুষ্ট হল না। ম্যাসেত্তোর ক্ষমতা তারা আরও কয়েকবার পরীক্ষা করে তারপর তাকে ছাড়ল। মেয়ে দুটি নিজেদের ঘরে ফিরতে ফিরতে হা’সাহা’সি করতে করতে বলাবলি’ করতে লাগল, যা শুনেছিল তা ঠিকই, এমন আনন্দ আর কিছুতে পাওয়া যায় না। এরপর থেকে যখনি সুযোগ জুটেছে তখন তারা সুযােগের সদ্ব্যবহা’র করেছে। বেশ আনন্দেই তাদের দিন কাটতে লাগল।

একদিন আর এক সখি তাদের ধরে ফেললাে। সে তার কুঠুরির ঘর থেকে দেখতে পেল মেয়ে দুজন বাগানের মা’লি’কে ডেকে নিয়ে একটা’ কুটিরের দিকে গেল। সে তখন তার দুজন সখিকে ডেকে ব্যাপারটা’ দেখাল। এই তিনজন মিলে সাব্যস্ত করল, এ তাে ভারি অ’ন্যায়। ঠাকুরণকে জানিয়ে দেওয়া ভাল।

একজন বললাে তার আগে ওদের একবার জিজ্ঞাসা করা উচিত এবং সতর্ক করে দেওয়া হোক, ওরা এমন কাজ করলে ঠাকুরণকে সব জানিয়ে দেওয়া হবে।

ঐ সখি দু’জন যখন ঘরে ফিরে এলাে তখন আর তিন সখি কলকল করে বলতে লাগলাে, আমরা দেখে ফেলেছি তােমরা বােবা মা’লি’টা’কে নিয়ে কুটিরে ঢােকো। আবার যদি এমন কাজ করাে তাে আমরা ঠাণকে সব বলে দেবাে।

তখন প্রথম দু’জন সখি বলল, আমরা বোবা মা’লি’র সঙ্গে কি করি তা তাে তােমরা চোখে দেখ নি। একবার আমা’দের সঙ্গে চলাে, আমরা যা করি তােমরাও তাই করবে, যদি তােমা’দের খারাপ লাগে তাে তখন তােমরা ঠাকরুণের কাছে নালি’শ কোরাে।

একদিন সুযােগ বুঝে প্রথম দু’জন তিনজনকে নিয়ে গেল। ফিরে এসে ওরা স্বীকার করলাে, আমরা কি বােকা, এমন আনন্দ আমরা উপভােগ না করেই ঠাকরুণের কাছে নালি’শ করতে যাচ্ছিলুম।

ম্যাসেত্তেকে তখন পঞ্চকন্যাকে তৃপ্ত করতে হয়। গায়ে জোর আছে, কলাকৌশলও জানে, পাঁচজনকে সে ভালাে করেই সামলাতে পারে। রইল বাকি তিন।
এই তিনজনও দলে ভর্তি হয়ে গেল। মা’েট আটটি তাজা তরুণী পেয়ে ম্যাসেত্তো ভারি খুশি। এতটা’ সে আশাও করে নি।

আটটি মেয়ে তার নাকের ডগায় কি কাণ্ড করে বেড়াচ্ছে ঠাকুরণ তখনও টের পান নি। একদিন ঘরের মধ্যে যখন বেশ গরম তখন ঠাকরুণ ভাবলেন বাগানে একটু বেড়িয়ে আসবেন কিংবা কোনাে গাছের শীতল ছায়ায় কিছুক্ষণ বসবেন।

বাগানে এসে ঠাকরুণ দেখল একটা’ বাদাম গাছের তলায় ম্যাসেত্তো ঘুমা’েচ্ছে। সত্যিই ঘুমা’েচ্ছে, মটকা মেরে পড়ে ছিল না। হা’ওয়া দিচ্ছিল। হা’ওয়াতে তার পরিধেয় সরে যেতে যে অ’ঙ্গটি উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছিল তা কোনাে অ’বস্থাতে উন্মুক্ত হওয়া অ’শালীন।

এই দৃশ্য দেখে ঠাকরুণ লজ্জা পেয়ে সরে গেল না পরন্তু দৃশ্যটি উপভােগ করতে  লাগল। শিরায় শিরায় রক্তস্রোত চঞ্চল হয়ে উঠলাে। তার মেয়েদের মনে যে কামনা জেগে উঠল ঠাকরুণের মনেও সেই কামনা তড়িৎ প্রবাহের মতাে সঞ্চারিত হল। কপালের শিরা দপ দপ কায় লাগল, সে নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ম্যাসেত্তোকে জাগিয়ে ঠাকরুণ তাকে সােজা নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে তুলল, তুলল তাে আর ছাড়ল না, ঘরেই কয়েক দিন লুকিয়ে রেখে দিল।

এদিকে বি’না নায়কে নান মেয়েদের উপােস দিতে হচ্ছে। তারা যেন কিছু জানে না তাই তারা ঠাকরুণের কাছে নালি’শ করতে লাগল যে মা’লি’টা’কে দেখা যাচ্ছে না, বাগানে কোনাে কাজ করছে না। কোথায় গেল সে? আর টিকি দেখা যাচ্ছে না কেন?

ঠাকরুণ যেন কিছু জানেন না। তিনি আপাতত চেপে গেলেন। সে এখন মজা পেয়েছে তাই ছাড়বে কেন? নান মেয়েরা আপাতত জব্দ। বেশ হয়েছে।
ঠাকরুনের কিন্তু লােভ বেড়ে যায়। দিনের মধ্যে ম্যাসেত্তোর সঙ্গ বেশ কয়েকবার চাই ই নইলে সে তৃপ্ত নয়। জোয়ান ও সবলা মেয়ের ক্ষিধেও বেশি। নান মেয়েরা কিন্তু চালাক। তারা ঠিক কাজ গুছিয়ে নেয়।

ম্যাসেন্তে আর পারছে না। ঠাকরুণের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে। সে দেখলাে আর বােবা হয়ে থাকা যায় না, কথা বলতেই হবে। সে তাে যন্ত্র নয়, একটা’ মা’নুষ, কত ধকল সহ্য করবে?

একদিন রাত্রে সে মুখ খুললাে। ঠাকরুণকে বলল, দশটা’ মুরগির পক্ষে একটা’ মা’েরগ যথেষ্ট কিন্তু দশজন পুরুষও একজন নারীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না। অ’থচ এখানে আমা’কে ন’জনের মা’েকাবি’লা করতে হয়। আমি আর পেরে উঠছি না। ভাবছি এখান থেকে চলে যাবাে, আমা’কে লােভ দেখিয়ে মা’ইনে বাড়িয়ে দিলেও আমি আর এখানে থাকব না। এই অ’বস্থায় হয় আমা’কে ছেড়ে দাও নয়ত আমা’র সঙ্গে একটা’ রফা কর।

ম্যাসেত্তাকে কথা বলতে শুনে ঠাকরুণ তাে চমকে উঠল। লােকটা’ তাহলে বােবা নয়?
ঠাকরুণ জিজ্ঞাসা করলাে, একি? তুমি তাে দিব্যি কথা বলছে। তুমি তাহলে আমা’দের ধাপ্পা দিয়েছ?

“না ঠাকরুণ, তা নয়। আমা’র গলায় একটা’ অ’সুখ হয়েছিল তাই এতদিন আমা’র কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমি আবার বাকশক্তি ফিরে পেলুম। আসলে আমি বোবা নই।

ঠাকরুণ এবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাে, তুমি বলেছিলে তােমা’কে ন’জনের মা’েকাবি’লা করতে হয়, ব্যাপারটা’ কি?

ম্যাসেত্তো তখন সমস্ত ব্যাপারটা’ খুলে বললাে। ঠাকরুণ সব শুনে তাে অ’বাক। তার নান মেয়েরা তার চেয়েও চালাক কিন্তু লােকটা’কে তাে ছেড়ে দেওয়া যায় না। তাহলে ও বাইরে গিয়ে এইসব কেলেংকারির কাহিনী সবি’স্তারে বলে বেড়াবে। তার চেয়ে নান মেয়েদের সঙ্গে একটা’ বোঝাপড়া করে মা’লি’কে ভাগাভাগি করে নিতে হবে এবং তাই করা হলাে। এখন আর কারও কোনাে অ’ভিযােগ রইল না। ম্যাসেত্তোও খুশি। সে দিব্যি রয়ে গেল।

ইতিমধ্যে বৃদ্ধ স্টুয়ার্ড মা’রা গেল। গােপন ব্যাপারটা’ তাে জানাজানি হয়েই গেছে। ম্যাসেত্তো কথা বলছে। ঠাকরুণ বাইরে প্রচার করে দিল যে, তাদের সমবেত প্রার্থনার জোরে ও যে সাধুর নামে কনভেন্টের নাম তারই অ’সীম দয়ায় তাদের মা’লি’ বাক্শক্তি ফিরে পেয়েছে। এজন্যে তাকেই কনভেন্টের স্টুয়ার্ড নিযুক্ত করা হল।

ঠাকরুণ ও নান মেয়েরা ম্যাসেত্তো আর সকলের সুবি’ধামতাে সময়সূচি ঠিক করে নিল যাতে সকলে সমা’ন ভাগ পায়। ক্রমে ক্রমে কনভেন্টে অ’নেক শিশু অ’তিথির আবি’র্ভাব ঘটল কিন্তু তাদের এমনভাবে বাইরে চালান করে দেওয়া হল যে, কেউ কিছু সন্দেহ করতে পারল না।

ম্যাসেত্তো কনভেন্টেই থেকে গেল যে পর্যন্ত না সে বৃদ্ধ হয়ে অ’বসর গ্রহণ করলাে। অ’নেকগুলি’ সন্তানের পিতা হলেও তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব তার ঘাড়ে পড়ে নি। ঠাকরুণেরও অ’নেক বয়স হয়েছিল। তিনি একদিন পৃথিবীর মা’য়া কাটিয়ে চলে গেলেন। একদিন যে গ্রাম থেকে হা’তে একটি কুড়ুল নিয়ে যাত্রা করেছিল সেই গ্রামেই ম্যাসেত্তো ফিরে এল। পবি’ত্র কনভেন্টে থাকলেও প্রভু যীশুর দয়া সে পায় নি, তা একথা ম্যাসেত্তো মনে মনে স্বীকার করতাে। সে তাে শুদ্ধচিত্তে কখনও যীশুকে স্মরণ করেনি পরন্তু সে শয়তানের পূজা করে এসেছে।

দ্বি’তীয় গল্প

রাজার আস্তাবলের একজন সহিস রাজা আগিলুলফের রাণীর সঙ্গে সহবাস করে। রাজা তা জানতে পারেন কিন্তু ঘটনা গােপন রাখেন তবে তিনি অ’পরাধীকে চিনতে পেরে তার মা’থার চুল কেটে দেন। সেই সহিস এতই ধূর্ত ছিল যে, সে বাকি সহিসদেরও অ’নুরূপভাবে চুল ছেটে দিয়ে শাস্তি এড়িয়ে যায়।

ফিলােষ্ট্রেটোর গল্পর কিছু অ’ংশ শুনে লজ্জায় মহিলাদের সারা মুখ লাল হয়ে যায় আবার কিছু অ’ংশ শুনে তারা কৌতুক বােধ করে হেসে গড়িয়ে পড়ে। প্যামপিনিয়াকে সম্বােধন করে রানী বলেন, এবার তােমা’র গল্প বলার পালা। প্যামপিনিয়া সুযােগ পেয়ে হা’সিমুখে তার গল্প আরম্ভ করে।

কিছু লােক এমন কিছু ঘটনা জেনে ফেলে বা শোনে যা তারা গােপন রাখলে বা চেপে গেলে ভালে করতাে কিন্তু তাদের বুদ্ধি কম তাই তারা সেই গুপ্ত ঘটনা সগৌরবে প্রচার করে নিজেও বি’পদে পড়ে, অ’পরকেও বি’পদে ফেলে কিংবা উভয়ই হা’স্যাস্পদ হয়। এমন যে সত্যিই ঘটে তারই প্রমা’ণ স্বরূপ আমি একটা’ গল্প বলবাে।

এক শক্তিশালী রাজা এক অ’ত্যন্ত অ’প্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হন কিন্তু বড় বুদ্ধিমা’ন ছিলেন, তাই ঘটনাটি চেপে যান। বুদ্ধি কৌশলে তিনি এমন একজনের কাছে পরাজিত হন, যার সামা’জিক মর্যাদা ম্যাসেত্তো অ’পেক্ষা হয়ত নিচে ছিল। এবার গল্প শােনাে।

আগিলুলফ লম্বাৰ্ডদের রাজা হয়ে তার পূর্ববর্তী রাজাদের মতাে পাভিয়া নগরে রাজধানী স্থাপন করল। লম্বার্ডির এটি প্রধান শহর। আগিলুলফ লাম্বার্ডিয়ার ভূতপূর্ব রাজা অ’থারির বি’ধবা, অ’তীব সুন্দরী থিওডেলি’ণ্ডাকে বি’য়ে করেন। এই রানী বুদ্ধিমতী শুদ্ধচিত ও ধর্মপরায়ণা ছিলেন তথাপি তার এক প্রণয়ীর জন্যে তাকে অ’নভিপ্রেত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল অ’থচ ব্যাপারটা’ তার অ’জানা থেকে যায়। এইটেই হল কৌতুকের বি’ষয়।

নতুন রাজা আলি’লুলফ রাজ্যে শান্তি শৃংখলা ফিরিয়ে এনে দেশের আরও উন্নতি করতে লাগলেন। তিনি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমা’ন ছিলেন। কিন্তু একটা’ অ’ন্যরকম ঘটনা ঘটে গেল।

আস্তাবলে নীচ বংশােদ্ভূত একজন সহিস ছিল। নীচ বংশের সন্তান হলেও তার চেহা’রা ছিল দর্শনীয়; বলতে কি রাজার চেহা’রার সঙ্গে তার সাদৃশ্য ছিল। লােকটি চতুরও ছিল। এ হেন সহিস গভীরভাবে রানীর প্রেমে পড়ে গেল। সর্বদা সে রানীর চিন্তা করে, চোখ বুজলেই রানীকে দেখে।

সে জানত ও বুঝত যে তার মতাে সামা’ন্য এক সহিসের পক্ষে রানীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা অ’ন্যায় এবং প্রেমে পড়া তাে অ’পরাধ। এ যেন আকাশের চাদ চাওয়া। মনের ব্যথা সে মনেই লুকিয়ে রাখত এবং পাছে কেউ তিলমা’ত্র সন্দেহ করে এজন্যে সে রানীর মুখের দিকে চেয়ে দেখত না। সে ভালাে করেই জানত যে রানীকে স্পর্শ করাই তার পক্ষে সম্পূর্ণ অ’সম্ভব এবং সে কখনই রানীর অ’নুগ্রহ লাভ করতে পারবে না। তথাপি সে তার মনকে সংযত করতে পারত না, এমনই তীব্র ছিল তার তাকর্ষণ। সে যেন কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছিল। তাই সে রানীর সন্তুষ্টি বি’ধানের জন্যে সামা’ন্য কাজেও ত্রুটি রাখত না।

তাই রানী যখন অ’শ্বারােহণে কোথাও যেতেন তখনই তিনি বি’শেষ একটি টা’ট্টু ঘোড়া চাইতেন যেটি সেই সহিস দেখাশােনা করত, অ’ন্য সহিসের ঘােড়া রানী পছন্দ করতেন না। এতেই সহিস যারপরনাই  আহ্লাদিত, সে তখন বুঝি আনন্দের সপ্তম স্বর্গে উঠে যেত।

রানী যখনই এই টা’টু ঘােড়ায় চেপে যেতেন সহিস ঘােড়ার পাশে রেকাব ঘেসে ছুটত আর সেই সময়ে রানীর গােড়ালি’ পর্যন্ত ঝুলওয়ালা গাউনের প্রান্ত ক্ষণিকের জন্যেও তার গায়ে লেগে গেলে সে বুঝি অ’জ্ঞান হয়ে যেত। আনন্দে সে তখন আত্মহা’রা।

তােমরা অ’নেকেই জান যে, এসব ক্ষেত্রে আশা যত ক্ষীণ হয় আবেগ বা অ’নুরাগ তত তীব্র হতে থাকে। ভার লাঘব করতে না পারলে মা’নুষ পাগলও হয়ে যায়। এই সহিসেরও তাই হচ্ছিল। সে নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারছিল না তাই সে স্থির করল সে মরবে।

তাই মনে মনে স্থির করল সে আত্মহত্যা করবে না কিন্তু রানীর জন্যই এমন একটা’ কাণ্ড করবে যে সে ধরা পড়লে তাকে নিহত হতে হবে। তাতেই সে আনন্দ পাবে।

বেপরােয়া হয়ে সে চিন্তা করতে লাগল কি করে সে রানীকে একবার আলি’ঙ্গন, চুম্বন বা অ’ন্য কিছু করতে পারে কিনা। রানীকে প্রেমপত্র দিলেও তার ইচ্ছা ফলপ্রসূ হবে না, উলটে তাকে হয়ত মৃ’ত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। তার চেয়ে দেখা যাক কি করে গােপনে রানীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করা যায়।
সে খোজ নিয়ে জানল যে রাজা রানীর শয়নকক্ষে শয়ন করেন না। রাত্রে বি’শেষ দিনে বা সময়ে রাজা রাণীর শয়নঘরে আসেন ও কিছু সময় কাটিয়ে নিজের শয়নঘরে ফিরে যান এবং সেই রাত্রে রাণীর ঘরে আর ফিরে আসেন না। এই হল তার রাণীর শয়নকক্ষে প্রবেশ করার সুযােগ। তার একটা’ সুযােগ তাে আছেই। রাজার চলাফেরা ও চেহা’রার সঙ্গে তার সাদৃশ্য আছে। সে যদি একটা’ পােশাক যােগাড় করতে পারে ও সময়টা’ জানতে পারে তাহলে সে রাণীর শয়নঘরে ঢুকতে পারবে।

প্রেম মা’নুষকে বেপরােয়া ও সাহসী করে। রাজা কখন ও কি রকম পােশাক পরে রাণীর ঘরে যান সেসব জানবার জন্যে সে রাতে গােপনে রাজপ্রাসাদে ঢুকল এবং রাজার শয়নকক্ষ ও রাণীর শয়নকক্ষের মা’ঝে যে প্রশস্ত দরদালান ছিল, কয়েক রাত্রি সেই দরদালানে লুকিয়ে থেকে আবি’ষ্কার করল যে লম্বা একটা’ আলখাল্লা পরে রাজা তার শয়নকক্ষ থেকে বেরােলেন, তার এক হা’তে ছােট একটা’ মশাল আর অ’পর হা’তে একটা’ ছড়ি।

দরদালান পার হয়ে রাজা রাণীর শয়নকক্ষের বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হা’তের ছড়ি দিয়ে দুবার আঘাত করলেন। সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে গেল, কেউ রাজার হা’ত থেকে মশালটা’ নিয়ে নিল, রাজা ঘরে ঢুকলেন, দরজা বন্ধ হল। কিছুক্ষণ পরে রাজা রাণীর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ঘরে ঢুকলেন।
অ’ন্ধকারে সহিস কয়েকদিন লুকিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষ্য করল। এই কৌশলেই তাকেও রাণীর ঘরে ঢুকতে হবে।

সহিস রাজার মতাে একগাছা ছড়ি, মশাল ও আলখাল্লা যােগাড় করল। একটা’ চকমকিও সঙ্গে নিল। রাণী যাতে তার গায়ের গন্ধ টের না পায় এবং কোনােরকম সন্দেহ না করেন এজন্য সে গরম জলে বেশ করে স্নান করল। তারপর জিনিসগুলি’ সঙ্গে নিয়ে এক রাত্রে গােপনে প্রাসাদে ঢুকে সেই দরদালানে হা’জির হল। তারপর অ’ন্ধকারে লুকিয়ে রইল।

যখন দেখল সকলে ঘুমিয়ে পড়েছে, রাস্তা পরিষ্কার, উপযুক্ত সময় হয়েছে তখন সে মরণপণ করে নিজ অ’ভীষ্ট সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হল। আলখাল্লাটি পরল, চকমকি জ্বালি’য়ে মশালটি জ্বালল, তারপর এক হা’তে মশাল অ’পর হা’তে ছড়ি নিয়ে রাণীর শয়নকক্ষের বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে ছড়ি দিয়ে দু’বার আঘাত করল। রাণীর শয়নকক্ষের দাসী ঘুমজড়ানো চোখে দরজা খুলে দিয়ে তার হা’ত থেকে মশালটি নিয়ে নিভিয়ে একধারে রেখে দিল।

ছদ্মবেশী সহিস নিঃশব্দে পর্দার ওপারে গিয়ে আলখাল্লাটি খুলে খাটে উঠে রাণীর পাশে শুয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল এবং নিজের কাম চরিতার্থ করল। রাজা এসেছে মনে মনে রাণী সম্পূর্ণভাবে সহযােগিতা করল। উভয়েই তৃপ্ত। রাণীকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু ধরা পড়বার ভয়ে সে উঠে পড়ল, বরঞ্চ আর একদিন চেষ্টা’ করা যাবে। সে নীরবে উঠে পড়ল, তারপর আলখাল্লা পরে ছড়ি ও মশাল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিছু পরেই নিজের ঘরে গিয়ে নিজের বি’ছানায় শুয়ে পড়ল। পালকের গদি থেকে খড়ের গদি।

সহিস তার ঘরে পৌছবার আগেই এদিকে রাজামশাই রাণীকে অ’বাক করে দিয়ে তাঁর ঘরে ঢুকে খাটে উঠে রাণীকে বুকে জড়িয়ে ধরে গদগদ কণ্ঠে ভালবাসার কথা বলতে আরম্ভ করেছেন। অ’ন্যদিন রাজা কথা বলেন না। কাজ সেরে কিছুক্ষণ শুয়ে নিজের ঘরে ফিরে যান কিন্তু আজ  দিলখুস মেজাজ।

রানী বললেন, হ্য ভগবান! আজ মশাইয়ের কি হয়েছে। এই তো একটু আগে এলেন, কথাটি না বলে অ’ন্য দিনের চাইতে আরও উত্তমরূপে রতিক্রিয়া করেই চলে গেলেন, আবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসে যেন নতুন করে আরম্ভ করলেন। দেখাে বাপু সাবধান, বাড়াবাড়ি কোরাে না।

রাজা ভীষণ ধূর্ত। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝলেন তার সঙ্গে চেহা’রার সাদৃশ্য আছে এমন কেউ এসে রানীকে উপভােগ করে গেছে। অ’ন্ধকারে ও ঘুমচোখে রানী তাকে চিনতে পারেন নি। রাজা বুদ্ধিমা’ন। তিনি যদি বলেন যে, তিনি আসেন নি তাহলে বানী অ’ত্যন্ত বি’ব্রত হবেন এবং কেলেংকারির চূড়ান্ত হবে। রানী যখন বুঝতেই পারে নি আগে কে এসেছিল তখন চেপে যাওয়াই ভাল।

বােকা লােক হলে শুনেই চেঁচামেচি আরম্ভ করে দিত। সঙ্গে সঙ্গে লােকজন ডাকাডাকি করে জিজ্ঞাসা করতে, কে ঘরে ঢুকেছিল, কি করে ঢুকলাে? সে কোথায় গেল? প্রাসাদের লোক জেগে উঠত। তারা ভাবত রানীর নিশ্চয় কোনাে প্রেমিক আছে। নির্দোষ রানীর বদনাম হতো এবং রানী নিজেও মা’নসিক আঘাত পেত। তার চেয়ে চেপে যাওয়াই ভালাে। এখন কথা বললেই বি’পদ।

রাজার মনে কিন্তু ঝড় উঠল তবুও তিনি তা প্রকাশ করলেন না। তাঁকেও ঠকাবার মতো লােক তাহলে আছে?

রানীকে তিনি বললেন, প্রেয়সী তুমি মিছেই ভয় পাচ্ছ। এক রাত্রে আমা’র কি দ্বি’তীয়বার উপগত হবার ক্ষমতা নেই? না কি তােমা’রও নেই?
গাে না, তা নয়। তােমা’র শরীরের কথা ভেবেই কথাটা’ বলেছি। আমা’কে নিয়ে তুমি ইচ্ছামতাে খেলা কর না, কে নিষেধ করছে?
তুমি ঠিকই বলেছ রানী। সত্যিই এখন মনে হচ্ছে আমি ক্লান্ত। আজ থাক, আমি এখন যাই, তুমি ঘুমা’েও, আজ রাত্রে আমি আর তােমা’কে বি’রক্ত করব না। না, আমি রাগ করি নি।


রাগ তিনি রানীর ওপর করেন নি, রাগ করেছিলেন সেই অ’জানা লােকটা’র ওপর যে তাকে ও রানীকে ঠকিয়েছে। একেবারে রানীর ঘরে ঢুকে তার সঙ্গে রতিক্রিয়া করে গেছে?

লােকটা’কে আজ রাত্রেই ধরতে হবে এবং এখনি। লােকটা’ কে হতে পারে? নিশ্চয় প্রাসাদেরই কোনাে লােক হবে এবং সম্ভবত সে এখনও প্রাসাদের ভেতরেই কোথাও আছে।

রাজা ছােট একটা’ লণ্ঠন নিলেন তারপর তিনি প্রাসাদ থেকে বেরােলেন। প্রাসাদ বলতে মূল বাড়ির বাইরে যেসব বাড়ি ও বাগান আছে সেসবও প্রাসাদের অ’ন্তর্ভূত বলে বােঝায়।

প্রথমেই তার চোখে পড়ল আস্তাবল। আস্তাবলের ওপরে সহিস ও কোচোয়ানদের থাকবার জন্যে লম্বা হলঘর আছে, সার সার খাট পাতা আছে। রাজা হলঘরে ঢুকে দেখলেন সকলেই গভীর নিদ্রায় মগ্ন। তিনি অ’নুমা’ন করলেন, যে লােকটা’ অ’ত্যন্ত গর্হিত এই কাজ করে এসেছে তার হৃদস্পন্দনের গতি স্বাভাবি’ক হয়নি, এখনও দ্রুত তালে চলছে। সেটা’ আনন্দ, উত্তেজনা, পরিশ্রম বা ভয়েও হতে পারে। রাজা ঠিক করলেন তিনি প্রতিটি ঘুমন্ত লােকের বুকে কান পেতে তাদের বুকের আওয়াজ শুনবেন।

প্রত্যেকেই গভীর নিদ্রায় মগ্ন কিন্তু সেই চোর সহিসের চোখে ঘুম নেই। রাজাকে ঘরে ঢুকতে দেখে সে তাে বুঝতে পেরেছে রাজা কেন এসেছেন। ভয়ে তার আত্মা’রাম খাঁচাছাড়া হবার উপক্রম। তার বুকে কেউ বুঝি হা’তুড়ি পিটতে আরম্ভ করল। সে মনে মনে ভাবতে লাগল ধরা পড়লে সে কি বলবে বা করবে। সে লক্ষ্য করল রাজার হা’তে কোনাে অ’স্ত্র নেই। আপাতত নিরাপদ ভেবে সে ঠিক করল ঘুমের ভান করে সে মটকা মেরে পড়ে থাকবে। দেখা যাক উনি কি করেন।

রাজামশাই একে একে প্রত্যেকের বুকে কান পেতে দেখলেন, সকলেরই হৃদস্পন্দন স্বাভাবি’ক কিন্তু সেই বি’শেষ সহিসটির বুকে সজোরে ঢিব ঢিব করছে। রাজামশাই স্থির করলেন এই ব্যাটা’ই অ’পরাধী। রাজামশাই কিছু বললেন না, সােরগােলও তুললেন না। লােকটা’কে চিনে রাখবার জন্য তিনি তার মা’থার একধারের চুল কেটে রাখলেন। এইরকম একটা’ মতলব করে তিনি সঙ্গে একটা’ কাচিও এনেছিলেন। এই সময়ে পুরুষরা মা’থায় লম্বা চুল রাখত। খানিকটা’ চুল কাটা’ থাকলে লােকটা’কে পরদিন সহজে চেনা যাবে। তারপর তিনি সেই ঘর থেকে বেরিয়ে প্রাসাদে নিজের ঘরে ফিরে গেলেন।

সেই সহিসও কম ধূর্ত নয়। সে বুঝল রাজামশাই কেন তার চুল কেটেছে। সে তখনি উঠে পড়ল। ঘােড়ার পরিচর্যার জন্যে যে কাচি থাকে সেই একটা’ কাচি বার করে ঘুমন্ত আর সকলের চুল একইভাবে কুকুচ করে কেটে দিল। কেউ টেরও পেল না। রাজামশাই কানের ওপরে যেখানে চুল কেটেছিলেন সহিসও সেইভাবে প্রত্যেকের চুল সেইভাবে কেটে দিল। তারপর নিজের বি’ছানায় এসে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে উঠেই রাজামশাই বললেন প্রাসাদের ফটক বন্ধ করে দাও। কেউ যেন বাইরে বেরােতে না পারে। তারপর সকল কর্মীকে খালি’ মা’থায় তার সামনে এসে সার বেঁধে দাঁড়াতে আদেশ নিলেন। তারপর রাজামশাই যে সহিসটির চুল কেটে দিয়েছিলেন তাকে খুঁজে বের করবার জন্যে একে একে প্রত্যেকের মা’থা লক্ষ্য করতে লাগলেন। কিন্তু সহিস দলের কাছে এসে তিনি হতাশ হলেন। প্রত্যেকের মা’থার চুল একইভাবে কাটা’। বি’শেষ লােকটিকেও তিনি চিনতে পারলেন না।
রাজামশাই তখন মনে মনে স্বীকার করলেন, লােকটা’ হয়ত নীচজাতির হতে পারে কিন্তু তার বুদ্ধি খুব তীখণ।

অ’ন্য কোনাে রাজা হলে হয়ত সব সহিসকে জেরা করতেন ও তাদের ওপর উৎপীড়ন চালাতেন যার ফল ভালাে হতাে না। অ’পরাধী দোষ স্বীকার করত না উলটে দেশে ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিত। রাজা হতাশ হলেন, নিজেকে অ’ত্যন্ত অ’পমা’নিত বােধ করলেন বি’শেষ করে তার পত্নীর লুষ্ঠিত সম্মা’নের কোনাে ফয়সালা করতে পারলেন না।

রাজা কিছু একটা’ কৈফিয়ৎ দিয়ে সকলকে বি’দায় করে দিলেন। কিন্তু কেউ কোনাে কারণ বুঝতে পারল না, কি উদ্দেশ্যে রাজামশাই তাদের ডাকলেন? বুঝল একমা’ত্র সেই লােকটি, ভাবল খুব বেঁচে গিয়েছি, আর ও পথে নয়। রাজামশাই যতদিন বেঁচে ছিলেন সে তার দুঃসাহসিক অ’ভিসারের কথা কাউকে বলতে সহস করেনি এবং অ’নুরূপ কোনাে কাজ করে নি। একেই কি বলে চোর চূড়ামণি!

তৃতীয় গল্প

একটি মহিলা এক যুবকের প্রেমে পড়েছিল কিন্তু যুবককে তা জানাবার বা তার সঙ্গে দেখা করার সুযােগ পাচ্ছিল না। তখন সে এক কৌশল অ’বলম্বন করল। সে সৎচরিত্র ও শুদ্ধচিত্তের ছল করে গির্জায় গিয়ে জনৈক ফ্রায়ারের (খ্রীস্টা’ন ভিক্ষু) কাছে গিয়ে বলল সে তার পাপপুণ্য স্বীকার (কনফেশন) করতে চায় এবং সেই সঙ্গে উক্ত যুবকের বি’রুদ্ধে এমন চাতুরীর আশ্রয় নিল যে, যুবক সব নির্দেশ পেতে থাকল ও উভয় মিলি’ত হল।

প্যামপিনিয়া তার গল্প শেষ করে নীরব হল। অ’ধিকাংশ শ্রোতা সহিসের সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির প্রশংসা করল। রাজারও প্রশংসা করল। এবার কুইন ফিলােমেনাকে বললেন, পরের গল্পটা’ ফিলােমেনা তুমিই তাহলে বলল। ফিলােমেনা তার সহজ ও নম্র ভঙ্গিতে আরম্ভ করল

আমা’র গল্পটা’ বেশ মজার কারণ এক সুন্দরী যুবতী কিভাবে একজন সরল ফ্রায়ারকে ধাপ্পা দিয়ে নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করল। গির্জার সাধুরা নিজেদের জ্ঞানী, বুদ্ধিমা’ন ও সাধারণ ব্যক্তি অ’পেক্ষা উচ্চ স্তরের মনে করেন অ’থচ সাধারণ এক যুবতীর ছলাকলা ধরতে পারেন না। আসলে সাধুদের বুদ্ধি কিছু কম এবং সৎপথে দৈনন্দিন আহা’র যােগাবার জন্যে তারা সৎ ও সরল জীবন যাপন করবার চেষ্টা’ করে। কুইন আদেশ করেছেন বলেই যে আমি গল্পটা’ বলছি তা নয়, আমি দেখেছি যে গির্জার সাধুরা আমা’দের সহজে বি’শ্বাস করে এবং ঠকে।

মা’ত্র কয়েক বছর আমা’দের শহরে যেখানে ভালবাসা ও আনুগত্য ব্যতীত শঠতা ও প্রবঞ্চনার আধিক্য সেখানে সম্রান্ত বংশের অ’সাধারণ এক সুন্দরী বাস করত। মহিলা নম্র ও শান্ত ছিলেন কিন্তু ধূর্ততায় পেরে ওঠে এমন একজনও নারী তখন ঐ শহরে ছিল না। আমি ঐ সুন্দরীর নাম জানি তবে বলব না কারণ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কিছু ব্যক্তি এখনও জীবি’ত আছে। নাম প্রকাশ হয়ে পড়লে তারা নিন্দিত হবে। আমা’দের গল্প নিয়ে কথা, নাম নিয়ে কি দরকার। ঐ সুন্দরী কিভাবে ফ্রায়ারকে ধোঁকা দিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করল তা শুনে তােমরা খুব কৌতুক অ’নুভব করবে।”

ঐ সুন্দরী সন্ত্রান্ত ও নামী বংশের কন্যা, তার বি’য়ে হয়েছিল অ’খ্যাত বংশের এক ধনী পশম ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সুন্দরী মনে করত তার স্বামী ধনী হলে কি হবে বংশ তাে অ’নেক নিচু, তার সঙ্গে আমা’র বি’য়ে হওয়া উচিত হয়নি। সুন্দরী ঠিক কথাই বলত। পশম ব্যবসায়ী ধনী ঠিকই, যে পরিমা’ণে সে পয়সা ও পশম চেনে সেই তুলনায় সে তার পত্নীকে চেনে না। পত্নীর প্রতি কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য যে আছে সে বােধ তার ছিল না। লােকটা’ পশম ও তুলাে উত্তমরূপে চিনত, তাত সম্বন্ধে তার প্রচুর জ্ঞান, কি করে ভালাে সুতাে চিনতে ও গুটিয়ে রাখতে হয় সে বি’ষয়ে সে মেয়েকর্মীকে নির্দেশ দিত কিন্তু স্ত্রীর যে কিছু চাহিদা আছে বা থাকতে পারে সে বি’ষয়ে সে উদাসীন ছিল। আর এইজন্যে ঐ সুন্দরী স্বামীকে অ’বহেলা করত। স্বামী যদিও বা আদর করত তা পশুর তুল্য, এত বাড়াবাড়ি সুন্দরীর সহ্য হতাে না। নারী যে কোমল সে জ্ঞান স্বামীর ছিল না।

নিরাশ হয়ে সেই সুন্দরী তখন এমন একজন প্রেমিক খুঁজতে লাগল যে তার উপযুক্ত হবে, মনোমত হবে এবং প্রেমিকার সুপ্ত বাসনা কিভাবে জাগিয়ে তুলে সদ্ব্যবহা’র করতে হয় তা সে জানবে। এমন একটি যুবকও একদিন তার চোখে পড়ল। বয়স তিরিশের বেশি, সুদর্শন ও স্বাস্থ্যবান। সুন্দরী ঐ যুবকের প্রেমে পড়ে। সে তার বাড়ির সামনে দিয়েই রােজ যাওয়া-আসা করে। একদিন তাকে দেখতে না পেলে তার বাকি দিন ও রাত্রি অ’ত্যন্ত অ’শান্তিতে কাটে, সে ছটফট করে, সে রাত্রে ঘুমা’েত পারে না।

সেই যুবক কিন্তু জানে না যে এক সুন্দরী তার প্রেমে পড়েছে। সে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় সুন্দরীর দিকে ফিরেও চায় না। সুন্দরীও তার সঙ্গে যােগাযােগ করতে পারছে না, তার দাসীকেও পাঠাতে পারছে , চিঠিও লি’খতে পারছে না। কে জানে ফল যদি বি’পরীত হয়?
সুন্দরী খোঁজ নিয়ে জানল যে গির্জার এক ফ্রায়ারের সঙ্গে যুবকের পরিচয় আছে। ফ্রায়ার অ’ত্যন্ত সৎ ও সরল এবং ধর্মভীরু বলে পরিচিত। সুন্দরী স্থির করল এই ফ্রায়ারের মা’ধ্যমে যুবকের সঙ্গে যােগাযােগ করে সে তার অ’ভিলাষ পূর্ণ করবে।

কিভাবে সে তার উদ্দেশ্য সফল করবে সে বি’ষয়ে মনে মনে একটা’ ছক করে একদিন উপযুক্ত সময়ে সে গির্জায় গিয়ে ঐ ফ্রায়ারের সঙ্গে দেখা করল।  ফ্রায়ার সুন্দরীকে দেখেই বুঝল এই মহিলা গুণবতী ও সম্রান্তবংশীয়া। তার স্বীকারােক্তি শুনতে ফ্রায়ার তৎক্ষণাৎ রাজি হল। কি স্বীকারােক্তি করল কে জানে কিন্তু স্বীকারােক্তি শেষ করে এনে বলল তার আরও কিছু বক্তব্য আছে যা এমন সৎ ও ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছাড়া আর কারও কাছে বলতে পারবে না, বলে সে আরম্ভ করল :

ফাদার আমি একটা’ সমস্যায় পড়েছি যে জন্যে আমি আপনার সাহা’য্য ও সহযােগিতা কামনা করতে বাধ্য হচ্ছি। আমি আমা’র নাম বলেছি যা থেকে আপনি আমা’র স্বামী ও পরিবারের পরিচয় পেয়েছেন। আমা’র স্বামী আমা’কে তার জীবন অ’পেক্ষা ভালবাসেন এবং তিনি প্রভূত ধনী এজন্যে আমি কোনাে সামগ্রী চাইতে না চাইতেই তিনি আমা’কে এনে দেন। এজন্যে আমিও তাকে এতদূর ভালবাসি যে যার সীমা’ নেই। আমি যদি তাকে যথােপযুক্ত প্রতিদান দিতে না পারি তাহলে তাে আমা’কে নরকে দগ্ধ হতে হবে।
আমা’র সমস্যা হল যে, আজকাল আমি একজন যুবককে আমা’র বাড়ির সামনে যােরাফেরা করতে দেখছি যার চেহা’রা দেখে মনে হয় উচ্চবংশের সন্তান এবং আমি যদি ভুল না করি তাে তাকে আপনি চেনেন। ছোকরা বেশ লম্বা, সুদর্শন, বাদামী রঙের ভালাে ছাটের পােশাক পরে। কিন্তু সে আমা’র প্রকৃত দৃঢ় মনােভাব নিশ্চয় জানে না তাহলে সে আমা’র দিকে তার নোংরা হা’ত বাড়াত না। আমি যখন আমা’র বাড়ির জানালা বা দরজার সামনে দাড়াই সে কোথা থেকে এসে উদয় হয়ে আমা’কে লোভীর মতো দেখতে থাকে। সে যে আমা’কে এখানেও ধাওয়া করে নি তা দেখে আমি অ’বাক হচ্ছি।

বলতে কি ফাদার আমি রীতিমতাে ঘাবড়ে গেছি কারণ এমন একজন নীতিহীন যুবক কোনাে সৎ মহিলাকে এভাবে বি’রক্ত করলে সেই মহিলা নির্দোষ হলেও তার বদনাম রটে।

কয়েকবারই আমি মনে মনে ঠিক করেছি যে ব্যাপারটা’ আমি আমা’র ভাইদের বলব। বলতে পারি নি কারণ যুবকেরা সাধারণত এসব ব্যাপারের সুষ্ঠু মীমা’ংসা করতে পারে না। তারা শােনা মা’ত্র মা’থা গরম করে মা’রামা’রি করে এবং এক করতে আর এক হয়ে যায়। নিজেরাও আঘাত পায় জখম হয়। একটা’ অ’প্রীতিকর ব্যাপার ও কেলেংকারি এড়াবার জন্যে আমি এ যাবৎ নিজেকে দমন করেছি।

কিন্তু কিছু একটা’ না করলেও চলে না। সেই যুবককে আপনি চেনেন আর যদি না চেনেন বা কেউ যদি আপনার অ’পরিচিত হয় তাহলেও গির্জার ফ্রায়ার হিসেব আপনি তাদের শাসন করতে পারেন, তাই আমি আপনাকে বলতে সাহস করছি। ঈশ্বরের নামে বলছি আপনি সেই যুবককে ডেকে বেশ করে সমঝে দিন যে এ অ’ত্যন্ত অ’ন্যায়, গর্হিত কাজ। অ’নেক মেয়ে আছে যারা এসব ব্যাপার বেশ মজার মনে করে কিন্তু আমি সেসব মেয়েদের দলে নেই। যুবকের এরকম ব্যবহা’র আমি আপত্তিজনক মনে করি।
কথা শেষ করে যুবতী তার মা’থা নিচু করল এবং দেখে মনে হল সে বুঝি এখনি কেঁদে ফেলবে।

যুবতীর বর্ণনা শুনে ফ্রায়ার বুঝতে পারল কে সেই যুবক, তাকে ফ্রায়ার চেনে। ফ্রায়ার ভাবলেন এই যুবতীর চরিত্র শুদ্ধ, সরল মন, (কারণ তিনি মনে করেছিলেন যুবতী সত্য কথাই বলছে) তাই ফ্রায়ার ঠিক করল যে সে যথােচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সেই যুবক যাতে এই যুবতীকে বি’রক্ত না করে সেজন্যে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। এছাড়া ফ্রায়ার জানতে পারল যে যুবতী ধনী, কিছু দানও করতে পারে। সে কথাও ফ্রায়ার যুবতীকে স্পষ্ট করেই বলল।
উত্তরে যুবতী বলল, ঈশ্বরের দিব্যি, আপনি যুবককে সংযত করুন, যদি সে অ’স্বীকার করে তাহলে আমা’র পরিচয় জানিয়ে বলবেন কে তার বি’রুদ্ধে অ’ভিযােগ করেছে।

এইভাবে যুবতী তার স্বীকারােক্তি ও বক্তব্য শেষ করল। যুবতী যেসব পাপকাজের জন্যে অ’নুতাপ করেছে তার প্রতিকারের জন্যে ফ্রায়ার কিছু নির্দেশ দিল। এবার যুবতী ফ্রায়ারের কথা স্মরণ করে দাতব্য হিসেবে ফ্রায়ারের হা’ত ভর্তি করে কিছু মুদ্রা দিল, তারপর অ’নুরােধ করল তার কোনাে মৃ’ত আত্মীয়ের জন্যে গির্জায় ভজন গান গাইতে। এরপর যুবতী ফ্রায়ারকে আরও একবার অ’নুরােধ করে বি’দায় নিল।

কিছু পরে সেই যুবকও সেই গির্জায় এসে হা’জির। গির্জায় সে নিয়মিত আসত। এটা’ আকস্মিক নয়। উক্ত ফ্রায়ারের সঙ্গে সে কথা বলত। সাধারণ বি’ষয়ে কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফ্রায়ার যুবককে বুঝিয়ে বলল যে কোনাে এক যুবতীর প্রতি যুবক কটা’ক্ষ হা’নে, এটা’ অ’ত্যন্ত অ’ন্যায়। কোন যুবতী এমন অ’ভিযােগ করেছে ফ্রায়ার সে কথাও বলল।

অ’জানা ও অ’চেনা কোনাে এক যুবতীর অ’ভিযােগ শুনে যুবক তাে হতবাক। সে যতদূর সম্ভব আশ্চর্য হয়ে ভাবল যে, তার চলার পথে কোনাে যুবতীর দিকে চেয়েছে বা ইশারা করেছে বলে তাে তার মনে পড়ছে না। ফ্রায়ারের কথায় সে প্রতিবান জানাল, তীব্র ভাবে।

ফ্রায়ার তাকে থামিয়ে বলল, থাক থাক ঢের হয়েছে, আর প্রতিবাদ করবার ভান করতে হবে না, ন্যাকামি কোরাে না, এবার তােমা’র উপায় নেই। সেই যুবতীর পাড়ার কোনাে রমণীর গালগল্প শুনে তােমা’কে বকছি না। সেই যুবতী নিজে এসে তােমা’র বি’রুদ্ধে নালি’শ করে গেছে। তােমা’র এই অ’ন্যায় ব্যবহা’রে সেই যুবতী অ’পমা’নিত, তিতিবি’রক্ত। তুমি আর খােকাটি নও, যথেষ্ট বয়স হয়েছে, বােঝবার বুদ্ধিও হয়েছে। যুবতীকে আর বি’রক্ত কোরাে না, তাকে তার মতাে শান্তিতে থাকতে দাও।

যুবক কিন্তু সত্যিই বুদ্ধিমা’ন। ব্যাপারটা’ সে ধরতে পারল এবং মনে মনে যুবতীর চাতুর্যের প্রশংসা করল। ব্যাপারটা’ কি দেখতে হচ্ছে। ভিজে বেড়ালের মতাে ফ্রায়ারকে বলল, ঠিক আছে আর বকবেন না, সত্যিই অ’ন্যায় হয়েছে, আমি আর ও পথ মা’ড়াব না। – ফ্রায়ারের কাছ থেকে বি’দায় নিয়ে যুবক কিন্তু যুবতীর বাড়ির পথ ধরল। যুবতী তখন যুবকের আসার পথ চেয়ে ছােট একটা’ জানালার সামনে অ’ধীর আগ্রহে অ’পেক্ষা করছে। যুবককে দেখেই সারা মুখ মধুর হা’সিতে ভরে উঠল। যুবক বুঝল সে ভুল করে নি, ঠিকই ধরেছে। যুবতীর বুদ্ধির প্রশংসা না করে পারল না। যুবতীর মতলব সে ঠিকই ধরেছে। তার বি’রুদ্ধে যুবতীর সত্যিই কোনাে অ’ভিযােগ থাকলে সে দরজা বা জানালার সামনে কখনই দাঁড়াত না বা ছুটে গিয়ে ফায়ারের কাছে নালি’শও করত না। তাতে
এরপর থেকে যুবকের নৈত্যনৈমত্তিক কাজই হল নির্দিষ্ট সময়ে ঐ পথে যাওয়া-আসা ও যুবতীর সঙ্গে দৃষ্টি ও হা’সি বি’নিময় করা। এ যুবতী তাে আগেই প্রেমনদীতে ঝাপ দিয়েছিল। কয়েকদিন পরে বুঝল যুবকও সেই নদীতে ঝাপ দিয়েছে। কিন্তু কথা বলা যাচ্ছে না যে, কথা না বললে উভয়ে উভয়ের প্রেমের গভীরতা কিভাবে প্রকাশ করবে? যুবতী আকুতিবি’কুতি করতে লাগল। আবার ফ্রায়ারের কাছে যেতে হবে।

ফায়ারের কাছে গিয়ে যুবতী তার সামনে হা’ঁটু গেড়ে ঝরঝর করে কেঁদে ভাসিয়ে দিল। ফ্রায়ার গম্ভীর হল, বুঝল ছোড়া আবার মেয়েটিকে বি’রক্ত করছে।
ফায়ার তাকে সান্ত্বনা দিয়ে জিজ্ঞাসা করল, কি মা’? ছেলেটি বুঝি তােমা’কে আবার বি’রক্ত করছে?

যুবতী উত্তর দিল, কি আর বলব বাবা, আপনার ঐ বন্ধুর মতলব ভাল না, রিতিমতাে প্রলোভিত করছে, যাতে আমি ওর সাথে মেলামেশা কীর। তাই যদি করি তাহলে তাে আমা’র চরিত্র নষ্ট হবে, তখন কি আমি আপনার কাছে মুখ দেখাতে পারব?

ফ্রায়ার বলল, আচ্ছা পাজী ছোঁড়া তাে, কি করেছে ?

সত্যিই পাজী, পাজীর পা ঝাড়া। আপনি তাকে বকে দিলেন তাতে তার টনক নড়ল না। আগে যদিও বা আমা’র বাড়ির সামনে দিয়ে দু’চার বার যাওয়া-আসা করত এখন অ’ন্তত সাত সাত বার কিংবা তার চেয়েও বেশিবার যাওয়া-আসা করে, আমা’র দিকে চেয়ে হ্যা ত্যা করে নির্লজ্জের মতাে হা’সে। এও না হয় সহ্য করা যায় কিন্তু বাবা লােকটা’র আস্পর্ধা কম নয়। কি করেছে জানেন? কাল তার দাসীকে আমা’র বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে আর হা’ত দিয়ে পাঠিয়েছে একটা’ সুন্দর বেল্ট আর দামী একটা’ পার্স, আমা’র যেন ওসব নেই? ওসব দেখে আমি তাে ক্ষেপে লাল। কিন্তু আপনাকে না জানিয়ে কিছু করলে পাছে আপনি রাগ করেন এজন্যে তখন আমি অ’তি কষ্টে নিজেকে দমন করলুম।

সেই বেল্ট আর পার্স আমি ঝি-মা’গীটা’র হা’তে ফেরত দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে দূর করে দিলুম। ঝি চৌকাট পার হয়ে রাস্তায় পা দিতেই আমা’র খেয়াল হল ও যদি জিনিস দুটো নিজে গাপ করে ওর মনিবকে বলে যে আমি জিনিস দুটো নিয়েছি সেইজন্যে তাকে আমি তখনি ডেকে জিনিস দুটো ফিরিয়ে
নিলুম। আমা’র চোখমুখ দেখে ঝি-মা’গী আর দাঁড়াতে সাহস করল না, এই যে বাবা, সেই দুটো জিনিস। আপনি এ দুটো ছোঁড়াটা’কে ফেরত দিয়ে বলবেন যে ঈশ্বরের আশীর্বাদে ও আমা’র স্বামীর কল্যাণে এসব জিনিস আমা’র এত আছে যে, তাতে আমি ডুবে যেতে পারি। আমি এমন হ্যাংলা নই যে কেউ দিলেই নিয়ে নেব। কিন্তু বাবা এরপরও যদি পাজীটা’ আমা’কে বি’রক্ত করে তাহলে আমি সত্যিই আমা’র স্বামী। ভাইদের সব বলব তাতে যা হয় হবে। আমি আমা’র সুনাম নষ্ট হতে দিতে পারি না। যুবতীর কান্না থামে নি। কথা শেষ করে সে ফুপিয়ে কাদতে লাগল। ফাদার সেই বেল্ট ও পার্স দেখলেন। জিনিস দুটি সত্যিই চমৎকার, লােভনীয় ও দামী।

এই ফ্রায়ার হয় অ’ত্যন্ত সরল ছিল বা বুদ্ধিহীন ছিল, নইলে যুবতীকে তাে বলতে পারত, আমি ঐ যুবককে নিশ্চয়ই ভৎসনা করব কিন্তু তােমা’কেও আমি বলছি তুমি আর দরজায় বা জানলার দাঁড়িয়ে । যাই হা’েক যুবতীকে এরকম কোনাে উপদেশ না দিয়ে ফ্রায়ার তাকে বলল :
মা’ আমি তােমা’র দোষ দিচ্ছি না। যা ঘটেছে তাতে তােমা’র পক্ষে ঘাবড়ে যাওয়াই সম্ভব তবে তুমি যে আমা’র উপদেশ পালন করেছ এজন্যে তােমা’কে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু ছােকরা আমা’কে কথা দিয়েছিল তােমা’কে আর বি’রক্ত করবে না। এখন দেখছি সে কথা রাখে নি। কিন্তু এবার তার আস্পর্ধা দেখে আমি বি’স্মিত হচ্ছি। তার এত সাহস যে উপহা’র সমেত তােমা’র বাড়িতে ঝি পাঠায়? ঠিক আছে, এবার আসুক তাকে আমি এমন বকব যে, আর ও পথ মা’ড়াতে সাহস করবে না। ইতিমধ্যে তুমি তােমা’র ক্রোধ সম্বরণ কর, স্বামী বা ভাইদের আপাতত কিছু বােলাে না কারণ তাতে ভালাে অ’পেক্ষা মন্দ কিছু ঘটে যেতে পারে। আমি তাে জানি তুমি নিজেকে ঠিক রেখেছ অ’তত্রব তােমা’র নামে কেউ নিন্দা করলে আমি তার মা’েকাবি’লা করব।

যুবতী এমন ভাব দেখাল যেন সে শান্ত হয়েছে এবং ফ্রায়ারের মতাে এমন সহা’য় পেয়ে সে নিশ্চিন্ত হতে পারছে। এবার সে অ’ন্য প্রসঙ্গ তুলে বলল :

ফাদার কিছুদিন হল আমি স্বপ্নে আমা’র মৃ’ত আত্মীয়দের বি’শেষ করে আমা’র মা’কে দেখছি। আমা’র এই অ’নভিপ্রেত অ’বস্থা দেখে মা’ যেন বেদনায় বি’মর্ষ। মা’ এবং অ’ন্যান্যদের জন্য আমি ব্যথা অ’নুভব করছি। আপনি যদি তাদের শান্ত করার জন্যে প্রার্থনা বি’শেষ করে সেন্ট গ্রেগরির সেই বি’শেষ প্রার্থনাটি করেন তাে আমি নিশ্চিন্ত হই ও মনে শান্তি পাই, এই কথা বলে সে ফ্রায়ারের হা’তে একটি ফ্লোরিন গুঁজে দিল।

ফ্লায়ার হৃষ্টচিত্তে মুদ্রাটি পকেটে রাখল ও যুবতীকে ধর্মপুস্তকের কিছু সৎ বাক্য বলে ও তার চরিত্রের দৃঢ়তার প্রশংসা করে তাকে বি’দায় দিল।
ছায়ার বুঝতেই পারল না যে, যুবতী তাকে ধাপ্পা দিয়ে নিজ কার্যসিদ্ধি করছে। উপহা’র দুটিও যে সে যুবকের জন্যেই রেখে গেল তাও ফ্রায়ার ধরতে পারল না। যুবতীর সব কথা সে বি’শ্বাস করে। তাকে রক্ষা করা তার কর্তব্য এই মনে করে ফ্রায়ার সেই যুবককে জরুরি তলব করল।

যুবক এসে ফায়ারের রুদ্রমূর্তি দেখে বুঝল বাবাজী ভীষণ চটেছেন কিন্তু যুবতী তার জন্যে কি কি বার্তা রেখে গেছে সেটা’ জানা প্রয়ােজন। যুবককে দেখেই ফ্রায়ার বলল, তােমা’র বড় বাড় বেড়েছে। তোমা’র আম্পর্ধা ও সাহস তাে কম নয়? তুমি সৎ চরিত্রবর্তী পরস্ত্রীর বাড়িতে উপহা’রসমেত ঝি পাঠাও, তােমা’কে ও পথে চলতে নিষেধ করেছি না? ইত্যাদি ইত্যাদি। যুবকের কোনাে কথায় ফায়ার কান দিল না, বকেই চলল।

যুবক বলল, সে যুবতীকে কোনাে উপহা’র পাঠায়নি।

শুনেই ফ্রায়ার ফেটে পড়ল, মিথ্যাবাদী, দুশ্চরিত্র, পাজী, বদমা’শ, তবে কি সেই মেয়ে আমা’কে মিথ্যা বলল? এই দেখ এই বেল্ট আর পার্স। কি? এবার বলবি’ এগুলাে তুই পাঠাস নি? এগুলাে যুবতী কাঁদতে কাঁদতে আমা’র কাছে দিয়ে বলেছে তােকে ফেরত দিতে। নে তাের জিনিস নিয়ে যা, আমা’রই ছুতে ঘেন্না করছে।

যুবক যেন ধরা পড়ে দারুণ অ’স্বস্তিতে পড়ল এবং ধরা পড়ে আসামীর মতাে বলল, সত্যিই আমা’র অ’ন্যায় হয়েছে। এভাবে মহিলাকে বি’ব্রত করা আমা’র উচিত হয়নি। এমন কাজ আমি আর কখনও করব না, পাকা কথা দিচ্ছি আমি মহিলাকে আর বি’রক্ত করব না।
ফায়ার সামগ্রী দুটি যুবককে তুলে নিতে বলল এবং তার আর এক দফা বকে ও কিছু উপদেশ দিয়ে বি’দায় করল। যুবক অ’ত্যন্ত পুলকিত। যুবতী নিশ্চয় তাকে ভালবেসে ফেলেছে নচেৎ এমন দামী ও সুন্দর উপহা’র পাঠাত না। উপহা’র দুটি নিয়ে যুবক তখনি যুবতীর বাড়ির দিকে গেল এবং তাকে অ’পেক্ষা করতে দেখে আড়াল করে উপহা’র দুটি দেখাল। যুবতীও খুব আনন্দিত যে, তার প্রেমিক তার পাঠান উপহা’র গ্রহণ করেছে। যুবতী খুব খুশিও হল যে তার পরিকল্পনা অ’ত্যন্ত কার্যকরী হয়েছে। এত দ্রুত যে তার পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হবে তা সে আশা করে নি। ফ্রায়ারকে সে মনে মনে ধন্যবাদ জানাল।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে তার প্রেমিককে বাড়িতে এনে কথা বলতে তাে পারলই না এবং কবে তার কণ্ঠলগ্না হয়ে তাকে চুম্বন করবে সেজন্যে সে উদগ্রীব হয়ে উঠল। কিন্তু স্বামী বাড়ি থাকতে এর কোনােটিই কার্যকরী করা যাচ্ছে না।

সৌভাগ্যক্রমে যুবতীর পশম-ব্যবসায়ী স্বামী ব্যবসা সূত্রে জেনােয়া যাত্রা করল। ব্যবসায়ী ঘােড়ায় চড়ে যাত্রা করার কিছু পরে যুবতী সাজগােজ করে ফ্রায়ারের কাছে হা’জির।

ফ্রায়ারের সহা’নুভূতি কেড়ে নেবার জন্যে এবারও মা’েক্ষম অ’স্ত্র ক্রন্দন প্রয়ােগ করল। নারীর চোখের জলে অ’নেকের মন ভেজে। ফ্রায়ারেরও মন ভেজে।
যুবতী বলল, আর তাে পারি না ফাদার। লােকটা’ কিভাবে জানতে পেরেছে আমা’র স্বামী গতকাল সকাল ব্যবসাসূত্রে জেনােয়া গেছেন। আর শয়তানটা’ করেছে কি জানেন ফাদার? আপনার কাছে বলতে -আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি তবুও বলতেই হবে। শয়তানটা’ করেছে কি পাঁচিল ডিঙিয়ে বাগানে ঢুকেছে। বগানে একটা’ গাছ আছে, সেই গাছের একটা’ ডাল আমা’র শােবার ঘরের জানালা পর্যন্ত পৌঁছেছে। শয়তানটা’ সেই গাছে উঠে ভাল বেয়ে আমা’র জানালার সামনে বসে জানালা খােলবার চেষ্টা’ করছে। আওয়াজ পেয়ে আমা’র ঘুম ভেঙে গেছে। আমি ভয় পেয়ে বি’ছানা থেকে যখন উঠে পড়েছি তখন ও জানালা খুলে ফেলেছে। আমি আতঙ্কে একবার চিৎকার করে উঠলুম কিন্তু পাছে লােক জড়াে হয় এবং আমা’কেই লােকে সন্দেহ করে এই ভয়ে আমি চিৎকার করি নি। কিন্তু আমি যে তখন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, আমা’র দেহে একটা’ রুমা’ল পর্যন্ত ছিল না তা ভুলে ছুটে গিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলুম। ততক্ষণে সে ঘরে ঢােকবার চেষ্টা’ করছিল, আর একটু দেরী হলে আমা’র সর্বনাশ করে ছাড়ত। জানালা বন্ধ করে আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম। পরে আর কোনাে শব্দ না শুনে বুঝলুম বদমা’য়েশটা’ পালি’য়েছে। এবার বলুন ফাদার আমি কি কর। হতভাগাটা’ দিন দিন সহ্যের সীমা’ ছাড়িয়ে যাচ্ছে!

ফ্রায়ার তাে প্রচণ্ড রেগে গেলেন তবুও জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি ভুল দেখ নি তাে, ঐ ছােকরাকেই

আমি ঠিক দেখেছি ফাদার, আমা’র ভুল হয় নি, বলতে বলতে যুবতী কেঁদে ফেলল। ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগল, কি লজ্জা, কি লজ্জা!

ফ্রায়ার বলল, ভগবান তােমা’কে রক্ষা করেছেন কিন্তু ছোঁড়া দেখছি মা’থায় উঠেছে। যাই হা’েক মা’ তুমি এখনও কাউকে কিছু বােলাে না। আমি যা করার করব, আমা’র ধারণা ছিল ছোঁড়া বুঝি সৎ কিন্তু এখন তাে দেছি ওর মতাে পাৰ্জী আর একটা’ও নেই। আমা’র কোনাে কথাই শুনছে না? এবার আমি ওকে শেষবারের মতো সাবধান করে দেব এবং ভয়ে ভক্তিতে আমা’র আদেশ পালন করতে বাধ্য করব, তাতে যদি ফল না তা হলে মা’ তুমি যা ভালাে বুঝবে করবে, তােমা’র স্বামী ও ভাইদের বলবে তারা যদি ওকে উপযুক্ত সাজা দেয় আমি একটুও দুঃখিত হব না।

যুবতী বলল, ফাদার আপনিই আমা’র ভরসা। আশা করি এবার কাজ হবে এবং আপনাকে বি’রক্ত করতে আমা’কে আর আসতে হবে না, এই কথা বলে যুবতী মনে মনে হা’সতে হা’সতে বি’দায় নিল।

যুবতী সবে গির্জার বাইরে গেছে যুবকও ফ্রায়ারের কাছে নতুন সংবাদ শােনবার জন্যে এসে হা’জির। ফায়াব তাে তাকে দেখেই ফেটে পড়ল, যা ইচ্ছে তাই বলে গালাগালি’ দিতে লাগল। যুবক বলল, আমি কি করেছি যে আপনি আমা’কে এমন বি’শ্রীভাবে গাল দিচ্ছেন? যুবকের মতলব যুবতী কি নতুন বার্তা তার জন্যে রেখে গেছে সেটা’ জেনে নেওয়া।

ফ্রায়ার তখনও রেগে আছে। বলল, পাজী, বি’শ্বাসঘাতক, বেল্লি’ক তুমি জান না তুমি কি করেছ? আবার সাধু সাজছ? মেয়েটির স্বামী বাড়ি নেই জানতে পেরে তুমি কাল রাতে পাচিল ডিঙিয়ে বাগানে ঢুকে গাছে উঠে ডাল বেয়ে যুবতীর শয়নঘরের জানালা খােলবার চেষ্টা’ করনি? যুবতীর উপস্থিত বুদ্ধির ফলে তুমি ঘরে ঢুকে তার সর্বনাশ করতে পার নি, ভগবান তাকে বাঁচিয়েছেন। কিন্তু শেষবার তােমা’কে সাবধান করে দিছি, যদি দেহে আঘাত পেতে না চাও তবে ওমুখাে হা’েয়াে না।

যা জানা দরকার ছিল যুবকের তা জানা হয়ে গেল। মনে মনে বলল ইস কি ধড়িবাজ মেয়ে। তারপর সে ফ্রায়ারের কাছে বার বার ক্ষমা’ চেয়ে এবং যুবতীকে আর কখনও বি’রক্ত করবে না প্রতিশ্রুতি নিয়ে যুবক বি’দায় নিল।

সেইদিন রাতেই যুবক পাঁচিল ডিঙিয়ে বাগানে ঢুকে গাছে উঠে ডাল বেয়ে জানালায় পৌঁছে দেখল জানালা খােলাই আছে। যুবতী তার জন্যে অ’পেক্ষা করছিল। যুবক ঘরে ঢােকার সঙ্গে সঙ্গে যুবতী তাকে জড়িয়ে ধরল। দু’জনে প্রায় একই সঙ্গে উৎফুল্ল হয়ে বলল, ফ্রায়ারকে ধন্যবাদ। কি দারুণ ধাপ্পাই না তাকে দেওয়া হয়েছে, এই নিয়ে দু’জনে খুব হা’সাহা’সি করল। এরপর ফ্রায়ারকে ওদের আর প্রয়ােজন হয়নি, ওরা নজেরাই ইশারা করে দিনক্ষণ ঠিক করে নিত। তারপর বাকি রাত্রিটা’ পরস্পরের বাহুবন্ধনে কি আনন্দেই যে কাটল সে কথা বলার নয়।

চতুর্থ গল্প

ফয়ার পুচ্চিওর ধারণা সে কিছু পাপ করেছে। তখন খ্রীস্টা’ন সন্ন্যাসী ডােম ফেনিচি তাকে বলল, পাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। কি প্রায়শ্চিত করতে হবে ডােম ফেলি’চি তার নির্দেশও দিল। পুচ্চিও যখন প্রায়শ্চিত্ত করছে সেই সময়ে ফেলি’চি পুচ্চিওর বৌকে নিয়ে বি’ছানায়।

ফিলােমেনা গল্প শেষ করে চুপ করল। নীরবতা ভাঙার জন্যে ডায়ােনিও কিছু সরস ও উপভােগ্য মন্তব্য করল। তা শুনে একটু হা’সাহা’সি হল। কুইনও খুব হা’সল। হা’সি থামলে কুইন প্যানফিলােকে বলল, তুমি বসে কেন? ফিলােমেনার মতােই একটা’ মজার গল্প শােনাও।

প্যানফিলাে বলল, বেশ তাই শােনাব। এ-ও এক ফ্রায়ারের গল্প। এই ফ্রায়ার কৃত পাপের জন্য অ’নুতপ্ত হয়ে প্রায়শ্চিত্তে রত হয়ে যখন স্বর্গে যাবার চেষ্টা’ করছে তখন তার অ’জান্তে এক যুগলকে স্বর্গসুখ উপভােগের সুযােগ করে দিয়েছিল। এই মজার ঘটনা আমা’দের শহরেই ঘটেছিল। তাহলে আরম্ভ করা যাক।

স্যান প্যানক্রেজিও গির্জায় প্রায় পেছন দিকে, অ’ন্ততঃ আমি তাই শুনেছি, পুচ্চিত্তি রিনাইরি নামে আইনের প্রতি নিষ্ঠাবান ও উন্নতিশীল একজন নাগরিক বাস করতেন। তিনি প্রেতচর্চা করতেন এবং একটা’ বি’শেষ বয়সে পৌঁছে ফ্রানসিসকান গির্জায় নাম লি’খিয়ে ফ্রায়ার পুচ্চিও নাম নিলেন। স্ত্রী ও একজন দাসী নিয়ে তার সংসার। তার হা’তে অ’ফুরন্ত সময়, এজন্য তিনি প্রেতবি’দ্যা চর্চায় প্রচুর সময় দিতে পারতেন। তিনি নিয়মিত গির্জায় যেতেন, কখনাে ব্যতিক্রম হত না। গির্জার ভেতরে বা বাইরে প্রতিটি অ’নুষ্ঠানে তিনি যােগ দিতেন। আত্মা’ শুদ্ধ রাখবার জন্যে তিনি মা’ঝে মা’ঝে উপবাস করতেন এবং শােনা যায় উপবাস করেও সন্তুষ্ট না হলে নিজেই নিজেকে বেত্রাঘাত করতেন।

তার স্ত্রী মা’েন্না ইসাবে যুবতী, বয়স আটা’শ তিরিশের মধ্যে। অ’তীব সুন্দরী। গায়ের রং গােলাপী, গাল দুটি যেন পাকা আপেল, সুঠাম দেহ। ধর্মপরায়ণ স্বামীটি নিজের আচার অ’নুষ্ঠান স্ত্রীর ওপর কঠোর ভাবে চাপাবার চেষ্টা’ করতেন। কিন্তু স্ত্রী এগুলি’ মন থেকে মেনে নিতে পারতেন না। পুচ্চিও সত্যিই বাড়াবাড়ি করতেন। স্ত্রী শুতে যাচ্ছেন এমন সময় তিনি তাকে যীশুর জীবনী বা বাইবেলের প্রার্থনা সঙ্গীত শােনাতে আরম্ভ করলেন অ’থবা মেরি মা’তা সম্বন্ধে প্রশ্ন করতে আরম্ভ করলেন। দুঃখের কথা এই যে, যুবতী পত্নী এইভাবে স্বামী সহবাস থেকে বঞ্চিত হতাে।

এহেন সময়ে সেন্ট প্যানক্রেজিও গির্জাভুক্ত ডােম ফেলি’চি নামে একজন সন্ন্যাসী কিছুকাল প্যারিসে বাস করে শহরে ফিরে এল। ডােম ফেলি’চি যুবক, দেহসৌষ্ঠব প্রশংসনীয় এবং সুদর্শন। এছাড়া তার অ’ন্যান্য অ’নেক গুণ ছিল। বুদ্ধি ছিল তীক্ষ্ণ, পাণ্ডিত্যও উপেক্ষা করার মতাে নয়। এসব জানতে পেরে ফ্রায়ার পুচ্চিও তার ঘনিষ্ঠ হতে সচেষ্ট হল।

প্রেতবি’দ্যা সম্বন্ধে পুচ্চিওর যেসব সমস্যার উদয় হতাে, ফেলি’চি সেগুলি’র সমা’ধান করে দিত। তবে পুচ্চি কি ধরনের মা’নুষ তা জেনে নিতে তার দেরি হয়নি। পুচ্চিও ঠিক করে নিয়েছিল ফেলি’চি অ’ত্যন্ত চরিত্রবান। এজন্য সে ফেলি’চিকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।পুচ্চিও তাকে প্রায়ই নানা উপলক্ষে ভােজনে আপ্যায়িত করত।

স্বামীর নির্দেশে মা’েন্না ইসাবেত্তা ফেলি’চির সঙ্গে সহজভাবে মেলামেশা করত। ফেলি’চি যাতে নিজেকে পরিবারের একজন মনে করতে পারে সেজন্যে মা’েন্না চেষ্টা’র ত্রুটি রাখত না।

ডােম ফেলি’চি নিয়মিত পুচ্চিওর বাড়ি যাওয়া-আসা করে। দু’জনে ধর্মশাস্ত্র ও অ’ন্যান্য বি’ষয়ে আলােচনা করে, মা’েন্না ওদের পরিচর্যা করে। ফেলি’চি লক্ষ্য করল, পুচ্চিও তার স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য করে, তাকে কিছু স্বাধীনতাও দিয়েছে, তার খাওয়া পরারও ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে যে আরও কিছু আশা করে সে বি’ষয়ে সে উদাসীন। দাম্পত্য জীবনে মা’েন্না যে সুখী নয়, তা তার মুখ দেখলেই বােঝা যেত।

কয়েকদিন পরেই ফেলি’চি বুঝতে পারল মা’েন্নার ব্যথা কোথায়। সে তারদিকে বি’শেষভাবে মনোেযােগ দিতে আরম্ভ করল। তাদের বাড়িতে দীর্ঘ সময় থাকে, ছলছুতাে করে অ’ন্য সময়েও আসে এবং মা’েন্নার দিকে বি’শেষ দৃষ্টিতে চায়। এ দৃষ্টি মেয়েরা বােঝে। মা’েন্নাও বুঝল, এই লােকটি মেয়েদের মন বােঝে।

ফেলি’চি রূপবান ও রসিক। মা’েন্নাও রূপবতী ও রসবতী। অ’তত্রব যা ঘটবার তা ঘটতে লাগল। উভয়ে উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট হল। মা’েন্না বুঝল এই লােকটি তার হৃদয়ের জ্বালা ও দেহের ক্রন্দন শান্ত করতে পারবে।

ফেলি’চি একদিন সুযােগ পেয়ে মা’েন্নাকে জানিয়ে দিল সে তার প্রেমে পড়েছে। মা’েন্নাও বলল তা সে জানে এবং সে-ও ফেলি’চিকে ভালবেসেছে। ফেলি’চি মা’েন্নাকে অ’ন্য জায়গায় নিভৃতে যাবার প্রস্তাব করে, যেখানে ওরা প্রেমা’লাপও আলি’ঙ্গনাদি করতে পারবে। এই প্রস্তাব মা’েন্না রাজি নয়। সে বলে, যা কিছু করবার তারা এই বাড়িতেই করবে। কি পুচ্চিও যে বাড়ি থেকে বেরােতেই চায় না, বেরােলেও অ’ল্পক্ষণের জন্যে। এদিকে দু’জনেই মিলি’ত হতে অ’স্থির ও উদগ্রীব হয়ে উঠেছে।

ফেলি’চি ধুরন্ধর, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তার, সহজে ছাড়বার পাত্র নয়। মা’েন্নার কথা মতাে সে ভেবেচিন্তে ছিদ্রহীন একটা’ মতলব বার করল।

একদিন ফ্রায়ার পুচ্চিও যখন ফেলি’চির সঙ্গে কোনাে সমস্যা নিয়ে আলােচনা আরম্ভ করল তখন ফেলি’চি তাকে বলল, ফ্রায়ার পুচ্চিও, এই কয়েকদিন ধরে তােমা’র সঙ্গে আলাপ-আলােচনা করে আমি বুঝতে পেরেছি তােমা’র জীবনের একমা’ত্র আকাঙক্ষা হল ঋষিত্ব লাভ করা। তুমি একজন পবি’ত্র সাধু হতে চাও। কিন্তু তুমি সােজাপথে না গিয়ে ঘােরা পথে অ’গ্রসর হচ্ছ। এই সােজাপথটা’ কি তা জানেন মহা’মা’ন্য পােপ এবং ঠিক তার পরের স্তরের বি’শপ বা অ’ন্যান্য উচ্চপদস্থ সাধুরা। তারা এই পথে সাধনভজন করেন। কিন্তু সেই সাধনভজনের কার্যক্রম তারা গােপন রাখেন। প্রকাশ হয়ে পড়লে তাদের ক্ষতি হবে। কিন্তু আমি আমা’র এক বি’শেষ বন্ধু মা’রফত এই সাধনভজনের নিয়মা’বলী এবং ক্রিয়া-প্রক্রিয়া জানতে পেরেছি। তুমি যদি সমস্ত ব্যাপারটা’ গােপন রাখতে পার তাহলে আমি তােমা’কে সব পদ্ধতি জানিয়ে দিতে পারি। একবার চেষ্টা’ করে দেখ, তুমি পারবে। তােমা’র ভক্তি ও নিষ্ঠা আছে। তবে সাবধান, তুমি এই সব সাধনভজনের নিয়ম ও পদ্ধতি কি করে জানতে পারলে কাউকে বলতে পারবে না। তাছাড়া বলবার প্রয়ােজনও হবেনা কারণ তুমি তােমা’র ঘরে বসেই সবকিছু করবে—কে আর দেখতে আসছে কি করছ না করছ।

পূচ্চিও ভীষণ আগ্রহী হয়ে উঠল। সে ফেলি’চিকে মিনতি করতে লাগল, আমা’কে শিখিয়ে দাও আমি প্রতিজ্ঞা করছি ঘুনাক্ষরেও কাউকে কিছু বলব না তােমা’র অ’নুমতি ছাড়া।

ফেলি’চি বলল, বেশ তুমি যখন প্রতিজ্ঞা করলে তখন আমি তােমা’কে সবই বলব। তবে কি জান, এটা’ এক ধরনের প্রায়শ্চিত্তও বটে। আমরা জ্ঞাত বা অ’জ্ঞাতসারে পাপ করি, প্রায়শ্চিত্ত করে পাপমুক্ত হয়ে শুদ্ধ হতে হয়। তারপর আসল সাধনা। অ’বশ্য এ বড় কঠিন কাজ। তবে তােমা’র মতাে নিষ্ঠাবান ও ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাধুত্ব লাভ করতে পারবে বলে আমা’র স্থির বি’শ্বাস।

তাহলে শােনো পুচ্চিও তােমা’কে কি করতে হবে। তুমি পাপ করেছ, তুমি অ’নুতপ্ত, পাপমুক্ত হবার জন্যে তােমা’কে কিছু শাস্তি নিতে হবে, প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। কি শাস্তি কি প্রায়শ্চিত্ত সে সবের নির্দেশ আমি তােমা’কে বলছি।

প্রথমেই তােমা’কে স্বীকারােক্তি করতে হবে, কিছুই লুকোবে না। তারপর চল্লি’শ দিন পর্যন্ত তোমা’কে মা’ঝে মা’ঝে উপবাস ও কিছু ব্রত পালন করতে হবে। এই সময়ে কোনাে স্ত্রীলােকের দিকে চাইতে পারবে না, স্পর্শ করার চিন্তাও করবে না পর্যন্ত। এমনকি নিজের স্ত্রী হলেও নয়। তারপর বাড়িতে এমন একটা’ স্থান বেছে নেবে যেখান থেকে রাতের আকাশ পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়।

নক্ষত্রখচিত আকাশের সেই অ’ংশে তুমি জানবে স্বৰ্গ। তারপর তুমি একখণ্ড বেশ চওড়া কাঠের তক্তা দেওয়ালে এমন ভাবে ঠেক দিয়ে রাখবে যাতে তােমা’র পিঠ তাতে ঠেক দিয়ে এবং মেঝেতে পা রেখে সহজভাবে দাঁড়াতে পার। তারপর ক্রুশবি’দ্ধ ভঙ্গিতে দুই হা’ত প্রসারিত করে দেবে। দেওয়ালে দু’দিকে যদি দুটো বড় পেরেক বা কাটের খাজ থাকে তাে ভালাে হয়, কারণ তুমি তােমা’র দুই হা’ত ঐ দুটির ওপর স্থাপন করতে পারবে। এই ভাবে তুমি আকাশ বা স্বর্গের দিকে চেয়ে নিশ্চল হয়ে উষা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকবে। রাত্রে প্রার্থনা আবৃত্তি করবে এবং বাইবেলের কিছু অ’ংশ দেখিয়ে দেব রােজ সেগুলি’ একান্ত মনােযােগ সহকারে পাঠ ও আবৃত্তি করবে। মা’ঝে মা’ঝে ভক্তিমূলক গান গাইবে। আর একটা’ কথা বি’শেষভাবে মনে রাখবে, মহা’ন যীশু যেন সর্বদা তােমা’র অ’ন্তরে বি’রাজ করেন তােমা’র মন প্রাণ যেন তার প্রতি নিবদ্ধ থাকে।

উষাকালে যখন গির্জার ঘন্টা’ বাজবে সেইসময় তুমি তােমা’র বি’ছানায় কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পার। কিন্তু ঘুমা’েবার জন্য পােশাক পালটা’বে না। তারপর একটু বেলা হলে গির্জায় যাবে, যাজকের ভাষণগুলি’ মন দিয়ে শুনবে। তার ভাষণ শেষ হলে তুমি নিজে দীর্ঘসময় ধরে প্রার্থনা করবে ও আনুষ্ঠানিক গানগুলি’ গাইবে।

এরপর তােমা’র যদি ব্যক্তিগত কোনাে কাজ থাকে সেগুলি’ করবে। তারপর বাড়ি এসে ভােজন করবে। অ’বশ্য সেদিন যদি তােমা’র উপবাসের দিন না থাকে। সন্ধ্যায় গির্জায় নিশ্চই যাবে এবং তােমা’কে কয়েকটি লি’খিত প্রার্থনা দেব সেগুলি’ তুমি মুখস্ত করে আবৃত্তি করবে। এই সকল প্রার্থনা একবার নয় বারবার তুমি বলবে। আমি এইসব অ’নুষ্ঠান ব্রত-নিষ্ঠার সঙ্গে ও কঠোরভাবে পালন করেছি। আত্মশুদ্ধি তাে হয়েছেই উপরন্তু আমি স্বর্গসুখ অ’নুভব করেছি এবং এখনও করছি। তুমিও সফলকাম হতে পারবে।

সব শুনে ফ্রায়ার পুচ্চিও বলল, এই অ’নুষ্ঠান ও ব্ৰতগুলি’ পালন করা মা’েটেই দুরূহ নয় এবং যীশুর কৃপায় সফল হতে পারব বলে আমি বি’শ্বাস করি। আগামী রবি’বার থেকেই আমি আরম্ভ করব।

ডােম ফেলি’চির কাছ থেকে বি’দায় নিয়ে পুচ্চিও বাড়ি ফিরে এই সব অ’নুষ্ঠানের কথা তার স্ত্রীকে ঘটিয়ে বলল। সব শুনে মা’েন্না কৌতুক অ’নুভব করল বি’শেষ করে সারারাত্রি আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা’ শুনে সে মনে মনে ফেলি’চির দুষ্টমি বুদ্ধির প্রশংসা করল। তারপর মা’েন্না তার স্বামীকে বলল, ফেলি’চি জ্ঞানী ব্যক্তি, তুমি যাতে সাধু হতে পার এজন্যে উপযুক্ত নির্দেশ দিয়েছে। আমি তােমা’র অ’র্ধাঙ্গিনী আমিও তােমা’র সঙ্গে উপবাস করব।

রবি’বার থেকে পুচ্চিও তার ব্রত আরম্ভ করল। এদিকে মা’েন্নার সঙ্গে ব্যবস্থা করে ফেলি’চি প্রচর মদ ও পানীয় সঙ্গে নিয়ে নৈশ আহা’রের জন্যে প্রায় প্রতি রাতেই গােপনে ও নিঃশব্দে পুচ্চিওর বাড়িতে আসতে আরম্ভ করল। আহা’র শেষে মা’েন্নাকে নিয়ে সে বি’ছানায় যেত এবং উষার ঠিক আগেই
সে নিজের বাসায় ফিরে যেত। কারণ তখন পূচ্চিওর ঘরে ফিরে এসে কিছুক্ষণ নিদ্রা দেবে।

ফ্রায়ার পূচ্চিও রাতে যেখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে প্রার্থনা করত সেই জায়গাটি ছিল মোন্নার শয়নঘরের কাঠের দেওয়াল সংলগ্ন। আর সেই কাঠের দেওয়ালে পূচ্চিওর কাঠের তক্তা ঠেস দিয়ে রাখা ছিল যে তক্তায় ঠেস দিয়ে ক্রুশবি’দ্ধ যীশুর ভঙ্গিতে প্রার্থনার জন্য সে দণ্ডায়মা’ন থাকত।
একদিন যখন ফেলি’চিও মা’েন্না কামনায় মত্ত হয়েছে ঠিক সেই সময়ে পুচ্চিওর মনে হল সে যে তক্তায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেটি যেন কাপছে।
সেদিন রাত্রে শতবার প্রার্থনা ও ভক্তিসঙ্গীত শেষ করে পুচ্চিও তার স্ত্রীকে সম্বােধন করে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কি করছ? দেওয়াল কাপছে কেন?
প্রশ্ন শুনে মা’েন্না হা’সতে লাগল। সে আজকাল প্রায়ই হা’সে, উজ্জীবি’ত হয়েছে ও! সে স্বামীকে বলল, দেওয়াল কেন কাপছে তুমি বুঝতে পারছ না? তুমিও তাে আমা’কে কতবার বলেছ, যে নৈশভােজন করে না সে সারারাত্রি কাঁপতে থাকবে।

ও পুচ্চিওর মনে পড়ল, হ্যা তার স্ত্রী বলেছিল যে সে-ও তার সঙ্গে উপবাস করবে। বেচারী উপবাস করেছে বলেই কাপছে। বেচারা তাে জানত না যে তার স্ত্রী উপবাসের পরিবর্তে সহবাস করছে।

পুচ্চিও তার স্ত্রীকে বলল, পত্নী তােমা’কে উপবাস করতে নিষেধ করেছিলাম। উপবাসের কথা ভুলে যাও, এবার ঘুমা’েবার চেষ্টা’ করাে। তুমি এত জোরে কাপছ যে সারা বাড়িটা’ই তােমা’র সঙ্গে কাপছে।

মা’েন্না বলল, তুমি আমা’র জন্য ভেবাে না। আমি যা করছি তা ভালাে করেই জানি। তুমি তােমা’র ব্রত কর এবং আমিও কিছু পালন করব।
পুচ্চিও কোনাে উত্তর দিল না। সে আবার প্রার্থনা করতে লাগল। মা’েন্না কিন্তু পরদিন রাত্রি থেকে অ’ন্য ঘরে ফেলি’চিকে নিয়ে শুতে আরম্ভ করল। উষাকালে ফেলি’চি চলে গেলে মা’েন্না তার আগের বি’ছানায় ফিরে আসল কারণ একটু পরেই পুচ্চিও সেই ঘরে এসে নিদ্রা যাবে।

ফ্রায়ার পুচ্চিও যখন তার ব্রত নিয়ে ব্যস্ত তখন ফেলি’চি ও মা’েন্না আর এক অ’নুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। মা’েন্না বলতাে, বেশ মজা, একজন ঈশ্বরের অ’নুগ্রহ লাভ করার জন্য কি পরিশ্রমটা’ই না করছে আর আমরা তার স্বরূপ স্বর্গসুখ ভােগ করছি।

এই স্বর্গসুখ তারা অ’নেক দিন ভােগ করেছিল। পুচ্চিওর ব্রত যখন শেষ হল তখন প্রেমিকদল তাদের স্থান পরিবর্তন করে অ’ন্যত্র গমন করে সপ্তম স্বর্গে পৌঁছে যেত।

পঞ্চম গল্প

মেসার ফানসেসকো ভাবজেলসিকে জিমা’ চমৎকার একটি টা’টু ঘােড়া উপহা’র দিয়েছিল। বি’নিময়ে ফ্রানসেসকো জিমা’কে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবার অ’নুমতি দিয়েছিল। কিন্তু স্ত্রীকে কথা বলবার অ’নুমতি দেয়নি। স্ত্রীর হয়ে সম্ভাব্য উত্তরটা’ জিমা’ই দিয়ে দিল এবং যথাসময়ে উভয়ে অ’ভীষ্ট ফল লাভ করলাে।

প্যানযিলাের মুখে ফ্রায়ার পুচ্চিওর গল্প শুনে মহিলারা হেসেই আকুল। সকলের হা’সি থামা’র আগেই কুইন এলি’সাকে গল্প বলতে বলল। একটু পরেই এলি’সা আরম্ভ করলাে :

যারা ভাবে সে নিজে খুব বুদ্ধিমা’ন তারাই অ’পরকে ঠকাতে গিয়ে নিজেই ঠকে। আমি বলি’ কি অ’পরের বুদ্ধি কম ভাবার দরকার কি? সব মা’নুষ তাে সমা’ন নয় তাই বুদ্ধি ফলাতে গিয়ে নিজেইে ঘায়েল হতে হয়। আমি এইরকম একটা’ গল্প বলছি তােমরা মন দিয়ে শােনো।

বি’শিষ্ট লােকটির নাম মেসার ফ্রানসেসকো এবং তিনি পিসততাইয়ার ভারজেলেসি পরিবারভুক্ত তিনি অ’ত্যন্ত ধনী, বি’চক্ষণ ও কূটবুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। কিন্তু অ’ত্যন্ত নীচমনা ছিলেন। একবার তিনি মিলানের শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেন। শাসনকর্তার উপযুক্ত পােশাক ও সামগ্রী গুছিয়ে নিয়ে তিনি মিলন যাত্রা করবার জন্যে প্রস্তুত হলেন। কিন্তু ভালাে একটি টা’টু ঘােড়ার অ’ভাবে রওনা হতে পারবেন না। ভালাে ঘােড়া পাওয়া যাচ্ছে না এজন্য তিনি চিন্তিত।

সেই সময়ে পিস্তোইয়াতে রিচিয়ার্ডো নামে এক অ’ত্যন্ত ধনী যুবক বাস করতাে। সে অ’ভিজাত বংশের সন্তান ছিল না। কিন্তু তার আচরণ, চলন-বলন ও পােশাক আশাক এমনই কেতাদুরস্ত ছিল যে শহরবাসীরা তাকে জিমা’ বা ফুলবাবু বলে ডাকত।

মেসার ফ্রানসেকোর পত্নী এতই সুন্দরী ছিল যে তার রূপ উপচে পড়তাে। রূপসী হলেও তার অ’হংকার ছিল না। বলা যায় সে স্বামীর প্রতি অ’নুরক্ত ছিল। এ হেন রূপসী পরস্ত্রীকে জিমা’ দীর্ঘদিন ধরে ভালবেসে আসছে। মহিলার প্রসন্নতা ভিক্ষা এ যাবৎ সে কৃতকার্য হয়নি।

এই জিমা’রই একটি সেরা টা’ট্ট ঘােড়া ছিল। এমন চমৎকার আর একটিও ঘােড়া সারা টা’সমা’নিতে ছিল না। ঘােড়াটিকে জিমা’ খুব ভালবাসত এবং তার যত্নের ত্রুটি করতাে না। বলতে কি ঘােড়াটি তার প্রাণ ছিল। শহরের প্রায় সকলেই জানত যে জিমা’ ফ্রানসেসকোর স্ত্রীর প্রতি অ’নুরক্ত। একজন ফ্রানসেসকোকে পরামর্শ দিল, তুমি জিমা’র কাছে ঘােড়াটি চাইলেই সে তােমা’র স্ত্রীর খাতিরে দিয়ে দেবে।

মেসার ফানসেসকোর দুই চোখ লােভে চকচক করে উঠল। সে তখনি জিমা’কে ডেকে পাঠাল। তার আশা চাইলেই জিমা’ তাকে ঘােড়া বি’ক্রি করতে রাজি হবে। চাইকি হয়ত দামই দিতে হবে না।

জিমা’ আসার পর ফ্রানসেসকো তার প্রস্তাব পেশ করলাে। কিন্তু জিমা’তার স্বভাবসিদ্ধ মা’েলায়েম ভাষায় বলল, আপনার যত ধনসম্পত্তি সে সমস্তের বি’নিময়েও আমি আমা’র ঘোড়াটি আপনাকে বি’ক্রয় করবো না। তবে এটি আপনাকে আমি উপহা’র দিতে পারি একটি মা’ত্র শর্তে। শর্তটি এই যে, এখন থেকে কিন্তু একান্ত গােপনে, আপনার অ’তুলনীয় স্ত্রীর সঙ্গে আমা’কে কিছুক্ষণ কথা বলতে দিতে হবে। এই হল আমা’র শর্ত।

ঘোড়ার লােভে এবং জিমা’কে বােকা বানাবার মতলবে ফ্রানসেসকো রাজি হয়ে গেল। সে বলল, এ ও মন কি তুমি আমা’র স্ত্রীর সঙ্গে যতক্ষণ ইচ্ছে কথা বলতে পারাে, তুমি আমা’র সঙ্গে এসাে, আমি স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

ফ্রানসেসকো জিমা’কে নিয়ে গিয়ে তার প্রাসাদের একটি ঘরে বসিয়ে তার স্ত্রীর কাছে জিমা’র শর্তের কথা বলল। স্ত্রী উত্তর দেবার আগে সে বলল, বি’না পয়সায় ঘােড়টা’ পাবার সুযােগ পাওয়া গেছে। তুমি আমা’র সঙ্গে চলে। ও যাই বলুক না কেন তুমি শুধু শুনে যাবে কিন্তু উত্তরে একটা’ও কথা বলবে না, তাহলেই আমা’র শর্ত রক্ষা করা হবে। তােমা’র যে কথা বলতেই হবে সে এমন কোনাে শর্ত আরােপ করেনি।

সব শুনে স্ত্রী প্রথমে কিছুতেই রাজি হয়নি। কিন্তু যেহেতু সে স্বামীর প্রতি অ’নুরক্ত সেহেতু স্বামীর আদেশ বা অ’নুরােধ উপেক্ষা করতে পারল না। জিমা’র সামনে গিয়ে বসতে রাজি হল।

ফ্রানসেসকো তখন তার স্ত্রীকে এনে জিমা’র সামনে বসিয়ে দিয়ে বলল, রিচারদিয়ো তােমা’কে গােপনে কিছু বলবে তুমি শােন। স্ত্রী বসবার পর জিমা’ আসন ছেড়ে উঠে ফ্রানসেসকোকে অ’ন্যত্র ডেকে নিয়ে গিয়ে বলল, শর্ত পাকা তাে? ফ্রানসেসকো বলল, হ্যা পাকা, আমা’র কথায় নড়চড় হবে না। ফিরে এসে একবার চারদিক দেখে নিল, কেউ তাদের কথা শুনতে পাবে না। জিমা’ এবার গদগদ কণ্ঠে প্রেম নিবেদন করতে আরম্ভ করলাে। বলল, সুন্দরী তুমি মনেপ্রাণে জান যে তুমি সাড়া না দিলেও আমি তােমা’কে গভীরভাবে ভালবেসে এসেছি। আমি তােমা’র অ’তুলনীয় রূপের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই এ কথা বলছি না। তুমি শুধুই রূপসী নও, তুমি নারীরত্ন। তােমা’র গর্বি’ত ভাবভঙ্গি, হংসকে হা’র মা’নায়। তোমা’র এমন চলনভঙ্গি, জলতরঙ্গের মতাে তােমা’র কথা বলার ছন্দ, ঝর্নার মতাে তােমা’র হা’সি, রাজহংসের মতাে শুভ্র গ্রীবা, হরিণের মতাে তােমা’র চোখ কি আর বলবাে, তােমা’র সব কিছু আমা’কে মুগ্ধ করে। তােমা’র রূপ ও গুণের প্রশংসা করবার মতাে ভাষা আমা’র জানা নেই।

কিন্তু কবি’র মতাে ভাষায় জিমা’ মহিলার স্তুতিগান করেই চলল এবং এক সময়ে প্রশ্ন করলাে, প্রেয়সী তুমি কি মনে মনে বলছাে না যে তােমা’র জিমা’ আমা’কে এতদিন কষ্ট দিয়ে আমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছি? কিন্তু মহিলা তবু নিরুত্তর। একটা’ নিশ্বাসও ফেলল না, তার সুউন্নত বুকও একবারও ওঠানামা’ করলাে না। অ’থচ জিমা’ যে কত দীর্ঘনিশ্বাস মা’েচন করলাে তার হিসেবে নেই।

কথা শেষ করে জিমা’ উত্তরের আশায় কিছুক্ষণ অ’পেক্ষা করলাে। মহিলা নীরব। জিমা’ যখন বুঝল যে মহিলা কোনাে উত্তর দেবে না তখন সে হতাশ না হয়ে এক কাণ্ড করে বসলাে। মহিলা যদি তার প্রেম নিবেদনের জবাব দিত তাহলে সেটা’ যেমন হতে পারতাে সেইরকম কিছু কথা জিমা’ মহিলার কণ্ঠস্বর অ’নুকরণ করে বলতে আরম্ভ করলাে।

আহা’ বেচারা আমা’র প্রিয়তম জিমা’! আর বােলাে না, তােমা’র কষ্ট আমি আরও সহ্য করতে পারছি । তুমি চুপ করাে। তুমি তােমা’র হৃদয় উজাড় করে দিয়ে আমা’কে যে কত ভালবাস, আমা’র চিন্তায় তুমি ঘুমা’েতে পার না, রাত্রে বি’ছানায় ছটফট করাে এসব আমি অ’নুভব করতে পারছি। বেচারা আমা’র প্রিয়তম জিমা’! তােমা’কে আর বেশি দিন অ’পেক্ষা করতে হবে না, শীঘ্রই আমি তােমা’র কাছে আত্মসমর্পণ করবাে। সময় দ্রুত এগিয়ে আসছে কারণ আমা’র স্বামী মেসার ফ্রানসেসকো কয়েকদিনের মধ্যে মিলান যাত্রা করবেন এবং তুমি যে তােমা’র চমৎকার টা’ট্টু ঘােড়াটি উপহা’র দিয়েছ শাসনকর্তার উপযুক্ত তাও আমি জানি, আরও জানি উপহা’রটা’ দিয়েছ আমা’রই জন্যে, আমা’কে পাবে বলে। আমি শপথ করছি তােমা’কে আমি নিরাশ করবাে না। আমা’র স্বামী মিলান চলে যাবার কয়েক দিনের মধ্যেই আমা’রা মিলি’ত হয়ে প্রেমনদীতে সাঁতার কাটবে। | আমি হয়ত তােমা’র সঙ্গে কথা বলার আর সুযােগ পাব না তাই এখনই বলে রাখছি যে আমা’র স্বামী চলে যাবার পর আমা’র ঘরের বাগানের দিকে যে জানালা আছে সেই জানালায় তুমি যেদিন দুটো তোয়ালে ঝুলতে
দেখবে সেই দিন রাত্রে তুমি বাগানের ফটক দিয়ে সােজা আমা’র ঘরে চলে আসবে। সমস্ত রাত্রী দুজনে যে কি আনন্দে কাটা’ব তা ভেবে আমা’র সারা গা এখনই শিরশির করছে।

ধূর্ত জিমা’ এবার কণ্ঠস্বর স্বাভাবি’ক করেবলতে লাগল, প্রিয়তমা’, তােমা’র উত্তর শুনে আমা’র মনে হচ্ছে আমি যেন সপ্তম স্বর্গে বি’চরণ করছি। আমা’র হৃদয়েশ্বরীর কাছে থেকে আমি এমন উত্তরই আশা করছিলাম। তুমি যে নির্দেশ দিলে তা আমি অ’ক্ষরে অ’ক্ষরে পালন করবাে। তুমি নিশ্চিন্ত থাক তােমা’র ভাবে প্রবেশ করবার সময় কেউ আমা’কে দেখতে পাবে না, সে বি’দ্যা আমা’র উত্তমরূপে জানা আছে। তবে বেশি দেরি কোরাে না। যত দেরি হবে আমি ততই বেদনা অ’নুভব করব। আমি যে তােমা’র কাছে কি পরিমা’ণ কৃতজ্ঞ এবং আমা’র ভালবাসা কত গভীর তা আমি তােমা’কে আমা’দের মিলন যামিনীতে ভালাে করে জানিয়ে দেব। এখন আমা’কে বি’দায় দাও প্রিয়তমা’।

এই দীর্ঘসময় মহিলা একটিও কথা বলে নি, একটি ভুরুও তােলে নি। একবারও গ্রীবা হেলায় নি, একটা’ও দীর্ঘনিশ্বাস মা’েচন করে নি, পাথরের মূর্তির মতাে বসেছিল। | জিমা’ ঘরের বাইরে এসে ফ্রানসেসকোর দিকে অ’গ্রসর হল। তাকে দেখে ফ্রানসেসকো হা’সতে হা’সতে তার দিকে এগিয়ে এসে বলল, কি ? এবার মা’নবে তাে যে আমি কথা রেখেছি।

না মশাই, আমি মা’নতে পারলুম না, আমি যেন একটা’ প্রস্তরমূর্তির সঙ্গে কথা বললুম। জিমা’র উত্তর শুনে ফ্রানসেসকো সন্তুষ্ট হল। তার পত্নীর প্রতি তার অ’গাধ বি’শ্বাস ছিল, সেই বি’শ্বাস এখন আরও দৃঢ় হল। জিমা’কে সে বলল, তাহলে এখন থেকে আমি টা’টু ঘােড়ার মা’লি’ক।

—নিশ্চই এবং বি’নামূল্যে। আমা’র এখন মনে হচ্ছে কোনও শর্ত আরােপ না করলেই পারতাম যাই হা’েক আপনাকে ধন্যবাদ।

ফ্রানসেসকো খুব খুশি। মনে মনে ক্রুর হা’সি হেসে ভাবল, কেমন বি’না পয়সায় সেরা একটা’ ঘােড়া ঠকিয়ে দখল করলুম। এর কয়েক দিন পরে শাসনকর্তার ভার নেবার জন্যে সে মিলান যাত্রা করলাে।

স্বামী চলে যাবার পর মহিলা একা বসে জিমা’র কথাগুলাে চিন্তা করতে লাগল। জিমা’ তাকে সত্যিই ভালবাসে তা নইলে কি আর তারই জন্যে অ’মন দামী ঘােড়াটা’ তাদের উপহা’র দিত? তবে এতদিন অ’বহেলা করা উচিত হয়নি। স্বামীও চলে গেল ছ’মা’সের জন্যে আমি এখন একা কি করব? সে কি মিলান থেকে ফিরে এসে ছ’মা’সের বি’রহ পূরণ করতে পারবে? ওকে তাে আমি চিনি, ও নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত, আমা’র দিকে আর কতটুকু মন দেয়? গর্ব করার জন্যে একটা’ সুন্দরী বৌ দরকার তাই আমা’কে বি’য়ে করেছে নইলে আমা’কে সঙ্গে করে মিলান নিয়ে গেল না কেন? জিমা’র মতাে এমন প্রেমিক কি আর আমি পাব? বেচারা আমা’দের বাড়ির সামনে দিয়ে এদিকে চাইতে চাইতে মুখ শুকিয়ে কতবারই না যাওয়া-আসা করে। এখন তাে আমা’র রাস্তা পরিষ্কার। এখন কাকে আমা’র ভয়? সুযােগ যেন পেয়েছি তখন ছাড়ব কেন? তাছাড়া কেউ তাে জানতেই পারবে না আমি কি করছি। পরে কাদার চাইতে এখন হেসে নেওয়া ভালাে।

রূপসী মন স্থির করে বাগানের দিকের জানালায় দু’খানা তােয়ালে ঝুলি’য়ে দিল। জিমা’র দৃষ্টি এড়াল না। সে আহ্লাদে আটখানারও বেশি হল। সেদিন রাত্রে অ’ত্যন্ত গােপনে বাগান পার হয়ে তার প্রেয়সীর নেকক্ষে প্রবেশ করে প্রেমিকাকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করে দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করলাে। প্রেয়সীও তার প্রেমিককে সাদর আহ্বান জানাবার জন্যে উঠে দাঁড়িয়ে তার আলি’ঙ্গনের জন্যে অ’পেক্ষা ছিল। জিমা’কে সে শত শতবার চুম্বন করে সােজা টেনে নিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলাে।

এইটে তাদের প্রথম ও শেষ রজনী নয়। এরপর এবং ফ্রানসেসকো মিলান থেকে ফিরে আসবার পরও তারা উভয়ে মনের আনন্দে আরও অ’নেক রজনী অ’তিবাহিত করেছে।

ষষ্ঠ গল্প

রিচিয়ার্ডা মিনুতােললা ভালবাসে ফিলি’পপেলাে সিগিনােলফোর বৌকে। কিন্তু মিনুতােলাে। শুনল ঐ বৌ তাকে অ’বজ্ঞা করে। তখন সে ঐ বৌকে বলল যে তার স্বামী ফিলি’পপেলাে পরদিন একটা’ নিভৃত কুটিরে তার (মিনুতােলাের) বৌয়ের সঙ্গে মিলি’ত হবে। যদি বি’শ্বাস না হয় তাে নিজে গিয়ে দেখে আসতে পার। পরে ফিলি’পপেলাের ঐ কুটিরে গিয়ে ভাবল সে বুঝি তার স্বামীর সঙ্গেই মিলি’ত হয়েছে। কিন্তু আসলে সে ঠকে গেছে। সে মিলি’ত হয়েছিল রিচিয়ার্ডোর সঙ্গে।

গল্প শেষ করে এলি’সা বলল তার আর কিছু বলার নেই। কিন্তু তার গল্প শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলে জিমা’র চতুরতার খুব প্রশংসা করছিল। কুইন তখন কিয়ামমেত্তাকে বলল, এবার তুমিও একটা’ মজার গল্প বলাে। সে বলল, নিশ্চই, আমি প্রস্তুত। আমা’দের শহরে যদিও নানারকম ভালাে ও মজার গল্প শােনা যায় তবুও আমা’র গল্পের পটভূমি আমা’দের শহর নয়। আমি একটু দূরে যেতে চাই। তাহলে চলাে আমরা নেপলসে যাই। আমি এমন একজন মহিলার গল্প বলবাে যে নিজের সতীত্ব ও শালীনতার গর্ব করতাে, যে প্রেমিককে সে বারবার উপেক্ষা করেছে সেই প্রেমিক তাকে কিভাবে ঠকাল আমি তারই গল্প বলবাে। গল্পটা’ শুনে তােমরাও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।

ইটা’লি’র প্রাচীন ও মনােরম শহরে অ’ত্যন্ত ধনী এক অ’ভিজাত ব্যক্তি বাস করত যার নাম ছিল রিচিয়ার্ডো মিনুতোেলাে। সে বি’বাহিত, ঘরে যৌবনবতী রূপসী স্ত্রী থাকলে কি হবে, সে পরস্ত্রীর প্রেমে পড়েছে। এই পরস্ত্রীটি তার স্ত্রী অ’পেক্ষা সুন্দরী তাে বটেই এমনকি সারা নেপলসে তার তুল্য সুন্দরী আর নেই। অ’তএব বলা যায় প্রেমে পড়বার মতাে চোখ ও মন কেড়ে নেওয়া রূপবতী।

এই রূপবতীর নাম ক্যাটেলা, স্বামী সােহা’গিনী ও নিষ্ঠাবতী। স্বামীকে সে মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে। স্বামীর নাম ফিলি’পপেলাে সিগিনােলফো, নেপলসের নামী মা’নুষ এবং মা’নী।

রিচিয়ার্ডো ক্যাটোলােকে ভালবাসে এবং তার মন পাবার জন্যে যা কিছু করার তা সে করেছে চেষ্টা’র ত্রুটি রাখে নি। ধৈর্যের শেষসীমা’য় পৌঁছেছে। কিন্তু ক্যাটেলা তার দিকে ফিরেও চায় না। তার মনে রিচিয়ার্ডো একটুও দাগ কাটতে পারে নি, ক্যাটেলা তাকে কাছে আসতেই দিত না। তবুও রিচিয়ার্ডে ক্যাটেলার আশা ছাড়তে পারছে না। তার যেন একটা’ জেদ চেপে গেছে। যদিও সে ভাবছে বেঁচে থেকে আমা’র লাভ কি। কিন্তু মরতেও পারছে না।

একদিন সে সুযােগ পেয়ে ক্যাটেলাকে কিছু বলাবার চেষ্টা’ করে যখন ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলাে তখন তার পরিচিত মহিলা এবং আত্মীয়া ব্যাপারটা’ লক্ষ্য করে তাকে ডেকে বলল, তুমিও তাে আচ্ছা বেহা’য়া পুরুষ, ভালাে করেই দেখছ ক্যাটেলা তােমা’কে কাছে ঘেঁষতে পর্যন্ত দিচ্ছে না, সে তার বরটিকে ছাড়া আর কাউকেই ভালবাসে না তখন ওর পিছনে ঘুরঘুর করবার দরকার কি? আর কি মেয়ে নেই?

রিচিয়ার্ডো মনে মনে ভাবে, মেয়ে থাকবে না কেন কিন্তু ক্যাটেলার মতাে সুন্দরী, উপচে পড়া যৌবন যার, এমন তাে আমা’র চোখে পড়ছে না। যাকে পাওয়া যায় না তাকে পাবার জন্যেই তাে এত চেষ্টা’। একবার শুধু একবার ক্যাটেলাকে পেলেই রিচিয়ার্ডো সন্তুষ্ট হবে।

রিচিয়ার্ডো এবার অ’ন্য একটা’ পথ ধরলাে। সে এমন ভাব দেখাতে লাগল যেন সে ক্যাটেলার আশা ত্যাগ করেছে এবং অ’ন্য একটি সুন্দরীর সঙ্গে প্রেম করছে। তাকে নিয়েই সে এখন পড়েছে। ক্যাটেলার মন পাবার জন্যে সে যা করেছিল এই সুন্দরীর জন্যেও সে তাই করছে। সে তার সর্বস্ব সেই সুন্দরীকে
নেপলসের সকলে এমনকি ক্যাটেলাও বি’শ্বাস করলাে যে রিচিয়ার্ডো সত্যিই সুন্দরীর প্রেমে হা’বুডুবু যাচ্ছে। ক্যাটেলা নিশ্বাস ফেলে যেন বাঁচল, সে নিশ্চিন্ত হল লােকটা’ তাকে আর প্রেম নিবেদন করে বি’রক্ত করবে না। এরপর রিচিয়ার্ডো তার কাছে এসে সৌজন্য জানালে বা সাধারণ দু’-একটা’ কথা বললে তাকে আর উপেক্ষা করে ফিরিয়ে দিত না। সেও দু’-একটা’ কথা বলতাে। প্রেম নিবেদন তাে আর করছে না।

নেপলসে গরম পড়েছে। এই সময়ে শহরের ধনী ব্যক্তিরা সমুদ্রের শীতল বাতাস উপভােগ করতে দলে দলে সমুদ্রসৈকতে গিয়ে লাঞ্চ ও ডিনার খেয়ে অ’র্থাৎ সারাদিন কাটিয়ে রাত্রে বাড়ি ফিরে আসতাে। রিচিয়ার্ডো খবর পেল যে কাটেলা তার কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে সমুদ্রসৈকতে যাচ্ছে। খবর পেয়ে রিচিয়ার্ডো দু’একজন বন্ধু সঙ্গে নিয়ে সমুদ্রসৈকতে গেল।

সেখানে পৌছাবার পর ক্যাটেলা তাকে দেখতে পেয়ে তার দলে যােগ দিতে বলল। রিচিয়ার্ডো যেন কতই অ’নিচ্ছুক। বলল, বলছাে যখন তখন আর উপেক্ষা করি কি করে? তুমি আমা’র অ’নেক দিনের পরিচিত বন্ধু, তােমা’র কথা ফিরিয়ে দিতে পারি না। ঠিক আছে, ফুর্তি করা যাবে এখন।

টেলার বান্ধবীরা রিচিয়ার্ডোর প্রেয়সীকে নিয়ে ঠাট্টা’তামা’সা শুরু করলাে। তারা কেউ মেয়েটিকে দেখেনি তাই তাদের ঠাট্টা’ও বেশ ধারালাে হতে লাগল। মেয়েটি কে, না হয় না দেখলে, নামটা’ই বলাে না শুনি ভয় নেই আমরা তােমা’র প্রেয়সীকে ভাঙিয়ে নেব না। তাদের মন্তব্যে রিচিয়ার্ডো যেন রাগ আছে আর মহিলাদের হা’সি ও পরিহা’স আরও তীক্ষ্ণ হচ্ছে।

একসময়ে দলের মহিলারা এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে পড়ল। ক্যাটেলা ও আর কয়েকজন মা’ত্র রইল। একসময়ে ক্যাটেলাকে একা পেয়ে রিচিয়ার্ডো তার স্বামী সম্বন্ধে একটা’ মন্তব্য করলাে। বলল, তুমি তাে তোমা’র স্বামীটি ছাড়া আর কিছু জান না কিন্তু স্বামী কি কীর্তি করেছে তা কি জান? তােমা’র স্বামী কাটা’ গিলেছে, এক পরস্ত্রীর খপ্পরে পড়েছে।

শুনেই তাে ক্যাটেলার মুখ শুকিয়ে গেল। বি’শ্বাস করতে তার মন চায় না। এ হতে পারে না। সে বলল, আমি বি’শ্বাস করি না, তুমি কি দেখতে কি দেখেছ বা কি শুনতে কে জানে। বেশ তাে বলাে না সেই ছিনালীটা’ কে?

রিচিয়ার্ডো বলল, ক্যাটেলা, তােমা’র কোনাে অ’নুরােধ কি আমি উপেক্ষা করতে পারি? ছিনালী কিনা বলতে পারিনা তবে সেই পরস্ত্রীর নাম তাে বলবােই এবং তােমা’কে আমা’র বি’শেষ অ’নুরােধ যে আমা’র শুধু কথা শুনেই নয়, তুমি নিজে প্রমা’ণ না পাওয়া পর্যন্ত একথা কাউকে এমনকি তােমা’র স্বামীকেও বলবে। না। প্রমা’ণ তুমি সহজেই পাবে, তােমা’র স্বামীকে হা’তেনাতে ধরতে পারবে।

ক্যাটেলাএবার ভাবল রিচিয়ার্ডো বােধহয় সত্যি কথাই বলছে। সে বলল, বেশ আমি নিজের চোখে না দেয়া পর্যন্ত কাউকে কিছু বলবাে না। তুমি বলাে আমি ওদের দু’জনকে একত্রে কোথায় দেখতে পাব?

রিচিয়ার্ডো ভীষণ ধূর্ত। সে বলল, ক্যাটেলা, আমি যদি তােমা’কে এখনও ভালবাসতুম তাহলে এসব কথা তােমা’কে বলতুম না কারণ তুমি ব্যথা পেলে আমিও ব্যথা পেতুম। কিন্তু আমা’র প্রেম অ’ন্যত্র স্থাপিত তাই তােমা’কে বলতে পারি। আমি যে তােমা’কে একদা ভালবাসতুম একথা ফিলি’পপেলাে জানত কিনা আমি জানি না এবং এজন্যে তােমা’কে ভৎসনা করেছে কিনা তাও আমি জানি না। আমা’কেও সে কখনও কিছু বলে নি। এত কথা বলার আমা’র কারণ আছে। কারণটা’ হল এই যে আমা’র স্ত্রী তোমা’র মতাে সুন্দরী না হলেও তােমা’র স্বামী আমা’র স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করছে। আমা’র স্ত্রী-ই আমা’কে একথা বলেছে। দু’জনে দূত মা’রফত চিঠি চালাচালি’ও করছে।

আজই সকালে এখানে আসবার আগে আমি দেখতে পেলুম একজন রমণী আমা’র স্ত্রীর সঙ্গে চুপিচুপি কি কথা বলছে। ঐ রমণীকে আমি চিনি। সে তােমা’র স্বামী দূত। আমি স্ত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলুম, ও কি বলছে?

স্ত্রী আমা’র কাছে এসে বেশ রাগত স্বরে বলল, ঐ সেই অ’সভ্য ফিলি’পপেলাে, একটু লাই দিলে মা’থায় ওঠে, তুমিই যত নষ্টের গােড়া। প্রথমে যখন চিঠি পেলুম তখন তােমা’কে বলেছিলুম, তুমি বললে দু’-একটা’ চিঠি লি’খে বা উত্তর পেলে লােকটা’ যদি আনন্দ পায় ক্ষতি কি? তাই আমি চিঠির উত্তর দিয়েছিলাম, এখন আমা’কে জ্বালি’য়ে মা’রছে। এখন বলে পাঠিয়েছে আমি কি করবাে তা ও আমা’র মুখ থেকে শুনতে চায়, ও বলছে আমি রাজি হলে ও কালই শহরে একটা’ নিভৃত কুটিরে আমা’র সঙ্গে দেখা করবে এবং আমি যেন নিশ্চয় রাজি হই। তুমি যদি ওকে প্রশ্রয় না দিতে তাে আমি ওকে এমন শিক্ষা দিতুম যে জীবনে ভুলত না, আমা’র দিকে আর ফিরে চাইবার সাহস পেত না।

স্ত্রীর মুখে এই বৃত্তান্ত শুনে আমিও অ’সন্তুষ্ট হলুম। সত্যিই লােকটা’ বড্ড বেড়ে গেছে, ও এতটা’ বাড়াবাড়ি করবে আমি ভাবি’ নি। তারপর দেখ ও তােমা’র প্রতি কি ভীষণ বি’শ্বাসঘাতকতা করলাে। আমিও ভেবে দেখলুম ব্যাপারটা’ তােমা’কে জানানাে উচিত।

ক্যাটেলা তুমি ভাবছ, আমি বুঝি তােমা’র সঙ্গে গালগল্প করছি। কিন্তু তা নয়, ইচ্ছে করলে তুমি আমা’র কথার সত্যাসত্য যাচিয়ে নিতে পার। এইজন্যে আমি আমা’র স্ত্রীকে বললুম তুমি ঐ মেয়েটা’কে বলে দাও যে তুমি রাজি আছ, তুমি সেই কুটিরে যাবে। দুপুরের পরে বি’কেলের দিকে দেখা করার সময় ঠিক হয়েছে, তখন তাে সকলে ঘুমা’েয়।

এখন তুমি বুঝতে পারছ যে আমি আমা’র স্ত্রীকে পাঠাতে চাই না। তবে আমি যদি তুমি হতুম তাহলে আমি নিজে ঐ কুটিরে হা’জির হয়ে ফিলি’পপেলােকে উচিত শিক্ষা দিতুম। বলাই বাহুল্য সে ইতিমতাে অ’পদস্ত হবে। আমরাও এক ঢিলে দুই পাখি মা’রতে পারব। এখন তুমি কি করবে ভেবে দেখ।

ক্যাটেলা একবারও ভেবে দেখল না কথাগুলাে কে বলছে? লােকটা’ তাে তাকে ঠকাতেও পারে? হিংসেয় সে দপ্ করে জ্বলে উঠল। সে বলল সে ঐ কুটিরে নিজেই যাবে এবং স্বামীক দেখে নেবে। বি’শ্বাসঘাতককে এমন শিক্ষা দেবে যে সে আর কোনাে মেয়ের দিকে চাইতে সাহস করবে না।

রিচিয়ার্ডো তখন মনে মনে হা’সছে, ওষুধ লেগেছে। ক্যাটেলা যাতে অ’বি’শ্বাস করবার অ’বকাশ না পায় এজন্য রিচিয়ার্ডো ফিলি’পপেলাে সম্বন্ধে আরও দু-চারটে কথা রসিয়ে বলল। ক্যাটেলাও হা’লে তার স্বামীর গতিবি’ধির মধ্যে রিচিয়ার্ডোর ঐ সব কথার সমর্থন পেল। তার সন্দেহ আরও মনে গেড়ে বসল। সে ভাবল, আমি কোনাে পুরুষের দিকে মুখ তুলে চাই না আর তুমি কিনা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছ? এবার তোর মজা দেখাব।

যে কুটিরে স্বামীর ওপর প্রতিশােধ নেওয়ার জন্যে ক্যাটেলার যাওয়ার কথা, পরদিন সকালে রিচিয়ার্ডো সেই স্থানে গেল। ঠিক কুটির নয়, একটা’ বাড়িতে অ’নেকগুলাে ছােট ছােট ঘর আছে। প্রেমিকপ্রেমিকদের মিলনের জন্যে ঘরগুলাে সাময়িকভাবে ভাড়া দেওয়া হয়। একজন মহিলা এই বাড়ির মা’লি’ক। রিচিয়ার্ডো সেই মহিলার সঙ্গে দেখা করে একটা’ ঘর ভাড়া করে রাখল এবং মহিলাকে তার উদেশ্যের কথা বলল। অ’নুরােধ করলাে মহিলা যেন সহা’য়তা করে। চোখ টেরে, ভুরু নাচিয়ে, মুচকি হলে মহিলা বলল, এসব তার কাছে নতুন নয়, কখন কি করতে হবে তা সে জানে, উলটে সে রিচিয়ার্ডোকে কিছু উপদেশ দিল।

ঐ বাড়িতে একটা’ ঘর ছিল যেটা’ বেশ অ’ন্ধকার, জানালাও নেই আর যে যুগে তাে ইলেকট্রিক আলাে হন যে সুইচ টিপলেই ঘর আলােয় ভর্তি হবে। মহিলা বলল ঐ ঘরখানা তাদের পক্ষে উপযুক্ত হবে। পরে বি’ছানা পালটে নতুন ও ভালাে বি’ছানা পেতে দেবে। ঘরখানাও একটু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখবে, শুধু অ’তিরিক্ত দিলেই চলবে। সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক করে রিচিয়ার্ডো বাইরে থেকে লাঞ্চ খেয়ে দুপুরে ঐ ঘরে এসে বি’ছানায় শুয়ে রইল।

এদিকে আগের দিন সন্ধ্যার পর সমুদ্রসৈকত থেকে সকলে হা’সতে হা’সতে বাড়ি ফিরল, ক্যাটেলার মন রীতিমতাে গােমড়া। বাড়ি ফেরার একটু পরে তার স্বামীও বাড়ি ফিরল কিন্তু অ’ন্য দিনের মতো স্ত্রীকে আদর করলাে না কারণ সেদিন তার প্রচুর পরিশ্রম হয়েছিল।

ক্যাটেলা অ’ন্যরকম ভাবল। তার সন্দেহ আরও দৃঢ় হল, ফিলি’পপেগলাে নিশ্চই রিচিয়ার্ডোর বৌর কথা ভাবছে। ঠিক হবে কাল যখন জব্দ হবে। যখন রিচিয়ার্ডোর বৌ-এর বদলে ওর নিজের বৌকে দেখবে তখন ওর মুখখানা কি রকম হবে? ওকে আমি অ’পমা’নের চূড়ান্ত করে ছাড়ব।

সে যাই হা’েক ক্যাটেলা নিজে কিন্তু মনে মনে শান্তি পাচ্ছে না। বি’ছানায় শুয়ে সে ছটফট করতে লাগল। রাত্রে তার ভালাে ঘুম হল না।

পরদিন দুপুর শেষ হবার আগে ক্যাটেলা একজন দাসীকে সঙ্গে নিয়ে সেই বাড়ির দিকে রওনা করলাে। ঠিকানা রিচিয়ার্ডো তাকে আগে বলে রেখেছিল এবং বলেছিল বাড়িতে পেীছে সে ? বাড়িওয়ালি’র কাছে ফিলি’পপেলাের খোঁজ করে। ধূর্ত বি’চিয়ার্ডো ফিলি’পপেলাের নামে ঘর ভাড়া নিয়েছিল।

বাড়িওয়ালি’ বাড়ির দরজার মুখেই একটা’ টুলে বসে সেলাই করছিল। ক্যাটেলা এসে তাকে জিজ্ঞেষ করল, সেনর ফিলি’পপেলাে কি এসেছেন? বাড়িওয়ালি’ বলল, হা’ঁ এসেছেন, আপনারই কি আসবার কথা আছে?

—হা’ঁ, আমা’রই আসবার কথা আছে।

—আপনার নাম কি?

-ক্যাটেলা।

সােজা চলে যান, ডান দিকে শেষ ঘরখানা, উনি আছেন। ক্যাটেলা ভাবল, দেরি সহ্য হচ্ছে না, কখন থেকে এসে বসে আছে কে জানে? বাড়ি থেকে তো বেরিয়েছে সেই সাত সকালে। ক্যাটেলা বেশ করে মা’থা ও মুখের ওপর ঘােমটা’ টেনে নিতে ফিলি’পপেলাে তাকে চিনতে না পারে, মনে করে রিচিয়ার্ডোর বৌ-ই এসেছে। চিনিয়ে দেবে কাজ শেষ হবার পরে, এমনকি কথা পর্যন্ত বলবে না।

রিচিয়ার্ডোও অ’ল্পস্বল্প ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল যদিও অ’ন্ধকারে মা’নুষ চেনা দুরূহ।

ক্যাটেলার ঘর চিনতে অ’সুবি’ধে হল না। দরজা ভেজানাে ছিল, সে ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিল। তাকে ঘরে ঢুকতে দেখে বি’চিয়ার্ডো বি’ছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ক্যাটেলাকে জড়িয়ে ধরে মনে ঠাট লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল, এসেছ আমা’র মণি, আমা’র সােনা, আমা’র প্রাণ জুড়লো।
ক্যাটেলাও জানাতে চাইল যে তারই জন্যে অ’র্থাৎ রিচিয়ার্ডোর বৌ-এর জন্যে সে অ’পেক্ষা করছে তাই সে রিচিয়ার্ডোকে নিজের স্বামী মনে করে বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে চুম্বনে চুম্বনে অ’স্থির করে তুলল কিন্তু ধরা পড়বার ভয়ে একটা’ও কথা বলল না।

ঘরখানা রীতিমতাে অ’ন্ধকার থাকায় কেউ কারও মুখ দেখতে পাচ্ছিল না, দু’জনেরই সুবি’ধে হচ্ছিল। রিচিয়ার্ডো তার প্রেয়সীকে বি’ছানায় তুলে নিতে দেরি করলাে না এবং তারপরে দু’জনে দু’জনের আলি’ঙ্গনে ঘনসন্নিবদ্ধ হয়ে কি করলাে আর কি যে করলাে না তা আর বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। রিচিয়ার্ডো যা চেয়েছিল তা পেয়ে তার পুলকের সীমা’ রইল না। ক্যাটেলারও কি কম ভালাে লাগল, এমন তৃপ্তি সে বহুদিন পায় নি। সে ভাবল তার স্বামী নতুন নারী পেয়ে নতুন কৌশল প্রয়ােগ করেছে।

সব যখন শেষ হল তখন ক্যাটেলার হঠাৎ মনে হল এখানে তার আগমনের উদেশ্য কি? সে তাে এতক্ষণ সপ্তম স্বর্গে বাস করছিল, সব ভুলে গিয়েছিল। এখন সব মনে পড়ল। রাগে ফুসতে লাগল। কাল রাত্রে তার ঘুম হয়নি, স্বামীকে কি কি বাক্যবাণে ঘায়েল করবে মনে মনে তার খসড়া করে রেখেছিল।
ক্যাটেলা বলতে আরম্ভ করলাে, হা’য় মেয়েরা কত হতভাগিনী! তারা মিছিমিছি অ’পাত্রের ওপর তাদের ভালবাসা ঢেলে দেয় আর এই অ’পাত্রের মধ্যে অ’পদার্থ স্বামীর সংখ্যাই বেশি। আমা’র কি কপাল! আট বছর ধরে আমি তােমা’কে আমা’র প্রাণ অ’পেক্ষা ভালবেসে আসছি আর এখন কি দেখছি? বেইমা’ন কোথাকার! দেখছি কি উনি পরস্ত্রীর প্রতি আসক্ত! প্রথমে শুনে বি’শ্বাস করি নি কিন্তু এখন হা’তে হা’তে প্রমা’ণ পেয়ে গেলুম। শুধু বেইমা’ন আর বি’শ্বাসঘাতক নয়, একটা’ জলজ্যান্ত শয়তান, লােচ্চা। কোনাে কথা বলছ না যে? বলবে আবার কি? ধরা পড়ে থােতা মুখ ভোতা হয়ে গেছে।

রিচিয়ার্ডো মনে মনে ভাবছে একটু পরে সে যখন নিজের পরিচয় প্রকাশ করবে তখন কি মজাটা’ই না হবে! ক্যাটেলার মুখের চেহা’রাটা’ আর তার কণ্ঠস্বর তখন কি রকম হবে ভেবে রিচিয়ার্ডো অ’তি কষ্টে হা’সি চাপল।

ক্যাটেল চমকে উঠল। সে কার কণ্ঠস্বর শুনছে?

ক্যাটেলা বলছে, আমা’কে এখনও চিনতে পারছাে না? আমি রিচিয়ার্ডোর বৌ নই, তােমা’র বৌ ক্যাটেলা, আমা’র গলার স্বর, কথা বলার ধরন চিনতে পারছ না? এখনও কামে ডুবে আছাে নাকি? পাজী, বদমা’শ, হতচ্ছাড়া শুয়াের একটা’, শুয়াের কেন? কুকুর। রাস্তার কুকুর, কোনাে বাছবি’চার নেই।

তােমা’র এত শক্তি এতদিন কোথায় ছিল? অ’ন্যদিন রাত্রে যা করাে তা যেন নেহা’ত করতে হয় তাই। পরের বৌকে নিয়ে শুতে ভারি মজা, না? কতজনের এমন সর্বনাশ করেছ? কি? কথা বলতে ভুলে গেলে নাকি? ভাবছ মটকা মেড়ে পড়ে থাকলে পার পাবে।

তারপর ক্যাটেলা হঠাৎ খিল খিল করে হেসে উঠল, হা’য় হা’য় কি হতে কি হয়ে গেল, বাড়া ভাতে দুই পল? যার আসবার কথা সে এলাে না, এলাে নিজের বৌ? কি আফশােষ! এমন ঠকা জীবনে ঠকিনি।

রিচিয়ার্ডো এতক্ষণ ধরে ক্যাটেলার কটুভাষণ উপভােগ করছিল। তারপর ভাবল, আর দেরি করে লাভ নেই। আত্মপ্রকাশ করে দেখা যাক ক্যাটেলা নিজের কথাগুলাে কি করে গেলে। সে উত্তর না দিয়ে স্যাটেলাকে বেশ করে জড়িয়ে ধরে তার বুকে, ঘাড়ে, গালে ও ঠোটে পাগলের মতাে চুমা’ে খেল।

ক্যাটেলা প্রথমে বাধা দেবার চেষ্টা’ করছিল কিন্তু তারও হয়ত ভালাে লাগছিল তাই আর দেয় নি।

রিচিয়ার্ডো ওকে ছেড়ে দিতে ক্যাটেলা বলল, ভাবছ আমা’কে আদর করে পার পাবে? পার পাবে না। আমি তােমা’কে দেখে নেব। আমি রিচিয়ার্ডোর বৌয়ের মতাে সুন্দরী নই? আমি সেই মেট্রো মতাে তােমা’কে আরাম ও তৃপ্তি দিতে পারি না? কি মনে করেছ তুমি? লম্পট কোথাকার? রিচিয়ার্ডোই তাে আমা’কে তার প্রাণের চেয়েও ভালবেসেছিল, আমি তাকে পাত্তা দিইনি। এসব তুমি। জেনেশুনেও তারই বৌয়ের সঙ্গে প্রেম করছাে? বেহা’য়া কোথাকার! এবার আমি শুধু রিচিয়ার্ডো কোলে যে কোনও পুরুষের কাছে যাব।

আর দেরি নয়। রিচিয়ার্ডো এবার ক্যাটেলাকে বেশ করে জড়িয়ে ধরলাে যাতে সে পালাতে না পারে। তারপর বলল, প্রেয়সী, ঘাবড়ে যেয়াে না, আমি ফিলি’পেলাে নই, তােমা’রই রিচিয়ার্ডো, এই তুমি যার কথা বললে। সহজ পথে তােমা’কে না পেয়ে আমি একটু ছলনার আশ্রয় নিয়ে খুব কি অ’ন্যায় করেছি?

কই এ তাে তার স্বামীর কণ্ঠস্বর নয়! সে যেন কি রকম হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি বি’ছানা থেকে উঠতে গেল কিন্তু পারল না। চিৎকার করতে গেল, রিচিয়ার্ডো তার মুখ চেপে ধরে বলল, অ’ত ব্যাস্ত হয়াে না প্রিয়তমা’। লােকজন এসে যদি তােমা’র পরিচয় পায় তাহলে সেটা’ তােমা’র পক্ষে ভালাে হবে
না। তারা ভাববে শহরের নামী মা’নুষ ফিলি’পপেলাের এই কীর্তি ? যা করে ফেলেছ তাতাে এখন আর রক্ষা করা যায় না। তােমা’র অ’জান্তে হলেও তুমি করে ফেলেছ তা তুমি ফেরাতে তাে পারবেই না, কাউকে বলতেও পারবে না। তােমা’র স্বামীকেও বলতে পারবে না। প্রথমত কোনাে লাভ হবে না, তর স্বামী তােমা’র কথা বি’শ্বাস নাও করতে পারে এবং আমরা দুই বন্ধু পরস্পরের শত্রু হয়ে যেতে পারি ফলে হয়ত আমরা মা’রমুখী হয়ে একজনকে খুন করে ফেলতেও পারি। যা করেছো তা তােমা’র গিলে ফেলা ছাড়া দ্বি’তীয় কোনাে পথ নেই। অ’তএব প্রিয়তমা’, অ’শান্তি যদি এড়াতে চাও ব্যাপারটা’ চেপে যাও, কাকপক্ষীও জানবে না। তুমি আবার তােমা’র স্বামীর পাশে শুতে পারবে এবং আমা’রও অ’কুণ্ঠ ভালবাসা পাবে চাই কি একজন অ’নুগত সেবক পাবে।

ক্যাটেলা এবার কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, রিচিয়ার্ডো তুমি খুব অ’ন্যায় করেছ, আমা’র  জেনেও তােমা’র এমন কাজ করা উচিত হয়নি। আমি তােমা’র ওপর প্রতিশােধ না নেওয়া পর্যন্ত জীবনে শান্তি পাব না। যাক, তুমি যা চেয়েছিলে তা যখন পেয়েছ তখন আমা’কে ছেড়ে দাও, আমি ফিরে
রিচিয়ার্ডো দেখল এখন ক্যাটেলার যা মনের অ’বস্থা তাতে ওকে ছেড়ে দেওয়া যায় না। হয়ত আত্মহত্যা করেই বসবে। তারপর সে অ’নেক ভালাে ভালাে কথা বলে, অ’নেক উদাহরণ দিয়ে চমৎকার তব বুঝিয়ে তাকে শান্ত ও স্বাভাবি’ক করলাে। তারা পরস্পরকে বন্ধু বলে মেনে নিল। রিচিয়ার্ডোর এত কাটেলা সহজ হল, পরস্পরকে ভালবেসেও ফেলল এবং সেই তাদের প্রথম ও শেষ মিলন নয়, এরপরেও তারা আরও অ’নেকবার প্রেম নদীতে সাঁতার কেটেছিল।

Please follow and like us:

fb-share-icon

: Allowed memory size of 41943040 bytes exhausted (tried to allocate 77824 bytes) in


Tags: , , , , , ,

Comments are closed here.