নিলক্ষার চর – আল মাহমুদ (৭ম পর্ব)

December 10, 2020 | By Admin | Filed in: বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যে যৌনতা.

দে, খাওন বাইড়া দে। আইজ শইলডা বড় ম্যাজ ম্যাজ করতাছে। খাইয়া গিয়া হুইয়া পড়ি। আর তুই কামাইল্যার কান্দে উইঠা যেইখানে যাইতে চাস যাইস। আমি কামাইল্যার লালা ঝরানাে বন্ধ করতে চাই। এর পরে পাজন দিয়া বাইড়ামু। ভাতের বদলে ঘাস খাওয়ামু। গাইগুলাে দুধ কম দিতাছে খাওনের অভাবে। কামাইল্যার তো নজর তর দিকে। এই কালা হারামজাদা, কামাইল্যা এই চামারনিরে লইয়া যেখানে খুশি যাক। তুই পিছে পিছে যাইবি না। বলতে বলতে তােরাব কামাল ও কালীচরণ দুজনকে দুদিকে সরিয়ে দিয়ে মাঝে বসে পড়ল। মইষা ধোঁয়া উড়া গরম ভাত এগিয়ে দিলাে প্রথম তােরাবকে। তারপর ব্যঞ্জন, শুটকি, কলমি শাক ইত্যাদি পাতের পারপাশে সাজিয়ে দিলাে। দিয়ে হেসে বলল, খাও সর্দার। সর্দার শব্দটি এমন মিষ্টি করে উচ্চারণ করল যে তােরাব আচমকা মইষার মুখের দিকে তাকাল। আমারে একটু খাতির যত্ন বেশি করতাছ মনে হয়? ওমা কয় কী? তুমি নিলইক্ষ্যার চরের রাজা। আমরা সেলাম করি। তােরাবের গলা থেকে খাদ্য মিশ্রিত একটা অসাধারণ হাসির শব্দ বেরিয়ে এল। দেখ ঋষির মায়া, আমি মাইনষের কদর করি। মানুষের ভুল, চুরি, বদমাইশি আমার দেখার বিষয় না। আমি দেখি আমার বঁড়গুলাের গতর ঠিক আছে কিনা। গাইগুলাের উর ভরা আছে কিনা। অবলা জীব ডাক উঠলেও কইতে পারে না। আমি ষাঁড় লাগাই। গাইয়ের পেডের ভিতরে বাছুর পয়দা হয়। আমি বাইর করি। আমি দুধ দুয়াই, মাছি তাড়াই। কে গুনার কাজ করতাছে আর কে পুণ্য করতাছে হেইডা আমার দেখার বিষয় না। আজ তর ডাক উঠছে তুই কামাইল্যারে লইয়া যা। আমি দরজা ধইরা খাড়ামু না। মাইনষের পাপ-পুণ্যের বিচার করবার আমি কে? তবে আমার রাজ্যে জুলুম অইতে দেই না। বলতে বলতে বড় বড় গ্রাস তুলে খাওয়া শেষ করল তােরাব সর্দার। ততক্ষণে তােরাবের কথায় মইষার হাত কেঁপে যাচ্ছিল। কালীচরণ ও কামালের দিকে সানকি ঠেলে দিলেও নুন পানি দিতে ভুলে গিয়ে সে তােরাবের বিশাল বুকের দিকে তাকিয়ে থাকল। কালীচরণ খেতে খেতে বলল, নুন দে। তােরাব মইষার অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে হাসল। আগাে দস্তখােলার মায়া, আগে নিমকহারাইমার নুন, পানি দাও। আমারে কী দেখবা? আমি ত আসলে একটা গরুর রাখাল। বলেই তােরাব ওঠে বাথানের গেইটের দিকে রওয়ানা হলাে। সবাই জানে সারারাত আজ তােরাব সর্দার ছাউনির বেড়ার ভেতর থেকে আর বের হয়ে আসবে না।

আকাশে অপূর্ণ কিন্তু বিশাল একটা ডিমের মতাে চাঁদ উঠেছে। মইষা চুলার পাড়ে নিজের লােকমা তুলছে। বাঁধভাঙা জোছনার ভার মনে হচ্ছে এই ক্ষুদ্র ছাউনিটা সইতে পারছে না। কারণ চন্দ্রালােকের প্রতিফলনে ছাউনির ভেতরটাও এক ধরনের দুধ মেশানাে পানির স্বচ্ছতার মতাে হয়ে উঠেছে। একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত সবই দেখা যায়। কিন্তু কোন কিছু স্পষ্ট বােঝা যায় না। আজ বাতাসও বইছে জোরে। নদীর বাতাস। মনে হয় তিতাসের বাতাস একে ইটখলার মাটি পােড়ার গন্ধের সঙ্গে মিশে একটা দগ্ধ গ্রহের গন্ধের মতাে হয়ে উঠেছে। ছাউনির বাইরে বসে ডাবা টানছিল কামাল ও কালীচরণ। গেলে বাইরইয়া যাও। কাম সাইরা তাড়াতাড়ি আইয়। এই মইষা গাইটার রসে গতর ভিজাইয়া বিলের ঘাসের উপর ঘুমাইয়া যাইয় না। কালার গলা থেকে কাম লালসা মিশ্রিত এই উপরােধটুকু শুনতে কামালের ভালােই লাগল। সে ডাবাটা কালার হাত থেকে টেনে নিতে নিতে বলল, তর এত তাগাদা কীয়ে? গেলেত তরে ছাউনির খুড়ার সাথে বাইন্ধা রাইখা যাইতে অইব। নাইলে লে লে করতে করতে তুই গিয়া চরে হাজির হইবি। তুইত একটা আসল হারামজাদা কালীচরণ। তর পালাত শেষ অইছে। আইজ যদি ছাউনির বাইরে পা দেস তইলে আমি তর পুটকি দিয়া পাজন ভইরা ঘাসের জঙ্গলে কাকতাড়ুয়া বানাইয়া রাখুম। বুঝলি? ডাবার গড় গড় শব্দের সাথে কথাগুলাে জড়িয়ে গিয়ে কামালের গলা থেকে নির্গত হলাে। কালা কামালের কাছ থেকে ডাবা হাত বদল করতে গিয়ে সত্যিই ভীত হয়ে হাসার চেষ্টা করল। আমি ত আসলে ভাবছিলাম দূরে বইয়া তােমরার কাণ্ড দেখুম। আমি কিছু করুম না। এই খানে ত ভাগ চাওয়ার কিছু নাই। আমি দেখলে তােমার শরম লাগব? দেখ কালা তরে আমি শেষ বারের মতাে কইতাছি, তুই আইজ ছাউনির মইধ্যে চুপচাপ হুইয়া থাক। বেশি বেসর বেসর করিসনা। আমি তরে বাইন্ধ্যা ফালাইয়া যাইতে চাই না। তর জিব্বাডায় এত লালা ঝরে কেন? খাস নাই, চুষছ নাই? না পুষাইলে মাটির ডেলা চাট গিয়া। নাইলে বাথানে গিয়া দামড়ির চোনা খা গিয়া। মনে রাখিস আইজ আমার পালার রাইত। আমার কোন আহাতাহা নাই। এ সময় দুজনের পেছন থেকে মইষা এসে ধপ করে সামনে বসে পড়ল। কৃষ্ণ, কৃষ্ণ! ও রাধা মাধব। একটু টানি। বহুত ভাত ভাইছি আইজ। আমারে কান্ধে লইয়া দৌড়াইলে কামাইল্যার কাম সারা। বলেই খিলখিল করে হেসে কাত হয়ে পড়ল মইষা ঋষি। তইলে অখন আমি ভিতরে যাই গা। বলল, কালা।

আমার কাকতাড়ুয়াও হইবার দরকার নাই, পাজনের বাড়ি খাইবারও দরকার নাই। আইজ রাতটা ঘুমাইয়া কাটাই দেই। তয় কামাল মিয়ারে কইয়া রাখি আঘটায় দুধের নাও আইবার আগেই বাথানের দরজায় আইতে অইব।। উঠলাম। কালা উঠে সােজা ছাউনির ভেতরে একবারে শেষ মাথায় যেখানে তার জন্য একটা কথা বিছানাে ও পিঁড়ি পাতা আছে সেদিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বুক থেকে ষাঁড়ের পাটা নামিয়ে ফেলল মইষা। একটানে ব্লাউজ খুলে পাশে রাখল। কি জোয়ান? আমারে কান্ধে লইয়া হাঁটবা? না এই খানেই কাম সারবা? মাইনষের কান্ধে উঠতে আমার ভাল্লাগে না। ওই মাগি তুইত ভাঙা কলসি। তরে কান্ধে লইলে, রস গড়াইব না? বলতে বলতে কামাল তার বিশাল দুই বাহু দিয়ে মইষাকে বুকের উপর টেনে আনল। এ সময় আকস্মাৎ বাথানের একটা ষাঁড় হাম্বার করে উঠলে পর পর বেশ কয়েকটা ষাঁড়ও ডেকে উঠল। কেন পশুগুলাে এমন রাতের প্রহরে প্রহরে এভাবে ডেকে উঠে। এর রহস্য কে বলবে? পাখি ডাকে, রাতা মােরগ ডাকে, কুত্তা ঘেউ ঘেউ করে। হয়তাে বা নদীর মাছও ডাকে। অর্থাৎ এই ডাক কেবল পুরুষদের গলা থেকে বেরুয়। মুরগি ডাকে না, পক্ষিণী ডাকে না, মৎসিনী ডাকে না। কেবল ডেকে ওঠে প্রজাতির কিংবা সৃষ্টির পুরুষেরা। নিগুঢ়, গভীর রাতে আদম জাতির পুরুষ যখন ওঙ্কার তােলে, তখন তারা হৃদয়ভাঙা কুই মেরে হু হু শব্দে স্রষ্টার নামে জিকির করে উঠে। এই জিকির ধ্বনিতে প্রকৃতির ভেতর শুরু হয় নিঃসরণ। নৈঃশব্দের ভাষায় যে প্রতিধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে তা আর জড়কে জড় রাখে না। মনে হয় সবকিছুই প্রাণের গন্ধে ভরপুর। সবকিছুকেই মনে হয় সজীব এবং সপ্রাণ। এই শব্দ শােনার কান থাকতে হয়। চাঁদটা মেঘের আড়ালে সম্পূর্ণ ঢাকা পড়েছে। কালাে মেঘ চাঁদটাকে গিলে ফেলে যেন চরের উপর বাতাস ছেড়ে দিয়েছে। নিস্তব্ধতার মধ্যে চরভূমিটা যতদূর চোখ যায় ঝিমঝিম করতে লাগল। চর থেকে আগাছা গুল্মের একটা মিষ্টি গন্ধ উদ্ভিদের রসায়নের মতাে যেন আবহাওয়ার মধ্যে একটু একটু করে মিলে যাচ্ছে। রাত চারটা থেকেই শুরু হলাে ছায়া মূর্তিদের আনাগােনা। কোন হাঁকডাক নেই, গালমন্দ নেই। কেবল নিঃশব্দ চলাফেরা। আঘাটা থেকে উঠে এসেছে এইসব ছায়ামূর্তি। তারা। বাথানে ঢুকে ঘন্টাখানিকের মধ্যে তাদের কাজ গুছাতে লাগল। এখন আর চন্দ্রালােক বা প্রতিবিম্বের কোন খেলা নেই। কোনাে অন্ধকারে চেপে আছে ছাউনি এবং বাথানের পরিবেশটা । তােরাব ছায়ামূর্তিগুলাের সাথে কেবল ইশারায় ও ইঙ্গিতে নড়াচড়া করছে। চৰ্চন্ শব্দে দুধ দুয়াবার একটা অদ্ভুত শব্দ তরঙ্গের ছন্দ সৃষ্টি হয়েছে। কাঁচা দুধেরও একটা গন্ধ আছে। যা এখন গাই গরুর খলা ও ছাউনিকে একাকার করে দিয়েছে। এর মধ্যেই তােরা একবার গেইটের বাইরে এসে হাতড়ে হাতড়ে কামালের ছাতিতে হাত রাখল। এই উঠ বেজন্মা । দৌড়াইয়া ঘাটে গিয়া ডুব দিয়া। নাপাক শরীরে দুধ ধরন যাইব না।

ধড়মড়িয়ে উঠে বসল কামাল। একবার পাশে হাত দিয়ে দেখল বনুখের মাটির ঢেলার মতাে কঁকড়ে পড়ে আছে মইষা ঋষি। ততক্ষণে তােরাব আবার বাথানের ভেতরে গাই গরুর কাছে চলে গেছে। এখন দুয়ানাের শব্দটা আরও বিচিত্র ও তীব্র হয়ে উঠল । দুধ কমে এলে গাভীর উর থেকে সরু নালে দুধ নামাতে এ ধরনের শব্দ হয়। কামাল উঠেই অন্ধকারের মধ্যে আঘাটার দিকে দৌড় দিলাে এবং এখনাে কিছুই ফর্সা হয়নি। আন্দাজে ঢুকে গেল তিতাসের ভেতর। একটা সাঁতারের ভঙ্গি করে আবার ফিরে এল তীরে। ভেজা গা নিয়ে কামাল ছুটতে লাগল বাথানের দিকে। তােরাব নিজে ঠেলে তুলে দিয়েছে। একটু হেরফের হলেই খড়কেঅলা পাজনের বাড়ি খেতে হবে পাছায় । ফর্সা হবার আগেই দক্ষ হাতের দুয়ানাের পালা খতম। কাঁচা গরম দুধের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। দুধের লােকরা কাইড়া নিয়ে আঘাটায় ফিরে গেলে তােরাব আবার তার নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়তে পড়তে বলল, এই কামাইল্যা হারামজাদা কাল বিয়ানে ষাঁড়গুলাে তুই ঠেইলা বাইর করবি। আর ওই হারামজাদারে গিয়া লাথি মার । কালা ঠেলব গাই বাছুর। আমি আরেকটু ঘুমাই। মাথাডা বড় ভার লাগতাছে। তােরাবের কথায় একটি মাত্র ভেজা গামছাটা কোমরে জড়ানাে অবস্থায় কামাল। স্বভাবসুলভ হাসি হেসে উঠল। তুমি ঘুমাও সর্দার। সকালে সুরুজ উঠলে উইঠ। তােমার চিন্তা কী? আমি আছি না। বলতে বলতে বাথান থেকে নির্গত হলাে কামাল। অন্ধকারে যেখানে মইষা চিৎ হয়ে শুয়েছিল সেখানে একবার তাকাল। ভালাে করে দেখা যায় না, কিন্তু কামাল জানে। চামারনিটা দিগম্বর হয়ে পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। তেজ ছিল মাগিটার। ফেরত দেওন জানে। ঘুমাক। কামাল এগিয়ে গিয়ে ছাউনির শেষপ্রান্তে কালীচরণের পাছায় একটা লাথি মারল। এই উঠ বেজন্ম। কালীচরণ একলাফে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। হেসে বলল, এইটা ত আসলে বেজন্মাদেরই চর। কেউ দেখে না, কেউ পুছে না। এর লাইগ্যা কয় নিলইক্ষ্যার চর। ইটখােলার লােকেরা কয় তােরাব রাজার চর। এই চরের মানুষগুলাে যেমন বেজন্মা, ঘাস, গরু, বাথান, বাউর কারােরইতাে জন্মের ঠিক নাই কামাল মিয়া। আমারে লাথি মারলে তােমার নিজের গতরের গন্ধ যাইব গা? যাও আবার গিয়া ডুব দিয়া আইয়। খবরদার! ছাউনির ওই বাঁশগুলাের পিছনে মায়া হুইয়া আছে। ওদিকে যাবি না। তুইত ছুছরা খালি জিব্বা দিয়া লেউন মারতে চাস খবরদার! জেতা পুইত্যালামু আমি তরে। তর জিব্বা কাইট্যা ফালাই দিমু। বাথানে গিয়া গাই ঠেল। আমি ষাঁড় বাইর করুম। একবার ডাবাটা টাইনা যাইতে দিবা না? এখনও ফর্সা অয় নাই। ঠিক আছে? জ্বালা গিয়া । আমি লুঙ্গিডা বদলাইয়া আই।

ঠিক এ সময় পূর্ব দিগন্তে একটা লালচে আলাের বিচ্ছুরণের মধ্যে দ্রুত উঠে এলো গনগনে সােনার থালের মতাে সূর্য। যেন আকাশের চোখের মতাে। কিছুক্ষণ পরেই কামালের বাথান খুলে দেয়া বাঁশের খাঁচা থেকে বেরিয়ে এলো খলার সবচেয়ে গজ উচু, ষণ্ডা ষাঁড়টি। যেন ম্রাটের মতাে তার পদক্ষেপ। শিংগুলো কালো রঙ মাখানাে। চোখের দৃষ্টি তীব্র। বাতাস শোকার এক ধরনের শব্দ তুলে বঁড়টি। বাথানের বাইরে পরিচ্ছন্ন আলাের মধ্যে এসে ঘাড় উঁচিয়ে দিনের প্রথম গন্ধটা নাক দিয়ে টানতে লাগল। তারপর একপা একপা করে সােজা গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা মইষার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। একবার নাক নামিয়ে মইষার উন্মুক্ত নাভিমূল পুঁকতে লাগল। পশুটার কী হলাে কে জানে। হঠাৎ সে ঘাড় উঁচু-নিচু করে শিং বাঁকিয়ে বাতাসে লাফিয়ে উঠল। যেন পশুটার মগজে কোন ভঁস পােকা ঢুকে পড়েছে। দিগ্বিদিক লাফিয়ে ষাঁড়টা সােজা দৌড়াতে লাগল চরের দিকে। তার পেছনেই বেরিয়ে এল বাথানের বাছাই করা ষাঁড়গুলাে। সবগুলােই বেশ সতর্কভাবে পায়ে মচমচ শব্দ তুলে চরের দিকে যেতে লাগল। ষণ্ডদের চলার শব্দে মইষার ঘােরলাগা দ্রিার অবস্থাটা সম্ভবত কেটে গেল। সে ধড়মড় করে উঠে বসেই নিজের নগ্নতা উপলব্ধি করে দৌড়ে পালিয়ে গেল ছাউনির পেছনের গামলাগুলাের আড়ালে। তারপর চোরের মতাে পা টিপে টিপে ছাউনির ভেতরে এসে শাড়ি, ব্লাউজ ও সায়া তুলে নিল। শাড়ি ও ব্লাউজ কাঁধে রেখে শুধু সায়া পরে সে আঘাটার দিকে দৌড়ে যেতে লাগল। এ সময় দুধওয়ালারা চলে যাওয়াতে নদীর ঘাটটা সুনসান। এমন কি মাঝ নদীতে কোন ইঞ্জিনের নৌকাও চলছে না। মইষা শাড়িটা ভাঙা পাড়ের উপর রেখে সােজা পানিতে ডুব দিল। পানির নিচে মইষার রতিক্লান্ত দেহ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ভেসে উঠতে ইচ্ছে করল না তার। ভাবল আমি যদি মাছ হতাম, আমি যদি এই নদীর হউ মাছনি হতাম তাহলে কতই না ভালাে হতাে। মানুষ পানিতে ডুবে থাকতে পারে না। নিশ্বাস নিতে তরঙ্গের উপর আসতেই হয়, ভাসতেই হয়। হউ মাছও ভাসে, সারাদিনে সূর্যাস্তের সময় কয়েকবার। ঢেউয়ের উপর মাথা তুলে মইষা ঋষি তার সাপের মতাে পেঁচানাে দুপাশের দুটি বেণী খুলতে লাগল । তাকে দেখে কলমির ঝোপ থেকে উড়ে গেল একটা পানকৌড়ি। এই নদীটাকেই না মইষার ঋষিকুল পানে, স্নানে, ঘ্রাণে উপাসনা করে এসেছে। আর এ নদীই মাঝে মধ্যে দুঃস্বপ্নের অজগরী হয়ে মইষাকে গিলে ফেলতে আসে।


Tags: , ,

Comments are closed here.