নিলক্ষার চর – আল মাহমুদ (৫ম পর্ব)

December 8, 2020 | By Admin | Filed in: বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যে যৌনতা.

খুব তাড়াতাড়ি করন লাগব। তােরাইব্যা মারব আমারে । তােরাইব্যা মানুষ না বইন পাষণ্ড। এই বাথানের বড় ষাঁড়টার মতাে। খালি গুতাইবার চায়। বড় মারে। তুই সাবধান। হের আতে খইড়কা পাজন আছে। মইষা খিলখিল করে হাসতে আকাশের দিকে মুখ তুলে বলল, কৃষ্ণ, কৃষ্ণ! ডাবাটায় কয়েকটা দম মেরে কামাল ছাউনির বাইরে গিয়ে দৌড় শুরু করল । মইষা এতবড় দানবরূপী অসুরের ভীতি-বিহ্বল ছােটা দেখে বিস্মিত হলাে। যে তােরাবের ভয়ে কামাল দৌড়াচ্ছে সেই তােরাবকে সে একটামাত্র লাথিতে কম্ম কাবার করে দিতে পারে। কিন্তু এ কী ধরনের আনুগত্য? তােরাবের খড়কে পাজনের পুঁতাের ভয়ে এই দানব শিশুটি চারণভূমিতে ফিরে যাচ্ছে ভাবতেই মইষা আপন মনে বলে উঠল, রাখ তােরাইবা, আমি জানি তর ক্ষমতা কত। আমি তর ভেতরটা, জুরের জায়গাটা মুচড়াইয়া ভাঙুম। এই বাথানের সবগুলাে ষাঁড়কে আমার বশ করতে অইব। সবার বুকের ওপর তুইলা দিমু আমার ঠ্যাং। তােরাইব্যা হারামজাদা তরে দিয়া আমার পায়ের পাতা চাটামু। আমি মইষা ঋষি মনে রাখিস। আড়বাঁশের ওপর ঠেস দিয়ে বসল মইষা আগের মতােই দুই পা ছড়িয়ে দিয়ে। এর মধ্যেই সে কামাইল্যার পোটলা, সানকি ইত্যাদি ধুয়ে পরিস্কার করে সাজিয়ে রেখে এসেছে। হয় এখন কালীচরণ কিংবা তােরাইব্যা ডাকাইত কেউ একজন আসবে। আড়াশে মাথা লাগিয়ে চোখ বন্ধ করতেই মইষা স্বপ্নের ঘােরের মধ্যে পড়ে গেল।

তিতাস নদীটা যেন হঠাৎ একটি অতিকায় অজগর হয়ে মইষার দিকে হা করে এগিয়ে আসছে। সাপটা মইষার কোমর পর্যন্ত গিলে ফেলেছে। মইষা সাপের মুখ গহ্বর থেকে | চিৎকার করে বলছে বাঁচাও, বাঁচাও! এ সময় তার পাশ থেকে কালীচরণ হেসে বলল, তােমারে বাঁচাইবার কর্ম আমার না। তাড়াতাড়ি উড। চাইট্যা খাইয়া একখুনি দৌড়াইতে অইব। না অইলে তােরাইব্যা মাইরা ফেলব। মইষা ত্ৰামযুক্ত স্বপ্নের ঘাের থেকে উঠে সােজা দাঁড়িয়ে গেল। ও মাগাে মা! আর একটু অইলেই গিল্যা ফেলছিল। ও মা। এ আবার কোন কথা কয়। তরে আবার গিলব কেডা! কালীচরণের বিস্ময়। ওই তিতাস অজগরনি! উইঠা আইসা আমারে গিলতে লাগছিল। তুই বেডা কালার বাচ্চা একটু আগে আইলে তাে আমি দুঃস্বপ্ন দেখতাম না। তয় তুই আওয়াতে আমার সবটা হাপের পেড়ে যায় নাই। যা বেড়া তােরাইব্যার গােলাম, খা গিয়া। সব ঠিক কইরা রাইখা আইছি। গিল আর মনে মনে আমার ভজনা কর। আমি জগদ্ধাত্রী। আমি তর মা । তােরাইব্যার গােলামি থেইক্যা আমি তরে, কামাইল্যারে ছুড়াইয়া আনুম। ও তরার কান্দে জুয়াল তুইল্যা ঘুরাইতাছে। আমি এই জুয়াল ছাড়ামু। সব্বনাশ! এই কথা মুখে আইন না। এই কথা টের পাইলে তােরাব তােমার দুই ঠ্যাং ধইরা ছিড়া ফেলাইব। তুমি তাে জান না তােরাইব্যা মানুষ মাইরা এই চরে খাদাইয়া। ফেলে। তােরাইব্যার ডরে ওই ইটখােলার মানুষরা পর্যন্ত বাবা বাবা করে! আর তুমি দত্তখলার চামারনি তােরাইব্যারে নুয়াইবার স্বপ্ন দেখতাছ। তুমি বুঝ না তােরাইব্যা তােমার দিকে একবারও চায় নাই। হেই জানে হে কী চায়। তােমারে আনছে রান্দনের লাইগ্যা। হেই কামই করতে থাক। মাসে একশ টেহা মুখের কথা না। তোরাইব্য, ভগবানই জানে যে একশ টেহা কোথেইকা বাইর করব। আইজকাল দুধ চুরি কইরা বেচন যায় না। খলার মালিক লাইঠ্যাল লইয়া আইসা হাজির হয়। একশ টেহা সোজা। কথা না। কামাইল্যা ও কালাকে বিদায় করার পর মইষা এগিয়ে গিয়ে চুলার আশপাশটা ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করল। তার মুখে একটাই শব্দ তােরাইব্যা হারামজাদা আমার দিকে একবারও চাইলি না। তুই হারামজাদা রাইতে ছাউনিত না থাইক্যা ওই গাই আর ষাঁড়গুলাের সাথে বাথানের ভিতরে বাঁশের মাচানে ঘুমাস। হারামজাদা ডেহা আর দামড়ি গাইয়ের সাথে থাকতে থাকতে তর আর মাইনষের মায়ার প্রতি চোখ নাই । হারামজাদা কানা মইষা ঋষির গতরের দিকে চাইয়া কত বেডা, বামনবাইড়ার মতাে ঠিকাদার, মাঝির পুতেরা আমার ফাইল, আমার ঠ্যাংয়ে উবুড় হইয়া পড়ে। আর তুই হারামজাদা তােরাইব্যা তর ভিতরে কী আছে আমি দেখুম। এই কথা ভাবতে ভাবতে মইষা চুলার আশপাশের জায়গাটা সাফ করে একটা ধাড়ির ভাঙা এনে চুলার পাড়ে রাখল। মনে হলাে যে, তারও খিদে পেয়েছে। অথচ তােরাইব্যা এখনও খেতে আসেনি। মইষা ভাবাটা খুলে বের করে এতে তামাক সেজে, চুলা থেকে একটা আংড়া কল্কে ঠেসে ভরে টানতে শুরু করল। এই অবেলায় হুক্কা জ্বালাইছস চামারনি। তর ভুখ, খিদা লাগে না? মইষা ঘাড় ফিরিয়ে দেখে তােরাব দাঁড়িয়ে আছে। খুব মধুর হাসি হেসে মইষা হুকাটা তােরাবের দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল, মায়া লােকের ভুখ, হুদা ভাতের লাইগ্যা, তুই ভাবাে ওস্তাদ? লও হুক্কা ধর। তােমার ভাত বাড়ুম। মইষার কোমল ব্যবহারে একটু মৃদু হাসল তােরাব। হুকাটা তার হাত থেকে নিয়ে সজোরে একটা টান দিয়ে নামিয়ে রাখল। একটু সবুর কর মইষানি। আমি গামছাড়া ফিন্দা একটা ডুব দিয়া আই আঘাটা থেইক্যা। হুনলাম তর রান্দা নাকি কামাইল্যা আর কালার খুব ভাল্লাগছে। আমারও ভাল্লাগছে। এর আগেতাে চামারনির হাতে রান্দা খাইনি। দারুণ মজা। এ কথায় মনে হলাে মইষা যেন মুহূর্তে গলে পানি হয়ে গেল। একটু আগেও তােরাইব্যার আতাজুড়ি বের করে দেখবার যে বাসনা ছিল, তা মনে হলাে ওই দৈত্যের মতাে কালাে পুরুষটা ভেতর থেকে তার প্রশংসা এবং গুণের কথা ফোঁটা ফোঁটা করে চুইয়ে পড়ার কারণে মইষা ভিজে গেছে। তার ভেতরটা তােরাবের জন্য মুহূর্তেই বদলে গেল ।

হঁা এই রাখাইল্যাটা একটা পুরুষ বটে। লম্বায় প্রায় ছয় ফুট হবে। আড়াশ থেকে একটা গামছা কাধে নিয়ে তােরাব নদীর দিকে চলে গেলে মইষাও তার শাড়ি, ব্রাউজ ও সায়া শরীর ঢাকার এই সামান্য পিন্দন যতটা সম্ভব ঠিকঠাক করে পরে নিল। খােপার চুল খুলে একটা এলােবেনি পিঠের উপর ছড়িয়ে দিলো। মইষা মনে মনে ভাবল এই লােকটা তার গতরে কেমন যেন ঘাম ঝরিয়ে দিয়েছে। চরের উন্মুক্ত বাতাসে চুলার পাশে বসে মইষা ঘামতে লাগল। একটু পরেই ভেজা শরীর ও মাথা মুছতে মুছতে ছাউনিতে এসে ঢুকল তােরাব। আড়চোখে সে একবার মইষাকে দেখল । তার হাতে গরম ভাতের সানকির উপর পুঁইশাকের ডাটাভর্তি উষ্ণ শাকের আয়োজন। তার পাশে সিঁদলের ভর্তা। নুন। একটা সানকিতে গরম দুধ প্রায় সেরখানিক। চামড়ার মতাে সর। যে কোন ক্ষুধার্ত পুরুষের কাছে সত্যিই অমৃত! তোরাব সােজা এসে বসে পড়ল। সদ্যস্নাত পুরুষের শরীর থেকে যেন একটা স্নিগ্ধ শক্তির বিচ্ছুরণ ঘটে। তােরাবের শরীর থেকেও তেমনি তার প্রবল শারীরিক শক্তির আভাস ঠিকরে বেরুচ্ছে। পেশীগুলো এখন তিতাসের ঠান্ডা পানিতে স্নিগ্ধ ও উত্তেজনাহীন। মইষা কোন কথা না বলে তার দিকে সবকিছু বাড়িয়ে দিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে বসে পড়ল। তােরাব একবার মইষার দিকে তাকিয়ে বলল, তুই খাবি না? আমি তাে তােমারে বিদায় কইরা ঘাটে যামু। তােরাব কোন জবাব না দিয়ে ক্রমাগত খেতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দুই সানকি ভাত-ব্যঞ্জন ও দুধ সাবাড় করে অত্যন্ত পরিতৃপ্তির সাথে হাসল। তুই কোথেইক্যা আইলি? বড়ই মজা! তর লাইগ্যা চুরি কইরা দুধ বেচার একটা ব্যবস্থা করছি। ওই ইটখলা থেইক্যা রাইত থাকতে একটা বেডি আইয়া বাথানের দুধ লইয়া যায়। বুঝলি? তর লাইগ্যা করলাম। বাথানের মানুষ এই ধরনের অন্যায্য কাজ করে । তর লাইগ্যা করলাম চামারনি। তবে একশ টেহাই দিমু। জবান লড়চড় হইবাে । তুই যে মাসে একশ টেহা লইবি রাখবি কই? এই দুই চোরা কামাইল্যা আর কালীচরণের মাইঝে লুকাইবি কই? লুকাইতে হইবাে না। তুমি আমারে যে গাঁও থেইকা লইয়াইছ সেই গাঁওয়ে আমার একটা বইন আছে উষা ঋষি। আমার ছােড। বাউনবাইড়ার বাজারে পানি তুলে। মাস ফুরাইলে ঠিক আইয়া হাজির হইব। আমি তারে কইয়া আইছি। তাইলে উডি। এই সময় মাঠের সব গাই গরুর তিয়াস লাগে। গরুর পাল লইয়া তিতাসে নামতে অইবাে। ষাঁড়গুলােরে ধােয়াইতে অইবাে। তারপর হাইজা পর্যন্ত ঘাস খাওয়াইব ওই কামাইল্যা আর কাইল্যা। আর আমি তখন ওই একটা শ্যাওড়া গাছের নিচে একটু জিরাইয়া লমু। আমি মানুষ খারাপ না বুঝলি চামারনি। অদ্ভুত এক ধরনের হাসি হেসে কথাগুলাে বলল তােরাব। আমি তাে তােমার দুই সাগরেদের ঠিকানা জানছি। ঘাড়ে চড়ছি, নিচে হুইছি কিন্তু তােমারেই বুঝলাম না। মন চায় না? এই প্রশ্নে হু হু করে হেসে উঠল তােরাব।


Tags: , ,

Comments are closed here.