নিলক্ষার চর – আল মাহমুদ (২য় পর্ব)

December 5, 2020 | By Admin | Filed in: বিখ্যাত লেখকদের সাহিত্যে যৌনতা.

নিলক্ষার চর – আল মাহমুদ (১ম পর্ব)
পেটের জ্বালার চেয়ে চেটের জ্বালা লাফ দিয়া উঠব

একথায় কালা উত্তেজনায় দাড়িয়ে গেল। রাসি না উস্তাদ। তােরাইব্যা হের মারেই লইয়া আইতাছে । মাইয়া মানুষ না পাইলে কী করববা বেচারা। ঠিক দেইখ ওর মারে লইয়া আইছে। এ সময় উস্তাদ আপনার একটা বিড়ি দরকার। আমার কাছে একটা আছে না। দিমু জ্বালাইয়া? দে বেটা! কোমরের ভাঁজ থেকে লুকানাে বিড়ি ও দেশলাই নিয়ে কালা দ্রুত কাঁপা হাতে ধরিয়ে একটা দম মারল। তারপর এগিয়ে দিল কামালের দিকে। নেন উস্তাদ। সাগরেদের হাত থেকে বিড়িটা নিয়ে উপর্যুপরি টান দিতে লাগল কামাল । ততক্ষণে তােরাবের কোসা নাওটা ছায়া মূর্তির মতাে একটা মানুষকে নিয়ে ঘাটে এসে লেগেছে। ছায়া মূর্তিটা সবার আগে চরের ওপর লাফ দিয়ে নামল। তােরাব বৈঠা নৌকার আড়কাঠের উপর তেরচা করে সাজিয়ে রেখে নেমে এল চরে। ততক্ষণে তার। দুই স্যাঙাত দ্রুত নেমে এসেছে তােরাবকে সাহায্যের জন্য। এক টানে কোসা নৌকাকে তারা একেবারে পাড়ের ওপর তুলে আনল।

কোথেকে পাইলিরে তােরাব? কথা বলে উঠল কামাল। গলায় খুশির আওয়াজ। দখলার ঋষিপাড়া থেকে। জবাব দিল তােরাব । তার কণ্ঠস্বরে কৃতিত্বের গাম্ভীর্য । আমরা তাে ভাবতেছিলাম তুই একটা বুড়ি ধইরা লইয়া আইবি। এ তাে দেখি ভর যুবতী! কততে ঠিক করলি? ও কিন্তুক শুধু রানবাে। গাই গরু টানাটানি করতে পারব না। মাসে একশ টেহা দিতে অইব, খাওয়া খােরাক ছাড়া। কালা বলল, এত টেহা কোত্থেকে দিবিরে তােরাব। তাইলে তাে শহরে গিয়া ডাকাতি করতে অইব। দশটা বাথানের দুধ চুরি করতে অইব। এই শালা, বেঁকিয়ে উঠল তােরাব, আমরা তাে চোরই। আমরা সব সাউধ নাকি! তুই ভাবস গরুর রাখালদের মানুষ মানুষ মনে করে! ওর জন্য সব করবি। কী আনছি ভালাে কইরা দেখছস? চরাঞ্চলের সেরা মাগিটা লইয়া আইছি। হির চাহিদা নাই? শুধু খাইব, পিনব আর তােমার সাথে হুইব। ভারি মজায় আছ হারামজাদা। হির লাইগ্যা সারা দুনিয়া লুট করুম, চুরি করুম, ডাহাতি করুম, গলা কাইট্যা ফালামু বুঝলি? এবার থামত তােরাব। কামাল এগিয়ে এসে দুজনের মাঝে দাঁড়াল। এদের ঝগড়ার ছায়ামূর্তিটি আবার কোসা নৌকার আড়কাঠের ওপর গিয়ে বসে পড়ে খিলখিল করে হেসে ফেলল। তােরাব সেদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, কী নাম গাে তােমার? আমার নাম জিগান? আমার নাম মইষা ঋষি। ওই দত্তখলায় বাড়ি। বিয়া শাদি অইছিল? প্রশ্ন করল কামাল।

বিয়া শাদি? এ তাে প্রতি রাইতেই হয়। আবার খিলখিল হাসির শব্দ। তােরাব কামালের দিকে ফিরে বলল, আগে নাওটা কুইল্যা নিয়া চল ছাউনির দিকে যাই। ও তাে আমাদের সাথে থাকবার লাইগ্যাই আইছে। দেখতে পারবা, হুঙতে পারবা। এখন নাওটা সবাই মিল্লা কান্ধে তােল। মইষা নাওয়েই বইয়া থাক। তােরাব এ কথা বলামাত্রই যেন তিনটি দৈত্য একটানে কোসা নৌকাটিকে মাথায়, পিঠে ও কাঁধে তুলে নিয়ে হন হন করে ছুটতে লাগল। এ সময় বেশ আবছা অন্ধকার নেমে এসেছে। আকাশে যদিও সবগুলাে তারা একসাথে ঝিলিক দিয়ে জ্বলছে কিন্তু মাটিপােড়ার গন্ধটা এখন মনে হয় একটু থিতিয়ে পড়েছে। তার ফলে এখন তিতাসের বাতাস উপচে পড়ছে চরে। পােড়া ইটের গন্ধের বদলে পানির গন্ধ, শালুক পাতার গন্ধ এবং শাপলার গন্ধ বয়ে যেতে লাগল চরভূমির ওপর দিয়ে। যদিও চাঁদের আলাে নেই বলা যায়, অন্ধকারেই বিরাজমান। কিন্তু তার মধ্যে সবকিছুই দেখা যাচ্ছে। স্পষ্ট নয়। অস্পষ্ট। তবু বৃক্ষহীন চরের এদিক ওদিক একটা দুইটা আঁশশ্যাওড়া গাছের অস্তিত্ব বােঝা যায়। মনে হচ্ছে তিনটি বিশালকায় দৈত্য একটি নৌকার উপর এক যুবতীকে নিয়ে যেন যুদ্ধে জয় করে আনা মানবীকে নিয়ে তাদের ছাউনিতে ফিরছে। তাদের। শরীরের আনন্দ ঘামের গন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। বাথানের ষাঁড়ের গন্ধের সাথে এই মাংসের অর্থাৎ পুরুষের গন্ধের কোন বৈপরিত্য নেই। ঠিক এ সময় আকাশে অষ্টমীর এক চিলতে চাঁদ একটা মাল বােঝাই নৌকার মতাে মেঘ সাঁতরে বেরিয়ে এলাে। হাঁটতে হাঁটতে নাওটা কাঁদে নিয়ে তিন পশুর রাখাল ছাউনির সামনে এসে দাঁড়াল। নাম মইষা, এইটাই আমাদের ঘরবাড়ি। দেখ নামতে পারবি কি না মাগি? তােরাবের কথায় জায়গা হারামজাদারা? একটা তর্জার বেড়া বাঁশ দিয়া আসমানে তুইল্যা রাখছস। এটা ছাউনি? মইষার কথায় তিন দৈত্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেল। কামাল বলল, আমরা তাে গরুর রাকখাল, আমরা তাে এমনি থাকি। ঝড় বিষ্টি আমাদের ওপর দিয়ে যায়। আমরা ভিজি, পুড়ি। নিজেরা খামচা খামচি করি। কিন্তু আমরা সুখে। থাকি। পলাই না। তবে তােমারে আমরা ভিজতে দিমু না। রােদে জ্বলতে দিমু না। তােমার গতর থেইক্যা ঘাম বাইরতে দিমু না, জিব্যা দিয়া চাইটা দিমু। আমরা তােমার মাথার ওপর ছাউনি হইয়া থাকুম, বালিশ হইয়া খাকুম, পা টিপ্যা দিমু। তুমি আমাদের ফালাইয়া চইলা যাইবা না। আমরা তােমার লাইগা ডাকাতি করুম, মানুষ মারুম, লুট করুম-কামালের দীপ্ত কথায় একই সাথে তার রাখালসুভল পৌরুষ ও যৌনকাতর ভিক্ষুকের আর্তস্বর বেরিয়ে এলাে। এ কথায় মইষা হাসিমিশ্রিত গলায় বলে উঠল, কৃষ্ণ, কৃষ্ণ! বলতে বলতে সে নৌকা থেকে নেমে পড়ল মাটিতে। তােরাব তার হাত ধরে বলল, আয় ভেতরে। আগে একটু বসে একটা বিড়ি খা । আজ আমি নিজে রান্দুম। তর রানতে অইব না। আসলে তুই রানবি না। আমরাই রান্দুম। তুই শুধু থাকবি আর কিছু না। আমরা তর খেদমত করুম। দেখ তরে ওই বাউন বাইড়া শহরে একশ জন টানাটানি করে, ছিড়াছিড়ি করে না। আমরা মাত্র তিনজন। আমরা তরে আদর করুম, যত্ন করুম, তুই আমাদের তিনজনরে একসাথে খুশি রাখবি। তর কোন কাজ নাই। আমরা বঁড় আর গাই চরামু আর তর ওপর চড়ম । তােরাবের কথায় কোন শ্লেষ বা ঘৃণার শব্দ নেই। যেন সে মইষার ভজনা করছে। এবার মইষা ছাউনিটার ভেতরে গিয়ে একটা আড় বাঁশের ঠেস লাগিয়ে বসে পড়ল । কালা একটা বিড়ি ধরিয়ে তার কাছে নিয়ে গেলে সে কালার হাতটা ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বলল, আমি বিড়ি খাই না। ওই তােরাব মিয়ার কাছে সিগ্রেট আছে, সিগ্রেট আন। এ কথা তােরাবের কানে যেতেই সে লুঙ্গির খুঁট থেকে এক প্যাকেট স্টার সিগারেট ও দেশলাই কোন মহার্ঘ বস্তুর মতাে বের করে মইষার দিকে এগিয়ে দিল। এটা তর। এখান থেকে কাউকে ভাগ দিবি না। আমরা বিড়ি হুক্কা খাই। এটা তর লাইগ্য’। মইষা প্যাকেটটা নিয়ে ধীরে সুস্থে একটা সিগ্রেট ধরাল। খুব মনােযােগ দিয়ে তাকে ঘিয়ে বসে থাকা তিনটি পুরুষ দৈত্যকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল মইষা। কিংবা বলা যায় দেখতে নয় বুঝতে লাগল। কারণ এখানে কোন আলাে নেই। চাদের আলাে ছাউনির ভেতর পৌছে না। আচ্ছা তইলে তরা তিনজন। দ্রৌপদীর নাকি পাঁচজন ছিল। আমার ভাইগ্যে তিনজন? ভগবান জানে তরা কেমন হবি। আমি থাকুম। তয় খুব ভুখ লাগছে, রান আমার লাইগ্যা। পােড়া মরিচ দিয়াই খাইতে পারুম। তােমার পােড়া মরিচ দিয়া খাইতে অইব না। দুধ আছে, দুধের সর আছে। আমরা বাথানের রাখাল না। দুধের চেয়ে বড় খাইদ্য দুনিয়াতে কী আছে, কও? আমরা তােমার শরীর চাটুম আর এর ক্ষয়ক্ষতি দেখুম না। বিনীত কণ্ঠে বলল কামাল। এ কথায় মইষার খুব ভালাে লাগল। সে বলল, ঠিক আছে। খিদা লাগছে ভাত রান। আমি কতক্ষণ এই বাঁশটায় ঠেস দিয়া ঘুমাই। মইষার কথায় তিনটি দৈত্যই এক সাথে লাফিয়ে উঠল। সবাই ছুটল মাটির চুলার দিকে। কয়েকটি ইট দিয়ে এখানে রান্নার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে! কালা চাল ধুয়ে নিয়ে এল একটা মাটির হাঁড়িতে পানি দিয়ে ভাত বসিয়ে দিল। অন্য দুজন কামাল ও তােরাব লাকড়ি কেটে ফালাফালা করে চুলায় দিতে লাগল। যেন মহােৎসবের আগে তিন দানব সন্তান ক্ষুন্নিবৃত্তির আয়ােজন করছে। কথায় আছে না আগে পেটের জ্বালা। রাখালরা বলে আগে পেটের জ্বালা তারপর চেটের জ্বালা


Tags: , , ,

Comments are closed here.