ভুল সিদ্ধান্ত

January 16, 2021 | By Admin | Filed in: চটি কাব্য.
গল্প – ভুল সিদ্ধান্ত
লেখক – স্বর্ণালি আক্তার শ্রাবণ
ফয়সালের দেয়া লাল টুকটুকে শাড়িটা পরে নেয় অরিন!নাকফুলটা পড়ে পাশে থাকা আলমারি থেকে জন্মসনদ,ভোটার কার্ড ব্যাগে ডুকিয়ে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
ড্রয়িং রুমে বসে আছে আক্তার সাহেব ও রুবি বেগম..!
অরিন দ্রুত পায় কাছে গিয়ে মা বাবাকে সালাম করে।গম্ভীর হয়ে থাকা আক্তার সাহেব জোড় করে মুখে হাসি ফুটিয়ে মেয়ে কে ব
লে সুখী হ মা.. রুবি বেগম তার স্বামীর চাহনি দেখে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় সে তো জানে ভবিষ্যতে কি হবে বা হতে চলেছে..!
অরিন নিজ হাতে মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে কেঁদো না তো মা…বাবাই তো রাজি হয়েছেই আর কিসের জন্য কাঁদছো তুমি।রুবি বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন। মুখ ফুঁটে কিছুই বলতে পারছে না।
বাবাই কে আবার জড়িয়ে ধরে অরিন বলল আসছি বাবাই..!
আক্তার সাহেব কিছুই বললেন না।নিরবে একটু হাসলেন শুধু।
অরিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।উদ্দেশ্য কাজী অফিস।তিনবছরের প্রেম আজ পূর্ণতা পেতে চলেছে তাদের দুজনের।
রিকশায় উঠে কাজী অফিসের কথা বলে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে অরিন।
স্ক্রীনে ফয়সালের সাদা পাঞ্জাবি পরা ছবিটা দেখে একগাল হাসে।তারপর আবার ও ব্যাগে রেখে দেয়।
কাজী অফিসে পৌঁছাতেই দেখে ফয়সাল সাদা ধবধবে পাঞ্জাবিটা পরে দাঁড়িয়ে আছে।দেখেই মুখে হাসি ফুটলো তার..!রাজপুত্রের মত লাগছে..!
অরিনকে আসতে দেখেই কাছে যেয়ে দাঁড়ালো ফয়সাল। হাত বাড়িয়ে দিলো ওর দিকে।অরিন আলতো করে ফয়সালের হাতটা ধরেই নামল রিকশা থেকে।
পাঞ্জাবির বা পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট রিকশাওয়ালাকে দিয়ে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।
রিকশাওয়ালা চাচা ডেকে বললেন বাজান ভাড়া তো মাত্র বিশটাকা বাকিটাকা লইয়া যাও।
ফয়সাল একটু হেসে শান্ত গলায় বলল বিয়ে করছি চাচা দোয়া করবেন।রিকশাওয়ালা চাচাও হাসল।
কাজী অফিসে ডুকতেই কাজী বলল আরে তোমরা এসো এসো…!
এ পর্যন্ত কতবার যে এলে তার ঠিক নেই শ’খানিক বার তো হবেই।একবারো শেষ পর্যন্ত বিয়েটা আর করো নি। তা আজ ও কি চলে যাবে?
অরিন উদ্বিগ্ন হয়ে বলল না কাজী আংকেল।বাবাইকে রাজি করিয়েছি।আজ ফুল এন্ড ফাইনাল বউ হবোই হবোই।
কাজী সাহেব আর ফয়সাল উচ্চস্বরে হেসে উঠল।
পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসল দুজন।কাজী সাহবে লিখালিখি শেষ করে রেজিস্ট্রি খাতাটা এগিয়ে দিলো ফয়সালের দিকে।কাঁপা কাঁপা হাতে কলমটা ধরল।একজনের দায়িত্ব নেবে আজ থেকে সে…এ যে অনেক কঠিন অনেক…ভালো রাখতে পারবো তো ওকে?হ্যাঁ পারবো কেন পারবো না বেশ পারবো…অরিনের ধাক্কায় ভাবনার সমাপ্তি ঘটল তার।বলল কি হলো বিয়ে করবে না চলে যাবে?দেখো এতোদিন কিন্তু বাবাই রাজি ছিলো না আর এখন রাজি হয়েছে। আবার কিন্তু..অরিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাইন করে ফেললো ফয়সাল।অরিনের দিকে এগিয়ে দিতেই ও তাড়াতাড়ি করে সাইন করে নিলো।
কাজী সাহেব বলল সাক্ষী কে হবে?
ফয়সাল ভাবছে..!অরিন বলল আপনি একজন হবেন আর দুজন আমরাই..
কাজী বেক্কলের মত তাকিয়ে রইলো।আহা দেরী হয়ে যাচ্ছে। জলদি করুন।আবার শ্বশুর বাড়ি যেতে হবে তো নাকি।শ্বাশুড়ি আম্মা বসে আছেন।
অরিনের কথায় ঘোর থেকে বেরিয়ে ফয়সাল বলল হ্যা কাজী সাহেব জলদি করুন।কাজী সাহবে বললেন দেনমোহর কত লিখবো?
দুজন দুজনের দিকে আঙুল তুলে একসাথে বলল ওকে লিখুন।
মানে কি কাজী সাহেব বিরক্তি নিয়ে বলল।
মানেটা খুব সোজা চাচা।দেনমোহর ওকে লিখবেন মানে ছেড়ে দিলেও যাতে দেনমোহর হিসেবে ওকেই পাই…! তাই..!অরিন একটু হেসে বলে ফেললো।
এরকম দেনমোহরের কথা বাপের জন্মেও শুনি নি..কাজী পানের পিক ফেলে লিখতে লিখতে বলল।নিয়মানুসারে কিছু বলে কাজী সাহবে অরিনকে জিগ্যেস করলো আপনি কি বিয়েতে রাজি? রাজি থাকলে কবুল বলুন।অরিন কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলল রাজি না হলে কি বিয়ে বসতে এসেছি?আজব প্রশ্ন..!
আহ অরিন এটা নিয়ম।বলো তো..ফয়সালের একবার বলাতেই তিন কবুল বলে ফেললো অরিন।ফয়সালকে জিগ্যেস করতে সে ও ঠান্ডা গলায় তিনবার কবুল পড়লো।
সুষ্ঠভাবেই সম্পন্ন হলো ওদের বিয়ে।দুজনের মুখেই নতুন জীবনে পা রাখার উচ্ছ্বাস…!
কাজী অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেইন রোডের পাশে এসে দাঁড়ালো দুজন।ফয়সাল খুব শক্ত করেই অরিনের হাতটা ধরে আছে।রোডের পাশে এসে দাঁড়ালো রিকশার জন্য।
রিকশা ডেকে উঠতে যাবে এমন সময় রাস্তার অপর পাশে চোখ পড়ল ফয়সালের..!অনেকগুলো লাল-নীল বিভিন্ন রঙের বেলুন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পিচ্চিটা।
মনে পরে যায় অরিনের প্রথম আবদারটা।খুব সূক্ষ্ম চাওয়া ছিলো।একদমই অল্প আর তীক্ষ্ণ।
শ’খানিক বেলুন! যার গায়ে ওদের ভালোবাসার গল্পটা লিখে উড়িয়ে দেবে।তিন বছরের প্রেমে কখনো কিছু চায় নি অরিন।শুধু এটাই চাওয়া ছিলো ওর।এ চাওয়া পূরণ করতে পারে নি ফয়সাল।নিজের সামর্থ ছিলো না..হয়ত দিতে পারতো কিন্তু ফয়সালের উপার্জনের টাকাতেই উপহারটা চেয়েছিলো অরিন।আজ দেখেই মনে পড়ে গেলো। আর একরাশ হাসিও ফুটে উঠল পুরো মুখ জুড়ে।
অরিন তুমি দাঁড়াও আমি আসছি…
কোথায় যাও।
একটু..আসছি
অরিন তখনো হাত ছাড়ে নি।যেতে হবে না চলো বাড়ি যাবো দেরী হয়ে যাচ্ছে।
যেতেই হবে যে…বলেই একপ্রকার জোড় করে হাতটা ছাড়িয়ে এগুলো ফয়সাল।দুকদম এগিয়েই আবার পিছু ফিরে বলল তোমার স্বপ্ন আনতে যাচ্ছি।মিষ্টি হাসলো ফয়সাল।
অরিনও হাসল। রিকশা থেকে নেমে দাঁড়ালো। হাইওয়ের শানশান করে চলা গাড়ির আঁকেফাঁকে দ্রুত রাস্তা পার হয় ফয়সাল।অরিনের দৃষ্টি শুধু তার দিকেই..!
পিচ্চি টা কে ডেকে সব গুলো বেলুন কিনে নিলো।টাকা দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখলো বিশটাকা নোটাটাই আছে শুধু।আজ তাহলে প্রথম স্যালারির টাকাটা শেষ হলো..!মুচকি হাসলো ফয়সাল।
পিছু ফিরে অরিনের দিকে তাকিয়ে হাত ইশারা করলো।অরিনের মুখে রাজ্য জয় করা হাসি…!
দ্রুত রাস্তা পার হতে আবার ও এগুলো ফয়সাল..!
হঠাৎই অরিনের চিৎকারে আশেপাশের সব লোক তাকালো রোডের মাঝ খানে।
ফয়সালকে ধাক্কা দিয়ে যাওয়া গাড়িটার নাম্বারের দিকে তাকিয়ে খোলা গ্লাসের দিকে তাকালো অরিন।ড্রাইভিং সিটে নিজের বাবাকে দেখে আর গ্লাস দিয়ে একটু মাথা বের করে মুচকি হাসতে দেখে স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লো অরিন।
ফয়সালের রক্তাক্ত দেহটা নিথর হয়ে পড়ে আছে রাস্তার মাঝ খানে।সাদা পান্জাবিটা রক্তে লাল হয়ে গেছে।আশপাশ দিয়ে শা শা করে গাড়ি চলে যাচ্ছে।অসংখ্য লোক জড়ো হয়েছে। বেলুনগুলো আপ গতিতে আকাশের দিকে উড়ে যাচ্ছে।
অরিনের দৃষ্টি মিলিয়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে।গলা দিয়ে শুধু একটা অস্পষ্ট শব্দই বেরিয়ে এলো বাবাই তুমি….!
.
আগামি কাল ফয়সালের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী।
টি-টেবিলের ওপর বড় করে বাঁধাই করা ফয়সালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে অরিন।গত একটা বছরে এমন কোনো দিন যায় নি যেদিন অরিন কাঁদে নি।আজও নিরব কান্নার ভূমিকা পালন করছে সে।মা এসে ডাকলো বউ মা যাও তোমার মা বাবাকে ও বলে এসো।।কিছু গরীব মানুষ খাওয়াবেন বলে ভেবেছেন অরিন আর ফয়সালের মা। উনি বার বার বলছে অরিনদের বাসায় যেয়ে তার মা বাবাকে বলে আসতে..!
অরিন কিছু না বলে মাথা নাড়ল শুধু।শ্বাশুড়ি মা তো আর জানে না তার আজকের এ পরিস্থিতির জন্য কে দায়ী..!
পরনের সাদা শাড়িটা পাল্টে আরেকটা সুতি সাদা শাড়ি পরে নেয় অরিন।পার্সটা হাতে নিয়ে শাশুড়ি মাকে বলে বেরিয়ে পরে।
এদিকে মেয়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আক্তার সাহবে।একটা ভুল সিদ্ধান্ত উল্টো পাল্টে দিয়েছে সব।মেয়েকে সারাজীবনের জন্য কাছে রাখতে সুখী রাখতে গিয়ে বড্ড অসুখী করে দিয়েছে সে।গত একবছরে একটি বারের জন্য ও মেয়ের মুখ দেখে নি সে।মেয়েটাই যে বাবা বলে পরিচয় দেয় না।
চায়ের কাপ হাতে নিয়ে স্বামীর কাছে এলেন রুবি বেগম।প্রত্যেকটা দিন একবার না একবার মেয়ের ছবির সামনে তাকিয়ে থাকবেনই।এতে তার বিন্দু মাত্র খারাপ লাগে না বরং মনে মনে শান্তি পায় সে।সে-ও বুঝুক হারানোর জ্বালা কতটা।
চা টা রেখে গেলাম।বলেই পিছু ফিরে মেয়েকে দেখে অস্ফুট স্বরে বলল অরিন..একবছর পর মেয়েকে দেখলেন আক্তার সাহেব রুবি বেগম..!
মেয়েকে দেখেই স্তম্ভিত হন আক্তার সাহবে।মনে পরে যায় সেই দিনটি।
ফয়সালের মৃত দেহটা যখন ওদের বাড়ির উঠানে রাখা হয়।চিৎকার করে কেঁদেছিলো তার মেয়েটা।এত কান্না কখনো কাঁদতে দেখেন নি তিনি মেয়েকে।
যখন ফয়সালের গোসল শেষ হয় তখন অরিনও গোসল করে সাদা শাড়ি পরে নেয়।দেখে কেঁপে উঠেছিলেন তিনি।পরক্ষনেই ভেবেছিলেন এই তো বাড়ি গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।দাফন শেষে তিনি বলেছিলো চল মা ও তো আর নেই তুই আমাদের সাথেই চল।মনে মনে খুব হাসছিলেন তিনি।বিবেক বুদ্ধি লোপ পেয়েছিলো যে…!
অরিন তার কাছে এসে বলেছিলো আপনি ওই মানুষটার সাথে সাথে আপনার মেয়েটাকেও মেরে ফেললেন।শুধু তফাৎ একটাই সে মৃত অবস্থায় কবরে চলে গেলো আর আপনার মেয়েটা জীবন্ত লাশ হয়ে রইলো।মৃত্যু কিন্তু দুজনেরই হলো।তার সাথে সাথে আরেকটা জিনিস ও হারালেন আপনি।বাবা ডাকটা।যেটা কোনোদিনও আপনার মেয়ের মুখ থেকে আপনি শুনবেন না।
লোকে বলে বাবা-মায়ের ঋন নাকি শোধ করা যায় না।আমি বলবো আজ আমি শোধ করে দিয়েছি।আপনাকে পুলিশে না দিয়ে,লোক না হাসিয়ে,বাবা জাতটাকে কলুষিত না করে আমি আপনার ঋন শোধ করে দিয়েছি।আপনার মেয়েটা মৃত প্রভাবশালী আক্তারু জ্জামান।মৃত সে।আপনার সামনে যে দাড়িয়ে আছে সে অরিন আহমেদ।ফয়সাল আহমেদের স্ত্রী।আসতে পারেন আপনি এখন।
বলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে গেলো।আর একবছর পর আজ মুখোমুখি হলো।তবে মেয়েটা এসে একবারও বাবার দিকে তাকায় নি।
নিরবে চোখ বেয়ে পানি পরছে অরিনের।রুবি বেগম মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।অরিন ধরল না।
রুবি বেগম মেয়েকে ছাড়িয়ে বলল বস মা।
বসতে আসি নি মা।আমার স্বামীর মৃত্যু বার্ষিকী কাল।একটু দোয়া মিলাদের ব্যবস্থা করেছি।খতম ও পরবো।তাই শ্বাশুড়ি মায়ের আদেশে তোমাকে বলতে এলাম।যেও মা।আর আমার স্বামীটার জন্য দোয়া করিও।সে যেন জান্নাতবাসী হয়।আসছি মা।
বলেই চোখ মুছে পিছু ফিরল চলে আসার জন্য।
ওমনি আক্তার সাহেব বলে উঠলেন আমায় বলবি না মা?
অরিন তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।সে হাসি কেউ দেখতে পেলো না।পিছু ফিরল না অরিন।এমনিই দাঁড়িয়ে বলল মা তোমার স্বামীকেও নিয়ে যেও।
বলেই আর একমিনিট ও দাঁড়ালো না অরিন দ্রুত হেঁটে চলে গেলো।
আক্তার সাহেব মেয়ের কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেও রুবি বেগম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে চলে গেলো সেখান থেকে।
মৃত্যুবার্ষিকীর দিন…
হুজুররা ফয়সালের নামে খতম দিলো।অরিন আর ফয়সালের মা ও দিলো দুজনে দু খতম।সকল গরীব মানুষদের খাওয়ানো হলো। তারাসবাই প্রাণ ভরে দোয়া করলো ফয়সালের জন্য। আল্লাহ যেন তার সব গুনাহ মাফ করে দেন।
সবাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। ফয়সালের মা ঘরে বসে ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদছেন।ছেলেটাকে ১০ বছর বয়স রেখে মারা গেলেন স্বামী।আর আজ ছেলেটাও..!আঁচলে মুখ ঢেকে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন তিনি।বউ মার জন্যই হয়ত আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।মেয়েটা যে বড্ড ভালোবাসে তার ছেলেটাকে।তাই তো ছেড়ে যায় নি তাকে।স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে ধরে মাকে আপন করে বেঁচে আছে।খুব করে কাঁদতে থাকেন তিনি।
সাদা রংয়ের শাড়িটার আঁচল দিয়ে মাথায় ঘোমটা দিলো অরিন।প্রায় বিকেল হয়ে এসেছে।গুটিগুটি পায়ে ফয়সালের কবরের পাশে যেয়ে বসল।কেন এমন টা হলো আমাদের সাথে বলো তো?ভাগ্য কেন এরকমই ছিলো?কি পাপ করেছিলাম আমরা?তুমি তো চলে যেয়ে বেঁচে গেলে আমাকে কেন রেখে গেলে বল কেন?বলেই আর চুপ থাকতে পারল না অরিন।মাটি আঁকড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল অরিন।
দূরে দাঁড়িয়ে মেয়েকে দেখছেন অভাগা মা-বাবা।মেয়েকে এভাবে দেখে কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে তার।
রুবি বেগম একদম কাঁদছেন না।চোখগুলো অসম্ভব লাল তার!
দুহাত ভাঁজ করে বললেন তুমি যে আমার মেয়ে আর মেয়ে জামাইয়ের খুনি তা আমি ভুলি নি।চাইলেই ছেড়ে চলে যেতে পারি কিন্তু তোমাকে আমি তিলে তিলে কষ্ট পেয়ে মরতে দেখতে চাই যেমনটা আমার মেয়ে মরছে।বিয়ের দিন স্বামীকে হারিয়ে মেয়েটা যে কিভাবে বেঁচে আছে তা কেবল আল্লাহই ভালো জানেন।
আক্তার সাহেব অশ্রুশিক্ত নয়নে ধরা গলায় বললেন আমি ভেবেছিলাম ফয়সালের এক্সিডেন্ট করালে ও পঙ্গু হয়ে যাবে তখন অরিন ফিরে আসবে আমাদের কাছে নয়ত ফয়সাল মরে যাবে তখন ঠিকই অরিনকে আমি ফিরিয়ে আনবো।ভালো ঘরে বিয়ে দেবো রাজকুমারীর মত রাখবো..!কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিলো ভুল ভুল।আমার মেয়েটা আরো নরক যন্ত্রণার ভেতর ডুবে গেলো।
রুবি বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন নয়মাসের অধিক সময় ওকে পেটে ধরেছি।আমার মেয়ে কি সুখী তা তো আমি বুঝতাম তাই বিয়েতে রাজি হয়েছি।একবার ভেবে দেখেছো কতখানি বয়স ওর?
কিভাবে বাঁচবে বাকি জীবনটা কি নিয়ে বাঁচবে?
জানোতো লোকে বলে বাবা মা যা করেন সন্তানের ভালোর জন্য করেন।বাবা মা যা সিদ্ধান্ত নেন তাতে সর্বদা সন্তানের মঙ্গলই হয়।কিন্তু কথাটা অনেক ভুল কথা।বাবা মায়ের সব সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না ভুল ও হয়।আর বাবার কিংবা মায়ের একটা ভুল সিদ্ধান্ত সন্তানের জীবনটাকে ধ্বংস করে দিতে পারে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে একটা সুন্দর হাসোজ্জল ভবিষ্যতকে।তোমার ধন দৌলত টাকা বাড়ি গাড়ি তোমার কাছেই রইলো শুধু ভুল সিদ্ধান্তটা কয়েকটা মানুষের হাসি খুশি নষ্ট করে দিলো শেষ করে দিলো একটা নিষ্পাপ প্রাণ।আর তোমার এ ভুল সিদ্ধান্ত-তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি গ্রস্থ হলো তোমার মেয়েটা।
মাটিতে ধপ করে বসে পড়লেন আক্তার সাহেব।দূরে কবরের মাটি আঁকড়ে ধরে আর্তনাদ করা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো নিথর দৃষ্টিতে।
রুবি বেগম চোখের পানি মুছে মেয়েরদিকে যেতে লাগলেন।পথিমধ্যে থেমে পিছু ফিরে বললেন সন্তানের ভালো করতে গিয়ে অনেক বাবা মাই খারাপ করে বসেন।তাদের মধ্যে তুমি ও একজন হতভাগ্য বাবা।সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিবেক দিয়ে বিচার করে নিও সিদ্ধান্ত টা ঠিক নাকি ভুল…!
[★★★ সমাপ্ত ★★★]
#ভুল_সিদ্ধান্ত #স্বর্ণালি_আক্তার_শ্রাবণ #গল্পের_ডায়েরি #Bhul_Siddhanto #Swornali_Akter_Shrabon #Golper_Diary #GolperDiaryOfficial

Tags: , ,

Comments are closed here.