নিল ডায়েরির ভালোবাসা

January 15, 2021 | By Admin | Filed in: চটি কাব্য.
গল্প – নিল ডায়েরির ভালোবাসা
লেখক – রাইসার আব্বু
জানো বাবাই তুমি যখন অফিসে থাকো তখন মা আর রাফি আঙ্কেল দরজা বন্ধ করে কি যেন করে। আজকে যখন স্কুল থেকে এসে রুমের দরজা ধাক্কা দেই তখন দেখি মমের শরীরে কাপড় নেই। আর আঙ্কেলটাও নেই । আচ্ছা বাবাই দরজা বন্ধ করে কাপড় খুলে কি করে? যার কারণে আমাকে রুমে যেতে দেয় না। বলো না বাবাই?
.
রাইসার কথা শুনে আমার শরীর থরথর করে কাঁপছে। বুকের ভেতরটা অজানা ব্যাথায় কুর্করে ওঠছে। রাইসার প্রশ্নের কোন উওর আমার জানা নেই। বাবা হয়ে মেয়েকে তার মায়ের অবৈধ সম্পর্কের কথা ক্যামনে বলি? যে কথাকে সাতবছর ভালোবেসে বিয়ে করলাম সে কথা আমার সাথে এভাবে প্রতারণা করতে পারল?চোখের কার্ণিশ বেয়ে এক ফোটা অশ্রু মাটিতে পড়ে টপ করে ওঠলো।
.
বাবা তুমি কাঁদছো কেন? কেঁদো না বাবাই। ও বাবাই। আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? আচ্ছা বাবাই আমি আর তোমার কাছে এসব জানতে চাইব না। আচ্ছা বাবাই তুমি মমকে এ কথা বলো না কেমন?
আচ্ছা ঠিকআছে। তুমি বাহিরের কাউকে বলো না কেমন।
.বাবা আমাকে কুলে নিবে?আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে।
.
রাইসাকে কুলে নিতেই দেখতে পারলাম পাঁচ আঙ্গুলের দাগ রাইসার গালে বসে আছে।
.
রাইসার গালে চড়ের দাগ দেখে মনে হচ্ছে দাগটা আমার কলিজায় দেখা যাচ্ছে। মন চাচ্ছে কথাকে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলি। রাইসা কুলে চড়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে দু’গালে চুমু দিয়ে বলল’ আমার লক্ষী বাবাই, আমাকে কখনো ছেড়ে যাবে না তো?
.
আমি রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম’মা’রে মা হারিয়ে মা পেয়েছি তোকে ছেড়ে যাবো কেমনে।
.
বাবাই মা’কে বকা দিয়ো না। মা’কে তুমি ভালো বানিয়ে ফেলো। আমি তোমাকে যতটা ভালোবাসি মমকেও ততটাই ভালোবাসি। মমকে ছাড়াও আমি বাঁচবো না।
.
আমি মেয়ের কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম।
.
এদিকে এই অসময়ে কথা শাওয়ার নিয়ে বের হলেই বললাম’এ অসময়ে শাওয়ার নিলে?
-আর বলো না খুব গরম লাগতেছিল। তাই শাওয়ার নিয়ে আসলাম।
মানে কী?এ শীতের দিনেও তোমার গরম লাগে।
কথা কিছু বলল না। অপরাধীর মতো মাথাটা নিচু করে ফেলল। বুঝতে আর বাকি রইল না এ কথা আর আমার আগের কথা নয়।
.
রাত্রে বেলা শুয়ে আছি কথা মাথার চুল আচঁড়াচ্ছে। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো কথার ঠিক মুখটাতে এসে পড়ছে। খুব সুন্দর লাগছে কথাকে।মনে হচ্ছে অষ্টাদশী কোন যুবতী তার চুলগুলো মেলে দিয়েছে। এতো সুন্দর মানুষ হয় কীভাবে। হঠাৎ রাইসার কথাগুলো মনে পড়ে গেল। আমি মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লাম।
– কিছুক্ষণ পর কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। কিন্তু এই স্পর্শে আজ কোন ভালোবাসা খুঁজে পাচ্ছি না। হাতটা সরিয়ে দিলাম।
কথা আবারো হাত দিলো। আমি আবারো হাতটা সরিয়ে দিলাম।
এবার কথা আমাকে টান দিয়ে তার বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল’ আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি?’ আমাকে তোমার ভালো লাগে না? বারবার হাতটা সরিয়ে দিচ্ছো। একটু বুকে নাও না? প্রথম যেদিন শক্ত করে ঝাঁপটে ধরেছিলে সেদিনের মতো।
.
আমি কথার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম’ মাথাটা কেমন যেন করছে। আমাকে একা থাকতে দাও।
.
কি বলছো এসব? আগে বলবে তো। দাও তোমার মাথাটা আমার বুকে দাও। বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
.
কথা প্লিজ ডিস্টাব করো না। সত্যি বলছি আমার ভালো লাগছে না।
.
হুম বলতে পারো না আমাকে ভালো লাগে না। আমার কি স্বাদ আল্লাত কিছুই নেই। আমি তোমার কাছে ব্যবহার করা টিস্যু হয়ে গেছি। কিন্তু রাফি ভাইয়া কি বলে জানো? আমাকে দেখে তার নাকি মনে হয় আমার বিয়েই হয়নি।
.
তাই বুঝি তাহলে যাও তাকে বলো তোমাকে বিয়ে করতে।
.
কথা কিছু না বলে ওঠে চলে গেল। আমি ওপাশ ফিরে শুয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম কেউ বিছানায় ফ্যাঁত ফ্যাঁতিরে কাঁদছে।
.
কথার কান্না শুনে মনে হচ্ছে মেয়েদের এজন্যই কালনাগিনী বলা হয়। আমার কি অপরাধ ছিলো? যার জন্য মেয়ে রেখে অন্য ছেলের সাথে। ছিঃ এসব ভাবতেও কষ্ট লাগে। বুকের ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যে কথা আমি রাগ করবো ভেবে ক্যাম্পাসে অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলতো না আজ সেই কথা মেয়ে রেখে অবাধ-মেলামেশা করে। আর এখন আমার কাছে সতি-সাধ্বী সাজছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমি কথার বুকে। আমার মাথাটা কথা তার বুকে রেখেছে। আমি কথাকে সরাতে চেয়েও পারছি না।
– কথা হাতটা সরাতে চেয়ে বুঝতে পারলাম কথা জেগে আছে। আস্তে আস্তে কথার নিঃশ্বাম ভারী হয়ে আসছে। আমি যেন অজানা কোন মুহে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। শত চেষ্টা করেও নিজেকে ছাড়াতে পারছি না। কথা তার ঠোঁঠ জোড়া আমার ঠোঁঠে যখনি মিলিয়ে দিবে ঠিক সেই সময় রাইসার কথাগুলো মনে পড়ে গেল। কথাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। কথা এমনিটা আমার কাছে হয়তো আশা করেনি। কথা বিছানা থেকে উঠে, বেলকণীতে গিয়ে দাঁড়ালো। কথার চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। রাতে কাজল দিয়েছিল। সে কাজল যেন চোখের পানিতে জীবন্ত হয়ে উঠছে। কথার কান্না আমার চোখ এড়ালো না। বিয়ের পর কথাকে এ নিয়ে চারবার কাঁদতে দেখলাম। প্রথম দেখেছিলাম বাসর রাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। তারপর দেখে ছিলাম, রাইসা যেদিন কথার পেটে আসে। তারপর রাইসা যখনআমাদের ঘর আলোকিত করে এ পৃথিবীতে আসলো। আর আজকে। সেদিনের চোখের পানির সাথে আজকের চোখের পানি টা কোন ভাবেই মিলছে না। আজকের চোখের পানিটা মনে হচ্ছে ছলনাম ধুম্রজাল!
– কথা চোখের পানি মুছে কিচেনে চলে গেল। ব্রেকফাস্ট রেডি করে যখন টেবিলে সাজিয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনি কথার শাড়িটা সরে গিয়ে নাভিটা একটু বের হয়ে আসে। আমি হাত বাড়িয়ে ঠিক করে দিতে গিয়েও হাতটা ফিরিয়ে আনলাম। কেননা কথাকে স্পর্শ করতেও আমার ঘৃণা লাগে তবুও দিনশেষে মানুষটাকেই আমি ভালোবাসি বড্ডবেশি ভালোবাসি।
– সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। কথাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারা আমার জন্য সম্ভব না। এছাড়া রাইসারো তো একটা ফিউচার আছে। মনে মনে স্থির করে নিলাম। কথাকে ভালোবাসা দিয়ে শুদ্ধ করে নিবো। তাই অফিস থেকে বের হয়ে কথার পছন্দের এক পাতা কালো রঙের টিপ সাথে, বকুলের মালা, কাঁচের চুড়ি কিনে রওয়ানা দিলাম বাসায়। বাসায় যেতে যেতে যেতে ভাবলাম কালো টিপ নীল চুড়ি সাথে খোঁপাতে কথাকে আজ অষ্টাদশী তরুণী লাগবে। ভাবতে ভাবতে একদম বাসার সামনে এসে পড়ি। বাসায় এসে দরজা ধাক্কা দিতেই আমার হাতের ফুলগুলো পড়ে যায়। রাফি আর কথা ””’
.
– সকালে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে গিয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। কথাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারা আমার জন্য সম্ভব না। এছাড়া রাইসারো তো একটা ফিউচার আছে। মনে মনে স্থির করে নিলাম। কথাকে ভালোবাসা দিয়ে শুদ্ধ করে নিবো। তাই অফিস থেকে বের হয়ে কথার পছন্দের এক পাতা কালো রঙের টিপ সাথে, বকুলের মালা, কাঁচের চুড়ি কিনে রওয়ানা দিলাম বাসায়। বাসায় যেতে যেতে যেতে ভাবলাম কালো টিপ নীল চুড়ি সাথে খোঁপাতে কথাকে আজ অষ্টাদশী তরুণী লাগবে। ভাবতে ভাবতে একদম বাসার সামনে এসে পড়ি। বাসায় এসে দরজা ধাক্কা দিতেই আমার হাতের ফুলগুলো পড়ে যায়। রাফি আর কথা পাশাপাশি বসে রোমান্টিক ছবি দেখছে। রাফি কথার হাতটা ধরে আছে। আর কথা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কথা আমাকে দেখে রাফির হাতটা ছেড়ে দিল।
– আমি কিছু বলে ওঠার আগেই রাফি সাহেব বলল’ রাজ ভাই কেমন আছেন?’
– সামনে সপ্তাহে আমাদের রাকিবের বার্থডে। আপনি আর ভাবী যাবেন। আর হ্যাঁ ভাবীকে অবশ্যই নিয়ে যাবেন।
– আমি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। রাগে শরীর কাঁপছে। আমার বউয়ের সাথে লুতুপুতু।
– কথা নিচে পড়ে থাকা ফুলগুলো তুলে চুমু খেয়ে খোঁপায় জড়িয়ে নিল। এদিকে রাফি সাহেব বের হতেই। বুকটা কেমন করে ওঠলো। কথাকে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। কথাকে ভালোবাসি এক কথায় নিজের থেকেও বেশি। আর রাইসা কথাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। কথাকে ছাড়া আমার কোন বিকল্পও নেই।
.
রাতে শুয়ে শুয়ে কথার সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে করছি। মানুষ কিভাবে এতোটা পাল্টে যায়? সত্যিই পৃথিবীর সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হচ্ছে প্রিয় মানুষের অন্য রুপ দেখা।
হঠাৎ ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠল। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখি সুমাইয়া ফোন।
– ফোনটা তুলতেই সুমাইয়া বলল’ হ্যালো জান কেমন আছো?
– হ্যাঁ ভালো তুমি?
– তোমাকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বলো?জানো খুব মিস করছি তোমায়। তোমার প্রতিটা স্পর্শ আমি সবসময় ফিল করি। রাফি গাদাটা কিছুই করতে পারে না। জানো আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আর হ্যাঁ কাল দুপুরে বাসায় এসো। রাফি শহরে যাবে। রাকিবের বার্থডে গিফট কিনতে।
– আচ্ছা।
– এই শোন না একটা কিস করো?
– উম্মাহ্! কাল মন ভরে আদর করবো।
– ফোনটা কেটেই পিছনে তাকিয়ে দেখি কথা দাঁড়িয়ে আছে। কথার চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল পড়বে পড়বে ভাব।
.
নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম’ কিছু বলবে?
– তুমি তো ডিনার করোনি। অফিস থেকে আসার পর থেকেই দেখি যে তোমার মন খারাপ। খাবে না?
– রাইসা খেয়েছে?
– হুম ওকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।
– আচ্ছা তুমি শুয়ে পড়। আমি খেয়ে নিচ্ছি।
– কথা কিছু না বলে শুয়ে পড়ল। টেবিলে গিয়ে বসতেই দেখি, দু’প্লেটে খাবার দেওয়া। বুঝতে আর বাকি রইল না কথা খায়নি। আমি খাবার শেষ করে বিছানায় যেয়ে গা টা এলিয়ে দিলাম। বিছানায় শুওয়ার কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম কথা চাঁপা কান্না করছে। মন চাচ্ছে কথার চোখের জলটা মুছে দিয়ে বুকে টেনে নেয়। কিন্তু রাফি সাহেবের কথা মনে পড়তেই বুকটা ধুমগে মুচড়ে গেল।
.সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই দেখি কথা আমার বুকে। একদম মাসুম বাচ্চার মতো লাগছে। মন চাচ্ছে ভাজহীন কপালটাতে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। কিন্তু না পারলাম না। রাইসার কথাগুলো মনে হতেই কেমন যেন ঘৃণা এসে গেল। কথাকে বুক থেকে সরিয়ে ফ্রেশ হয়ে অফিস চলে গেলাম।
.
দুপুর বেলা আবারো সুমাইয়ার ফোন। সুমাইয়ার ফোন পেয়ে তাড়াহুড়া করে তার বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে দেখি সুমাইয়া রাকিবকে কুলে নিয়ে টিভি দেখছে। আমাকে দেখেই সুমাইয়া রাকিবকে টিভি দেখতে বলে ওঠে পড়ল।
– মম তুমি কোথায় যাচ্ছো? চলো না আমরা একসাথে টম এন্ড জেরী দেখি।
– আচ্ছা বাবা তুমি দেখো আমি অন্যদিন দেখব।
– সুমাইয়ার রুমে গিয়ে বসতেই সুমাইয়া দরজাটা লাগিয়ে দিতে চাইলেও আমি না করলাম। কারণ আজ তো রাফি আসার ভয় নেই। সুমাইয়া মৃদু হাসল । নীল রঙের শাড়িতে সুমাইয়াকে অপূর্ব লাগছে। মন চাচ্ছে সুমাইয়ার ওষ্ঠ ধরে ভালোবাসার স্পর্শ এঁকে দেয়। সুমাইয়া আমার কাছে এসে বসল। যতটা কাছে আসলে নিঃশ্বাসের শব্দটাও শোনা যায়। তার পর সুমাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে গেলাম অন্য জগতে। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর নিস্তেজ দেহটা নিয়ে সুমাইয়ার উপর শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ বিছানায় থাকা মোবাইলটা ক্রিং ক্রিং করে বাজতে লাগল। মোবাইল ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ একজন মায়াভরা কন্ঠে বলল’খেয়েছো তুমি?’
-হুম খেয়েছি তুমি খেয়ে নিয়ো। আমি সুমাইয়ার উপর থেকে উঠে রেডি হচ্ছি। সুমাইয়াও কাপড় পড়ছে এমন সময় রাকিব মা মা করে দৌড়ে এসে দরজা খুলে ফেলে। এদিকে সুমাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। সুমাইয়া রাকিব এভাবে ঢুকতে দেখে গালে চড় বসিয়ে দেয়। তোমাকে না বলছি, টিভি দেখতে? এখানে আসছো কেন?
– ছোট্ট রাকিব কান্নামাখা ভয়াত দৃষ্টিতে বলল ‘ মম তুমি তো দুপুরে খাওনি? আসো তোমাকে খাইয়ে দেয়।
– ছোট্ট ছেলেটার কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। রাইসার কথা বারবার মনে পড়ছে। ঠিক এমনটাই হয়তো রাইসার সাথেই হয়েছিল। সত্যিই প্রকৃতির বিচার বরং নিষ্ঠুর।
আমি সুমাইয়া কিছু না বলে, রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। বাসায় এসে দেখি কথা কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে।
– আমি কথার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
– জানো রাফি তোমাকে অনেক মিস করছি। আমার স্বামীটা আমার দিকে একবার ভালো করে তাকায় না পর্যন্ত। বলো এ চেহারা দিয়ে কি করবো? তুমি আমাকে সুখী করেছে। আচ্ছা আবার কবে দেখা হবে?
– আমি কথার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে আচাড় মারলাম। কথা জড়োসরে হয়ে গেল আমার ব্যাবহারে। কিন্তু কিছু বলল না। ভাবছিলাম কথাকে একটা থাপ্পর দেয়। কিন্তু না ওকে থাপ্পর দিলে যে আমারি কষ্ট হবে। সবকিছুর বড় সমাধান হবে, কথাকে নিয়ে এ শহর ছেড়ে যাওয়া। যেখানে থাকবে না রাফি নামে কেউ।
.
পরের দিন সকালেই কথাকে বললাম আমরা এখান থেকে চলে যাবো। ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও। কথা মনে হয় আগের থেকেই যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। ঢাকা ছেড়ে আসার সময় সুমাইয়াকে একটা ম্যাসেজ দিলাম’ প্রিয় সুমাইয়া পৃথিবীতে কোন স্বামী যেমন তার স্ত্রীর ভাগ কাউকে দিতে চায় না। তেমনি কোন স্ত্রী ও চায় না। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আমাদের এ দৈহিক আনন্দ আমাদের বাচ্চাদের উপর প্রভাব ফেলে। আমি তোমার জীবনে কে ছিলাম এটা ভুলে গিয়ে তোমার স্বামী সন্তানকে নিয়ে ভালো থেকো। আর হ্যাঁ, তোমার সন্তানটা সত্যিই ঝিনুকে থাকা মুক্তোর মতো। তাকে খারাপ বানিয়ো না। ম্যাসেজটা পাঠিয়ে সিমটা ফেলে দিলাম।
– শহর ছেড়ে এসেছি অনেকদিন হলো। কথাও সেই আগের মতোই হয়ে গেছে আমিই যেন তার পৃথিবী। পাঁচ ওয়াক্ত নামায আর পর্দাতে থাকে। সাথে আমিও নিজের কর্মের জন্য প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। সত্যিই শহর ছেড়ে আমি আমার ভালোবাসাকে খুঁজে পেয়েছি। কথার প্রতিটা নিঃশ্বাসে আমি তাকে প্রায়। হঠাৎ একদিন কথা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তার কয়েকটা টেস্ট দেয় করাতে।টেস্টগুলো করানোর পর শুনি কথার ব্রেন টিউমার পৃথিবীতে মাত্র কয়েকদিনের অতিথি। আমি কথাটা শুনে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।অফিস থেকে একমাসের ছুটি নিলাম। কথার সাথেই সবসময় থাকি। একদিন কথা হঠাৎ অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ল। আমাকে তার কাছে নিয়ে বসালো। রাজ তোমার সাথে আমি থাকতে পারলাম না। আর রাইসা মা আমার আলমারিতে রাখা নীল ডাইরিটা নিয়ে আন তো মা।
– রাইসা আলমারি থেকে একটা ডাইরি নিয়ে এসে কথার হাতে দিল।
– রাজ ডাইরিটা আমি চলে যাওয়ার পর খুলবে। অনেক অজানা কথা হয়তো জানতে পারবে। আমাকে একটু বুকে নিবে? জানো আজ আমি খুব সুখী হয়তো তোমার বুকে আমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো। নাও না একটু বুকে? কথাকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। কথার চোখের পানিতে শার্ট ভেজে যাচ্ছে। কথা তোতা পাখির মতো বলছে’ জানো রাজ আজ, আমি সত্যি অনেক ভাগ্যবতী। আমি হয়তো তোমার বুকে মাথা রেখে মরতে পারবো?এই তুমি কাঁদছো কেন? এমন ভাগ্য কয়জনার হয়?রাজ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
তোমার কিছুই হবে না। কোথাও যাবে না তুমি। কি হলো কথা বলো? কথা বলছো না কেন? এই চুপ করে থাকবে? কি হলো কথা বলো। এমন সময় ডাক্তার এসে কথার পালর্স চেক করে বলল’ সে আর ফিরবে না। ‘
– ডাক্তারের কথাটা যেন কলিজাতে এসে বিঁধল। রাইসা বিছানায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে লাগল।
.
কথাকে দাফন করার কিছুদিন পর, কথার দেওয়া নীল ডাইরিটা বের করে পড়তে লাগলাম। ডাইরির প্রথম পাতায় সুন্দর করে লেখা’ কোন এক নিশীতে আমি চায় না যে তোমায়! আমি তোমাকে চায় প্রতিটা নিঃশ্বাসে।
ডাইরির পরের পাতা উল্টাতেই দেখলাম নীল কালিতে লেখা’ আচ্ছা আমি কি দেখতে খারাপ হয়ে যাচ্ছি? রাজ ঠিকমতো আমায় ভালোবাসে না। পাগলামী করে না। খুব কষ্ট হয়।
পরের পাতা উল্টাতেই দেখলাম ‘ আজ রাফি ভাইয়া এসেছিল। পুরুষ মানুষ কাঁদতে পারে তা আমার জানা ছিল না। রাফি ভাইয়ার একটা ছেলেও আছে নাকি। রাফি ভাইয়া আমার হাত দুটি ধরে বলল’ আমার কোন বোন নেই। আজ থেকে তুমি আমার বোন। তুমিই পারো দু’টি সংসার ভাঙা থেকে রক্ষা করতে! জানো রাজ ভাইয়ার সাথে সুমাইয়ার অবৈধ সম্পর্ক চলছে। আমি একদিন দেখেও ফেলেছি। কিন্তু রাজ ভাইয়া এবং সুমাইয়া কাউকে কিছু বলতে পারিনি। সুমাইয়াকে তালাক দিলেও আমার ছেলেটার কি হবে? কারণ আমারো মা পাঁচ বছরের সময় আরেক লোকের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল। সমাজে সবার লাথিগোড়া খেয়ে আজ এখানে। আমি চাই না আমার ছেলেটার অবস্থা আমার মতো হোক। বোন তুমিই পারো তোমার স্বামীকে সঠিক পথে আনতে।
কি করতে হবে?
রাফি সাহেব তখন অবৈধ সম্পর্কের অভিনয় করতে। আর রাইসা ছোট্ট হলেও এ অভিনয়ে তার দায়িত্বটা নিপুনভাবে পালন করে। সত্যি বলতে আমার জীবনে কেউ ছির না রাজ। আমি জানি তুমি আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসো। কিন্তু তুমি অন্য নারীর মোহে পড়ে গিয়েছিলে। তাই মিথ্যার অভিনয় করে তোমাকে নিয়ে শহর ছেড়ে আসার প্ল্যান করেছিলাম। জানো প্রতি ওয়াক্ত নামায পড়ে তোমার হেদায়েত চাইতাম। আল্লাহ যেন আমার কলিজাকে আমার করে দেয়। জান্নাতে যেন একসাথে থাকতে পারি। জানো কখনো কখনো মাঝরাতেও নামাযে দাঁড়িয়ে যেতাম। আল্লাহকে খুশি করার জন্য,। আল্লাহ আমার ডাক শুনেছে। রাফি সাহেব পেয়েছে তার স্ত্রী সন্তানকে আমি পেয়েছি আমার অলংকারকে। বড্ড ভালোবাসি তোমায়। তোমার কথা ফুলের মতো নিঃষ্পাপ আছে। তোমার কথা যে তোমাকে নিয়ে জান্নাতে থাকতে চাই। ক্ষমা করে দিয়ো। সত্যটা গোপন করার জন্য।
ইতি,
তোমার কলিজার টুকরা।
ডাইরিটা পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি চোখের পানিতে ডাইরির পাতাগগুলো ভিজে যায়। পাশে দাঁড়িয়েই রাইসা কাঁদছে।
কি হলো মা কাঁদছিস কেন?
বাবা সরি সেদিন তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য। আমি রাইসার ডানহাতটাতে চুমু দিয়ে বললাম মারে, সরি কেন বলছিস।
রাইসা কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিল। আমি নীল ডাইরিটাতে একটা চুমু দিয়ে মনে মনে বললাম’ বাকিটা জীবন তোমার স্মৃতি আর আল্লাহর ইবাদত করেই কাঁটিয়ে দিবো। হৃদয়ে থাকবে নীল ডাইরির ভালোবাসার গল্পটা।
#নিল_ডায়েরির_ভালোবাসা #রাইসার_আব্বু #গল্পের_ডায়েরি #Nil_Diarir_Bhalobasa #Raisar_Abbu #Golper_Diary #GolperDiaryOfficial

Tags: , ,

Comments are closed here.