ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল হুট করেই। নির্জন পোস্ট গ্রাজুয়েশন করবে কিনা ভাবছিল। অনেকেই উপদেশ দিয়েছিল, আগে একটা চাকরি ম্যানেজ করতে। তখনই ডিপার্ট্মেন্টের বড়ভাই তুহিন দেখা করে বলেছিলেন, “তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে। পারবি না?”তুহিন ভাই তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে অক্সফার্মের একটা প্রোজেক্টে এরিয়া ম্যানাজার হিসেবে জয়েন করেছেন। বিয়ে করেছেন বাবার পছন্দ করা এক মেয়েকে।

বলেছিল, “আমার ক্লোজ সব বন্ধুবান্ধব, জুনিয়র সিনিয়র সবাইকে জিনাত চেনে। তোকেই তাই কাজটা করতে হবে!”

নির্জক খানিকটা কৌতূহলী, খানিকটা বিব্রত হয়ে বলেছিল, “কাজটা কী, সেটা আগে বলবেন তো! আপনি তো আমার সাসপেন্স বাড়িয়ে দিচ্ছেন!”

তুহিনভাই সময় নিয়েছিলেন উত্তর দিতে। এটা ওটা অনাবশ্যক টপিকে কথা বলে, দু’তিনটা বেনসনের শলাকা পড়িয়ে বলেছিলেন, “তোর ভাবি, মানে জিনাত আরকি, কয়েকদিন ধরে স্ট্রেঞ্জ বিহ্যাভ করছে। বুঝলি তো? স্ট্রেঞ্জ। আমাকে না বলে বাইরে যাচ্ছে, আমি অফিস থেকে ফেরার আগেই বাসা চলে আসছে যাতে আমি সন্দেহ না করি। আর…মানে… প্রায় দিনই ও ক্লান্ত…বেশিরভাগ দিন আরকি… তোমাকে হয়তো বোঝাতে পারছি না…টায়ার্ড আরকি, বুঝিস তো… মানে আমার সাথে ফিজিক্যালি ইন্টিমেট হতে চাইছে না!”

নির্জন স্তব্ধ বিস্মিত হয়ে তাকিয়েছিল তুহিন ভাইয়ের দিকে। উত্তরে কী বলবে, ভেবে না পেয়ে, ছিল নিরুত্তর।

কথাগুলো বলতে বলতে ঘেমে গিয়েছিলেন তুহিন ভাই, জুলফি বেয়ে ফাগুনের সেই ঈষদুষ্ণ আবহাওয়াতেও ঘাম ঝড়ছিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে ছোঁয়াচ্ছিলেন বারবার।

বলেছিলেন, “আমার কেন জানি না, ওকে সন্দেহ হচ্ছে। মানে, বুঝিস তো… হয়তো অন্য কারো সাথে মিট করছে, বলা তো যায় না। হয়তো এফেয়ারে জড়িয়েছে… তোকে বলা ঠিক হচ্ছে কিনা জানি না, কিন্তু না বলে শান্তিও পাচ্ছি না। আই গট টু বি সার্টেইন; ও আসলেই চিট করছে নাকি আমার মনের ভুল, আমাকে জানতে হবে!”

“আমি কী করব?”, বলেছিল নির্জন। তার প্রশ্ন শুনিয়েছিল বিস্ময়সূচক!

“তোকে ওর উপর নজর রাখতে হবে দুইতিন দিন। এই ধর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ও কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিট করছে, কী কথা বলেছে, আমাকে জানাবি। যদি পারিস আরকি, পারতেই হবে, ভাই। প্লিজ না করিস না। আমি একদম শান্তি পাচ্ছি না!”
নির্জন বলেছিল, “আমাকেই করতে হবে কাজটা? আর কেউ নেই যাকে ভাবি চেনে না?”
তুহিন ভাই বলেছিলেন, “চেনে না অনেককেই। সমস্যা হলো, ওরা সবাই হ্যান্ডসাম!”
বিস্মিত নির্জন প্রশ্ন করেছিল, “তাতে কী! জেমস বন্ড, মাসুদ রানা- এরা তো সব দারুণ হ্যান্ডসাম!”

তিনি ইতস্তত করে বলেছিলেন, “এটা বন্ড লেভেলের কাজ না রে, ভাই! আর হ্যান্ডসাম ছেলে ফলো করলে জিনাত ঠিক খেয়াল করবে। মেয়েদের চোখ, বুঝিস তো। আর তুই হলি মানে, বুঝিস তো, একটু কম ন্যারব্যারে টাইপের। মানে তোর চেহারাটা মনে রাখার মতো না- খুব অর্ডিনারি। তোর দিকে জিনাত ফিরেও তাকাবে না!”

অপমানিত বোধ করবে নাকি হাসবে, এই দোলাচলে পড়ে কিছু বলতে পারেনি নির্জন। ন্যারব্যারে বিশেষণটা কোথাও শুনেছে বলেও মনে করতে পারেনি ও।
“করতেই হবে, ভাই! তুই আমার শেষ ভরসা। আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা কর। নতুন বৌ যদি সাস্পিসাস কাজকাম করে, কোন স্বামীর গলা দিয়ে ভাত নামবে বল?”

তুহিন ভাইয়ের কথাটা রেখেছিল নির্জন। দুতিন দিন নয়, জিনাত ভাবির গতিবিধি পর্যালোচনা করেছিল ও টানা এক সপ্তাহ; বের করে এনেছিল হাড়ির খবর।
তুহিন ভাইয়ের সেই প্রস্তাব পাল্টে দিয়েছিল নির্জনের জীবন। প্রাইভেট ইনভেস্টগেটর, গোয়েন্দা, সত্যান্বেষী, স্পাই শব্দগুলো সে শুধু বইয়েই পড়েছিল, সিনেমায় দেখেছিল তাদের কার্যক্রম। তুহিন ভাইয়ের কথায় জিনাত ভাবিকে ফলো করার পর থেকে ব্যাপারটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে দেয় সে। ফেলুদা, ব্যোমকেশ, মাসুদ রানা পড়ার সময় সে ভাবত এসব শুধু কল্পনাতেই সম্ভব, বাস্তবে ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সি ছাড়া আর কেউ ইনভেস্টিগেশন করে না। কিন্তু গুগোলে সামান্য ঘাটতেই সে পেয়ে যায় ঢাকার’ই কিছু প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির ওয়েবসাইট আর অফিসের ঠিকানা। পেশা হিসেবে প্রাইভেট ইনভেস্টিগন যে মন্দ নয়, বুঝে যায় তাদের সার্ভিস চার্জ দেখে।

এখন নির্জন নিজেই ‘খেচর’ নামের একটা এজেন্সির মালিক। খেচরের ওয়েবসাইট আর সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টে যদিও অফিসের ঠিকানা দেয়া আছে কাওরানবাজার, ঢাকা; আদতে তাদের কোন অফিস নেই সরকারী লাইসেন্স না থাকায়। লাইসেন্স পেলেও গোপনীয়তার স্বার্থে কোনদিন অফিস খুলবে বলে মনে হয় না।

খেচরে তার নির্দেশনায় কাজ করে তিনজন। ঝন্টু, রুপা আর সুপ্রভা। শুরু থেকেই ঝন্টু খেচরের সাথে জড়িত। আইডিয়াটা মাথায় আসার পর শুধু ঝন্টুকেই জানিয়েছিল নির্জন। নির্জনের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে ঝন্টু আর বিলম্ব করেনি, সেদিনই অল্প টাকায় একটা ডোমেইন কিনে তৈরি করে ফেলেছিল ওয়েবসাইট।

ওয়েবসাইট খুলেই ঝন্টু বলেছিল, “সাইট তো খুললাম, বাড়া! কেউ কি সাইটে ঢুকবে? আমাদের কাজ দেবে?”

নির্জনের তখন অঢেল উৎসাহ, আপাদমস্তক মোটিভেশন। নিজেকেই ভরসা দিতে বোধহয়, বলেছিল, “কলিকাতা হারবালের বিজ্ঞাপন দেখেছিস না? যৌন রোগের অব্যর্থ ওষুধ, এক ফাইলই যথেষ্ট, ফিরিয়ে আনবে দাম্পত্য জীবনে সুখ? কোনদিন ওদের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেছিস?”

“না।”

“করার কথাও না! কিন্তু তুই ভাবিস না, কেউ করে না। যাদের দরকার তারা ঠিকই যোগাযোগ করে। কাজ হোক না হোক, টাকা দিয়ে ওষুধ কেনে! আমরাও ধর কলিকাতা হারবাল। সবার প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটরের দরকার নাই। যাদের দরকার তারা ঠিকই খুঁজে নেবে!”

তবে ঝন্টুর সন্দেহ সত্যে পরিণত হয়েছিল। প্রথম তিন মাসে তাদের সাইটের ভিজিটর ছিল মাত্র ২১ জন, সাইটে দেয়া মেইল এড্রেসে কেউ যোগাযোগ করেনি। এই সময়টা তারা কাজে লাগিয়েছিল কর্মী রিক্রুট করে। তাদের প্রয়োজন ছিল অন্তত একজন নারী কর্মী। ঝন্টু অবশ্য তার সেসময়ের প্রেমিকাকে দলে ভেড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, নির্জন রাজী হয়নি।

কর্মী সংগ্রহ করাটাই ছিল তাদের মূল চ্যালেঞ্জ। প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির কথা সবাইকে বলা চলে না- কেউ হেসে উড়িয়ে দেবে, কেউ দেখবে বাঁকা চোখে। তাদের তাই এপ্রোচের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হয়েছিল। তাদের প্রয়োজন এডভেঞ্চারাস মেয়ে- সারাদিন আয়নার সামনে কাঁটিয়ে দেয়া নার্সিসাস কিংবা রেস্টুরেন্টে সপ্তাহে তিনবার চেকইন দেয়া কাউকে তারা চায়নি। অনেক খুঁজে রুপা আর সুপ্রভাকে পেয়েছিল ওরা। রাজীও হয়ে গিয়েছিল তারা এমন আনইউজুয়াল জব অফারে।

এই তিন বছরে খেচর পঞ্চাশটিরও বেশি কেস হাতে নিয়েছে। আগাথা ক্রিস্টির পাড় ভক্ত নির্জন ভেবেছিল, তাদের কাছে মাথা খাটানোর মতো, চাঞ্চল্যকর, অন্তত বিচিত্র সব কেস আসবে। কিন্তু এ পর্যন্ত তেমন কোন কেস আসেনি হাতে। বেশিরভাগ কাজই বিয়ে সংক্রান্ত। সন্দেহবাতিক কিংবা বিচ্ছেদকামী স্পাউজ অথবা প্রেমিক; পাত্র/পাত্রীর সন্ধানে থাকা বাবা; জমির খোঁজে থাকা বিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী; কনট্রাকটর আর বিল্ডার- এরাই মূলত খেচরের নিয়মিত ক্লায়েন্ট। চুরুট কিংবা চারমিনার জ্বালিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা পায়চারী করে, রাত-বিরাতে ক্লু খুঁজে, হু-ডান-ইট পদ্ধতিতে সাস্পেক্টকে চিহ্নিত করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার মতো কেস একটাও হাতে আসেনি।

সর্বশেষ যে কাজটি তাদের হাতে এসেছে, যার জন্য তাকে যেতে হতে পারে ঢাকার বাইরে- সেটাও স্পাউজাল। সন্দেহগ্রস্ত এক স্বামী তার স্ত্রী পরকীয়া করছে কিনা জানতে চান।

সাইফা চলে যাওয়ার পরই নির্জন বাইক চালিয়ে চলে গিয়েছিল সুপ্রভার অফিস। সুপ্রভা একটা ল কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়ে ফার্মগেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ হোস্টেলের পাশে একটা রুম ভাড়া নিয়ে অফিস বানিয়েছে। নাম দিয়েছে “আইন সহায়তা কেন্দ্র”। ও প্র্যাকটিস করে মূলত ঢাকার নিম্ন আদালতে। পসার নেই বললেই চলে। যেসব ক্লায়েন্ট দেখা না করে শুধুমাত্র মুখের কথায় বিশ্বাস করে সার্ভিস চার্জ দিতে চান না, তাদের এই অফিসের ঠিকানা দেয়া হয়। সুপ্রভা তাদের সাথে সাক্ষাতে কথা বলে, বুঝিয়ে দেয় সবকিছু। খেচরের পেমেন্ট সে নেয় আইনি সহায়তার আবডালে। কাস্টমারকে দেয়া রিসিপ্টেও লেখা থাকে তাই।

আজও সুপ্রভা অফিসে একা; রেভলভিং চেয়ারে বসে সমকাল পড়ছে হেলান দিয়ে। অফিসের পাশেই একটা টিভি-ফ্রিজের শোরুম, এসির সোসো শব্দ আসছে টানা।

নির্জনকে দেখেই সুপ্রভা পেপার নামিয়ে ফেলল। বলল, “আপনার সেই দশটায় আসার কথা! এত দেড়ি করলেন যে! আপনার জন্যেই এতক্ষণ বসে আছি একা!”

নির্জন টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারে বসল আরাম করে। বলল, “একটা কাজে আটকে গেছিলাম!”

সুপ্রভা হাসল। বলল, “কালকের ক্লায়েন্ট, জুলফিকার আমান, এসেছিল। অদ্ভুত লোক! আপনার খেচরের সাথে যুক্ত হয়ে কতকিছু যে দেখতে হচ্ছে!”
“আমার খেচর?”, বলল নির্জন। “খেচর তোমাদের নয়? আমার একার কথা বলছো কেন?”

“ঐ হলো! আপনিই তো ফাউন্ডার, তাই না? এই এজেন্সি বিশাল কিছু হয়ে গেলে আপনার নামটাই থাকবে, আমরা সব হারিয়ে যাব!”

নির্জন লক্ষ্য করল, সুপ্রভার চোখের চারিদিকে কালো দাগ। খুব রাত জাগা হচ্ছে। নির্জন নিজেও নিশাচর, কিছু কোন অদ্ভুত কারণে চোখে ওর ডার্ক সার্কেল পড়ে না। কী কাজে ব্যস্ত থাকছে সুপ্রভা?

নির্জন পকেট থেকে গোল্ডলিফের দশ শলাকার মিনি প্যাকেট বের করে একটা শলাকা সুপ্রভার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “তোমার চলবে? তুমি তো আবার বেনসন খাও!”

সুপ্রভা সিগারেটটা নিয়ে বলল, “কেউ অফার করলেও বিড়িও খাই, সমস্যা নেই!”

নির্জন জ্বালিয়ে দিল সুপ্রভার সিগারেট, ম্যাচের আগুনে রৌদ্রোজ্জ্বল পুকুরে লাফিয়ে ওঠা মাছের আঁশের মতো দপ করে উঠল ওর মুখ। জ্বালল নিজের শলাকাটাও। বলল, “ক্লায়েন্টের কথা বলো। অদ্ভুত বললে কেন?”

ধোঁয়া ছাড়ল সুপ্রভা, বলল, “লোকটা, জুলফিকার আমান, বেশ ইয়াং! আমাদের চেয়ে খুব বেশি হলে পনেরো বছরে বড় হবেন। সিরামিকের প্রোডাক্টের বিসনেস করেন, পান্থপথে দোকান আছে বলল। ব্যাপারটা ওর বৌকে নিয়ে!”

নির্জন মনোযোগ দিয়ে সুপ্রভার কথা শুনছিল, বলল না কিছু।

“ওর বৌ একটা প্রাইভেট ইউনির টিচার। কী নাম যে বলল ইউনিভার্সিটিটার। ধুর ছাই, এত ব্যাঙের ছাতার মতো প্রাইভেট ইউনি উঠেছে গলিতে গলিতে, নামই মনে থাকে না!”

নির্জন বলল, “নাম পরে জেনে নেয়া যাবে। তুমি ঘটনা বলো!”

“ওর স্ত্রীর নামটা মনে আছে- তাহমিনা হায়াত। এনভাইরন্মেন্টাল সায়েন্সের টিচার। ও লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে পাখিদের হ্যাবিট্যাট নিয়ে একটা গবেষণার কাজে যাবে। একটা পুরো টিম যাবে ওনার সাথে। এটা নিয়ে ওর স্বামীর সন্দেহ!”

“সন্দেহটা কোথায়?”

সুপ্রভা হেসে বলল, “যেখানে হয়। যা মনে হলো, এই লোক খুব বেশি শিক্ষিত না। একধরণের হীনমন্যতায় ভোগেন। ওর বিশ্বাস হয় না, স্ত্রী আসলেই গবেষণার কাজে লাউয়াছড়ায় যাবে। ওর ধারণা, তাহমিনার এক কলিগের সাথে এফেয়ার চলছে, গবেষণার নাম করে একধরণের হানিমুনে যাচ্ছে ওরা!”

“টিপিকাল স্টোরি!”, বলল নির্জন। “অদ্ভুত বললে কেন?”

সুপ্রভা সময় নিয়ে সিগারেটে টান দিল, বিচ্যুত একটি চুলের গোছা মুখের সামনে এসেছিল, ধোঁয়া ছেড়ে সরিয়ে দিল একপাশে। বলল, “লোকটাকে কেন জানি না ভীত মনে হলো আমার। বৌয়ের পিছনে স্পাই লাগাচ্ছে, এজন্য হয়তো। কিন্তু এত বেশি ভয় পেতে এর আগে কোনদিন কাউকে দেখিনি!”
নির্জন বলল না কিছু।

সুপ্রভা’ই চালিয়ে গেল কথা, “আপনার এই সুযোগে অবশ্য শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসা হচ্ছে! ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন না অনেকদিন। হাওয়া বদল হয়ে যাবে- মাথা পরিষ্কার!”

নির্জন উদাস হয়ে বলল, “মাথা পরিষ্কার হয়ে লাভ কী বলো, খাটানোর তো জায়গাই পাচ্ছি না। সে শুরু থেকেই এই পরকীয়া, রিয়েল স্টেট, প্রিম্যারিটাল চেকিং বাল ছাল। বাঙ্গালীরা শালা এখনো এসব থেকে বেরুতে পারল না! আরে ভাই, একটু ইউনিক টাইপের ক্রাইম কর না!”

আবারও হাসল সুপ্রভা। বলল, “ক্রাইম বদলাচ্ছে প্রতিনিয়ত, বস। আমরা শুধু সেসব পাচ্ছি না, ভাগ্য আমাদেরই খারাপ!”

প্রোজেক্টটা নিয়ে কথা বললো ওরা আরো কিছুক্ষণ। ভদ্রলোক ১৫ দিনের সাভেইলেন্স অফারটা গ্রহণ করেছেন। সিটির বাইরের এক্সট্রা খরচ বহন করতেও প্রস্তুত, অর্ধেক টাকা পে করেছেন এর মধ্যেই।

সুপ্রভা বলল, “রুপাকে এবারে সাথে নিয়ে যান। আমি এখন ঢাকার বাইরে যেতে পারব না কোথাও!”

নির্জনও তাই ভাবছে। বলল, “তুমি লোকটার সাথে ফোনে যোগাযোগ করো। ওর স্ত্রী কবে যাবে, আমাকে জানিয়ে দেবে। আমরা পারলে ওর সাথেই যাব, যদি বাসে বা ট্রেনে যায় আরকি। ঝন্টুকে বলে ওর ইউনিতেও একটু খোঁজ নিতে বোলো। কী নিয়ে গবেষণা করতে যাচ্ছেন, কারা কারা যাচ্ছে, এসব একটু চেষ্টা করলেই ও জানতে পারবে। আর তাহমিনার ফেসবুক আইডির লিংকটা টু পাঠিয়ে দিও। একটু দেখতে হবে!”

আরো কিছু নির্দেশনা দিয়ে বেরিয়ে আসছিল নির্জন। পেছন থেকে ডাকল সুপ্রভা।
“আমাকে একটু টিএসসি ড্রপ করে দিতে পারবেন? বাইক এনেছেন তো সাথে?”
বাইকের দুদিকে দু’পা দিয়ে বসল সুপ্রভা। নির্জন বলল, “কারো সাথে দেখা করতে যাচ্ছ নাকি?”
“হ্যাঁ। ডেপ্টের জুনিয়র। ছেলেটা ফেসবুকে খুব জ্বালাচ্ছিল। একটু টাইট দিয়ে আসি!”

“টাইট দেবে নাকি অন্য কিছু! শেষে জুনিয়রের সাথে…”, গিয়ার শিফট করে বলল নির্জন। প্রচন্ড জ্যাম, ক্লাস ধরে থাকতে হচ্ছে সবসময়।
“এসব তো জুনিয়রের সাথে করেই মজা! নিজের মতো করে চালিয়ে নেয়া যায়!”

নির্জনের কোমড় জড়িয়ে ধরেছে সুপ্রভা। অনেকটা হেলান দিতে হয়েছে ওকে, স্তন প্রায় লেগে আছে নির্জনের পিঠে। জিএসএক্স আরের ১৫০ এর প্রিলিয়ন সিট প্রায় নেই বললেই চলে, রাইডারের সিট থেকে অনেকটা উঁচু- যখন কিনেছিল নির্জন বিক্রয় ডট কম থেকে সেকেন্ডহ্যান্ড মাত্র ২ লাখ টাকায়, প্রিলিয়ন সিটের কথা ভাবেনি একবারও। কে জানত, গুরু নিতম্বের অধিকারিণী সুপ্রভা কোনদিন লিফট চাইবে টিএসসি পর্যন্ত!”
“বিয়ের কথা চিন্তা করছো?”, জিজ্ঞেস করল নির্জন।

হাসির শব্দ পেল নির্জন। সুপ্রভা বলল, “যা সব দেখছি, বিয়ে নিয়ে একপ্রকার বিভীষিকা এসে গেছে। মেন্টালি প্রিপেয়ার্ড না আমি!”
ঘোঁত ঘোঁত করে ধোঁয়া ছাড়তে থাকা প্রাডোটাকে পিছনে ফেলে নির্জন বলল, “ফিজিক্যাল দিকটাও তো দেখতে হবে! নাকি এই শীতটাও একা বিছানায় কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে!”
“আপনি না!”, বিব্রত সুপ্রভা বলল। তবে ওর কণ্ঠে প্রশ্রয়ের আভাস। বলল, “ফিজিক্যাল নিডের জন্য বিয়ে করতে হবে কেন? আপনি বিয়ে করেছেন? আপনার ফিজিক্যাল নিড তো ঠিকই পূরণ হচ্ছে!”

গ্রিন সিগন্যাল। ট্রাফিক পুলিশের হাতের। নির্জন এক্সিলারেট করল। সুজুকি জিএসএক্স আর এক্সসিলারেশনের বাপ- একটানা চলে গেল সবগাড়ির সামনে। ফাঁকা রাস্তায় বলল, “ফিজিক্যাল নিড হলো প্রচ্ছাব করার মতো! কিছুক্ষণ পরপর যেমন জলত্যাগ করতে হয়, এই কামের বোলতাও তেমন কিছুক্ষণ পরপর হূল ফোঁটায়! এজন্যেই বিয়ে করতে হয়, প্রেম ট্রেম দিয়ে পোষায় না!”

খিলখিল করে হেসে উঠল সুপ্রভা। দুলে উঠল ওর দেহ। নির্জন অনুভব করল পিঠে ওর আনুমানিক(!) ৩৬ সাইজের স্তনের কম্পন।

“সেক্সের সাথে প্রচ্ছাবের সম্পর্ক! হা হা! ভালো বলেছেন কিন্তু! আসলেই তাই! ব্যাপারটা হলো, এদেশের মেয়েদের জন্য তো এনাফ পাবলিক টয়লেট নাই। চিপে রাখা আমাদের অভ্যাস আছে। ওইটাকেও আমরা চিপে রাখতে পারি, সমস্যা নাই!”
“অবদমিত কামনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, সুন্দরী। আয়ু কমে যায়!”, বলল নির্জন।
আবারও দুলে দুলে হাসল সুপ্রভাবা। নির্জন সমস্ত ইন্দ্রিয় সুইচ করল পিঠে।

চলে এলো ওরা টিএসসিতে। ছাত্রছাত্রীদের কোলাহল, হাসি, রিক্সার টুংটাং, গিটার হাতে এক যুবক। রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র ইউনিয়ন কী কারণে যেন বক্তৃতা করছে, বান্ধবীর শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিচ্ছে একজন। এখানে এলেই নস্টালজিক হয়ে পড়ে নির্জন। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। এই কোলাহলের অংশ ছিল ও, এই তো তিন চার বছর আগেই।

সুপ্রভা বাইক থেকে নামলে বলল, “তুমি জুলফিকারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখো। জানার চেষ্টা করো, ভদ্রমহিলা কবে শ্রীমঙ্গল যাবেন। আমি রুপাকে বলে দেব সবকিছু।“

সুপ্রভা আলতো হেসে নিতম্ব দুলিয়ে চলে গেল। নিজের বাইকের প্রিলিয়ন সিটটাকে খুব ঈর্ষা হলো ওর। সুপ্রভা ওভাবে যদি ওর মুখে বসত, দু পা ফাঁক করে!