রোদে ভেজা তিলোত্তমা (২য় পর্ব) (সমাপ্ত)

February 21, 2021 | By Admin | Filed in: কাকি সমাচার.

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’
Written By pinuram

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#০৯)

আমা’দের সব বন্ধুদের নিমতন্ন করা হলো, আমা’র আর অ’নুর বন্ধু সংখ্যাই কুড়ি ছাড়িয়ে গেল। বি’য়ের একদিন আগেই অ’নু ছন্দাকে ডেকে নিল, অ’নুর বান্ধবী হিসাবে ছন্দাকে বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল। অ’নু যখন ছন্দাকে মা’ জেঠিমা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলো, আমি তখন বাড়ির ত্রিসীমা’নায় ছিলাম না। পরে শুনেছিলাম যে ছন্দাকে দেখে আমা’র জেঠিমা’র খুব পছন্দ হয়েছে, সেই কথা শুনে আমি তাধিন তাধিন করে নেচে নিলাম।

ছন্দা আমা’কে মজা করে বলেছিলো, “তোদের যা পঙ্গপালের গুষ্টি সবাইকে প্রনাম ঠুকতে ঠুকতে আমা’র কোমর বেঁকে গেল!”

দুই বাড়ির কাজের দায়িত্ব আমা’র আর আকাশদার ঘাড়ে। বি’শ্বজিৎদা তো মজাসে ছোড়দিকে নিয়ে কেনাকাটা’ করাতে ব্যাস্ত। ধুর ব্যাস্ত না ছাই, আমি হলফ করে বলতে পারি কেনাকাটা’র নাম করে অ’রা ওই কয়দিনে ঘুরে বেড়িয়েছে। কেননা যা কেনার সব আমি আকাশদা নবীন আর অ’নু মিলে করেছিলাম।

বি’য়ের দিনে সাজসাজ রব, এ বাড়িতে ফুল নেই তো ওই বাড়িতে এখন পর্যন্ত বৃদ্ধি পুজোর ঠাকুর মশাই আসেনি। খাবার জায়গা এক জায়গাতেই। দুই বাড়ির মা’ঝের মা’ঠেই সামিয়ানা টা’ঙ্গানো। তখন ক্যাটা’রার ছিলো না, ঠাকুর মশায় রান্না করতেন আর বাড়ির ছেলেরা পরিবেশন করত। আমা’দের মা’থা ব্যাথা হয়ে যাওয়ার যোগাড়।

এর মা’ঝে ছন্দা এসে কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করে গেল, “রাতে কোন শাড়িটা’ পরবো বলে দে।”

বি’কেল হয়ে গেছে এদিকে তখন নিরামিষের জন্য ছানা এসে পৌছায় নি। আমি ওকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বললাম, “তোর যা ইচ্ছে তাই পরিস এখন আমা’র মা’থা খাস না।”

ব্যাস, অ’ভিমা’নিনীর মুখ ফুলে লাল, “যা তোকে জিজ্ঞেস করাই বৃথা। আমি সাজবোই না বি’য়েতে।”

একদিকে টেনে নিয়ে আবার ওকে শান্ত করলাম, “প্লি’স সোনা একটু বুঝতে চেষ্টা’ কর। এদিকে ছানা এখন আসেনি সেগুলো আনতে নবীন কে পাঠিয়েছি, ওদিকে কয়লা ফুরাতে চলল তার জন্য বাপ্পাকে পাঠালাম আর শালা কোথায় মরতে চলে গেছে। আর এমনিতে তুই যা পরবি’ তাতেই তোকে সুন্দরী দেখাবে।”

চশমা’টা’ একটু উপরের দিকে ঠেলে দুষ্টুমি ভরা হেসে বললো, “রাতে দেখিস তোকে কি করি।”

যাই হোক সেইসময়ে ওকে ক্ষান্ত করে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম। সন্ধের পরে যখন বাড়ি থেকে সেজে বের হলো, তখন আমি ওকে দেখে হা’ঁ হয়ে গেলাম। ছন্দার পরনে একটা’ গাঢ় নীল রঙের সাউথ সিল্কের মেখলা। কাঁচুলি’টা’র পিঠে একটা’ গিট দিয়ে বাঁধা, মেরুদণ্ডর খাঁজ যেন সুগভির কোন নদী। সুউন্নত, সুডৌল কুচ যুগল কাঁচুলি’র ভেতরে হা’ঁপিয়ে উঠছে, ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে উদ্যত। সেদিন বেনুনি ছেড়ে খোঁপা বেঁধেছে, খোঁপায় একটা’ সুন্দর হা’তির দাঁতের ক্লি’প। গলায়, হা’তে, কানে হা’য়দ্রাবাদি মুক্তর সেট ঝলমল করছে। চোখে কাজল, ঠোঁটে হা’লকা গোলাপি রঙের লি’পস্টিক। ডান কব্জিতে সোনার ঘড়ি আর বেশ কয়েক গাছা সোনার চুড়ি। দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনও স্বর্গের নর্তকী এই মর্তধামে নেমে এসেছে।

আমি চারপাশে চেয়ে দেখলাম, ওর রুপ আর সাজ দেখে অ’নেকেরই চোখ ওর দিকে চলে গেল। অ’নু আমা’কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কেমন সাজিয়েছে। আমি শুধু বুক চেপে উফ একটা’ আওয়াজ করে থেমে গেলাম, এর চেয়ে বেশি কিছু বলার উপায় ছিলো না তখন। আকাশদার বন্ধুরা আর বি’শ্বজিৎদার বন্ধুরা হুমড়ি খেয়ে পড়ল ছন্দা আর অ’নুকে দেখার জন্য।

বি’য়ের সারা সময়ে আমি ব্যস্ত ছিলাম, মা’ঝে মা’ঝে ওদের দুইজনের দেখা পাওয়া যেত। দুই ফুলটুসি গায়ে হা’ওয়া লাগিয়ে বেশ মজা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাওয়ার সময়ে এদিকে লোক ওদিকে লোক, কে খেতে বসলো কে খেয়ে চলে গেল কে নিরামিষ খাবে কার পাতে মা’ংস পড়েনি, সেই সব নিয়ে হইচই রইরই ব্যাপার। দেবুকে কাজ দিতে গেলেই অ’নু বলে দেয়, না ও কিছু করবে না। আমি মনে মনে বললাম, আমা’দের বাড়ির সব জামা’ই গুলো কুঁড়ে। বি’য়ের দিকে কি হচ্ছে সেসবে আমা’র মা’থা ব্যাথা ছিলো না কারন ছোড়দি তো আর বেশি দূর যাচ্ছে না। আগে রোজ রাতে এ বাড়িতে ঘুমা’তো, সেদিনের পর থেকে মা’ঠ পেরিয়ে ওবাড়িতে ঘুমা’বে এই যা তফাৎ।

দুটো ব্যাচের খাওয়ার মা’ঝে আমি আর নবীন অ’ন্যদিকে গিয়ে সিগারেট টা’নছিলাম।

এমন সময়ে ছন্দার দেখা। ওকে দেখে নবীন মিচকি হেসে বেড়িয়ে চলে গেল। আমা’র পাশ ঘেঁসে হা’তখানি ধরে বললো, “কি রে কেমন দেখাচ্ছি একবার বলবি’ না।”

আমি ওর দিকে তাকিয়ে ওর কালো গভীর চোখের তারায় হা’রিয়ে গেলাম। ওর দেহের থেকে বি’চ্ছুরিত অ’তীব আকর্ষণ আমা’কে টেনে আনল ওর কাছে, এত কাছে যে আমা’দের শরীরের মা’ঝে জায়গা ছিলো না। ওর চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো আমা’র চাহনির বানে। আমা’র বুকের মা’ঝে তখন ঝড় উঠেছে, ওকে আরও নিবি’ড় করে জড়িয়ে ধরতে যাবো কিন্তু হা’ত ছাড়িয়ে একটু তফাতে দাঁড়িয়ে বললো যে ওর সাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমি ওকে বললাম যে এই মন্ডপে বসার ইচ্ছে আছে নাকি। সেই শুনে লাজুক হেসে ঠোঁট কামড়ে ধরে মা’থা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় এত তাড়াতাড়ি নয়।

আমি ওকে ফিসফিস করে বললাম, “তুই যে এত সুন্দরী সেটা’ ধারনা ছিলো না। শাড়ি ছেড়ে মেখলা, আমি তো ভাবতে পারছি না।”

আমা’কে বললো, “গত বছর মা’মা’ বাড়ি গিয়ে কিনেছিলাম কিন্তু আর পরা হয় নি।”

আমি ওকে বললাম, “তোকে না আমা’র বুক পকেটে লুকিয়ে রাখতে ইচ্ছে করছে।”

ভুরু কুঁচকে অ’বাক হয়ে প্রশ্ন করলো, “কি? বুক পকেটে কেন? বুকের মধ্যে আমি ছাড়া আর কে কে আছে?”

আমি ওর নরম গালে টোকা মেরে বললাম, “আরে না রে বোকা মেয়ে, বুকের মধ্যে রাখতে হলে যে ওপেন হা’র্ট সার্জারি করতে হবে। এখন ওপেন হা’র্ট সার্জারি করার মতন বয়স হয়নি আমা’র।”

কেন জানি না ওর চেহা’রা দেখে আমা’র মনে হল এখন কিছু সাজ বাকি রয়েছে, যদি আমি নিজে হা’তে ওকে সাজাতে পারতাম তাহলে হয়ত ওর সাজ সম্পূর্ণ হতো। ওর দিকে অ’পলক চোখে তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ তারপরে পকেট থেকে পেন বার করলাম। বাম হা’তের তর্জনী দিয়ে ওর থুঁতনি ছুঁয়ে আমা’র দিকে তাকাতে বললাম। ছন্দা আমা’র তর্জনীর ছোঁয়ায় কেঁপে উঠলো, আসন্ন উত্তেজনায় ওর শরীর কাঠ হয়ে গেল। ডিসেম্বরের শীতেও ওর নাকের ডগায় ঘামের বি’ন্দু দেখা দিল। ওর তপ্ত শ্বাসে আমা’র মুখ বুক সব ভেসে গেল। আমা’র দিকে মুখ উঁচিয়ে চোখ জোড়া আধাবোজা করে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি পেন দিয়ে ছন্দার থুতনিতে তিনটে ছোটো ছোটো বি’ন্দু এঁকে দিলাম। লজ্জা ভরা লাল টুকটুকে চেহা’রা দেখে এবারে মনে হল যেন ওর সাজ সম্পূর্ণ। নিজের অ’জান্তেই ছন্দার হা’ত দুটি মুঠি হয়ে যায় গাল, কান গরম হয়ে গেল। ভেজা পায়রার মতন কেঁপে ওঠে ছন্দার পেলব দেহ পল্লব। চোখ বন্ধ করে আমা’র হা’তখানি শক্ত করে ধরে নেয় আর নিজের অ’জান্তেই ওর গোলাপি নরম ঠোঁট দুটি অ’ল্প ফাঁক হয়ে যায়। পদ্মের পাপড়ির মতন ঠোঁট গুলো কেঁপে ওঠে, যেন দখিনা বাতাসে বইছে। আমি ওর নরম ঠোঁট জোড়া দেখে আর থেমে থাকতে পারলাম না, আমা’র আঙ্গুল থুতনি ছাড়িয়ে ওর গালের ওপরে চলে গেল। আলতো করে গালের ওপরে আঙ্গুল বুলি’য়ে মা’থা নিচু করে ওর ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম। তীব্র আবেগে বশে আমা’র ঠোঁট কামড়ে দিল ছন্দা। ঠিক কতক্ষণ ওই ভাবে অ’ধর ওষ্ঠ মিলি’য়ে ছিলাম বলা মুশকিল তবে কেউ যেন আমা’কে ডাক দিল আর আমা’দের গভীর চুম্বনে ছন্দপতন ঘটে গেল।

অ’নু এদিক ওদিকে খুঁজে আমা’দের ওইখানে পেয়ে ঝাঁজিয়ে উঠলো, “তোরা দুইজনে এইখানে কি করছিস? ওইদিকে বি’য়ে শেষ হতে চললো।”

অ’নুকে দেখেই ছন্দাকে ছেড়ে দিয়ে আমি ওকে বললাম, “কি হয়েছে, এতো গরম হয়ে আছিস কেন?”

অ’নু জানালো যে আগে ছোড়দির ঘরে বাসরের কথা ছিলো, কিন্তু লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে নিচের তলার বৈঠকখানায় বাসরের ব্যাবস্থা করতে হবে। তার মা’নে কাজ বেড়ে গেল, আমি ভেবেছিলাম যে রাতে একটু খালি’ পাব আর ছন্দার সাথে একটু খানি একলা সময় কাটা’তে পারবো কিন্তু অ’নুর কথা শুনে মনে হল সে গুড়ে বালি’। নিরুপায় হয়ে ছন্দা বাঁকা হা’সি দিয়ে অ’নুর সাথে চলে গেল আর আমি আকাশদাকে নিয়ে বৈঠকখানা ঠিক করতে চলে গেলাম।

মেজদাকে জিজ্ঞেস করাতে মেজদা মিচকি হেসে বললো যে অ’নু আর অ’নুর বান্ধবী মা’নে ছন্দাকে দেখে ওর বন্ধুরা আর বড়দার বন্ধুরা রাতে থেকে গেছে। আমি মনে মনে হেসে ফেললাম, তোদের পাতে কাঁচ কলা, ওই দুইজনেই নিজেদের বর আগে থেকেই খুঁজে নিয়েছে। আমি অ’নু আর ছন্দাকে ওদের অ’ভিপ্রায় জানিয়ে দিলাম, ছন্দা আকাশ থেকে পড়লো, কি হবে এবারে? অ’নু ওকে ক্ষান্ত করে দিয়ে বললো যে কিছুই হবে না কেউ ওদের টিকি পর্যন্ত ছুঁতে পারবে না।

রাতে মেজদার বন্ধু আর বড়দার বন্ধুদের সাথে অ’নুর বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে আড্ডা বসলো। মেজদা মদ এনেছিলো। বাড়িতে বসে মদ খাওয়া এক বি’শাল ব্যাপার কিন্তু বি’য়ের সময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে সেইসব করা যেতে পারতো। ওরা সবাই মিলে নবীন আর আমা’কে চেপে ধরলো, একবার ছন্দার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে। নবীন মদ খেয়ে ওদের সাফ কথায় জানিয়ে দিল যে আমরা কিছু করতে পারবো না, যা করার ওদের নিজেদের করতে হবে। পেছনে এক পয়সার মুরোদ নেই, আবার প্রেমের বুলি’ গাইছে!

সারা রাত ধরে ছোড়দি আর বড়দাকে ঘুমা’তে দেওয়া হলো না, বাড়ি নয় যেন কুরুক্ষেত্রের রণক্ষেত্র। একদিকে ছোড়দির বন্ধুবান্ধবি’রা দল বাধল অ’ন্যদিকে বড়দার বন্ধুরা দল বাঁধলো, গানের লড়াই হা’সি মজা অ’নেককিছুই হল সেই রাতে। সেই রাতে দেবুও থেকে গেছিলো। ফাঁকতালে ঘুমের আছিলায় আমরা চারজনে ওই বাসর থেকে সরে গেলাম আর অ’নুর বাড়ির চিলেকোঠা ঘরে গিয়ে আড্ডা দিলাম। সকালো প্রায় হতে যায় তখন আমি আর দেবু বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।

ছন্দা বউভাত পর্যন্ত আমা’দের বাড়িতে ছিলো, আর সেবারেও আমি ওকে ছাড়তে যেতে পারিনি। অ’বশ্য না ছাড়তে যাবার কারন ও বুঝেছিলো, সর্ব সমক্ষে ওর কাছেই যেতাম না। বউভাতের পরের দিন দেবু ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলো। অ’নু তারপরে আমা’দের খেপিয়ে বলতো ওই এক মন্ডপে আমা’দের বি’য়ে করালেই ভালো হত।

ছোড়দির বি’য়ের পরে সব থেকে বেশি লোকসান আমা’র হলো। আগে অ’নায়াসে ওর পার্স মা’রতে পারতাম, সেটা’ বন্ধ হয়ে গেল। ওদিকে অ’নুর পার্স মা’রতে গেলেই ঘ্যানঘ্যানানি শুরু, “প্লি’স টা’কা নিস না, দেবুর সাথে সিনেমা’ দেখতে যাবো” অ’থবা, “ওকে জন্মদিনে একটা’ শার্ট কিনে দেব তাই টা’কা জমা’চ্ছি” ইত্যাদি প্রচুর বাহা’না।

আর ছন্দা আমা’কে বলতো, “তুই কেন এরতার কাছে হা’ত পাতিস? আমি টিউশানি করি, আমা’র পার্সে অ’ন্তত তোকে আর আমা’কে চালানোর মতন টা’কা আছে।”

তবে আমা’র পকেট কোনোদিন খালি’ থাকতো না, কারন আমা’র লক্ষ্মীর ভাঁড়ার আমা’র ছোট কাকিমা’ ছিলেন, যখন যা চাইতাম পেয়ে যেতাম।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১০)

দেখতে দেখতে দুই বছর কেটে গেল, আমা’দের কলেজ শেষ হয়ে গেল। ছন্দা আগের থেকে অ’নেক বদলে গেছিলো। আগে অ’নেক চুপচাপ লাজুক মেয়ে হয়ে থাকতো, শাড়ি ছাড়া অ’ন্য কিছু পরে কোনোদিন কলেজে আসতো না। কিন্তু কলেজ শেষ হতে হতে ও অ’নেক খোলামেলা হয়ে গেল। অ’নুর দৌলতে আর আমা’র চাপাচাপিতে, শাড়ি ছেড়ে সালোয়ার কামিজ, লম্বা স্কার্ট শার্ট ইত্যাদি পরা শুরু করে দিল। আগে অ’নুর আঁচলের পেছনে লুকিয়ে থাকতো, কলেজ শেষ হতে হতে সর্ব সমক্ষে আমা’র পাশে দাঁড়াতে লজ্জা বোধ করতো না। কলেজ পালি’য়ে সিনেমা’ দেখা, ঝালমুড়ি খাওয়া, ময়দানে ঘোরা, পুজোর সময়ে দল বেঁধে ঠাকুর দেখা, ছুটির দিনে ভিক্টোরিয়া থেকে হেঁটে হেঁটে হা’ওড়া যাওয়া আর সেখান থেকে বাসে চেপে বাড়ি ফেরা অ’নেক কিছুই করেছি।

দেবুর সাথে প্রেম করার পরে অ’নুও অ’নেক বদলে গেছিলো। আগেকার যে অ’নু চারদিকে লাফিয়ে খেলে বেড়াতো বয়স বাড়ার সাথে সাথে অ’নেক সংযত হয়ে গেল আর দেবু হয়ে গেল একটা’ মিনি বেড়াল। দেবুর সাথে ঘন ঘন যুদ্ধ হত সেটা’ এখন প্রেমের বুলি’তে হয়। তার সাথে আরো একটা’ পরিবর্তন ঘটেছিলো যেটা’র ব্যাপারে ছন্দা আমা’কে দেখালো সেটা’ হল নবীনের সাথে আগে যেমন খোলা মনে কথা বলতো অ’নু, সেটা’ অ’নেক কমে গেছে। আমি ওকে বললাম যে হয়ত এখন দেবুর সাথে বেশি মেশে তাই আমা’দের সাথে ওই রকম ভাবে সময় দিতে পারে না, ছন্দা মিচকি হেসে মা’থা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল এর পেছনে অ’ন্য কোন গল্প আছে। তখন ছন্দার কথার আসল অ’র্থ বুঝতে পারিনি।

আমি আর ছন্দা ওকে দেখে আড়ালে হা’সতাম আর অ’নুকে বলতাম একি করছে। অ’নু নাক কুঁচকে জবাবে বলতো, বাঃরে প্রেম করেছে বলে কি ওর মা’থা কিনে নিয়েছে? ও তো মা’ঝে মা’ঝে শুধু একটু আধটু কাজ করিয়ে নেয়। কোথাও দল বেঁধে ঘুরতে গেলে অ’নু কোনোদিন নিজের ব্যাগ নিজে বইতো না দেবুর কাঁধে চাপিয়ে দিত। একবার সবাই মিলে রায়চক গিয়েছিলাম, সেই খানে গিয়ে অ’নুর চটি ছিঁড়ে গেল তাই নিয়ে দেবুকে বকাঝকা শুরু করে দিল। দেবু বেচারা থতমত খেয়ে আবার দুই জোড়া চটি কিনে দিল তবে গিয়ে ক্ষান্ত হলো।

দেখতে দেখতে আমরা সবাই যাদবপুর থেকে পাশ করা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হয়ে গেলাম। সবাইকে অ’বাক করে নবীন ব্যাচে টপ করে ফেললো আর ছন্দা সেকেন্ড হল। আমি বেশ ভালো অ’ঙ্কে পাশ করলাম আর শ্যামলী কোন রকমে পাশ করেই খুশি। আমা’দের দুই বছর আগেই ঋতুরাজ মেকানিকাল পাশ করে কানাডার অ’ন্টা’রিওতে চাকরি নিয়ে চলে গেছে, তাই শ্যামলীর পাশ করা নিয়ে কোন মা’থা ব্যাথা ছিলো না। জানে পাশ করলেই বি’য়ে করে চলে যাবে আমা’দের টা’ টা’ বাই বাই করে। আর সেটা’ই হল, কলেজ শেষ হতে না হতেই শ্যামলী টুক করে বি’য়ে করে ফেললো। শ্যামলীর বি’য়ের দিনে অ’নু আর ছন্দার কি কান্না, কোথায় কোলকাতা আর কোথায় অ’ন্টা’রিও হয়ত আর এই জীবনে দেখাই হবে না কারুর সাথে।

আমা’র চাকরি করার একদম মন ছিলো না। বাবা জেঠার অ’নেক টা’কা, একটু ধ্বংস না করলে হবে কি করে আর পেটের বি’দ্যে বাড়াতে অ’সুবি’ধে কোথায়। মা’স্টা’র্স করতে চাই, তারপরে রিসার্চ করতে চাই এই খবর পেয়ে বাবা জ্যাঠা আরও খুশি। এইসব ভেবে আমি দেবু আর নবীন গেট পরীক্ষায় বসলাম। আমি আর এম টেক করতে ঢুকলাম যাদবপুরে আর দেবু এম টেক করতে চলে গেল ধানবাদের আই এস এমে। নবীন এম টেক পড়তে চলে গেল দিল্লি’র আই আই টি তে আর পরাশর গুজরাটের এক বড় টা’য়ারের কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল। বি’শ্বজিৎদার ঘাড় ভেঙ্গে আমি একটা’ মোটরবাইক হা’তিয়ে নিলাম।

অ’নু পড়াশুনা করতে নারাজ, ওর কথা, সেই ছোটবেলা থেকে বই পড়া শুরু করেছে আর নয় আবার চাকরিও করতে চায় না, বাড়ি বসে বাবা কাকার অ’ন্ন ধ্বংস করবে। এই শুনে ওর বাড়ির থেকে চাপ দিতে লাগলো যে মেয়ের বাইশ বছর বয়স হয়ে গেছে এবারে বি’য়ে দিয়ে দাও। অ’নু দেবু দুইজনার মা’থায় বাজ, কি ভাবে সামলানো যায়, শেষ পর্যন্ত ছন্দা ওকে বুদ্ধি দিল যে ডাব্লু বি’ সি এস অ’থবা সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিক তাহলে আর বাড়ি থেকে বি’য়ের চাপ দেবে না। যেমন ভাবা তেমন কাজ, মেয়ের সুবুদ্ধি হয়েছে দেখে ওর বাড়ি থেকে বি’য়ের চাপ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেল। পড়াশুনা করতো না ছাই, দেবুর সাথে সারা কোলকাতা ঘুরে বেড়াতো।

ছন্দা ক্যাম্পাস ইন্টা’রভিউতে কোলকাতার একটা’ নামকরা রঙের কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে গেল, পার্ক স্ট্রীটে ওর অ’ফিস। যেদিন এপয়েন্টমেন্ট লেটা’র হা’তে পেয়েছিলো সেদিন আমা’কে জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিলো। ওই অ’শ্রু ছিলো আনন্দের, খুশির জীবনের জয়যাত্রার অ’শ্রু।

কোলকাতায় তিন জন থেকে গেলাম আর বাকিরা ছড়িয়ে গেল। এই বি’শাল পৃথিবী মা’ঝে আমরা ছিলো ছেঁড়া ধনুকের মতন ছিটকে গেলাম।

ছন্দা আর আমা’র মা’ঝের “তুই” কখন যে “তুমি” তে পরিনত হয়ে গেছিলো সেটা’ আর খেয়াল নেই। রোজকারের মতন আমি সকালে কলেজের জন্য বেড়িয়ে যেতাম, বি’কেলে কলেজ থেকে বেড়িয়ে সোজা ছন্দার অ’ফিসের তলায় ওর জন্য অ’পেক্ষা করা। আর সেই সাতজন একসাথে নেই, কলেজ পালি’য়ে সিনেমা’ দেখা নেই, এর মা’থায় চাঁটি মেরে ফুচকা খাওয়া নেই, কফি হা’উসে বসে আড্ডা মা’রা নেই। ছন্দা আফসোস করত, কলেজ পালানো কত সোজা কিন্তু অ’ফিস পালানো বড় কঠিন। সাড়ে পাঁচটা’ বাজলেই পড়িমরি করে ছুটে এসে আমা’র বাইকের পেছনে বসে পড়তো। পার্ক স্ট্রিটের কোনার রোলের দোকান থেকে দুইজনে দুটো এগ রোল কিনতাম তারপরে সোজা গঙ্গার ঘাটে এসে বসতাম। সারাদিনের অ’ফিসের কথা, কার সাথে কি হল, কে লাইন মা’রতে চেষ্টা’ করলো, কে টিটকিরি মা’রল এইসব নিয়ে হা’সাহা’সি চলতো। সন্ধ্যের পরে ওকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম।

কলেজ ছাড়ার পরে অ’নুর হল সব থেকে বেশি অ’সুবি’ধে, কার সাথে বেড়াতে যাবে, দেবু ধানবাদে। দেবু কোলকাতা থাকলে আমি ওকে নিয়ে কলেজে চলে আসতাম আর সেদিন দেবুর সাথে ঘুরতে বেড়িয়ে যেত।

সেদিন সকাল থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু। ছন্দা সরাসরি কোনোদিন আমা’র বাড়িতে ফোন করতো না। অ’নুকে ফোন করতো, আর যা খবরাখবর সেটা’ অ’নু আমা’কে জানিয়ে দিত। সেদিন অ’নু আমা’কে ফোন করে বললো যে ছন্দা আমা’কে দুপুরের পরে ওর অ’ফিসের নিচে থাকতে বলেছে। কপাল খারাপ সেদিনেই আমা’র বাইক খারাপ হয়ে গেল, কি করি যেতে হবেই ওদিকে মা’থার ওপরে কালো মেঘ কিন্তু মেঘের তোয়াক্কা কে করে। আমি কোনোদিন ছাতা নিয়ে বের হতাম না। সেই সময়ে কোলকাতার বাতাসে এত ধুলো বালি’ ছিলো না তাই আমা’র ওই বৃষ্টিতে ভিজতে বেশ ভালো লাগতো। বৃষ্টিতে ভিজলে বাড়িতে যত না বকা খেতাম, তার দশগুন মা’র খেতাম ছন্দার হা’তে। ওই নরম হা’তের চাঁটি খেতে আমা’র খুব ভালো লাগতো। ইলশেগুড়ি বৃষ্টি মা’থায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আর ঠিক লাঞ্চের পরেই ওর অ’ফিসে পৌঁছে গেলাম।

ছাতা বি’হীন আমা’কে দেখে ক্ষেপে গেল ছন্দা, “তোমা’কে কতবার বলি’ বর্ষা কালে ছাতা নিয়ে বের হবে, কিন্তু তুমি কিছুতেই আমা’র কথা শুনবে না।”

এদিক ওদিক দেখে আমা’র বাইক দেখতে না পেয়ে প্রশ্ন করলো, “বাইকের কি হয়েছে? টা’য়ার পাঞ্চার না ইঞ্জিন গেছে? এবারে কত টা’কার ধাক্কা? স্টা’ইপেন্ড যা পাও সব তো সিগারেটে শেষ করেছো মনে হয়।”

আমি মা’থা চুলকে অ’পরাধীর মতন বললাম, “পেট্রোল ট্যাংকে কিছু প্রবলেম হয়েছে গ্যারেজে দিয়ে এসেছি।”

আমা’র মা’থায় হা’ত দিয়ে চুলের মধ্যে বি’লি’ কেটে বললো, “কাক ভিজে হয়ে গেছ এ অ’বস্থায় আর কোথায় যাবে?”

আমি হেসে বললাম, “বাঃ রে এই বৃষ্টিতে তোমা’র সাথে ভিজবো বলে এসেছি।”

আমা’র বাজু ধরে মিষ্টি হেসে বলে, “ভিজবো বলেই তো তোমা’কে ডাকা। সকালে কালো মেঘের ভেলা দেখে মনে হল দুইজনে একটু ভিজি। ভেবেছিলাম তোমা’র পেছনে বাইকে বসে সারা কোলকাতা ঘুরবো সেটা’ তাহলে আর হলো না।”

আমি এদিক ওদিক দেখে টুক করে ওর গালে টোকা মেরে বললাম, “বাইক নেই তো কি হয়েছে, দুই পা আছে আর আছে এই রাস্তা। দুইজনে হেঁটে হেঁটে ভিজবো।”

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মা’থায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এক ছাতার নিচে। পায়ের নিচে ময়দানের সবুজ ঘাসে ঢাকা জাজিম, দুইজনেই জুতো খুলে বৃষ্টির জলে ভেজা মা’টির ওপরে ছপাং ছপাং করে হেঁটে গেলাম কিছুক্ষণ। খালি’ পায়ে হা’ঁটতে হা’ঁটতে বারেবারে পিছিল খাচ্ছিল তাই আমা’র হা’তখানি শক্ত করে ধরেছিলো। একবার টা’ল সামলাতে না পেরে আমা’র গায়ের ওপরে পরে গেল আর টুক করে আমি ওর গালে চুমু খেয়ে নিলাম।

সঙ্গে সঙ্গে মুখ লাল হয়ে গেল আর আমা’র দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো, “এটা’ খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেল পার্থ, এইভাবে খোলা জায়গায় কেউ চুমু খায়?”

আমি বললাম, “কেউ কি আমা’দের দেখেছে চুমু খেতে যে তুমি এত রেগে যাচ্ছ?”

আমা’র দিকে দুষ্টু মিষ্টি হা’সি দিয়ে বললো, “ওই দূরে বাসে বসা লোক গুলো দেখছে আমা’দের।”

আমি ওর কাঁধে হা’ত রেখে কাছে টেনে বললাম, “দেখলো তো কি হয়েছে, আমি কি ওদের বউদের চুমু খেয়েছি নাকি? আমি নিজের প্রেমিকাকে চুমু খেয়েছি তাতে ওরা বলার কে?”

একটা’ গাছের তলায় একটা’ চিনে বাদাম ওয়ালা দাঁড়িয়ে ছিলো, তার কাছ থেকে এক ঠোঙা চিনে বাদাম কিনে চিবোতে চিবোতে আউট্রাম ঘাটের দিকে পা বাড়ালাম। পথে যেতে যেতে ছন্দা আমা’কে বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো, আমি বললাম যে সবাই ভালো আছে সেই সাথে অ’নুর কথা বললাম, ও একদম ঘর বন্দি হয়ে হা’ঁসফাঁস করছে। তার চেয়ে ভালো হতো যদি আমা’দের সাথে এম টেক করতে ঢুকত অ’থবা কোথাও চাকরি করতো।

আউটট্রাম ঘাটে এসে বসার জায়গা খুঁজে পেলাম না, গঙ্গার পাড় ভিজে, বেঞ্চ ভিজে, ঘাট ভিজে। ছন্দা বায়না ধরলো নৌকায় চাপবে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম, এই বৃষ্টিতে নৌকায় চেপে কোথায় যাবে? ছন্দা বললো নৌকায় চেপে হা’ওড়া যেতে চায়, বেশ রোমা’ন্টিক ব্যাপার হবে। ঘাটের কাছে সারি সারি নৌকা বাঁধা, দুই ভিজে কপোত কপোতি দেখে মা’ঝি দর হা’ঁকওল দশ টা’কা লাগবে। আমি জানতাম কি কারনে মা’ঝি দশ টা’কা হেঁকেছে, জোড় বেঁধে কপোত কপোতি আসে এখানে আর নৌকার ছাউনির তলায় উদোম হয়ে প্রেম লীলা খেলে। ছন্দা ওদের জানিয়ে দিল পাঁচ টা’কার এক পয়সা বেশি দেবে না, যাবে তো শুধু এপার থেকে অ’পার তাতে আবার দশ টা’কা কেন? শেষ পর্যন্ত ছয় টা’কায় এক মা’ঝি আমা’দের গঙ্গা পাড় করতে রাজি হল। নৌকায় উঠেই ছন্দা ছাতা বন্ধ করে দিল, আমি ওকে জিজ্ঞেস করাতে বললো মা’ঝ গঙ্গায় নৌকা দাঁড় করিয়ে বৃষ্টিতে ভিজবে।

আমি ওকে বললাম, “যখন আমি ভিজি তখন আমা’র ওপরে চোটপাট করতে ছাড়ো না এখন কি হয়েছে?”

ছন্দা আমা’র গলা জড়িয়ে বললো, “উম্মম প্লি’স এই রোমা’ন্টিক মুড নষ্ট করে দিও না, তোমা’র সাথে এই বৃষ্টিতে ভিজতে বড় ভালো লাগছে।”

নিচে ঘোলা জল, মা’থার ওপরে কালো মেঘ আর পাশে ভিজে জলপরী। গায়ের শাড়িটা’ সারা অ’ঙ্গের সাথে লেপ্টে গেছে তাতে ওর কোন ভ্রূক্ষেপ নেই, মা’ঝ গঙ্গায় নৌকা দাঁড় করিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ভিজলাম দুইজনে। আমা’র সাথে একটা’ ক্যামেরা থাকলে সেই অ’পূর্ব দৃশ্য সেদিন ক্যামেরা বন্দি করে রাখতাম তবে হৃদয়ে আঁকা ছবি’র কাছে সেই ছবি’ ম্লান।

আমি ওর হা’ত ধরে টেনে বসিয়ে বললাম, “সত্যি তোমা’র মা’থা খারাপ হয়ে গেছে আজকে।”

আমা’র গলা জড়িয়ে ধরে বললো, “হ্যাঁ হয়েছে সত্যি সত্যি আমা’র মা’থা খারাপ হয়েছে। আমি ভালো মেয়েই ছিলাম তুমি এসে আমা’র যা কিছু ছিলো সব কেড়ে কুড়ে নিয়ে পাগল করে দিয়েছ।”

সেদিনের বৃষ্টি ভেজা আর মা’ঝ গঙ্গায় নৌকার মধ্যে ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা এখন বুকে আঁকা রয়েছে।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১১)

ভিজে ভিজে ওই পাড়ে গিয়ে বাস ধরলাম বেহা’লা আসার জন্য। হা’ওড়া ব্রিজ পার হতেই ছন্দা আমা’র হা’ত ধরে বাস থেকে টেনে নামিয়ে নিল। আমি অ’বাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি ব্যাপার, কি হয়েছে?”

আমা’র হা’ত বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে সারা শরীরের উত্তাপ নিজের বুকে চেপে আদুরে কন্ঠে বললো, “আজকে না বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করছে না আমা’র।”

আমি আঁতকে উঠে বললাম, “তুমি পাগল হয়েছো নাকি? কোথায় যাবে?”

একটু খানি নেচে নিয়ে বললো, “তোমা’র সাথে এই কোলকাতার রাস্তায় আজ ঘুরে বেড়াবো।”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তা এখন কি করতে চাও?”

ও বললো, “হেঁটে কলেজ স্ট্রিট যাই চলো, অ’নেক দিন কফি হা’উসে বসে আড্ডা মা’রিনি।”

এক ছাতার তলায় হেঁটে হেঁটে বড়তলা স্ট্রিট, চারপাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে টা’না রিক্সা আর রিক্সাওয়ালা গুলো পাশের শেডের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজছে। আমি ছন্দাকে বললাম যে হেঁটে যেতে, ছন্দা একবার আমা’র দিকে দেখলো একবার ওই ভিজে রিক্সা গুলোর দিকে দেখে আবদার করলো যে ওই টা’না রিক্সায় চাপবে। শেষ পর্যন্ত দুইজনে মিলে টা’না রিক্সায় চাপলাম। রিক্সা ওয়ালা ভাড়া চাইল তিন টা’কা, ছন্দা সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে গেল। ভিজে রাস্তার ওপর দিয়ে ভিজতে ভিজতে সেই লোকটা’ রিক্সা টা’নতে টা’নতে আমা’দের কলেজ স্ট্রিট মোড় পর্যন্ত নিয়ে গেল। যাওয়ার পথে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি দেখতে পেয়েই ঢিপ করে একটা’ প্রনাম ঠুকে নিল।

আমি অ’বাক হয়ে প্রশ্ন করাতে উত্তর দিল, “যা বাবা এনাকে ভুলে গেলে কি করে হবে। ওই ছোটবেলার সহজ পাঠের – ছোট খোকা বলে অ’ আ, শেখেনি সে কথা কওয়া; এর মধ্যেই ভুলে গেলে? ওই জন্যই আজ আমরা এখানে পৌঁছেছি।”

আমি হেসে দিলাম, ওর ধরন দেখে, সত্যি মেয়েটা’ পারেও বটে। রিক্সা থেকে নেমে ছন্দা পার্স থেকে পাঁচ টা’কার নোট বের করে ওর হা’তে ধরিয়ে দিল। লোকটা’ বললো যে ওর কাছে খুচরো পয়সা নেই, ছন্দা ওকে টা’কাটা’ রেখে দিতে বললো।

আমি জিজ্ঞেস করাতে উত্তর দিল, “ওর বাড়িতে নিশ্চয় একটা’ বৌ আছে আর আছে চার পাঁচটা’ বাচ্চা কাচ্চা। এই বৃষ্টিতে এরপরে আর কোন যাত্রী পাবে কিনা সন্দেহ আছে। ওর ছেলে মেয়েরা নিশ্চয় পথ চেয়ে বসে আছে কখন ওদের বাবা আসবে আর ওদের জন্য কিছু নিয়ে আসবে। আমি ওই বাচ্চাদের মনের কথা বুঝি কারন এক সময়ে আমিও আমা’র বাবার জন্য ওই রকম হা’পিত্যেস হয়ে বসে থাকতাম।”

কথাটা’ আমা’র বুকে বড় বেজে উঠলো, নারী তোমা’র এই অ’ঙ্গে কত রুপ। ছন্দা হা’রায়নি তবে এই তিলোত্তমা’ হা’রিয়ে গেছে!

কফিহা’উসে বসেই আমা’দের ভিজে কাপড় শুকিয়ে গেল। তারপর ছন্দাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি ফিরে এলাম।

কোলকাতায় আমরা শুধু তিনজনে পড়ে রইলাম, বাকিরা সব দূরে দূরে। দেবুর সাথে মা’সে একবার দেখা হত, কোন মা’সে হত না। দিল্লী যাওয়ার পরে নবীনের সাথে বার তিনেক দেখা হয়েছিলো, ও আর সেই আগেকার রোগা পটকা নবীন নেই, দিল্লী গিয়ে বেশ ফুলে গেছে। পচার সাথে মা’ঝে মা’ঝে ফোনে কথা হত গুজরাটে গিয়ে কোন গুজরাটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে, শ্যামলীর বি’য়ের পরে ওর সাথে একবার শুধু মা’ত্র কথা হয়েছিলো আর হয়নি। কে আই এস ডি করবে আর গল্প করবে?

কফি হা’উসে বসে ছন্দা বললো একবার কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়? হঠাৎ ওর ভাবের এই পরিবরতনে অ’বাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যেতে চায়। চাকরি পাওয়ার পরে ওর ভাইকে দেওঘরের বেশ নামকরা এক মিশন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলো, সেখানে যেতে চায়। আমি বলাম বেশ, কিন্তু ওই বৈদ্যনাথ ধামের কথা শুনেই একটু বেঁকে গেলাম, সেই মন্দির আর মন্দির আর ছন্দার চটি খুলে ঢিপ করে প্রনাম করার কথা মনে পড়ে গেল। আমা’র চেহা’রা দেখে মনের ভাব বুঝতে ওর একটুকু সময় লাগলো না। আমি এই ভেবে রাজি হয়ে গেলাম যে এবারে একসাথে বেশ কয়েকদিন একসাথে কাটা’ন যাবে। তখন বাঙালি’র বেড়াতে যাওয়া মা’নে দার্জিলি’ং, সিমলা কুল্লু মা’নালি’, সমুদ্র সৈকত বলতে পুরী মা’ড্রাস কন্যাকুমা’রী, আমি কোনোদিন দেওঘর যাইনি ছন্দার দৌলতে যাওয়া।

ঠিক হল যে পুজোর ছুটির পরে নভেম্বরের মা’ঝের দিকে আমরা দেওঘর বেড়াতে যাবো। নভেম্বরে কোলকাতায় বি’শেষ ঠাণ্ডা না পড়লেও দেওঘরে বেশ ঠাণ্ডা পরে। ওইদিন কফিহা’উসে বসে পরিকল্পনা করার পর থেকে আমা’র চোখে আর ঘুম নেই, যখনি ছন্দার সাথে দেখা হয় তখনি ওকে শয়তানি করে বলি’, এক কামরায়, এক বি’ছানায় এক লেপের নিচে ওকে আমি ছিঁড়ে খাব। সেই শুনে বলতো যে একটা’ রামপুরি চাকু সাথে নিয়ে যাবে নিজের আত্মরক্ষা করার জন্য। প্রেমের আগুন দুইদিকেই সমা’ন ভাবেই লেগেছিলো। ছন্দার বি’শেষ অ’সুবি’ধে হল না, বাড়িতে বললো এক বন্ধুর সাথে ভাইয়ের কাছে যাবে। আমিও সেই মতন বাড়িতে জানালাম যে কয়েক দিনের জন্য বাইরে বেড়াতে যাচ্ছি, কার সাথে যাচ্ছি সে সব আর বলার দরকার পড়লো না।

ট্রেন রাত দশটা’য়, আমি আটটা’য় হা’ওড়া পৌঁছে গেছিলাম, কথা ছিলো বড় ঘড়িটা’র নিচে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো। একটা’ সিগারেট ধরালাম আর চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। রঙ বেরঙ্গের শাল সোয়েটা’র জ্যাকেট পরা মা’নুষ এদিক ওদিকে চলাফেরা করছে। একটু বাদে ছন্দাকে দেখলাম, শালোয়ারের ওপরে একটা’ লম্বা সোয়েটা’র আর গলায় একটা’ শাল জড়িয়ে এগিয়ে আসছে। আমি কাছে গিয়ে ওর হা’তের থেকে ব্যাগটা’ নিয়ে নিলাম। আমা’র কাছে একটা’ ছোট ব্যাগ ছিলো দুই জোড়া জামা’কাপড় আর দুটো জ্যাকেট কিন্তু মেয়েদের ব্যাগে পুরো সংসার যায় তাই ছন্দার ব্যাগের আকার আমা’র চেয়ে তিনগুন বড়।

লোকের ভিড় ঠেলে ব্যাগ কাঁধে প্লাটফর্মের দিকে হা’ঁটা’ দিলাম। বি’হা’রের ট্রেন, প্লাটফরম যেন জনসমুদ্র। ট্রেন দিতে না দিতেই ঠ্যালা ঠেলি’ শুরু, এটা’ অ’বশ্য আমা’র পক্ষে নতুন নয়। ছন্দা গজগজ করতে করতে আমা’র পেছনে কোন রকমে লুকিয়ে পড়ল। সেই সময়ে খুব বড়লোক ছাড়া মধ্যবি’ত্তরা এসি তে উঠতো না, আমরাও সেকেন্ড ক্লাসে রিজার্ভেশান করিয়েছিলাম। আমি ওকে বললাম যে ট্রেন অ’নেকক্ষণ দাঁড়াবে, ভিড় কমা’র পরে আমরা ট্রেনে উঠলাম। উঠে দেখি প্রায় পঙ্গপালের মতন একটা’ পরিবার আমা’দের সিট দখল করে বসে, একটা’ বুড়ো, একটা’ মা’ঝ বয়সি লোক তার বউ, চারখানা বাচ্চা কাচ্চা। ওদের সঙ্গের মা’লের কোন সিমা’না নেই, তিনটে বস্তা, একটা’ টিনের ট্রাঙ্ক, দুটো কাপড়ের পুটুলি’ মা’র্কা ব্যাগ। আমি আমা’দের সিট দেখিয়ে বললাম যে এই দুটো আমা’দের সিট। বৌটা’ একটু সরে গিয়ে ছন্দাকে বসতে জায়গা দিল, যেন আমরা ওদের কাছে সিটে বসার জন্য ভিক্ষে চেয়েছি। ওই দেখে ছন্দার মা’থায় রক্ত চড়ে গেল।

ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে তেড়ে উঠলো, “এই সিট আমা’দের হ্যায়, পয়সা দেকে রিসার্ভ করা হ্যায় বি’না পয়সায় জাতা নেহি।”

বউটা’ কি বুঝলো কি বুঝল না জানিনা হতবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। ছন্দা এক টা’নে সিটের ওপর থেকে ওদের মা’লপত্র গুলো নিচে ফেলে দিল সঙ্গে সঙ্গে সাথের যে লোকটা’ ছিলো সে তেড়ে ফুঁড়ে উঠলো। আমি লোকটা’কে ওর টিকিট দেখাতে বললাম, লোকটা’ টিকিট দেখালো। ওদের জেনারেল কম্পার্টমেন্টের টিকিট। আমি ওদের ওইখান থেকে নেমে যেতে বললাম। সে লোক কিছুতেই বুঝতে চায় না, টিকিট কেটেছে আলবাত যাবে।

ছন্দা ওকে তেড়ে বললো, “তুম লোগ কে মুন্ডি মে কিছু নেই, খোট্টা’র জাত এখুনি না নামলে আমি টিটি বুলায়গা।”

আমি বুঝতে পারলাম যে এদের সাথে বচসা করে লাভ নেই। রাগে গজগজ করতে করতে বৌটা’কে ঠেলে দিয়ে ছন্দা জানালার কাছে গিয়ে বসে পড়ল আর আমা’কে টেনে ওর পাশে বসিয়ে দিল। ট্রেন কিছুক্ষণের মধ্যেই ছাড়ল আর বর্ধমা’নে টিটি উঠলো।

ছন্দা তো টিটিকে তেড়ে ওঠে, “যাত্রী ওঠানোর সময়ে আপনাদের দেখা উচিত কার রিজার্ভেশান আছে আর কার নেই। এখুনি ওদের নামিয়ে দিন না হলে আমি স্টেসান মা’স্টা’রের কাছে যাবো।”

টিটি হেসে বললো, “ম্যাডাম এত লোকের টিকিট চেক করে তো আর ওঠানো যায় না, তাহলে ট্রেন ছাড়তেই সকাল হয়ে যাবে।”

ওদেরকে বর্ধমা’নে নামিয়ে দিল টিটি। বর্ধমা’ন ছাড়ার পরে দেখলাম যে ট্রেন বেশ খালি’, কম্পারট্মেন্টে লোকজন বি’শেষ নেই। আমা’দের ওই ছয়জনার কুপে শুধু মা’ত্র দুইজনেই ছিলাম, তাতে আমা’দের বেশ সুবি’ধে হল একটু একত্রে থাকার। ছন্দা বেশ কয়েকবার দেওঘর গেছে আর প্রত্যেক বার এই রকম কিছু না কিছু ঘটেছে। ট্রেন দুলকি চালে চলতে শুরু করলো। ছন্দা বাড়ি থেকে খাবার বানিয়ে এনেছিলো লুচি আর আলুর তরকারি, খবরের কাগজ পেতে খাওয়া দাওয়া সেরে বার্থ নামিয়ে শুয়ে পড়লাম। আসানসোল থেকে আরও কয়েকজন উঠলো।

আমি চোখ বন্ধ করতে যাবো কি ছন্দা ধড়মড় করে আমা’কে উঠিয়ে বললো একটু পরেই নাকি জসিডি এসে যাবে। যাঃবাবা যাও বা একটু চোখ লেগেছিলো তাও কেটে গেল।

সূর্যি মা’মা’ পুবদিক থেকে কোন রকমে উঁকিঝুকি মা’রছে আর সেই সময়ে আমরা নেমে পড়লাম জসিডিতে। জসিডিতে নামতেই ছ্যাক করে ঠাণ্ডা আমা’দের চেপে ধরলো। আমি আমা’র জ্যাকেটটা’ আরও জড়িয়ে ধরলাম আর ছন্দা শালটা’ বার করে ওর সোয়েটা’রের ওপরে চাপিয়ে নিল। ছন্দা জানাল সেখান থেকে কয়লার ইঞ্জিনের ছোট লাইনের অ’ন্য একটা’ ট্রেন ধরে দেওঘর যেতে হবে। ওই ছোট ট্রেনে উঠলাম, সেখানে রিসারভেসানের কোন বালাই নেই, বেশির ভাগ যাত্রী বি’না টিকিটের। যাই হোক ঠেলে মেলে জায়গা করে সেই ছোট ট্রেন করে দেওঘর যাওয়া হল। স্টেসানে নামতেই এক গাদা হোটেল অ’য়ালা, টা’ঙ্গা ওয়ালা আর বৈদ্যনাথ ধামের পান্ডা ছেঁকে ধরলো। ছন্দা পটীয়সী মহিলার মতন আমা’র হা’ত ধরে ওদের বাঁচিয়ে বেড়িয়ে চলে এলো।

একটা’ এক ঘোড়া টা’না টা’ঙ্গায় চেপে একটা’ হোটেলের নাম করে বললো সেখানে নিয়ে যেতে। সে এক অ’দ্ভুত অ’নুভুতি, ভোরের আকাশ হা’লকা রোদে মা’খা, খালি’ রাস্তা আর চারপাশে কুয়াশা ভরা সকালো আর আমা’র কোল ঘেঁসে ছন্দা বসে। কোথাও বেশ কয়েকজন লোক আগুন জ্বালি’য়ে তাপ পোহা’চ্ছে, সেই কাঠের ধুয়োর গন্ধে এক অ’দ্ভুত গন্ধ। পথের দুপাশে উঁচু উঁচু সারবাঁধা ইউক্যালি’প্টা’স গাছ, নিম গাছ ইত্যাদি।

পথে যেতে যেতে আমা’কে বললো, “ভাইয়ের স্কুলে গেস্ট হা’উস আছে, তবে সেখানে একসাথে থাকাটা’ একটু দৃষ্টি কটু লাগবে। তাই আমরা একটা’ হোটেলে উঠবো।”

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে হেসে বললাম, “মা’ তারা তুমি আমা’কে যেখানে ফেলবে সেখানেই দেহ রাখবো।”

আমা’র ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে বললো, “ছিঃ দেহ রাখার কথা একদম বলতে নেই।”

শহরের ভিড় ছাড়িয়ে একটু তফাতে এক নিরিবি’লি’ জায়গায় আমা’দের হোটেল। খুব বড় না হলেও বেশ ছিমছাম, হোটেল দেখে ছন্দা বেশ খুশি, কিন্তু বাঙালি’ মেয়ে একটু খুঁতখুঁতে না হলে চলে না। রুমে ঢুকেই ছেলেটা’কে বললো যে বি’ছানার চাদর বদলে দিতে। ছেলেটা’ যত বুঝাতে চায় যে বি’ছানার চাদর পরিষ্কার কিন্তু ছন্দা সে কথা মা’নতে নারাজ। একটা’নে চাদর সরিয়ে ওর হা’তে ধরিয়ে বললো এখুনি যদি চাদর না বদলায় তাহলে হোটেল থেকে চলে যাবে। অ’গত্যা কি করে একটা’ নতুন চাদর এনে পেতে দিল। সেই সাথে বালি’শের অ’য়ার বদলে দিল। আমি চুপচাপ এককোণে দাঁড়িয়ে শুধু ছন্দাকে দেখে গেলাম।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১২)

ছেলেটা’ চলে যেতেই দরজা বন্ধ করে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। অ’নেকদিন পরে কাছে পেয়েছি তাও আবার একেবারে নিজের করে, এখানে বাধা দেওয়ার কেউ নেই, দেখার কেউ নেই শুধু মা’ত্র দুইজনে এক কামরায়।

ছন্দা আমা’র হা’তের ওপরে হা’ত রেখে আলি’ঙ্গন আরও নিবি’ড় করে সোহা’গ ভরা কণ্ঠে বললো, “প্লি’জ ছেড়ে দাও না হলে কিন্তু কামড়ে দেব, সত্যি বলছি।”

আমিও বদমা’শি করে ওর নরম গালে আমা’র না কামা’নো গাল ঘষে দিলাম, “উম্মম এবারে সম্পূর্ণ ভাবে একা পেয়েছি আর ছাড়ছি না কোন মতেই।”

এই ঠাণ্ডার মধ্যেও আসন্ন উত্তেজনায় বুকের রক্ত চনমন করে ওঠে ছন্দার। আমি দুইহা’তে ওর পেলব দেহ পল্লব জড়িয়ে ধরলাম, মনে হল যেন ও গলে যাবে আমা’র বাহু বেষ্টনীর মা’ঝে। ছন্দা কেঁপে উঠলো আমা’র প্রগাড় আলি’ঙ্গনে, ধীরে ধীরে আমা’র বাঁ হা’ত ওর সুগৌল উদ্ধত কুচের নিচে উঠে এলো আর আর ডান হা’তটি নেমে গেল নরম গোল তলপেটের ওপরে। ঠোঁট নামিয়ে আনলাম ওর মসৃণ মরালি’ গর্দানে, আলতো করে ভিজে ঠোঁট ছুইয়ে দিতেই কেঁপে উঠলো ললনা। আমা’র ধমনীতে লেগেছে প্রেমের আগুন আর সেই অ’গুন ওর শরীরে ছড়াতে বেশি সময় নিল না। এক অ’দ্ভুত শিহরণ খেলে যায় ছন্দার সারা শরীরে। দুই হা’ত আমা’র হা’তের ওপরে দিয়ে বাহুবেষ্টনীকে আর চেপে দেয় নিজের শরীরের ওপরে। আমি ওর কামিজের ওপর দিয়েই অ’ল্প অ’ল্প করে নাভির নিচের নরম নারীমা’ংসে আদর করতে শুরু করে দিলাম। নিজের অ’জান্তেই আমা’র বাহু বেষ্টনী বজ্র কঠিন হয়ে গেল, এইবারে দুই হা’তে যেন পিষে ফেলবে ওকে। নভেম্বরের ঠাণ্ডা আর দুই তৃষ্ণার্ত কপোত কপোতী কে আলাদা করে রাখতে পারেনা। ছন্দার বুকের মা’ঝে, হা’রিয়ে যাওয়ার এক লেলি’হা’ন শিখা ধিকি ধিকি করে জ্বলে ওঠে। মা’থাটা’ পেছনের দিকে হেলি’য়ে দেয়, আমা’র দাড়ি না কামা’নো গালে গাল ঘসতে থাকে। প্রেমের ঘর্ষণে নরম গালে অ’গ্নিস্ফুলি’ঙ্গর আবি’র্ভাব হয়। আমা’দের মা’ঝে একটি সর্ষে দানা রাখলে যেন তেল বেড়িয়ে আসবে, এমন ভাবে এক জন আর এক জনের সাথে আঠার মতন মিশে গেলাম।

আধবোঝা নয়নে, প্রেমঘন কাঁপা গলায় ছন্দা বলে ওঠে, “জানো আমি ভাবতে পারছি না যে আমরা সত্যি এখানে একসাথে।”

সত্যি সেটা’ আমিও ভাবতে পারছিলাম না যদি না ও আমা’র গালে একটা’ হা’লকা আদরের কামড় বসিয়ে দিত। আমি ওর ঘাড়ে গর্দানে কানের লতিতে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিলাম। ছন্দার বুকের উষ্ণ রক্ত ত্বকের ওপরে ছড়িয়ে পড়ে, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়ার ফলে ওর দুই বুকে অ’ন্তহীন সমুদ্রের ঢেউ খেলতে শুরু করে।

প্রেমঘন আপ্লুত কণ্ঠে বললাম, “ছন্দা আমি তোমা’কে ভালোবাসি।”

গালে গাল ঘসতে ঘসতে, ছন্দা মিহি স্বরে জিজ্ঞেস প্রেম নিবেদন করলো, “তোমা’কে ছাড়া আর কোথায় যাবো সোনা? জানো কফি হা’উসে বসে প্লান করার পরের দিন থেকেই আমা’র রাতের ঘুম ছিলো না, কবে তোমা’র কাছে যাবো এই ভেবে।”

উত্তেজনায় আমা’র সিংহ কেশর ফুলি’য়ে দিল আর নিটোল নিতম্বের খাঁজের মা’ঝে আমা’র সিংহের স্পর্শের অ’নুভুতি পেয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে ছন্দা। ক্ষিপ্ত সিংহ কেশর ফুলি’য়ে কোমল নিটোল নিতম্ব মা’ঝে বি’ঁধে গেছে।

আমি ওকে আরও নিবি’ড় করে জড়িয়ে ধরে বললাম, “কিছুতেই তোমা’কে ছারছি না, এবারে পিষে ফেলব।”

আমা’র পৌরুষত্তের ছোঁয়া পেয়ে কিঞ্চিত উত্তেজিত হয়ে উঠলো সেই সাথে সেটা’ দমিয়ে নিয়ে বললো, “আমা’র ওপরে একটু দয়া করবে না? সারা রাত ট্রেনে এসে জামা’ কাপড় নোংরা হয়ে গেছে দয়া করে স্নান সারতে দাও।”

ধীরে ধীরে আমা’র দিকে ঘুরে দাঁড়ালো আর হটা’ত দুম করে একটা’ কিল বসিয়ে দিল আমা’র বুকের ওপরে। তারপরে খিলখিল করে হেসে উঠে আমা’র বাহুপাশ ছাড়িয়ে মুখ ভেঙ্গিয়ে নিজের জামা’ কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল। অ’গত্যা আর কি করি, একটা’ সিগারেট ধরিয়ে প্রেমিকার অ’পেক্ষা করতে থাকলাম।

স্নান সেরে গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো, আমি ওর ওই রুপ দেখে হা’ঁ করে চেয়ে রইলাম। ছন্দা বড় লজ্জা পেয়ে আমা’কে বকা দিয়ে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে নিতে বললো। ওর দিকে দুই পা এগোতেই পালি’য়ে গেল। আমি দাড়ি কাটা’র রেজর ব্লেড আর আমা’র জামা’কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। বাথরুমে আলো কম তাই দাড়ি কাটা’র সময়ে আর দরজা বন্ধ করিনি।

আমি দাড়িতে সাবান লাগিয়ে একবার উঁকি মেরে দেখতে চেষ্টা’ করলাম কি করছে। স্নান সেরে ললনা নীলাম্বরী হয়ে সেজে, পরনে হা’ল্কা নীল রঙের শাড়ি। ভিজে চুল পিঠের ওপরে এলো করা, সারা দেহ থেকে এক মিষ্টি গন্ধ নির্গত হচ্ছে। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে আমা’র খালি’ ছাতি দেখে থমকে আমা’র দিকে চেয়ে রইলো ক্ষণিকের জন্য তারপরে লজ্জায় মা’থা নিচু করে নিল। আমি ওকে দেখে চোখ মেরে ইশারায় বললাম যে একদম মা’র কাটা’রি লাগছে, পথে বের মা’নুষ ওকে দেখবে আর হোঁচট খাবে। আমি ওর কাছে এসে দুষ্টুমি করে ওর নাকের ওপরে ফেনা মা’খিয়ে দিলাম।

একটু রাগের ভান করে ছন্দা বললো, “ধুত, কি যে কর না তুমি, সাজ টা’ই নষ্ট করে দেবে।”

এই বলে নাকটা’ আমা’র অ’নাবৃত বাজুর ওপরে মুছে দিল। নাক মুছতে গিয়ে নিজের অ’জান্তে, সুগৌল উদ্ধত কোমল বক্ষ আমা’র বাজুতে লেগে গেল। আঁচলে ঢাকা নরম কুচের স্পর্শে আমা’র শরীর গরম হয়ে যায়। ছন্দা, আমা’র দেহের বেড়ে ওঠা উত্তাপ বুঝতে পেরে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কোমরে একটা’ দুলুনি দিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বি’ছানার দিকে চলে যায়।

যাবার আগে আমা’র উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেয় “কালকেই তো দাড়ি কেটে বেরিয়েছ, এখন আবার দাড়ি কামা’তে গেলে কেন?”

আমি ও কম যাই না, সুন্দরী কপোতীর উত্তর জুতসই দিতে হয়, “তোমা’র ওই গোলাপি গালে গাল ঘষে মনে হল তোমা’র কিছুটা’ আমা’র গালে লেগে গেছে তাই সেগুলো উঠানোর জন্য দাড়ি কামা’চ্ছিলাম।”

লজ্জায় কান লাল হয়ে যায় ছন্দার, “এক চড় মা’রবো এবারে, তাড়াতাড়ি স্নান করো মন্দির যেতে হবে।”

উফফফ বাঃবা আবার সেই মন্দির। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বেড়িয়ে এলাম। ছন্দা ততক্ষণে গায়ের ওপরে একটা’ গাঢ় নীল রঙের ওভারকোট চাপিয়ে নিয়েছে আর সেই সাথে গলায় একটা’ শাল জড়িয়ে নিয়েছে। আমি জামা’ কাপড় পরে ওকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় যেতে হবে এবারে। ছন্দা বললো, বৈদ্যনাথ ধামের মন্দিরে আগে পুজো দেবে তারপরে খাওয়া দাওয়া করবে। সেখান থেকে অ’নুকুল ঠাকুরের আশ্রম দেখতে যাবো এবং বি’কেলে সত্যজিতের স্কুলে যাবো।

হোটেল থেকে বেড়িয়ে আবার সেই টা’ঙ্গা চেপে মন্দিরের কাছে এলাম। দেওঘরে প্রচুর সঙ্খ্যখ বাঙালি’ একসময়ে মধুপুর, দেওঘর, রাঁচি এইসব জায়গায় বড় লোক বাঙালি’দের বাগান বাড়ি থাকত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেই বাগান বাড়ি গুলো অ’নেকে বি’ক্রি করে দিয়েছে অ’থবা বেহা’ত হয়ে গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে। সরু অ’লি’গলি’ পেরিয়ে লোকজনের ভিড় ঠেলে মন্দিরে পৌছালাম। বি’শাল মন্দির প্রাঙ্গন লোকে লোকারণ্য, শিবের মন্দিরে দর্শন করার জন্য লম্বা লাইন। লাইন দেখে আমি ভিরমি খেলাম, লাইন দিয়ে সিনেমা’র টিকিট কাটতে রাজি, যাত্রা পালা দেখতে রাজি কিন্তু….. ছন্দা চোখ পাকিয়ে আমা’কে চুপচাপ ওর পাশে দাঁড়াতে বললো। এর মা’ঝে আবার পাণ্ডাদের উৎপাত, পুজো করিয়ে দেবে একদম সাক্ষাৎ বি’গ্রহ দর্শন করিয়ে দেবে।

ছন্দা ওদের কথায় কোন কান দিল না, ওদের বললো, “ঠাকুর পুজো আমি দেব আমা’র মতন করে, সেখানে মন্ত্রের কি দরকার, কারুর মধ্যস্ততার করার কি দরকার?”

প্রায় এক ঘণ্টা’ লাইনে দাঁড়িয়ে ঠেলাঠেলি’ করে শেষ পর্যন্ত দর্শন মিলল। একটা’ অ’তি ক্ষুদ্র দরজা দিয়ে প্রবেশ করলাম একটা’ অ’তি ক্ষুদ্র গর্ভ মন্দিরে, আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে শিবের মূর্তি কোথায়? ছন্দা আমা’কে মেঝের মা’ঝে একটা’ কালো পাথর দেখিয়ে বললো, “ওই যে শিব লি’ঙ্গ।”

চারপাশে যা লোকের ভিড় আর চিৎকার চেঁচামেচি তাতে কি আর শান্তি করে পুজো দেওয়া যায়? কিন্তু ছন্দার দেওয়া চাই, আমি ওকে দুই হা’তে আগল করে একপাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। ডালি’তে আনা ফুল বেল পাতা জল দিয়ে পুজো দিল। এর মা’ঝে একটা’ পান্ডা আবার আমা’র কপালে আর ছন্দার কপালে সিঁদুরের তিলক কেটে দিল।

ওইখান থেকে কোন রকমে বেঁচে বেড়িয়ে ওকে বললাম, “আর যদি কোন মন্দিরে আমা’কে ঢুকিয়েছ…..”

হেসে আমা’কে বললো, “দেখে শুনে প্রেম করতে পারতে! তাহলে এই সমস্যা হতো না।”

আমি বললাম, “কলেজে পড়ার সময়ে জানতাম না যে তুমি পাথর দেখলেই পেন্নাম ঠুকবে।”

অ’ভিমা’নিনীর মা’নে লেগে গেল, “এখন সময় আছে, অ’ন্য মেয়ে খুঁজে নিতে পারো।”

আমি ওর কাঁধে হা’ত রেখে বললাম, “যা বাবা, এইটুকু ঠাট্টা’ করতে পারবো না?”

আমা’র বাজুতে চিমটি কেটে বললো, “যা খুশি নিয়ে ঠাট্টা’ করো, কিন্তু আমা’র ঠাকুর আমা’র বি’শ্বাস নিয়ে একদম নয়।”

সেদিনের পর থেকে কোনোদিন ওর পুজো অ’র্চনা নিয়ে কিছু বলি’নি। সেদিনের কথায় আমি বুঝেছিলাম কারুর বি’শ্বাসে কোনোদিন আঘাত হা’নতে নেই। বি’শ্বাসের জোরে এই পৃথিবী চলে, মা’নুষ পরস্পরকে ভালোবাসে। তারপরে ছন্দা অ’বশ্য আমা’কে, প্রনাম করতে অ’থবা মন্দিরে যেতে বি’শেষ জোরাজুরি করত না তবে ওর মন রাখতে আর বি’শ্বাসের জন্য ওর সাথে যেতাম।

মন্দির প্রাঙ্গনে আরও দেব দেবীর ছোট ছোট মন্দির, সব বি’গ্রহের সামনে দাঁড়িয়ে প্রনাম করলো। পুজো সেরে মন্দির থেকে বের হতে আমা’দের দুপুর হয়ে গেল। ছন্দা বললো আর অ’নুকুল ঠাকুরের আশ্রমে যাবে না, খেয়ে দেয়ে একটু বি’শ্রাম নিয়ে বি’কেলে ভাইয়ের স্কুলে যেতে হবে।

মন্দির থেকে বেড়িয়ে অ’লি’গলি’ পেড়িয়ে একটা’ মিষ্টির দোকানের সামনে এসে বললো, “এখানের রসগোল্লা খেয়ে দেখ, ওই কোলকাতার রসগল্লাকেও হা’র মা’নিয়ে যাবে।”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তাই নাকি?”

অ’বন্তিকা নাম ছিলো ওই মিষ্টির দোকানের, আজও আছে ওইখানে দাঁড়িয়ে, পুরানো নতুন যারাই যায় একবার অ’বন্তিকার রসগোল্লা খায়। আমরাও পুরি আর ছোলার ডাল খেয়ে হোটেলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। হোটেলে যাওয়ার পথে দেওঘরের ইতিহা’স আমা’কে শুনাল, অ’ত ধার্মিক আমি কোনোদিন ছিলাম না তাই মন দিয়ে শুনলাম ওর গল্প। ভাইকে ভর্তি করতে এসে নন্দন পাহা’ড়, ত্রিকুট পাহা’ড়, তপোবন আরো অ’নেক জায়গা ঘুরে এসেছে। কিন্তু সব জায়গায় মন্দির তাই ছন্দা আর আমা’কে জোর করলো না। তবে আমরা ঠিক করলাম যে একবার দেওঘরের আশেপাশের জায়গাও ঘুরে দেখে নেব, পারলে ম্যাসাঞ্জোর ড্যাম দেখে আসা যাবে।

দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু বি’শ্রাম নিয়ে বি’কেলের আগেই আমরা রওনা দিলাম মিশন স্কুলের দিকে। পথে যেতে যেতে সেই মিশনের কথা আমা’কে বললো। বি’শাল লোহা’র গেটের সামনে আমা’দের নামতে হল। গেটের ভেতরে ঢুকতেই মনে হল এক অ’ন্য জগতে এসে গেছি। সোজা একটা’ রাস্তা সদর গেট থেকে মন্দির পর্যন্ত, একটু ভালো ভাবে তাকালে এমন কি মন্দিরের ভেতর পর্যন্ত দেখা যায়। চারপাশে বড় বড় খেলার মা’ঠ, এক পাশে স্কুল, আর মন্দিরের চারদিকে ছড়িয়ে ছেলেদের থাকার ধাম। আমরা যখন স্কুলে পৌঁছেছিলাম তখন ওদের স্কুলের ছুটি হয়েছিলো। এক রঙের ড্রেস পরা অ’ত গুলো ছেলে কিলবি’ল করে স্কুল থেকে বেড়িয়ে এল। আমি ভাবলাম এদের মধ্যে ছন্দার ভাইকে কি করে খুঁজে পাওয়া যাবে। ছন্দা ঠিক ওর ভাইকে খুঁজে বের করলো আর দিদিকে দেখে সত্যজিত দৌড়ে এলো। সেই প্রথম ওর সাথে দেখা, মা’থার চুল উস্কোখুস্কো। ঠিক যেমন ভাবে বড়দি আমা’কে স্কুল যাওয়ার আগে জামা’ প্যান্ট ঠিক করে মা’থা আঁচরে দিত ঠিক সেই ভাবে ওর ওই চুলের মধ্যে আঙ্গুল ডুবি’য়ে আঁচরে দিল।

ছন্দা আমা’কে সত্যজিতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। এত দুষ্টু ছেলে, মিচকি হেসে আমা’কে জিজ্ঞেস করলো, “তুমি তো টুক করে দিদিকে নিয়ে পালাবে আর আমি কি করবো?”

ছন্দা ওকে মৃ’দু বকে বললো, “হ্যাঁ তুই খুব পেকে গেছিস তাই না।” ব্যাগ খুলে ওর জিনিসপত্র দিয়ে বললো ওই গুলো রেখে আসতে।

আমি ছন্দার দিকে দেখে ওকে বললাম, “আমি যেখানে যাবো তোকে সঙ্গে নিয়ে যাবো চিন্তা নেই।”

আমরা ঘুরে ঘুরে মিশন দেখলাম, বি’কেলের প্রার্থনা দেখলাম, বি’শাল মন্দিরের নাট মন্দিরে সাড়ে তিনশ ছেলের একসাথে বন্দনা গান। সেই সব শুনে অ’বাক হয়ে যেতে হয় আমি যেন অ’ন্য এক আধ্যাত্মিকতায় বি’চরন করছিলাম সেই সময়ে।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১৩)

বেশ কিছুক্ষণ সত্যজিতের মিশনে কাটিয়ে রাতের খাবার একে বারে সেরে হোটেলে ফিরে এলাম। গত রাতে ঘুম হয়নি তাঁর ওপরে আবার সারাদিন ঘুরে বেড়িয়েছিলাম দুইজনেই। হোটেল ঢুকে হা’ত পা ধুয়ে বি’ছানায় পড়তেই আমা’র শরীর ছেড়ে দিল কিন্তু মন ওদিকে কিছুতেই মা’নছে না। পাশে প্রেয়সী, এক বি’ছানায় একসাথে ঘুমা’বে একটু আদর একটু সোহা’গ।

আমি কাপড় ছেড়ে লুঙ্গি পরে আধশোয়া হয়ে একটা’ সিগারেট ধরালাম আর ছন্দাকে ঘুর ঘুর করতে দেখলাম। কামরায় ঢুকে হা’ত মুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিল। পরনে একটা’ গোলাপি রঙের পাতলা রাত্রিবাস, দেখলেই বোঝা যায় যে তাঁর নিচে কোন অ’ন্তর্বাস নেই। আমা’র দিকে চোখ কুঁচকে ভ্রুকুটি নিয়ে তাকিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিল, ঠোঁটে মা’খা দুষ্টুমি ভরা হা’সি যার অ’র্থ আমি যাই করি না কেন ওকে ছুঁতে পারবো না কিছুতেই। আমি ওর ওই পোশাক দেখে চট করে গেঞ্জি খুলে ফেললাম আর সেই দেখে ছন্দার চক্ষু চড়ক গাছ।

আয়নার সামনে বসে প্রসাধনি সারতে সারতে আমা’র দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললো, “গেঞ্জি খুললে কেন, ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে।”

উত্তরে আমি বললাম, “তোমা’কে এই পোশাকে দেখে গরম লেগে গেল।”

চশমা’ খুলে মুখে প্রলেপ লাগানোর সময়ে আমা’কে বললো, “তাহলে আরো একবার স্নান করে এস সব গরম নেমে যাবে।”

প্রসাধনি সেরে বি’ছানার পাশে এসে নিজের বালি’শ খাটের একপাশে টেনে নিয়ে মিচকি হেসে বললো, “এই দুরত্ব যেন একফোঁটা’ কম না হয়। আমি কিন্তু রামপুরি চাকু সাথে এনেছি, ধরতে এলেই কিন্তু চেঁচামেচি করে লোক জড় করে ফেলবো।”

একটা’ই লেপ সেটা’ই নিজের দিকে টেনে নিয়ে আমা’কে দুষ্টু মিষ্টি হা’সি দিয়ে বললো, “এবারে লাইট নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ো।”

আমি ওর দিকে শয়তানি হা’সি দিয়ে বললাম, “হ্যাঁ আমি যেন এইখানে ঘুমা’তে এসেছি।”

লেপের মধ্যে ঢুকে আমা’র গালে একটা’ চাঁটি মেরে বললো, “কি করতে এসেছ শুনি?”

আমি ওর হা’ত নিজের গালে চেপে ধরে বললাম, “একটু আদর।”

আমা’র গালে আদুরে চিমটি কেটে বললো, “হয়েছে অ’নেক প্রেম দেখান হয়েছে, এবারে লাইট নিভিয়ে দাও।”

আমি আলো নিভিয়ে ছোট হলদে রঙের বাতিটা’ জ্বালি’য়ে দিলাম, ছন্দা চশমা’ খুলে বি’ছানার একপাশে রেখে লেপখানা বুক পর্যন্ত টেনে শুয়ে পড়ল, আমি ওর পাশে শুয়ে পড়লাম কিন্তু কিছুতেই আমা’কে লেপ দিতে চায় না। কাক চড়াইয়ের মা’রামা’রি শুরু হল। ওর নরম তুলতুলে শরীর নিয়ে খেলতে আমা’র বড় ভালো লাগছিলো, বারে ওর নরম কুঁচ যুগল আমা’র প্রশস্ত বুকের ওপরে পিষে যাচ্ছিল আর সেই সঙ্গে আমা’র রক্ত আমা’র উত্তেজনার পারদ চড়তে লাগলো। ওর চেহা’রা দেখে বুঝতে পারলাম যে ভালোবাসার অ’গ্নিবীণা ওর হৃদয়ে রিনিঝিনি করে বাজতে শুরু করেছে। আমি ওকে টেনে আমা’র দেহের ওপরে উঠিয়ে নিলাম। বুকের ওপরে হা’ত ভাঁজ করে আমা’দের মধ্যে একটা’ ব্যাবধান রেখে আমা’র চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আলতো করে গোলাপি জিবটা’ বের করে নিচের ঠোঁটের ওপরে বুলি’য়ে নেয় ছন্দা। সুন্দর ওই চেহা’রা লাল হয়ে গেছে লজ্জায় চোখের পাতা ভারি হয়ে আসে আমা’র আগুনে চাহনির সামনে।

আমা’র নাকের ওপরে তর্জনী দিয়ে আঁকি কেটে সোহা’গ ভরা কণ্ঠে বললো, “তোমা’র নাকি ঘুম পাচ্ছিল, গা ম্যাজ ম্যাজ করছিলো? কোথায় গেল অ’ইসব?”

ওই কুহুডাক শুনে আমি আর শান্ত থাকতে পারলাম না, দুই বাহু দিয়ে ওর নরম দেহ পিষে নিলাম বুকের ওপরে আর ওর আঙ্গুল কামড়ে বললাম, “পাচ্ছিল বটে তবে একটা’ সুন্দরী জল পরী এসে আমা’র ঘুমের বারোটা’ বাজিয়ে দিল এবারে একটু আদর না করলে আর থাকতে পারছি না সোনা।”

আমা’র লুঙ্গি আর অ’ন্তর্বাস ফুঁড়ে আমা’র কঠিন পুরুষাঙ্গ ওর নরম পেটের ওপরে বি’ঁধে গেল।

আমা’র নাকের ডগায় একটা’ ছোটো চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো সুন্দরী ললনা, “আমা’কে ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকালে চোখ দুটো অ’ন্ধ করে দেব।”

আমি ওর নরম গালে গাল ঘষে বললাম, “ওপেন হা’র্ট সার্জারি করে দেখে নাও কে আছে এই বুকে।”

আমা’র অ’ন্তরবাসের ভেতরের সিংহটি বারেবারে প্রবল ভাবে হুঙ্কার ছেড়ে নিজের অ’স্তিত্বের জানান দিয়ে চলেছে। ওর নরম তুলতুলে পেটের সাথে চেপে গেছে একেবারে। শরীরের উত্তাপ দুই শরীরে ছড়িয়ে পড়তে দেরি লাগলো না। আমি ছন্দাকে জড়িয়ে ধরে বি’ছানায় গড়িয়ে গেলাম। নরম বি’ছানায় চিত হতে শুতেই আমা’র গলা জড়িয়ে ধরলো ছন্দা, পরনের পাতলা রাত্রিবাস স্থানচ্যুত হল, সুগোল বক্ষ যুগল আমা’র চোখের সামনে উন্মচিত হয়ে গেল, উদ্ধত কুঁচ শৃঙ্গের মা’ঝের কালোচে বৃন্ত দুটি যেন আমা’র পানে চাতকের ন্যায় চেয়ে রয়েছে একটু ঠোঁটের ছোঁয়া পাওয়ার আকুল আকাঙ্খায়।

আমা’র দৃষ্টি আটকে যায় ওর কুঁচ শৃঙ্গ দেখে। ছন্দার প্রতি নিঃশ্বাসে কামনার আগুন, প্রেমের আবেগে নয়ন জোড়া সিক্ত নয়নে হয়ে ওঠে আর ঝরে সোহা’গের প্রবল কামনা। আমা’র লুঙ্গির গিঁট কখন খুলে গেছে সেটা’র খেয়াল নেই, ওর রাত্রিবাস আমা’দের কামকেলি’র ফলে প্রায় কোমরে কাছে উঠে এসেছে। ছন্দা কোন অ’ন্তর্বাস পরেনি সেটা’ আমা’র পুরুষাঙ্গের ছোঁয়ায় বুঝতে পারলাম। আমা’দের মিলি’ত শরীরের আনাচে কানাচে থেকে আগুনের ফুলকি নির্গত হচ্ছে থেকে থেকে। নিঃশ্বাস নেওয়ার ফলে, বুকের ওপরে ঢেউ খেলে বেড়াচ্ছে।

আমি ওর মুখখানি আঁজলা করে তুলে ধরে বললাম, “তুমি অ’নেক দুষ্টু মেয়ে, এবারে তার শাস্তি দেব।”

আমি জিব বের করে ওর নাকের ওপরে আলতো করে চেটে দিলাম। ছন্দা আর থাকতে না পেরে দু’হা’ত দিয়ে আমা’র চুল আঁকড়ে ধরে টেনে নেয় নিজের ঠোঁটের ওপরে, চেপে ধরে কোমল অ’ধর ওষ্ঠ। গোলাপি জিব বের করে বুলি’য়ে দেয় আমা’র পুরু ঠোঁটের ওপরে দুই জোড়া অ’ধর ওষ্ঠ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

ছন্দার পেলব জঙ্ঘার ওপরে আমা’র ক্ষিপ্ত পুরুষাঙ্গ বারেবারে অ’স্তিত্বের জানান দেয়। আমা’র ডান পা ওর জঙ্ঘা পায়ের মা’ঝে ভাঁজ হয়ে ঢুকে যায়, নগ্ন কঠিন জঙ্ঘার ওপরে ছন্দার সিক্ত নারীত্বের অ’ধর পিষ্ট হয়ে যায়। ছন্দা থরথর করে কেঁপে ওঠে আর আমা’র ঠোঁট কামড়ে ধরে। প্রতিনিয়ত ঘর্ষণের ফলে সিক্ত নারীত্বের অ’ধর হতে ফল্গুধারা অ’ঝোর ঝরনা ধারায় পরিণত হয়। চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয় আমা’র ঠোঁট, গাল, থেকে থেকে কামড়ে ধরে ঠোঁট। প্রেম উন্মা’দিনী আমা’র মা’থার চুল, দশ আঙ্গুলে খামচে ধরে।

মা’থা ছেড়ে ওর হা’ত চলে আসে আমা’র পুরুষালি’ কাঁধের ওপরে, আমি ওর নরম গোলাপি ঠোঁট ছেড়ে নিচের দিকে মুখ নামিয়ে আনলাম, ধীরে ধীরে ওর গালে, চিবুকে, গলায় অ’জস্র চুমুতে ভরিয়ে দিলাম। প্রশস্ত বুকের নিচে পিষ্ট হয়ে সমতল হয়ে যায় ছন্দার কোমল তুলতুলে কুঁচ যুগল। ছন্দা চোখ দুটি বন্দ করে নেয়, ধিরে ধিরে আমা’র ঠোঁট নেমে আসে ওর কোমল বক্ষের ওপরে। একটা’ কুঁচ মুখের মধ্যে নিয়ে আলতো করে কামড়ে দিলাম ওর ফুটন্ত বৃন্ত। সারা শরীরের প্রতিটি রোমকূপ আমা’দের আসন্ন মিলনের প্রতীক্ষায় মা’থা চাড়া দিয়ে উঠলো।

কামড় দিতেই কেঁপে উঠলো ছন্দা, “শয়তান এই ছিলো তোমা’র মনে? আমা’কে একেবারে পাগল করে দিচ্ছ যে……”

নিঃশ্বাসে প্রেমা’গ্নি অ’ঝোরে ঝড়ে পড়ছে। আমা’র কাঁধে এক হা’ত রেখে আমা’র মা’থা চেপে ধরে নিজের বুকের ওপরে। আমা’র সর্বাঙ্গে শতশত ক্ষুদ্র পতঙ্গ যেন দৌড়ে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে ঠোঁট নামিয়ে আনলাম ওর বক্ষ বলয়ের নিচে। ডান হা’ত নেমে আসে ছন্দার জঙ্ঘা মা’ঝের কোমল অ’ধরে। ছন্দা নারীত্বের কোমল অ’ধরে আমা’র কঠিন আঙ্গুলের পরশ পেতেই টা’নটা’ন হয়ে যায়। সেই প্রথম কোন সম্পূর্ণ নারীকে আস্বাদন করতে চলেছি, আমা’র শয়তান আঙ্গুল ওর শিক্ত অ’ধর ওষ্ঠদ্বয় নিয়ে এক উন্মা’দের খেলায় মেতে উঠলো।

দুই চোখের পাতা শক্ত করে বন্ধ, ওর ঘাড় বেঁকে গেল পেছন দিকে, বালি’শের ওপরে মা’থা চেপে ধরে মিহি শীৎকার করে ওঠে ছন্দা, “উমমমমম আর পারছি না যে সোনা, তুমি আমা’কে পাগল করে দিলে একেবারে……”

দু’হা’ত দিয়ে সারা শরীরের শেষ শক্তি টুকু নিঙরে আমা’র চুল আঁকড়ে ধরে টেনে নেয় নিজের বুকের ওপরে। ছন্দার অ’ঙ্গে অ’ঙ্গে বি’দ্যুৎ তরঙ্গ খেলে বেড়ায়। আমি মধ্যমা’ আর অ’নামিকা ওর জঙ্ঘা মা’ঝের অ’ধরে প্রবেশ করিয়ে দিলাম আর সঙ্গে সঙ্গে নিচের ঠোঁটটি কামড়ে ধরে ছন্দা। আমা’র দুই আঙ্গুল ভিজে গেল, ওর নারীত্বের গহ্বর যেন এক উষ্ণপ্রস্রবণ। ওর সারা শরীর ধনুকের মতন বেঁকে যায় গেল কেউ যেন ওর মা’থা থেকে কোমর অ’বধি ছিলা দিয়ে টেনে বেঁধেছে।

অ’স্ফুট শীৎকার করে ওঠে আমা’র হৃদ সুন্দরী, “মেরে ফেললে যে…… সোনা”

শরীরের শেষ শক্তি টুকু গুটিয়ে নিয়ে দু পা দিয়ে চেপে ধরে নিজের ওপরে টেনে নেয় আমা’কে। আমি আঙ্গুল সঞ্চালনের গতি বাড়িয়ে দিলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই ছিলা ভঙ্গ ধনুকের মতন টঙ্কার দিয়ে নেতিয়ে পড়ল ছন্দা, সেই সাথে বুকের ওপরে আমা’কে চেপে ধরলো। আমা’র আঙ্গুল ভিজে গেল, বাঁধ ভাঙ্গা নদীর মতন শত ধারায় সুধা ঝরে পড়লো। সেই ধারার যেন কোন অ’ন্ত নেই অ’বি’শ্রান্ত অ’বি’রাম। আমা’র পেশি বহুল দেহের নিচে ঝরা পাতার মতন নেতিয়ে পড়লো ছন্দা।

বেশ কিছুক্ষণ পরে পদ্ম পাপড়ির মতন চোখের পাতা খুলে দুষ্টু মিষ্টি হা’সি মা’খিয়ে দিল আমা’কে, চোখের কোলে টলটল করছে এক বি’ন্দু খুশীর জোয়ার। দুই হা’তে অ’ঞ্জলি’র মতন আমা’র মুখ ধরে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি দেখছ এমন ভাবে?”

মৃ’দু প্রেমের বকা দিল আমা’কে, “আমি আমা’র ভালোবাসা দেখছি তাতে তোমা’র কি?” বলেই আমা’র নাকের ওপরে আলতো করে নাক ঘষে দিল, “তুমি খুব শয়তান ছেলে, বলেছিলাম লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়তে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমা’কে পাগল করে দিয়েছ একেবারে।”

আমি আমা’র অ’ন্তর্বাস খুলে নগ্ন হয়ে গেলাম। আমা’র দন্ডায়মা’ন পুরুষাঙ্গ ছন্দার সিক্ত নিম্ন অ’ধরের দোর গোরায় কড়া নেড়ে নিজের অ’স্তিত্তের জানান দিয়ে দিল। ছন্দার উত্তপ্ত নারীত্বের ছোঁয়া পেয়ে আমি ব্যাকুল হয়ে গেলাম শেষ বাধা টুকু কাটিয়ে দেহের মিলনের আকাঙ্খায়। দেহ জোড়া যেন আর আমা’দের বশে নেই, দুই কাতর কপোত কপোতী মেতেছে নরনারীর আদিম মিলনের খেলায়। ছন্দা ওর কোমর উপরের দিকে ঠেলে ধরে, নিজের নিম্ন অ’ধর চেপে ধরে আমা’র পুরুষাঙ্গের ওপরে। লজ্জাবতীর লজ্জা নেই, নেই পিছিয়ে যাওয়ার পথ। ওর শিক্ত নারীত্বের ছোঁয়ায় আমা’র পুরুষাঙ্গ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমি মিলন আখাঙ্খায় উন্মা’দ হয়ে গেলাম, হৃদয় সঙ্গিনীর জঙ্ঘার মা’ঝে নিজেকে হা’রিয়ে দিতে উন্মুখ হয়ে উঠলাম।

আবেগ ভরা কণ্ঠে ওকে বললাম, “এবারে কিন্তু আর আঙ্গুল যাবে না সোনা।”

ওর শরীরে ভর দিয়ে এলো প্রচন্ড কামিনী শক্তি, আমা’কে ঠেলে ওপরে উঠেতে চায় ছন্দা, নিজের নারীত্বের অ’ভ্যন্তরে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করে নিতে চায় আমা’কে। মিহি শীৎকারে আমা’কে আহবান জানায়, “আমি তোমা’র, পার্থ, আমা’কে নিজের করে নাও একেবারে।”

আমি ওর মা’থার নিচে হা’ত দিয়ে ওর মা’থা উঠিয়ে দিলাম আর ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলি’য়ে দিলাম। সেদিনের আগে পর্যন্ত মিলনের সুখের আনন্দ যে কতটা’ চরম হতে পারে সেটা’ আমা’দের অ’জানা ছিলো। আমা’র কটিদেশ নেমে আসতেই ওর নারীত্বের দ্বার খুলে যায়। কখন যে আমি ওর মধ্যে প্রবেশ করলাম তার বোধ রইলো না, ধীরে ধীরে হা’রিয়ে গেলাম দুইজনে। শৃঙ্গারে রত কপোত আমি, আমা’র সুন্দরী কপোতীর কোমল শরীর নিয়ে আদিম ক্রীড়ায় মেতে উঠলাম। মন্থনের গতি কখন ধীরে, কখন তীব্র। আমা’র দেহের নিচে পিষ্ট হয়ে যায় সঙ্গিনী। চূড়ান্ত শৃঙ্গ মা’ঝে মা’ঝে হা’তছানি দিয়ে ডাক দেয়, দুরে নয় বেশি, তবুও সেই শৃঙ্গ অ’ধরা রাখতে প্রবল প্রচেষ্টা’ চালায় দু’জনেই। কেউ চাইছিলাম না এই রাত শেষ হয়ে যাক। সেই ঠাণ্ডায় আমা’দের কেলি’র ফলে ঘেমে গেলাম, ললনার শরীরে বি’ন্দু বি’ন্দু ঘাম নির্যাস মিশে যায় আমা’র গায়ের ঘাম। অ’নাবি’ল আনন্দের সমুদ্র সৈকতে বয়ে গেলাম দুইজনে, ঢেউয়ের তালে তালে নেচে উঠলাম পরস্পরের দেহ নিয়ে।

অ’বশেষে আমা’র ফুটন্ত লাভা মোহনার পানে ধেয়ে যায়, ছন্দার নারীত্বের বারিধারার সাথে মিলি’ত হবার জন্য। শরীরের শেষ শক্তি টুকু গুছিয়ে নিয়ে চেপে আমি আমা’র প্রানের কপোতীকে নরম বি’ছানার সাথে চেপে ধরলাম। ছন্দা কোমল বাহু দিয়ে শেষ শক্তিটুকু উজাড় করে পেঁচিয়ে ধরে আমা’র শরীর, দুই পায়ে আঁকড়ে ধরে আমা’র কোমর। আর আমরা দুটি আলাদা প্রাণ রইলাম না, সব বন্ধন কাটিয়ে পরস্পর মা’ঝে বি’লীন হয়ে গেলাম।

মিলন শেষে আমা’র প্রশস্ত বুকের ওপরে মা’থা রেখে শুয়ে প্রশ্ন করলো, “চিরদিন আমা’কে এই ভাবে ভালোবাসবে?”

ওর শরীরে মা’দকতাময় সুবাস বুকের মধ্যে টেনে ওকে বললাম, “কালো কে দেখছে সোনা, তবে আগামি প্রতিটি মুহূর্ত তোমা’কে এই ভাবে ভালোবাসব। কাল এক নতুন সকাল হবে, এক নতুন দিনে আবার নতুন করে তোমা’কে ভালোবাসবো।”

ছন্দা আলতো করে চুমু খায় আমা’র বুকে, ওর বুকটা’ এক অ’নাবি’ল ভালোলাগার অ’নুভূতিতে ভরে যায়, চোখের কোলে অ’শ্রু দানা দেখা দেয়। দুইজনে কখন যে পরস্পরকে এইভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরেছিলাম সেটা’ আর খেয়াল নেই।

দুইদিন ছিলাম দেওঘরে, পরের দিন আর ম্যাসাঞ্জর দেখতে যাওয়া হয়নি। দিনের আলোতে ছন্দা আমা’র কাছে আসতে নারাজ তাও আমরা দুষ্টুমি করেছিলাম।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১৪)

এম টেক প্রায় শেষ হতে চললো, রিসার্চ করবো না চাকরি করব সেই নিয়ে একটু দোটা’নায় পড়লাম। একবার ছন্দার সাথে আলোচনা করেছিলাম, ছন্দা আমা’কে বলেছিলো যে রিসার্চ করতে।

সেদিন ছন্দার অ’ফিসের পরে আমরা ফ্লুরিসে বসে কেক আর চা খাচ্ছিলাম। ছন্দা আমা’কে জিজ্ঞেস করলো, “কি নিয়ে রিসার্চ করবে কিছু ঠিক করলে?”

আমি তখন পর্যন্ত সেই রকম কিছু ভাবি’নি কিন্তু বড় ইচ্ছে ছিলো থার্মোডায়নামিক্স নিয়ে রিসার্চ করার, আমি সেটা’ই ওকে জানালাম। ছন্দা চশমা’র ওপর দিয়ে আমা’র দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বললো, “এখানে না বি’দেশে?”

আমি ওকে হেসে বললাম, “থার্মোডায়নামিক্স নিয়ে করব এই টুকু জানি, এখানে না বি’দেশে সেটা’ এখন ভাবি’নি। তবে জি আর ই দেওয়ার ইচ্ছে আছে সেটা’ অ’নেক কঠিন ব্যাপার তারপরে দেখা যাবে।” কিছুক্ষণ থেমে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি মা’সিমা’কে আমা’দের ব্যাপারে কিছু বললে কি?”

ছন্দা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মিচকি হেসে বললো, “নিজেই নিজের বাড়িতে কিছু বলেনি আর আমা’কে আগে বলতে বলছে। যাই হোক আমি মা’’কে তোমা’র ব্যাপারে একটু খানি বলে রেখেছি, মা’ তোমা’কে এই রবি’বার বাড়িতে ডেকেছে।”

আমি হেসে বললাম, “বাপ রে একদম শাশুড়ির সামনে যেতে হবে? এযে বাঘের মুখে পড়ার চেয়েও সাঙ্ঘাতিক।”

আমা’র হা’তের ওপরে চাঁটি মেরে বললো, “তুমি না একদম যাঃতা আমা’র মা’ মোটেই রাগি নয়। আর তোমা’কে দেখে গলে যাবে দেখ। এম টেক করা জামা’ই তার ওপরে আবার রিসার্চ করবে সে তো বি’শাল ব্যাপার।”

আমি ওর হা’ত চেপে প্রশ্ন করলাম, “তোমা’র অ’মত নেই তো?”

হা’তের তালুতে চিমটি কেটে বললো কপট রাগ দেখিয়ে বললো, “হ্যাঁ খুব আছে, রবি’বার যদি না আস তাহলে আর বি’য়েই করবো না।”

সেই রবি’বার দুপুরের আগেই আমি ছন্দার বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। তার আগের রাতে আমা’র ঘুম হলো না, কি ভাবে কি কথা বলবো। এদিকে নিজের বাড়িতে কিছুই জানানো হয়নি, এমত অ’বস্থায় ছন্দার মা’য়ের সামনে কি বলবো। ওর বাড়িতে ঢোকার আগে আমা’র ঘাম ছুটে গেল, মনে হল বুকের ওপরে শক্তিশেল বি’দ্ধ হয়েছে।

কলি’ং বেল বাজানোর আগে আমি বার কয়েক বড় বড় শ্বাস নিলাম। কলি’ং বেল বাজাতেই ছন্দা এসে দরজা খুলে দিল, প্রেম করার পরে সেই প্রথমবার ছন্দার বাড়িতে পা রাখলাম। ছোট দুটো কামরার ঘর আর একটা’ ছোট বসার ঘর, ছোট হলেও বেশ সুন্দর করে সাজানো। আমি ওকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার, চোখের ইশারায় আমা’কে উত্তরে বললো যে সব ঠিক আছে শুধু আমি যেন ঠিক থাকি। কিছু পরে ছন্দার মা’, যূথিকা দেবী ঘরে ঢুকলেন। আমি উঠে গিয়ে পায়ে হা’ত দিয়ে প্রনাম করলাম। আমা’র কুশল মঙ্গল জিজ্ঞেস করলেন, বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলেন, তারপরে দুপুরের খাওয়া দাওয়া। আমা’র বুক দুরুদুরু করতে শুরু করে দিল, ছাগল কাটা’র আগে যেমন তাকে খাইয়ে পড়িয়ে পুজো করা হয় নিজেকে ঠিক তেমন মনে হল। আমি যদিও বেশি খেতে ভালোবাসি না তাও মা’সিমা’ অ’নেক কিছু রান্না করেছিলেন।

খেতে বসে এটা’ খাও সেটা’ খাও আর ছন্দা মা’সিমা’ কে বারন করে বলে, “আরে মা’ ওকে অ’ত কিছু দিও না, ওকে শুধু ডাল ভাত আলু ভাজা দিও তাতেই খুশি। হ্যাঁ ইলি’শটা’ আর মিষ্টিটা’ একটু ভালো খায়, তোমা’র খরচ বেঁচে যাবে।”

সেই কথা শুনে মা’সিমা’ হেসে ফেললেন, “প্রথম বার এসেছে একটু খাবে না?”

আমিও মন রক্ষার্থে অ’নেক কিছু খেয়ে ফেললাম আর বললাম, “আপনার মেয়ে কি সত্যি রান্নাবান্না পারে না?”

মা’সিমা’ হেসে বললেন ওকে কোনোদিন রান্নাঘরে ঢুকতে দেয়নি তবে মা’ঝে মা’ঝে নিজে থেকে কিছু করতে চেষ্টা’ করে। আমি বললাম যেদিন ওর হা’তের রান্না খেতে হবে সেদিন আমা’কে হস্পিটা’ল যেতে হবে। ছন্দা ওর মা’য়ের পেছনে দাঁড়িয়ে আমা’র দিকে মুখ ভেঙ্গিয়ে জানিয়ে দিল, যে পরে আমা’কে দেখে নেবে।

খাওয়ার পরে মা’সিমা’ আমা’কে বাড়ির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। আমি উত্তরে বাবার নাম বললাম, আমা’দের বাড়ির ব্যাপারে আমা’দের পরিবারের ব্যাপারে সব কিছু জানালাম, আমি যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি, আমা’দের বাড়ির সাথে অ’নুসুয়ার বাড়ির যোগাযোগ ইত্যাদি সব কিছু খুলে জানালাম।

সবকিছু শোনার পরে মা’সিমা’ আমা’কে বললেন, “শোন বাবা, আমরা পূর্ব বঙ্গের মা’নুষ।” আমি মা’থা নেড়ে জানিয়ে দিলাম যে ছন্দা আমা’কে ওর ইতিহা’স আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছে। মা’সিমা’ মেয়ের হা’তখানি নিজের হা’তের মুঠিতে নিয়ে আমা’কে বললেন, “আমা’র একটা’ই মেয়ে, বড় ছেলে বি’য়ে করে আলাদা হয়ে গেছে, ছোট ছেলে আমা’র চেয়ে ওর বেশি কাছের ওর পড়াশুনা সবকিছু এই করেছে। অ’নেক কষ্টে একে আমি এই পর্যন্ত এনেছি বাকিটা’ ওর হা’তে আর তোমা’র হা’তে। আমা’র অ’মত নেই তবে তুমি নিজের বাড়িতে একবার এই বি’ষয়ে বি’স্তারে কথা বল। তোমরা পশ্চিম বঙ্গের আদি বাসিন্দা তাঁর ওপরে ব্রাহ্মণ পরিবার, কথা বলে দেখ তাদের কি মতামত।”

আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ছন্দার দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে মা’সিমা’র কথা শুনে ওর চোখ ছলছল করছে। আমি মা’সিমা’র হা’তখানি নিজের হা’তের মধ্যে নিয়ে বললাম, “আমি ঠিক সময়ে সব কিছু ঠিক করে দেব।”

এর মা’ঝে একদিন বউবাজার গিয়ে ওর জন্য একটা’ সোনার হা’র কিনলাম। সেই হা’র গলায় পরে খুব খুশি, আর আমা’র খুশি ওর ঠোঁটের মিষ্টি হা’সি দেখে। হা’র কেনার সময়ে আমা’কে বকা শুনতে হয়েছিলো, ছয় মা’সের স্টা’ইপেন্ডের টা’কা জমিয়ে ওকে ওই সোনার হা’র কিনে দিয়েছিলাম।

জানিনা কি করে কি ঠিক করব তবে সেদিন মা’সিমা’র সামনে কথা দিয়ে এসেছিলাম। রাতে বি’ছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবলাম কি করা যায়। ভাবতে ভাবতে সকালের দিকে পথ খুঁজে পেলাম, নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে দাঁড় করাতে হবে যে বাড়ির কেউ আমা’র কথা ফেলতে পারবে না। ঠিক করলাম যে এম টেক করার পরে জি আর ই দেব আর বি’দেশ যাবো রিসার্চ করতে। জ্যাঠা বাবা সবাই একবার বি’দেশ থেকে পড়াশুনা করে এসেছে, সেই চুড়ায় আমা’কে পৌছাতেই হবে।

এরপরে একদিন আমি সবকিছু খুলে বললাম ছন্দাকে। আমা’র কথা শুনে ছন্দা বেঁকে বসল, কিছুতেই আমা’কে বি’দেশে ছাড়বে না। আমি নাকি বাইরে গেলে ওকে ভুলে যাবো। একদিকে আমা’র প্রেম আমা’র ভালোবাসা আর অ’ন্যদিকে আমা’র পড়াশুনা। আমি ছন্দাকে বুঝিয়ে উঠতে পারলাম না যে রিসার্চ সেরে আমি দেশে ফিরে আসব। ছন্দার এক কথা, আমি বি’দেশে গিয়ে অ’ইখানকার মেয়েদের দেখে ওকে ভুলে যাবো আর সেখানেই থেকে যাবো। ছন্দা আমা’র সাথে দেখা করা এমনকি কথা বলা পর্যন্ত বন্ধ করে দিল।

একদিন বি’কেলে ফ্লুরিসে বসে ওকে বললাম, “এই সব আমি আমা’দের ভবি’ষ্যতের জন্য করছি, সোনা। আমা’কে সেই চুড়ায় পৌছাতেই হবে। তুমি সোজা পথে কোনোদিন ভাবতে চেষ্টা’ কর না তাই না?”

ছলছল চোখে আমা’র দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি দুই বছরের জন্য বাইরে চলে যাবে, কোন বড় একটা’ ইউনিভার্সিটি থেকে এম ফিল করার পরে কি কেউ দেশে ফিরে আসে? তুমিও আসবে না আমি দৃঢ় বি’শ্বাসের সাথে বলতে পারি।”

আমি ওর হা’ত ধরে কাতর মিনতি করে বললাম, “ছন্দা, তুমি আমা’র প্রথম আর শেষ ভালোবাসা। তোমা’কে ছাড়া আর কাউকে এই বুকে কোনোদিন ঠাঁই দিতে পারবো না।”

ছন্দা ধরা গলায় বললো, “তারমা’নে তুমি এই বলতে চাও যে বি’য়ে করে আমি তোমা’র সাথে বি’দেশ চলে যাবো?”

আমি মা’থা নাড়িয়ে বললাম, “যদি আমি বি’দেশে থেকে যাই তাহলে সেটা’ই।”

ছন্দা মা’থা দুলি’য়ে বললো, “না সেটা’ কখনই সম্ভব নয় পার্থ, আমা’র ভাই এখন অ’নেক ছোট ওর পড়াশুনা আছে, মা’কে দেখার আছে, আমি তোমা’র সাথে কখনই বি’দেশ যেতে পারবো না।”

আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি চাও আমি তাহলে কি করবো?”

ছন্দা চশমা’ খুলে আঁচলের খুট দিয়ে চোখ মুছে আমা’কে অ’বাক করে বললো, “তুমি আমা’কে ভুলে যাও, পার্থ!”

আমা’কে কিছু বলার অ’বকাশ দিল না, উঠে দাঁড়িয়ে আমা’র দেওয়া গলার হা’র দেখিয়ে বললো, “আমা’র কপাল খালি’ থাকবে তোমা’র জন্য, যদি তুমি ফিরে আস তাহলে এই কপালে সিঁদুর পড়িও, না হলে….. এটা’ই আমা’র সর্বস্ব এটা’কে সম্বল করেই আমি বাকি জীবন কাটিয়ে দেব।”

আমি স্থানুবত ওই খানে অ’নেকক্ষণ বসে রইলাম, বসে বসে আমা’র জেদ চেপে গেল আমি জি আর ই দেব আর বাইরে যাবো। আমি আলবাত ফিরে আসব আর ওকে দেখিয়ে দেব যে আমা’র ভালোবাসা ফেলনা নয়, মিস মধুছন্দা সমা’দ্দারকে মিসেস মধুছন্দা চট্টোপাধ্যায় করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিলাম ওই ফ্লুরিসে বসে।

আমা’র ইচ্ছে ছিলো ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে থার্মোডায়নামিক্স নিয়ে রিসার্চ করার, এম টেক শেষ করে আমি জি আর ই দিলাম আর সেই ছাড় পত্র পেয়েও গেলাম। আমা’র সাথে সাথে নবীন ও জি আর ই দিয়েছিলো, জার্মা’নির খুব নামকরা একটা’ ইউনিভার্সিটিতে পি এইচ ডি করার ছাড় পত্র পেয়ে গেল।

দুই বছরে অ’নু শুধু গায়ে হা’ওয়া লাগিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছে তাই কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারল না আর না পারাটা’ই ওর আসল উদ্দেশ্য ছিলো যাতে ওর বাড়ি থেকে বি’য়ের ব্যাপারে চাপ না দেয় আর ততদিনে যাতে দেবু একটা’ ভালো চাকরি পেয়ে যায়। এম টেক করার পরে কলেজের লেকচারার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেল দেবু। দেবুর লেকচারার হওয়াতে অ’নু আহ্লাদে আটখানা এবারে ওদের বি’য়ে করাতে বি’শেষ অ’সুবি’ধে হবে না।

ছন্দার সাথে বেশ কয়েক সপ্তাহ কোন কথাবার্তা হল না, রোজ রাতে বি’ছানায় শুয়ে শুয়ে আমা’র বি’নিদ্র রজনী কাটত, ভাবতাম আমি যে পথে যাচ্ছি সেটা’ ঠিক না ভুল, উত্তর হা’তড়াতে হা’তড়াতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়তাম। আমা’র জি আর ই পাওয়ার খবর ছন্দাকে অ’নু দিয়েছিলো, ছন্দা তার উত্তরে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি দেখে অ’নু বি’স্মিত হয়েছিলো। আমি ওর বি’স্ময় দূর করে ওকে সব ঘটনা খুলে বলেছিলাম এবং এও বলেছিলাম যে ছন্দাকে আর কিছু যেন না বলে। আমি ওকে বলেছিলাম সব কিছু যেন সময়ের অ’পরেই ছেড়ে দেয়।

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১৫)

বহুদিন পর সেদিন নবীন, দেবু আমি আর পচা একসাথে আড্ডা মা’রলাম। পচা চাকরি করে ফুলে গেছে, গুজরাটে গিয়ে এক গুজরাটি মেয়ের প্রেমে পড়েছে তার নাম সঞ্জনা। নবীন বেশ ভারিক্কি হয়ে গেছে, তবে আগে মদ খেত না এখন মা’ঝে মা’ঝেই মদ খায়। দেবু চাকরি পাওয়ার পরে বেশ খোশমেজাজে ছিলো। পার্ক স্ট্রিটের একটা’ বারে বসে চারজনে হুইস্কি গিললাম আর পুরানো দিনের কথা মনে করলাম। মন বড় বলছিলো যে যদি ছন্দা অ’নু আর শ্যামলী পাশে থাকত তাহলে আমা’দের সেই পুরানো দিন এক বি’কেলের জন্য ফিরে আসত। তিন মেয়ের মধ্যে শুধু অ’নু হয়ত আসতে পারতো, কারন ছন্দার সাথে আমা’র অ’নেকদিন কথাবার্তা নেই। এর মা’ঝে ওর অ’ফিসে গিয়েছিলাম কিন্তু আমা’র সাথে কথা বলেনি ঠিক করে, দূর থেকে ছলছল চোখে আমা’র দিকে তাকিয়ে ট্যাক্সি করে বেরিয়ে গেল, আমি ওইখানে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অ’নেকক্ষণ। এই সব ঘটনা আর ওদের বললাম না। দেবু আমা’কে বললো যে এবারে বি’য়ে করতে চায়, নিজের বাড়িতে বলেছে এই ব্যাপারে, ওর মা’ এক কথায় রাজি, বি’ টেক করা সুন্দরী বৌমা’ কে হা’ত ছাড়া করতে চায়, ওর বাবা হ্যাঁ না কিছু বলেনি তবে রাজি হয়ে যেতে পারেন। ওদিকে অ’নু তখন কিছু বাড়িতে বলেনি, আমি যত বার বলি’ এই বারে বাড়িতে বলে দে, ওর কালোঘাম ছুটে যায় আর আমা’কে ঠেলে দেয়। আমি নিজেও বাড়িতে ছন্দার ব্যাপারে কিছুই বলি’নি, আগে লন্ডন থেকে ফিরি তারপরে বলব বলে ভেবে রেখেছিলাম। নবীন কে জিজ্ঞেস করাতেই কথা এড়িয়ে গেল, ছন্দা ওর মনের কথা আমা’কে জানিয়ে দিয়েছিলো তাই আর ওকে বেশি ঘাঁটা’লাম না।

সন্ধে নাগাদ বাড়িতে পা রাখতেই ভিরমি খেলাম। আমা’দের বৈঠকখানা লোকে লোকারণ্য, না না, বাইরের লোকজন নয় সবাই বাড়ির। কিন্তু দুই বাড়ির বাবা কাকা জ্যাঠা, মা’ জেঠিমা’ কাকিমা’, ওদিকে দেখি বড়দি আর বড় জামা’ইবাবু, অ’নুর বড় পিসি পিসেমশায়, ওর মা’মা’ রা, এদিকে বড় মা’মা’ মা’মি আমা’র মা’মা’ মা’মি সব মিলে প্রায় জনা ত্রিশ জন। বৈঠকখানা ভরে সবাই বসে হা’সাহা’সি গল্পে মেতে। মা’মা’ পিসিদের দেখে আমি বুঝতে পারলাম না হটা’ত করে এই বাড়িতে আবার কোন উতসব লাগতে চললো।

বড় জামা’ইবাবু মা’নে সমীরণদা আমা’কে দেখতে পেয়েই চেঁচিয়ে উঠলো, “ঐ যে পুটু এসে গেছে।”

আমি ত্রস্ত পায়ে বৈঠক খানায় ঢুকে সবার দিকে জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে রইলাম। সমীরণদা আমা’র পাশে এসে বললো, “এই যে শালা তোমা’র বি’য়ের কথা হচ্ছিল এখানে।”

ওই কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম, বলা নেই কওয়া নেই হটা’ত করে কেউ ধরে বেঁধে বি’য়ে করিয়ে দেয় নাকি? আমি অ’বাক হয়ে সবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। সিদ্ধার্থ জ্যাঠা মা’নে অ’নুর বাবা, আমা’কে বললেন, “আমা’র পুরানো বন্ধু, অ’ধিরের নাম শুনেছিস ত? ওর মেয়ে, বৈশাখী, ইংলি’শে বি’ এ পড়ছে। ওর কথা ভেবেছি তোর জন্য।”

আমি বার কয়েক ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম, “আমা’র বি’য়ে মা’নে এখুনি, কেন?”

বাবা বললেন, “তুই লন্ডন চলে যাবি’, অ’ইখান থেকে যদি বি’লি’তি মেম ধরে আনিস সেই ভয়ে আগে ভাগেই তোকে বি’য়ে দিয়ে দেবো।”

বাবার কথা শুনে সবাই হেসে দিল আর আমা’র চক্ষু চড়ক গাছ। গলা শুকিয়ে গেছে, কান মা’থা ভোঁভোঁ করছে, চোখের সামনে হটা’ত করে সব কিছু ঘুরতে শুরু করে দিল।

আমা’র ছোট কাকা বললেন, “তোদের দুইজনের একসাথে বি’য়ে। মা’নে অ’নু আর তোর, অ’ধির বাবুর একমা’ত্র ছেলে, অ’নিন্দ্য ডিভিসিতে ইঞ্জিনিয়ার। আমরা ভাবলাম এই বাড়ি থেকে একটা’ মেয়ে যখন যাবে তখন ওই বাড়ি থেকে একটা’ মেয়ে এই বাড়িতে আসুক।”

আমি ছাদের দিকে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ, ছাদ খানা অ’নেকখানি নিচে নেমে এসেছে আর একটু হলে আমা’কে পিষে মেরে ফেলবে। আমি একটা’ চেয়ার টেনে বসে বললাম, “অ’নু জানে এই ব্যাপারে?”

আমা’র মা’ হেসে বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানে, ওর অ’মত নেই। তোর ঘরে মা’নুর সাথে বসে আছে।”

ওই কথা শুনে আমি কি বলব ভেবে পেলাম না, অ’নু কি করে মেনে নেয় এই কথা? ওর আর দেবুর প্রেম কি সত্যি পুতুল খেলা ছিলো? না হতে পারে না। আমি চুপচাপ বসে ভাবতে লাগলাম কি করা যায় কি বলা যায় কোথা থেকে কথা শুরু করা যায়। অ’ইদিকে দরজা দিয়ে ভাই বোন গুলো সব উঁকিঝুঁকি মা’রছে। একটু পরে দেখলাম ভাই বোনের ভিড়ের পেছনে অ’নু আর ছোড়দি। কেঁদে কেঁদে অ’নুর চোখ জবা ফুলের মতন লাল হয়ে গেছে, ছোড়দিকে ওকে জড়িয়ে ধরে আমা’কে ইশারা করলো ওই বৈঠকখানা থেকে বেড়িয়ে আসতে। আমি মা’থা নিচু করে বৈঠকখানা থেকে বেড়িয়ে এলাম।

আমি বের হতেই ছোড়দি আমা’কে একদিকে টেনে নিয়ে গেল আর অ’নু ভেঙ্গে পড়লো, “আমি দেবু কে ছাড়া কাউকে বি’য়ে করব না, আমা’কে অ’ন্য কারুর সাথে বি’য়ে দিলে আমি বি’ষ খেয়ে মরবো।”

আমি কি করবো কিছু বুঝে পাচ্ছি না, ছোড়দি আমা’কে বকা দিয়ে বললো, “তুই কেন তোর কথা আমা’কে জানাস নি? একসাথে দুই দিক কি করে সামলাই বল। শ্বশুর মশায় আর বাবা কাকে নিমতন্ন করবে, কি কি খাওয়ানো হবে সেইসব নিয়ে ফর্দ বানাতে বসে গেছে, বড় কাকা তো খুশিতে পাগল, রাঙ্গা কাকা বলছে…..”

আমি ওকে থামিয়ে বললাম, “থাম দিকি, কে কি আটঘাট বাঁধছে সেই শোনার সময় নেই আমা’র কাছে।”

ছোড়দি রেগে গিয়ে আমা’কে বললো, “তোমরা দুইজনে লুকিয়ে প্রেম করবে আর ম্যাও সামলাতে আমা’কে ঠেলে দিবি’?”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “কি করব, আমি ভাবলাম বড়দা আর তোর সময়ে কোন অ’সুবি’ধে হয়নি তাই আমা’দের সময়ে হবে না। তা বি’শুদা কোথায়?”

ছোড়দি বললো, “আমি তোর বড়দাকে ফোন করে দিয়েছি, হস্পিটা’ল থেকে বেড়িয়ে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। ওই সব ঠিক করে দেবে বলেছে, তুই শুধু এই এক ঘণ্টা’ ওদের কিছু একটা’ বলে ক্ষান্ত রাখ।”

এমন সময়ে অ’নুর মা’ আর আমা’র মা’ ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। তাঁদের বের হতে দেখেই ছোট ভাই বোন গুলো দূরে সরে গেল। আমা’র মা’ আমা’কে জিজ্ঞেস করলেন অ’নুর কান্নার কারন, আমি একবার ছোড়দির দিকে তাকালাম একবার অ’নুর দিকে তাকালাম তারপরে চোখ বন্ধ করে বোমা’ ফাটিয়ে দিলাম, “এই বি’য়ে হতে পারে না।”

সেই কথা শুনে অ’নুর মা’ হতচকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কি বলছিস তুই? কেন বি’য়ে হতে পারে না? তুই আর অ’নু কি…..”

ছোড়দি তেড়ে উঠলো অ’নুর মা’য়ের দিকে, “কি যে বল না তুমি, বলার আগে একবার ভাববে না কি বলছো?”

আমা’র মা’ আমা’কে প্রশ্ন করলেন, “তাহলে অ’নু ওই ভাবে কাদছে কেন আর তুই ওই ভাবে দাঁড়িয়ে কেন?”

আমি দেখলাম এবারে কিছু না বললে নয়, খাঁড়া একদম গলার কাছে নেমে এসেছে। আমা’র হয়ে ছোড়দি বললো, “ভেতরে চল কথা আছে।”

অ’নুর হা’ত ধরে ভেতরে নিয়ে গেল আমি পেছন পেছন গেলাম। সবাই আমা’দের দিকে হা’ঁ করে তাকিয়ে। সেই সময়ে বাবা জেঠার সামনে নিজের প্রেমের বক্তব্য রাখা খুব বড় ব্যাপার। ছোড়দি খানিকক্ষণ চুপ থেকে সবার দিকে তাকিয়ে বললো, “এই বৈশাখীর সাথে পুটুর আর অ’নিন্দ্যর সাথে অ’নুর বি’য়ে অ’সম্ভব।”

সিদ্ধার্থ জ্যাঠা জিজ্ঞেস করলেন, “কেন কি অ’সুবি’ধে? অ’নু আর পুটু কি পরস্পরকে…..”

ছোড়দি আবার তেড়ে উঠলো, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে থেমে গেল, শ্বশুর মশাইয়ের সামনে শান্ত কণ্ঠে বললো, “না ওইসব কিছু না। অ’নুর একজন কে পছন্দ হয়েছে আর পুটু একজন কে ভালোবাসে।”

সবার চাহনি দেখে মনে হল ঘরে বোমা’ ফেটেছে আর তারপরেই সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে। এত চুপ যে বেড়াল চলে গেলে তার পায়ের শব্দ শোনা যেতে পারে। আমি নিজের বুকের ধুকপুকানি শুনতে পেলাম, হা’তুড়ির মতন বারেবারে বাড়ি মা’রছে ফুসফুসে। বড় কারুর দিকে তাকাবার একটুও সাহস নেই, সবাই যেন আমা’দের দিকে ক্ষুধার্ত বাঘের মতন তাকিয়ে, পারলে এখানেই খেয়ে ফেলবে। সেই সময়ে বাবা জেঠার সামনে উঁচু গলায় কথা বলা অ’থবা প্রেম ভালোবাসার কথা ব্যাক্ত করা অ’সম্ভব ব্যাপার ছিলো, কি করে কি বলব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কিন্তু একটা’ বি’হিত করতেই হবে।

বাবা আমা’র দিকে বাঘের মতন চাহনি নিয়ে তাকিয়ে গুরু গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, “কি ব্যাপার এইসব?”

আমি চোখ বন্ধ করে দেখলাম যে হা’সি কান্না মিশিয়ে আমা’র সামনে ছন্দা দাঁড়িয়ে, মনের কথা না বললে আমা’র ভালোবাসা চিরদিনের মতন চলে যাবে। আমি মেঝের দিকে তাকিয়ে সাহস জুগিয়ে নিজের কথা না বলে আগে অ’নুর ব্যাপারে বললাম, “অ’নু একজন কে ভালোবাসে, আমা’দের কলেজের বন্ধু।”

সিধু জেঠা গম্ভীর কণ্ঠে অ’নুকে জিজ্ঞেস করলো, “কি নাম কি করে কোথায় থাকে?”

অ’নু ধরা গলায় আমতা আমতা করে কিছু একটা’ বললো কিন্তু কেউ শুনতে পেল না। ওর হয়ে ছোড়দি বললো, “ছেলের নাম দেবশিস রায়, একসাথে এরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছে। দেবাশিস ধানবাদ থেকে এম টেক করেছে, বর্তমা’নে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে লেকচারার।”

কথা শুনে মনে হল সবাই একটু নড়েচড়ে বসলেন, বাবা আমা’কে জিজ্ঞস করলেন, ২আর তোর কি ব্যাপার?”

আমি বার কতক ঢোঁক গিলে কোন রকমে বললাম, “আগে অ’নুর ব্যাপারে বলি’ তারপরে আমা’র কথায় আসছি। আগে বল কি বলতে চাও তোমরা? দেবাশিস ভালো বাড়ির ছেলে। তোমা’দের পছন্দ করা ছেলের চেয়েও বেশি ভালো, অ’নু কোন ভুল পথে যায়নি।”

সিধু জ্যাঠা বাঘের মতন হুঙ্কার পাড়লেন, “প্রেম করেছে আর ভুল পথে যায়নি? কি সব আবোল তাবোল কথাবার্তা।”

ওই হুঙ্কার শুনে আমা’র মুখ শুকিয়ে গেল, অ’নু ডুকরে কেঁদে উঠলো, “আমি অ’ন্য কাউকে বি’য়ে করবো না।”

দুই জ্যাঠা মিলে আমা’দের দিকে প্রায় তেড়ে আসে, কিন্তু ছোড়দি মা’ঝে দাঁড়িয়ে পড়লো আর আমা’দের বাঁচিয়ে দিল। ছোড়দি মা’ঝে দাঁড়াতেই আমা’র জেঠু বললেন, “তোর ব্যাপার আলাদা, বি’শুকে ছোট বেলা থেকে চিনি আর এখানে? কাউকেই চিনি না কাউকেই জানি না, কি বৃত্তান্ত কি ব্যাপার।”

আমি বললাম, “ঠিক আছে, আমি দেবাশিস কে ডেকে নিচ্ছি পরিচয় হয়ে যাবে।”

সিধু জ্যাঠা বাঘের মতন শুধু মা’ত্র একটা’ শব্দ করলেন, “হুম”

বাবা গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন, “ওর ব্যাপার বুঝলাম আর তোর কি ব্যাপার সেটা’ শুনি?”

আমা’র গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল আর তখন আমা’র জেঠিমা’ আমা’কে কাছে ডাকলেন। আমি ধীর পায়ে জেঠিমা’র কাছে যেতেই আমা’র কান ধরে টেনে বললেন, “তোর কি মধুছন্দাকে পছন্দ?”

আমি ওই কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম, আমতা আমতা করে বললাম, “হ্যাঁ মা’নে তুমি কি করে জানলে?”

জেঠিমা’ কান টেনে লম্বা করে বললেন, “এমনি এমনি চুল সাদা হয়নি রে আমা’র পুটু। আকাশের বি’য়েতে দেখেই বুঝেছিলাম কিছু একটা’ ঘোল পাকিয়েছিস তোরা।”

বাবা আমা’কে প্রশ্ন বানে জর্জরিত করে দিলেন, “কি নাম মেয়ের, কি বৃত্তান্ত, বাবা কি করেন একটু শুনি।”

দেখলাম এবারে না বলে কোন উপায় নেই, হা’ড়ি ভাংতেই হবে, “না মা’নে আমা’র কলেজের বান্ধবী, মধুছন্দা সমা’দ্দার। বর্তমা’নে পার্ক স্ট্রিটে একটা’ বড় রঙের কোম্পানিতে চাকরি করে। বাবা নেই, মা’ এস এস কে এম হস্পিটা’লে নার্স।”

জ্যাঠা আঁতকে উঠলেন, “সমা’দ্দার? মা’নে পূর্ব বঙ্গের? না না এই হতে পারে না, সমা’দ্দার জাতে আমা’দের চেয়ে অ’নেক ছোট। তুই কি না শেষ পর্যন্ত আমা’দের কুলের নাম ডুবাবি’? আমরা ব্রাহ্মণ পরিবার সেটা’ জেনে বুঝে তুই এই করলি’?”

বাবা কাকা সবাই এক কথায় নারাজ, “পূর্ব বঙ্গের মেয়ে বাড়িতে আনা চলবে না তার ওপরে আমা’দের চেয়ে নিচু জাতের।”

সেকালে হোক কি একালে হোক, এই বৈষম্য এখন আছে, সেই একটা’ ব্যাপারে কোলকাতা কেন সারা পৃথিবী আজও একত্র।

আমি দেখলাম আমা’র পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে এই সময়ে বুকের পাটা’ চুপসিয়ে গেলে হবে না, “অ’তীতে তোমা’দের কুল যে ব্রাহ্মণ ছিলো তাঁর কি প্রমা’ন?”

জ্যাঠা বাবা প্রায় তেড়ে ওঠেন আমা’র ওপরে, “কি বলছিস তুই, আমরা চট্টোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ। সেই সুতানটির সময় থেকে এইখানে বাস আমা’দের।”

হঠাৎ কি যে হয়ে গেল আর আমি বলে ফেললাম, “ছোট বেলায় বায়লজি টিচার আমা’দের পড়িয়েছিলো যে আমরা সবাই নাকি বাঁদর গোস্টি থেকে উদ্ভুত। সেটা’ ঠিক না ভুল?”

অ’নেকেই আমা’র কথা শুনে হেসে ফেললেন কিন্তু জ্যাঠা মশায় , সিধু জ্যাঠা বাবা তেড়ে উঠলেন, “বড় বাড় বেড়ে গেছিস, বাপ ঠাকুরদার নাম ডুবি’য়ে দিলি’ শেষ পর্যন্ত।”

মা’না না মা’না, কথা কাটা’কাটি আরও বেশ কিছুক্ষণ চলল এই ভাবে, জ্যাঠা বাবা কিছুতেই মা’নতে রাজি নয় ছন্দার ব্যাপারে। মা’ কাকিমা’ জেঠিমা’ এর মা’ঝে তর্ক জুড়ে দিলেন, বৈঠকখানা মা’ছের বাজারের মতন হয়ে গেল। অ’নু কান্না থামিয়ে চুপচাপ ছোড়দির হা’ত ধরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে রইলো। আমিও সমা’ন তালে বচসা করলাম বুঝাতে চেষ্টা’ করলাম অ’নেকক্ষণ ধরে যে এই জাতপাত নিয়ে কি হবে, কে পূর্ব বঙ্গের কে পশ্চিম বঙ্গের, কি হয়েছে। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে যখন তিনি অ’পারেশান থিয়েটা’রে অ’পারেশান করেন তখন কি অ’ন্য জাতের মা’নুষের রক্ত নীল রঙের দেখতে পান? আমি অ’নড় যদি বি’য়ে করতেই হয় তাহলে ওই মধুছন্দাকেই করব নচেত আর কাউকে নয়। কথাবার্তা শুনে মনে হল দেবুর আর অ’নুর ব্যাপারে বি’শেষ অ’সুবি’ধে হবে না। আমি বারেবারে দরজার দিকে তাকাই এবারে যদি বি’শুদা এসে কিছু করতে পারে।

শেষ পর্যন্ত আমা’র জেঠিমা’ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আমি একটা’ কথা বলি’, আগে এই দেবাসিশ কে ডাকা যাক তারপরে পুটুর ব্যাপারে কথা বলছি।”

অ’নু এক দৌড়ে জেঠিমা’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। জেঠিমা’ ওকে সান্তনা দিয়ে বললো, “আচ্ছা বাবা আগে তোর ওই দেবাসিশ কে দেখি আমরা তারপরে বাছ বি’চার করবো।”

সিধু জ্যাঠা আমা’কে বললেন, “দেবাসিশকে ডাক।”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “এখুনি?”

বাবা বললেন, “হ্যাঁ এখুনি। আর তারপরে তোর বি’চার হবে।”

জেঠিমা’ বাবাকে বললেন, “গগন, মধুছন্দাকে আমা’র পছন্দ, মা’নুর বি’য়েতে, আকাশের বি’য়েতে তোমরা সবাই ওকে দেখেছ। বি’ টেক করা চাকরি করা বৌমা’, এর পরে আর কারুর কিছু কি বলার আছে?”

জেঠিমা’র ওই কথা শুনে বেশ কিছুক্ষণ সবাই চুপ কিছুপরে আমা’র মা’ হেসে সিধু জ্যাঠাকে বললেন, “তাহলে অ’ধির কে একটা’ ফোন করে দিন, ওদের আসতে বারন করে দিন। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে গেছে, ওদের নিজেদের পছন্দ অ’পছন্দ আছে। বি’য়ের তারিখ একটু দেখে শুনে করতে হবে তাহলে। এই বাড়ির বড় ছেলের বি’য়ে আর ওই বাড়ির বড় মেয়ের বি’য়ে বলে কথা, ঢাক ঢোল একটু বেশি না বাজলে কি করে হবে।”

আমা’দের বাড়ির কোন বি’য়েতে ঢাক ঢোল কম বাজে না, এর মধ্যে তিন তিনখানা বি’য়ে হয়ে গেছে, বড়দির বি’য়ে, ছোড়দির সাথে বি’শুদার বি’য়ে আর একবছর আগেই মেজদার বি’য়ে। এতক্ষণ বুকের মা’ঝে বেঁধে থাকা স্বস্তির শ্বাস বেড়িয়ে এলো, শেষ পর্যন্ত তাহলে সবার মতামত আছে, যাক তাহলে সব মিটমা’ট হয়ে গেল।

ঠিক সেই সময়ে বি’শুদা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকে সবার দিকে তাকিয়ে দুম করে বললে ফেললো, “না না অ’নুর বি’য়ে হতেই পারে না। আমি সব বলছি আগে আমা’র কথা শোনা হোক…..”

বড়দার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো আর ছোড়দি এক ধমক দিয়ে বললো, “তুমি থামো তো। শেষ পাতে শুক্তো দিয়ে আর মুখ মা’রতে হবে না। তোমা’র আশায় বসে থাকলে এদের এতোক্ষনে বি’য়ে হয়ে যেত!”

রোদে ভেজা তিলোত্তমা’ (#১৬)

এই সবে অ’নেক সময় চলে গেল। জেঠিমা’ আমা’কে বললেন দেবুকে ফোন করে দিতে। আমা’র আগেই অ’নু দেবুকে ফোন করে জানিয়ে দিল সব কথা, সেই শুনে দেবুর চক্ষু চড়ক গাছ। এতো লোকের সামনে তাকে কাটা’ হবে শুনে হা’ত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল ওর, আমি ওকে বললাম যদি এখন না আসে তাহলে যেন অ’নুকে ভুলে যায়। অ’নু ওকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বললো যদি আধ ঘন্টা’র মধ্যে না আসে তাহলে ফিনাইল খাবে। দেবু বেচারা আমা’দের বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দিল।

ওদিকে মা’ জেঠিমা’ ছন্দার মা’’কে ফোন করে দিল আমা’র কিছু বলার আগেই, সাথে এও জানাল যে পরের দিন বাড়ির সবাই ছন্দাকে দেখতে আসবে আর সেই সাথে আশীর্বাদ করে যাবে। মা’সিমা’ সব শুনে আঁতকে উঠলেন, এত তাড়াতাড়ি এক রাতের মধ্যে এত সব কি করে হবে। আমা’দের আবার পঙ্গপালের পরিবার আশীর্বাদ করতে বাবা কাকা জ্যাঠা, মা’মা’ মা’সি পিসি আর এই গুটি কতক ভাই বোন মিলে জনা পঞ্চাশ যাবে। সেই শুনে মা’সিমা’ হা’র্ট ফেল করার যোগাড়, এত লোক তো বর যাত্রী হয়। অ’নুর মা’ আমা’দের পরিবারের ব্যাপারে বুঝিয়ে বললেন আর বললেন যে সবাই বাড়ির লোক কেউ বাইরের নয় সব কাজ হা’তেহা’তে করে নেবে। জেঠিমা’ বড়দা মেজদাকে আর শুভকে বললেন আশীর্বাদের জন্য ছন্দার বাড়ির সব কিছু ব্যাবস্থা করতে। কি কি কেনা হবে তাঁর ফর্দ বানানো হয়ে গেল। মেজদা আর শুভ জিনিস পত্র কিনতে বেড়িয়ে গেল।

আমি অ’নুর বাড়ি গিয়ে ছন্দাকে ফোন করলাম কারন আমা’দের বাড়ি তখন হরিশার হা’টের মতন অ’বস্থায় ছিলো। আমা’র ফোন পেয়েই তেড়ে ফুড়ে উঠলো, “যাও তোমা’র সাথে একদম কথা বলবো না।”

অ’ভিমা’নিনীর ওই সুর অ’নেকদিন শুনিনি, আমা’র দুকানে যেন কেউ মধু ঢেলে দিল। ছন্দা চেঁচিয়ে উঠলো অ’ইপাশ থেকে, “তোমা’র কোন আক্কেল নেই? এই রাতে বলছ ওঠ ছুঁড়ি তোর বি’য়ে? আমি তোমা’কে বলেই দিয়েছি যে বি’য়ে করবো না।”

আমি আর কি বলি’, “তুমি যে আমা’র সাথে এতদিন কথা বলোনি, তাই শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম একে বারে বি’য়ে করেই লন্ডন যাবো।”

ছন্দা আবেগে কেঁদে ফেললো, “বড্ড শয়তান ছেলে তুমি, একবার হা’তের কাছে পাই এমন মা’রবো না…..”

আমি উত্তরে বললাম যে কিছুক্ষণের মধ্যে আমি, বড়দা আর মেজদা সব কিছু কেনা কাটা’ সেরে ওদের বাড়ি যাবো আর সব ব্যবস্থা করে দেবো। সেই শুনে একটু ক্ষান্ত হল ছন্দা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দেবু এসে পৌছাল, ওর অ’বস্থা আমা’র চেয়েও সঙ্গিন। আমি আর অ’নু ওকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে সব কিছু পাখি পড়ার মতন বুঝিয়ে দিলাম আর বললাম যে সবাই ঠিক আছে শুধু ও যেন বেঠিক না হয়ে যায়।

দেবু বৈঠকখানায় ঢুকে অ’ত লোকজন দেখে চমকে গেল। বাবা জ্যাঠা দেবুকে রিতিমত সি বি’ আইয়ের মতন প্রশ্ন বানে জর্জরিত করে দিলেন। কি করো, বাড়িতে কেকে আছেন, কোথায় বাড়ি বাবা কি করেন, কয় ভাইবোন ইত্যাদি। আমি আর ছোড়দি দুর থেকে ওকে দেখে হা’সি থামা’তে পারলাম না ওদিকে অ’নুর গলা শুকিয়ে আমা’দের বকাঝকা শুরু করে দিল।

আমা’র ছোট পিসেমশায় বড় মজার লোক, এতক্ষণ চুপচাপ ছিলেন, দেবুর ওই অ’বস্থা দেখে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বললেন, “এই যে দেবশিস, একবার কান ধরে উঠ বস কর তো।”

তাঁর কথা শুনে দেবু হা’সবে না কাঁদবে ভেবে পেল না, ছোট পিসে মশায় গম্ভির কণ্ঠে বললেন, “বাড়ির দুই জামা’ই যখন মেয়ে দেখতে এসেছিলো ওদের কিন্তু কান ধরে উঠ বস করিয়ে ছিলাম এটা’ আমা’দের বাড়ির রীতি। জামা’ই কে আগে আমরা কান ধরে উঠবস করাই। যদি ভালো করে, তবেই মেয়ে নিয়ে যেতে দেই নচেত নয়।”

অ’ত গুলো লোকের সামনে ওই কথা শুনে দেবুর হা’র্ট ফেল করার যোগাড়, সবাই হেসে ফেললো দেবুর অ’বস্থা দেখে। শেষ পর্যন্ত বি’শুদা ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এলো ঐইখান থেকে। অ’নুর মা’য়ের জামা’ই দেখে কত খাতির, এটা’ খাও সেটা’ খাও। অ’নু লাজুক হেসে ছোড়দির পেছনে দাঁড়িয়ে দেখে গেল। ঠিক হলো যে বাড়ি গিয়ে দেবু বাবা মা’য়ের সাথে কথা বলে আমা’দের জানাবে সেইমতন আমা’র জ্যাঠা আর সিধু জ্যাঠা ওর বাবার সাথে কথা বার্তা বলবেন।

শুভ আর মেজদা বাজার করে আসার পরে আমা’র ছোট কাকিমা’ আর ভাইদের নিয়ে আমরা গাড়ি করে চলে গেলাম ছন্দার বাড়িতে। আমা’দের পৌঁছানর খবর মা’ আগে থেকেই মা’সিমা’কে দিয়ে দিয়েছিলেন। অ’নুর দুই ভাই আর আমা’র দুই ভাই মিলে ঘর সাজাতে লেগে গেল, বড়দা আর মেজদা জিনিস পত্র বুঝিয়ে দিল সেই সাথে রান্নার ঠাকুরের ব্যাবস্থা। ছোট কাকিমা’ আর মা’সিমা’ পরের দিনের ব্যাবস্থায় লেগে গেলেন। সব যেন যুদ্ধ কালীন তৎপরতায় ঘটে গেল। ছাড়পত্র পেয়ে গেছিলাম তাই ছন্দাকে নিয়ে একটু আড়ালে বসার অ’বকাশ পেয়ে গেছিলাম।

ছাদে উঠতেই ছন্দা আমা’কে কষে এক চাঁটি লাগিয়ে দিল আর বুকের ওপরে ঝাপিরে পড়লো, “যাও তোমা’র সাথে একদম কথা বলব না। বলা নেই কওয়া নেই, এই ভাবে কেউ বি’য়ে করতে আসে নাকি?”

আমি ওকে জড়িয়ে ধরে মা’থায় চুমু খেয়ে বললাম, “কি করি সোনা, নাহলে কোন উদো পাড়ার বৈশাখিকে আমা’র গলায় বাঁধতে চলেছিলো।”

ছন্দা বুকের ওপরে আঁকিবুঁকি কেটে বললো, “এতোদিন কথা বলোনি কেন?”

আমি আকাশ থেকে পড়লাম, “আমি কথা বলনি না তুমি কথা বলনি? কত বার তোমা’র অ’ফিসের নিচে দাঁড়িয়ে থেকেছি। তুমি বের হতে আর আমা’কে দেখেই ট্যাক্সি নিয়ে নিতে।”

ঠোঁট কামড়ে ধরে দুষ্টুমি ভরা হা’সি দিয়ে বললো, “বাস ধরলে তো জানতাম যে তুমি আমা’র পেছন পেছন বাসে চাপবে তাই ট্যাক্সি নিতাম। এবারে ওই চারদিনের ট্যাক্সি ভাড়া দাও?”

আমি আমা’র মা’নিব্যাগ ওর হা’তে সঁপে দিয়ে বললাম, “আগে হৃদয় নিয়েছিলে আজকে এই পকেট তোমা’র।”

মা’নিব্যাগ আমা’কে ফিরিয়ে দিয়ে বললো, “মনে থাকে যেন এই কথা।”

আমি ওর নাকের ডগায় নাক ঘষে বললাম, “লন্ডন তাহলে একসাথেই যাচ্ছি?”

মৃ’দু হেসে মা’থা নাড়ালো, “হ্যাঁ, তবে এত তাড়াতাড়ি ভিসা পাবো কি করে?”

আমি বললাম যে সেই চিন্তা জ্যাঠা মশায়ের, কাস্টমসে চাকরি করেন দুতাবাসের অ’নেক লোক জন তাঁর চেনাজানা। ওই নিয়ে বি’শেষ অ’সুবি’ধে হবে না।

সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে গেল, একে একে সবার আশীর্বাদ হয়ে গেল, প্রথমে ছন্দার তারপরে অ’নুর তারপরে দেবুর শেষে আমা’র। দুই সপ্তাহ পরেই অ’নুর বি’য়ে আর তার চার দিন পরে আমা’র। বাড়িতে সাজ সাজ রব, কেনা কাটা’, বাজার করা ম্যারাপ বাঁধা সবকিছু যুদ্ধ কালি’ন ততপরতায় শুরু হয়ে গেল। আমি ভেবেছিলাম কথাবার্তা ঠিক হয়ে যাবার পরে ছন্দার সাথে একটু নিরিবি’লি’তে কথা বলতে পারবো, সেই কবে থেকে কত কথা জমে আছে বুকের মধ্যে অ’ইদিকে ছন্দার অ’বস্থা আমা’র মতন। ওর পেট প্রায় ফেটে যাচ্ছিল, এর মা’ঝে কোন রকমে একবার দেখা পেয়েছিলাম সেদিন আমা’কে খুব মেরেছিলো আর বুকে মুখ লুকিয়ে এক ঘন্টা’ ধরে কেঁদেছিলো। কিন্তু ওই পর্যন্ত, তারপরে আর ছন্দাকে একা পাওয়া গেল না। রোজ দিন কেউ না কেউ ওকে নিয়ে বি’য়ের কেনা কাটা’ করতে বেড়িয়ে যায় আমি কিছুতেই সাথে থাকতে পারি না। ধীরে ধীরে অ’নুর বি’য়ের দিন কাছে চলে এলো।

অ’নুর বি’য়ের দুই দিন আগেই মা’ জেঠিমা’ ছন্দাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে এলো। উঠতে বসতে ছন্দা, বাবা জেঠার “বৌমা’” ডাকে সাড়া দিতে শুরু করলো। এক বেলার মধ্যেই বাড়ির বড় বৌমা’ হয়ে উঠলো, সবার চোখের মণি, ভাই বোনেদের বড় বৌদি আর মা’য়ের চেয়েও কাকিমা’র বড় আদুরে হয়ে গেল। সব থেকে অ’বাক করে দিল আমা’কে, “পার্থ” ছেড়ে “ওগো, হ্যাঁ গো” শুরু করে দিল, আমি ওই ডাক শুনে হেসে আর কুল পাই না।

এর মা’ঝে আমরা নবীনকে একদম ভুলে গেছিলাম। সন্ধের দিকে ছন্দা আমা’কে নবীনের কথা মনে করিয়ে দিতেই আমা’র মা’থায় হা’ত। আমি আর ছন্দা সেদিন বি’কেলে নবীনের বাড়িতে গেলাম। নবীন যে বদলে গেছে সেটা’ আর বলে দিতে হল না।

আমা’দের দেখে হেসে বললো, “তোদের বি’য়েতে আমি থাকতে পারবো না রে।”

আমরা দুইজনেই অ’বাক হয়ে গেলাম, ছন্দা ওকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন, তোর তো ফ্রাঙ্কফুর্ট যেতে তো অ’নেক দেরি আছে, তাহলে?”

নবীন বাঁকা হেসে বললো, “না রে, আমি কাল দিল্লী চলে যাচ্ছি, ওইখানে কিছুদিন থাকবো তারপরে ফ্রাঙ্কফুর্ট চলে যাবো।”

ছন্দা আর আমি পরস্পরের মুখের দিকে তাকালাম, ছন্দা আক্ষেপের সুরে বললো, “অ’নুকে জানিয়েছিস যে তুই চলে যাচ্ছিস? ও শুনলে কিন্তু খুব দুঃখ পাবে।”

নবীন কাষ্ঠ হেসে বললো, “না রে, ওর সাথে দেখা করার আর সময় পাই নি। এক বার ভেবেছিলাম যে তোদের বাড়ি যাবো কিন্তু তোরা এসেছিস তাই আর যাবো না।”

ছন্দা ওকে চেপে ধরলো, “তোর নিশ্চয় এখন কোন বি’শেষ কাজ নেই আর কাজ থাকলেও পরে করা যাবে। এখুনি চল অ’নুর সাথে দেখা করবি’।”

নবীন বেশ কিছুক্ষণ ভাবলো, তারপরে ওকে বললো, “না রে ছন্দা আমি আর যাবো না ওর সামনে।”

ছন্দা ছাড়তে নারাজ, “কেন যাবি’ না? তোরা নাকি ছোট বেলার বন্ধু আর আজকে এত আনন্দের দিনে তুই ওর সাথে দেখা না করেই চলে যাবি’?”

নবীন চুপ, ছন্দা ওকে চেপে ধরলো, “যতক্ষণ না আসল কথা খুলে বলছিস ততখন আমি এখান থেকে যাবো না।”

নবীন ওর আলমা’রি থেকে একটা’ পুরানো জুতোর বাক্স এনে আমা’র হা’তে ধরিয়ে দিল। আমি বাক্স খুলে দেখলাম ওর মধ্যে একটা’ অ’তি পুরাতন মা’টির পুতুল। পুতুল দেখে আমা’র পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেল। আমা’র বেশ মনে আছে ওই পুতুল বড়দা অ’নুকে চড়কের মেলায় কিনে দিয়েছিলো। আমরা তখন অ’নেক ছোট, ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ি। এক বি’কেলে আমি নবীন পিতু বি’ষ্টু সবাই মিলে উঠানে ডাঙ্গুলি’ খেলছিলাম আর অ’নু ওই পুতুলকে শাড়ি পড়াচ্ছিল বারান্দায় বসে। আমা’দের ডাঙ্গুলি’র গুলি’ গিয়ে লাগে ওর পুতুলে আর পা ভেঙ্গে যায়, আমি অ’নুর ওপরে খুব তোরবাড় করেছিলাম কিন্তু নবীন ওই পুতুল নিয়ে বলেছিলো যে পুতুলের পা জোড়া লাগিয়ে দেবে। তারপরে আমি আর খোঁজ নেইনি পুতুলের কি দশার হয়েছিলো।

ছন্দা আমা’র দিকে একবার তাকালো তারপরে নবীনকে বললো, “তুই এতদিন কেন চুপ ছিলি’স, কেন বলি’সনি যে অ’নুকে তুই ভালোবাসিস।”

নবীনের কাষ্ঠ হেসে জবাব দিল, “কে বলেছে আমি অ’নুকে ভালোবাসি?”

ছন্দা ছাড়ার পাত্রী নয়, “তোর চোখ তোর সাড়া শরীর চেঁচিয়ে বলছে যে তুই ওকে ভীষণ ভালোবাসিস আর তাই ওকে না জানিয়ে চুপিচুপি চোরের মতন পালি’য়ে যাচ্ছিস। তুই কি ভাবি’স আমা’দের চোখ নেই?”

ছন্দা আমা’র হা’ত থেকে জুতোর বাক্স নিয়ে ওকে ধরা গলায় বললো, “এতোদিন এই মা’টির পুতুল অ’তি সযত্নে রেখেছিস কেন? চার বছর আগের ষষ্টির রাতের কথা মনে আছে তোর? অ’নু তোকে বারেবারে জিজ্ঞেস করেছিলো যে তোর কিছু বলার আছে কি না, তুই তাও চুপ করেছিলি’, কেন? আমি সেদিন পার্থকে বলতে গিয়েও বললাম না, ভেবেছিলাম কোনোদিন তোর মনের কথা বলবি’ কিন্তু….. ছাড়, আর কিছু বলার নেই আমা’র রে।”

নবীন ধরা পরে গেছে শেষ পর্যন্ত মনের কথা খুলে বললো আমা’দের কাছে, “আমি কালো কুতসিত দেখতে ছন্দা, এই চেহা’রা নিয়ে কি ওর মতন সুন্দরীকে ভালোবাসা যায় বল? আমা’র চেহা’রায় পক্সের দাগ, ছোট বেলা থেকে রোগা পটকা ছিলাম। ভেবেছিলাম বড় হলে মনের কথা বলব কিন্তু যত বড় হলাম পেঁচি অ’নু তত সুন্দরী হয়ে উঠলো। আমা’র মতন কুতসিত দেখতে একটা’ ছেলে ওর পাশে বড় বেমা’নান দেখাবে তাই সরে এলাম। দেবু আমা’র চেয়ে দেখতে শুনতে ভালো, ওদের দুইজনের জুটি একদম হর পার্বতীর।”

একটু থামলো নবীন, ছন্দা আর আম্মি মন দিয়ে ওর কথা শুনে গেলাম। নবীন বলে চলে, “আমি ইচ্ছে করেই দিল্লীতে এম টেক নিলাম যাতে আর ওর সামনে না থাকতে হয়। ভেবেছিলাম যে দেবু হয়ত বাইরে চলে যাবে কিন্তু দেবু যখন গেল না তখন আমা’কেই যেতে হবে তাই ফ্রাঙ্কফুর্ট চলে যাচ্ছি চিরদিনের জন্য। আমি বাড়িতে বলি’নি তবে তোদের বলছি আমি কোনোদিন দেশে ফিরবো না। এখানে আর কিছু নেই আমা’র জন্য…..”

কথাটা’ আর শেষ করতে পারল না নবীন, ছন্দার হা’ত ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল নবীন, “এইসব অ’নুকে দয়া করে বলি’স না তাহলে আমি মরেও শান্তি পাব না। শুধু এই বাক্সটা’ আমা’কে দিয়ে দে এটা’ই আমা’র অ’নুসুয়া। আমা’র হয়ে প্লি’স দেবুকে বলি’স কোনোদিন যেন অ’নুকে কষ্ট না দেয় তাহলে আমি কিন্তু ওকে মেরে ফেলবো।”

আমরা ওকে কি সান্তনা দেব ভেবে পেলাম না, অ’নু কি সত্যি এতদিনে বোঝেনি যে নবীন ওকে ভালোবাসে? আমরা বেশ কিছুক্ষণ ওর সাথে বসলাম আর তারপরে চলে এলাম। ছন্দার মন ভারি হয়ে গেছিলো, সারাটা’ সময় আমা’র হা’ত শক্ত করে ধরেছিলো। দুইজনে চুপচাপ বাড়ি ফিরে এসেছিলাম। নবীনের ওই কথা কোনোদিন অ’নুকে আমরা জানাই নি।

অ’নুর বি’য়ের দিন কাক ভোরে নবীন দিল্লী চলে গেছিলো আমি ওকে কোলকাতা এয়ারপোর্টে ছাড়তে গিয়েছিলাম। ছন্দা যেতে পারেনি। নবীন, ছন্দাকে একটা’ দামী সোনার হা’র উপহা’র দিয়েছিলো আর আমা’র জন্য একটা’ রোলেক্সের ঘড়ি।

ঘটা’ করে অ’নুর বি’য়ে হলো আর তারপরের দিনেই ছন্দাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিল মা’। ওর বাড়ির বি’য়ের ব্যাবস্থা মেজদা আর আমা’র দুই ভাই মিলে করেছিলো। বউভাতের পরের দিনেই দেবু আর অ’নু বাড়িতে এসে গেছিলো। বি’য়ে ভালো ভাবেই মিটে গেছিলো। আমা’দের ভিসা পেতে বি’শেষ বেগ হয়নি, তবে একমা’সের মতন লেগেছিলো আর আমা’দের লন্ডন যাওয়া এক মা’সের মতন পিছিয়ে গিয়েছিলো। যাওয়ার দিনে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে ছন্দা আর অ’নুর কি কান্না, দেবু অ’নেকক্ষণ আমা’র হা’ত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো।

প্লেনে উঠে অ’নেকক্ষণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো ছন্দা মন বড় কেঁদে উঠেছিলো ওর সেইসাথে আমা’র। আমা’র হা’ত খানি ধরে দিল্লী পর্যন্ত চুপ করে চোখ বন্ধ করে ছিলো। গভীর রাতে দেশ ছাড়লাম, ছেড়ে গেলাম রোদে ভেজা কল্লোলি’নী সাথে রইলো আমা’র তিলোত্তমা’ যাকে নিয়ে ওই রোদে কতবার ভিজেছি।

আপাতত এখানেই শেষ, পরে হয়তো আবার আসবো এই কাহিনী নিয়ে।


Tags: , , , , , ,

Comments are closed here.